-আরে তাই নাকি ? ভাল তো ।
-ভাল ?
-হুম । জানিসতো এখন ফেসবুকে যার যত বেশি ফলোয়ার তার ডিমান্ড তত বেশি । আমাদের ইমরান সরকারকে চিনিস না ? ঐ যে কিউট মত ছেলেটা ? জানিস অনার না একান্ন হাজার ফলোয়ার ।
সুমি কথা গুলো প্রায় একদমে বলে ফেলল । অনীনদিতা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারল না ।
মানুষ এতো বেকুব কিসিমের হয় কেমনে ?
আশ্চার্য !
অনীনদিতার মুখ গম্ভীর দেখে সুমি বলল
-কি ? আমি ভুল কি বললাম ? এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস ক্যান ?
-শোন তোর কাছে কথাটা বলাই আমার ভুল হয়েছে । আমি বললাম একটা ছেলে আমাকে ফলো করে আর কথা থেকে ইমরান সরকারের ফেসবুক ফলোয়ারকে টেনে আনলি !
-তো ভুল বললাম কোথায় ?
-আরে গাধা । ঐ ছেলেটা আমাকে ফেসবুকে না সরাসরি বাস্তব জীবনেই ফলো করে ।
অনীনদিতার কথা শুনে সুমি যেন আকাশ থেকে পড়ল ! ছেলেরা যে মেয়েদের ফেসবুকের বাইরে বাস্তব জীবনেও ফলো করতে পারে এটা যেন ওর ধারনার বাইরে ছিল ।
আসলেই অনীনদিতা কদিন থেকে ছেলেটার উপর বেশ বিরক্ত । এভাবে দিনের পর দিন অনুসরন করার কোন মানে আছে ? ছেলেটাকে সেদিন মুখের উপরেই বলে দিয়েছিল যে সে এইসব একদম পছন্দ করে না । তারপরেও ছেলেটা কোন কথা শুনে না ।
একদম সরাসরি খারাপ ব্যাবহারও করা যাচ্ছে না । ছেলেটা আবার অনীনদিতার এক বান্ধবীয় বড় ভাই ।
আসলে যত দোষ ঐ পোষাকটার । অনীনদিতার সেদিন একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত ছিল । ওর বাড়ির কাছেই একটা কমিউনিটি সেন্টারে । বিয়ের যাওয়ার জন্য সেদিন ও কালো আর লালের কাজ করা একটা শাড়ি পরেছিল । এমনিতে অনীনদিতা দেখতে বেশ সুন্দরী তার উপর বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য যে সাজ দিয়েছিল তাতে যে কারো মাথা ঘুরে যাবার কথা । সাজ সজ্জা শেষে যখন নিজেকে আয়নায় দেখলো তখন নিজেই খানিকটা খুশি হয়ে গেল । পেছন থেকে ওর ছোট বোন ওকে জড়িয়ে ধরে বলল
-আপু তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে ।
-হুম । বলেছে তোকে ?
-না আপু সত্যি ! তোর ঐ ব্লগার যদি তোকে এখন দেখে নির্ঘাত গল্প বাদ দিয়ে মহা কাব্য লেখা শুরু করবে তোকে নিয়ে ।
-যা ভাগ !
ভাগ বললেও মনে মনে ও খুশিই হল । কথাটা নেহাত্ মিথ্যাও না ।
কমিউনিটি সেন্টারে অনীনদিতার এক বান্দবীর সাথে দেখা হয়ে গেল । বান্ধবীর নাম নুপুর । নুপুরের সাথে ও একসাথে কলেজে পড়াশুনা করেছে । অনেক দিন পরে দেখা তবুও চিন্তে কারওই খুব একটা অসুবিধা হল না । সেই অনুষ্ঠানেই অনীনদিতাকে দেখে ছেলেটা । ছেলেটা নুপুরের বড় ভাই নিলয় । ব্যাংকে জব করে । দেখতে শুনতেও চমত্কার ।
নুপুরই নিলয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । সারাটা অনুষ্ঠানে অনীনদিতা স্পষ্টই বুঝতে পারছিল যে ওর উপর এক জোড়া চোখ নিবদ্ধ আছে । একটু অস্বস্থি লাগলেও অনীনদিতা কিছু বলে নাই ।
কিন্তু যখন অনুষ্ঠান শেষে বের হতে যাবে তখনই নুপুর ওকে দাড় করিয়ে ওর ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে বলে । নুপুরের ভাইয়া নাকি ওকে অনেক পছন্দ করেছে । বিয়ে করতে চায় । একটু অবাক হলেও সামলে নিলো !
অনীনদিতা প্রায় পরিস্কার ভাবেই বলে দেয় যে ও বিয়েতে আগ্রহী না ।
তারপর থেকেই শুরু হয়েছে অনুসরন । প্রথম দুদিন ও ঠিক মত বুঝতে পারে নাই ।
কিন্তু এক সময় অবাক হয়ে আবিষ্কার করে যে নিলয় নিয়মিত ওকে অনুসরন করে । অনীনদিতা প্রতিদিন অফিস যাওয়ার জন্য মোহাম্মাদপুর বাস স্টান্ডে আসে । ওখান থেকেই বাসে ওঠে । কয়েকদিন পরেই ও লক্ষ্য কর নিলয়ও ঠিক একই জায়গা থেকে বাসে ওঠে এবং একই বাসে ওঠা । যদিও নুপুর দের বাসা মোহাম্মাদপুরে না !
বাসের ভিতর বসে ওর দুতিন সিট পেছনে এবং প্রায় একই ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে ।
অফিস থেকে ফেরার পথেও ঠিক একই কাজ । অফিস ছুটির সময়ে কোথা থেকে যেন ওর অফিসের সামনে এসে অপেক্ষা করে । ও যেখান থেকে বাসে ওঠে নিলয়ও সেখান থেকে সেই বাসে ওঠে ।
প্রথম প্রথম ব্যাপারটা গায়ে না মাখলেও এক সময় অনীনদিতা বেশ বিরক্ত বোধ করা শুরু করল । একদিন খুব ভদ্রভাবেই মানা করলো । কিন্তু খুব একটা লাভ হল না ।
সেই থেকে অনীনদিতা খুবই বিরক্ত ছেলেটার উপর ।
সুমির কাছে বলে মনে হচ্ছে বিরক্তিটা আরো বেশি বেড়ে গেল । সুমি বলল
-তোর ঐ বান্ধবীকে বল ব্যাপারটা !
-না । ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না ?
-তাহলে এক কাজ কর । আমাদের এলাকায় মুরগি মাসুদ নামে এক মাস্তান আছে । ওকে দিয়ে একটা পেদানী খাওয়াই ?
অনীনদিতা আবার বিরক্তি ভরা চোখে তাকালো সুমির দিকে ।
-আচ্ছা তাহলে আমার এক চাচাতো ভাই আছে RAB এ । ক্যাপ্টেন আরমান । ওকে বলি । ক্যাম্পে নিয়ে একটা ছ্যাচা দিয়ে দিবে ।
-সুমি তুই চুপ থাক । তোর প্যাচাল ভাল লাগছে না ।
-আরে শোন না ! আর একটা বুদ্ধি আছে !
-কি ?
-তোর ঐ ব্লগার বন্ধুকে বল । ব্লগে একটা জ্বালাময়ী পোষ্ট লিখুক । শিরোনাম হবে সামুর মহিলা ব্লগার যখন ইভটিজিংয়ের স্বীকার ! দেখবি কাজ হবে ।
অনীনদিতা এবার সত্যিই বিরক্ত হল ।
-শোন তোর কোন বুদ্ধি দেওয়া লাগবে না । আমাকে একটু ভাবতে দে ।
তবে মুরগি মাসুদ আর ক্যাপ্টেন আরমানের কথা অনীনদিতার মনে ধরেছে । দেখা যাক আর একবার কঠিন করে ও নিজেই ওয়ার্নিং দেবে । কাজ না হলে অন্য ব্যবস্থা ।
পরদিনই বাস্ট্যান্ড অনীনদিতা কঠিন কন্ঠে নিলয় কে ওকে অনুসরন করতে করতে মানা করলো । কথাবার্তার এক পর্যায় আসে পাশে লোক জনও জড় হয়ে গেল । নিলয়কে বেশ অপদস্থ করে ছাড়ল । তারপর থেকেই অনুসরন বন্ধ হল ।
অন্তত অনীনদিতার মনে হল যে ওকে কেউ ফলো করতেছে না । দিনকাল আবার স্বাভাবিক হয়ে এল ।
একদিন সুমির বাসা থেকে বের হতে হতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল । যদিও কাছাকাছিই ওদের বাসা তবে মাঝখানের এই পথটা একটু সুবিধার না । সুমি বলল
-তুই যেতে পারবি তো ?
-হুম পারবো ।
-না আমি আসি তোকে এগিয়ে দিতে ?
-তারপর তোকে এগিয়ে দিতে কে আসবে ?
-কেন তুই আসবি !
-তারপর আবার আমি তোকে এগিয়ে দিতে যাবো ? এভাবে সারা রাত চলবে তাই । শোন চিন্তার কোন কারন নাই । আমি চলে যাবো ।
সুমি বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে । গলির ভিতর দিয়ে যাস না । একটু ঘুরে যেতে হলেও বড় রাস্তা দিয়ে যাস ।
-ঠিক আছে ! আচ্ছা । সমস্যা হবে না ।
সুমিকে যদিও বলল যে গলির ভিতর দিয়ে যাবে না কিন্তু অনীনদিতা গলির ভিতর দিয়েই যাবার সিদ্ধান্ত নিল । ঘুরে গেল আধা ঘন্টার উপরে লাগবে । আর গলিটা দিয়ে গেলে দশ মিনিট বড় জোর । আর এখনও রাত খুব বেশি হয় নাই সুতরাং সমস্যা নাই ।
কিন্তু গলির ভিতর ঢুকেই মনে হল হয়তো একটু ভুল করে ফেলল । পুরো গলীটা একেবারে অন্ধকার হয়ে আছে । মনের ভিতর একটা কু ডেকে উঠল । তবুও অনীনদিতা পাত্তা দিল না ।
মোবাইলে টর্চ জ্বালিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল । মোবাইলের ক্ষুদ্র টর্চ গলির অন্ধকার তো দুর করলোই না বরং আরো একটু গুমট করে তুলল । অনীনদিতা এগুতে লাগলো !
কয়েক পা এগিয়েছে তখনই অনীনদিতা পেছনে কার যেন আওয়াজ শুনতে পেল । মৃদু হাটার আওয়াজ । ওর সাথে সাথে এগিয়ে আসছে ।
অনীনদিতা গলির মাঝ বরাবর থেমে গেল । পায়ে আওয়াজও থেমে গেল । অনীনদিতার বুকের ভেতর কেমন একটা ভয় ভয় করছে । পেছন যে আছে যদি এই গলির ভিতর ওকে চেপে ধরে কিছু একটা করে ফেলে তাহলে ওর কিছুই করার থাকবে না ।
না এখান দিয়ে আসাটা ওর একদম ঠিক হয় নাই । ঘুরেই আসা দরকার ছিল ।
অনীনদিতা আবার কয়েক কদম হাটল । পেছন থেকেও আবার কয়েক কদম হাটার আওয়াজ ।
কি করবে এখন ?
সামনের দিকে দৌড় দিবে ?
কোন ভাবে গলির মাথায় যেতে পারলে আর কোন সমস্যা নাই । নাকি পেছনে ঘুরে দেখবে । পেছনে যে আছে নিশ্চই প্রস্তুত হয়েই আছে । দৌড় দিতে গেলে খপ করে ধরে ফেলতে পারে । তার চেয়ে পেছন ফিরে ব্যাটা কে একটা ধাক্কা দেওয়া যাক । লোকটা নিশ্চই ভাববে না যে অনীনদিতা পেছন ফিরে চাইবে । এতে করে কিছু সময় পাওয়া যাবে । যেই ভাবা সেই কাজ । অনীনদিতা ঝট করে পিছন ফিরে চাইলে । ঠিক তকনই ওর মনে হল দ্রুত একটা আকৃতি ওর পেছন থেকে সরে গেল !
কিন্তু খুব বেশি দ্রুত সরে যেতে পারলো না । মোবাইলের মৃদু আলোতে ঠিকই অনীনদিতা নিলয়ের চেহারাটা দেখে ফেলল !
মূহুর্তের ভিতরেই অনীনদিতার সব ভয় রাগে রূপান্তরিত হয়ে গেল !
ব্যাটা ফাজিল !
এখনও ওকে অনুসরন করে !
কালকেই এর একটা বিহিত করতে হবে !
পরডিন সকালের দিকেই অনীনদিতা নুপুরের বাসায় হাজির হল । নুপুর কিছু কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতু নিচ্ছিল ! অনীনদিতাকে দেখে খানিকটা অবাক হল !
-তুই এখানে ?
-কোথাও যাচ্ছিস ?
-হুম ! এতো সকালে ? কোন জরুরী কিছু !
-হুম !
অনীনদিতা বেশ গম্ভীর কন্ঠেই বলল ! তারপর আস্তে আস্তে সব কিছু খুলে বলল ! প্রথম প্রথম কিছু না বললেই যখনই অনীনদিতা গত রাতের কথা বলল নুপুর যেন আকাশ থেকে পড়লো !
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-তোর সব কথাই আমি মেনে নিচ্ছি ! ভাইয়াটা একটু এরকমই ছিল ! তোকে তার অনেক মনে ধরে ছিল ! কিন্তু কালকের যে কথাটা তুই বললি তা সম্ভব না কিছুতেই !
-মানে কি ? তুই কি বলতে চাস আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি !
-তা আমি বলতে পারবো না তবে কালকে ভাইয়া কিছুতেই ওঐ গলির ভিতর আসতে পারে না !
-কে পারে না ? কেন ? দুই মাস ধরে আমি যেখানেই গেছি তোর ভাই আমাকে ছায়ার মত ফলো করেছে কালকে কেন নয় ?
-কারন .........। কারন ভাইয়া মারা গেছে ?
-মানে ?
নুপুর বেশ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ! অনীনদিতা কিছুই যেন বুঝতে পারছিল না !
নুপুর বলল
-তুই সেদিন বলার পর ভাইয়া আর যায় নাই । তারপর একটা স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায় জার্মানী ! কিন্তু জার্মানী পৌছাতে পারে নাই ! পথেই প্লেন ক্রাস করে !
অনীনদিতা প্রথমে যান বিশ্বাসই করতে পারলো না কি বলছে নুপুর ।
তারপর নুপুর একটা পত্রিকা এনে দিল ! সেখানে মোটামুটি সব কিছুই লেখা ছিল !
নুপুর আর দাড়ালো না ! কিছুতেই যেন মেলাতে পারছে না কিছু ! কালকে ও স্পষ্টই দেখেছে ! তাহলে ?
কাকে দেখলো ?
ভুল কিছু দেখেছে ?
এ প্রশ্নের জবাব কিভাবে পাবে !!
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:০৫