-জনি ভাই !
সিড়ি দিয়ে নামছিলাম । দুইতলার পার হতেই পলিনের ডাকটা কানে এল । এই সকাল বেলা করে পলিন কেন ডাকতেছে ?
আমি একটু না শোনার ভান করে চলে যেতে চাইলাম । আগে একটা সময় ছিল পলিনের ডাক শুনেই বুকের ভিতর একটা ঢেউ উঠত ! কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম এই মেয়েটা আমাকে অবহেলা করছে সেদিন থেকে ওর কাছ থেকে দুরে থাকতে চেয়েছি ।
ইদানিং পলিন আমাকে কেবল মোবাইলের ফ্লেক্সি করার জন্যই ডাক দেয় ।
ফাজিল মেয়ে !
হ্যা, যদি নিজের মোবাইল নাম্বারে টাকা ভরতে দিতো তাইলে একটা কথা ছিল !
প্রথম যেদিন আমাকে ডেকে বলল
-ভাইয়া এই নাম্বারে ২০ টাকা পাঠাবেন প্লিজ ।
নাম্বারটা একটা কাগজে লেখা ছিল ।
আমার মনটা তো খুশি হয়ে গেল । কয়েকদিন আগে অপু তানভীরের একটা গল্পে পড়েছিলাম বাড়িওয়ালার ভাতিজি এমন করে নিজের নাম্বারটা ছেলেটার কাছে দেয় । তারপর তাদের প্রেম শুরু হয় ।
যাক বাস্তব জীবনেও এমন হয় ! মনে একটা ফুড়ফুড়ে ভাব নিয়ে মোবাইলে টাকা পাঠালাম । ২০ টাকা বলেছিল আমি ৫০ টাকা পাঠিয়ে দিলাম ।
দেখা হলে নিশ্চই বলবে । টুকটাক কথা হবে । আর মোবাইল নাম্বারটা তো রয়েছেই আমার কাছে !
কিন্তু দুবার দেখা হওয়ার পরেও পলিন কোন টাকার কথা বলল না ।
আশ্চার্য !
একবার তো বলা উচিত্ ছিল । না বলার কারন বুঝতে পারলাম তার পর দিনই ।
বিকেলে ছাদে পলিনের সাথে যখন দেখা হল নিজেই গিয়ে জানতে চাইলাম ।
-টাকা গিয়েছিল কালকে !
-টাকা ?
পলিনের চোখে একটা অজানা ভাব । আমি ভাবলাম হয়তো টাকা যায় নাই । বললাম
-ঐ যে কালকে টাকা দিলে না মোবাইলে ভরার জন্য, গেছে ?
পলিন একটু দাঁত কামড়ে বলল
-বলতে পারবো না জনি ভাই ।
-মানে কি ?
-না মানে বুয়ার মোবাইল তো ! আমি ঠিক বলতে পারবো না ।
আমি থ হয়ে গেলাম । মানে একেবারে হেপাজতি হইয়া গেলাম । কি ভাবছিলাম আর কি হইল !
আমি একবার মনে করলাম পলিনের ডাকটা না শুনেই নিচে চলে যাবো কিন্তু যাওয়া হল না ।
-জনি ভাইয়া ! অফিস যাচ্ছেন ?
না । আমি এই সাত সকালে ফরমাল পোষাক পরে ম্যারাথন দৌড়ে যাচ্ছি । আচ্ছা এই মেয়ে এমন ন্যাকামো কেন করছে ? আমি একটু গম্ভীর মুখে বললাম
-এই সকাল বেলা তো অফিসেই যায় মানুষ ।
-ও হ্যা ! আমিও না একটা গাধা ।
মনে মনে বললাম গাধা না । মহিলা গাধা ! পলিন মিষ্টি করে হেসে বলল
-আপনি ব্লগ লেখেন ?
-এই টুকটাক লিখি ।
-এস আর জনি এটা আপনার নিক ?
-হুম ।
-হায় আল্লাহ ! আমি এতো দিন বুঝতেই পারি নি । আপনি খুব সুন্দর করে লেখেন ।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । ঠিক বুঝতে পারছি না এই মেয়ে এমন করছে কেন ?
-আপনাকে একটা রিকোয়েষ্ট করবো ?
-কর ।
-আমি আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠালে আপনি এক্সসেপ্ট করবেন ?
-কেন করবো না ?
-তাহলে আমি পাঠাচ্ছি । আপনি অফিস গিয়েই এক্সসেপ্ট করবেন কেমন !
-আচ্ছা ।
-তাহলে আপনি এখন জলদি জলদি অফিস যান । কেমন ! আর শুনুন ঐ কনফেশন পাতার লেখা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না কেমন ? এটা ফালতু লোকের কাজ । ভীরু লোকের কাজ ।
-আমি জানি ।
পলিন বলল
-আসলে আপনার জনপ্রিয়তা দেখে হিংসায় জ্বলতেছে তো তাই লিখছে । আচ্ছা আপনি এখন জলদি জলদি অফিসে যান । আর জলদি জলদি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এক্সসেপ্ট করেন ।
-আচ্ছা ।
আমি আবার নামতে শুরু করলাম ।
আচ্ছা ! তাহলে পলিন ঐ কনফেশন পাতায় আমার নাম দেখে আমাকে চিনেছে ।
আসলে ঘটনা সত্য । কয়েকদিনে বেশ কয়েকটা কনফেশন এসেছে আমার নামে । ইদানিং ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট আসা শুরু হয়েছে । সাথে টুকটাক মেসেজও ।
গত পরশুদিন এক মেয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে যে আমি তো বিয়ে করার জন্য পাত্রী খুজতেছি । সে সেই পাত্রী হতে চায় । যে কোন মূল্যেই । আমি খুব বেশি কথা আগে বাড়াই নাই । পলিনের রিকোয়েষ্টটা বাসে বসেই মোবাইল থেকে এক্সসেপ্ট করে ফেললাম ।
অফিসে ঢুকেই দেখি কলিগ সোনিয়া কেমন চোখে তাকাচ্ছে । একটু হাসিও দিল । কদিন থেকেই এই হাসি শুরু হয়েছে । ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না ।
খানিক্ষন এসির ভিতর বসে ঠান্ডা হলাম ।
-স্যার ।
অফিসের পিয়নটা ।
-বল ।
-একজন আপনার সাথে দেখা করতে আসছে ।
-কে ?
-আফসানা নাম বলল ।
আফসানা ? ও এখানে কি করছে ? কদিন আগেই ব্লগে একটা পোষ্ট করেছিলাম পাত্রীদেখা বা পাত্র হিসাবে ইন্টারভিউ দেওয়া । ঐ পোষ্টের চরিত্র আফসানা । মানে কদিন আগে ওর সাথে আমার বিয়ের কথা বার্তা চলছিল । খুব বেশি দুর এগোয় নাই ।
কিন্তু ঐ মেয়ে এখানে কেন এসেছে ? বয় কে বললাম
-নিয়ে এসো ।
কিছুক্ষন পরেই আফসানা রুমে ঢুকলো ।
আমি খানিকটা তাজ্জব হয়ে গেলাম । আজকে আফসানা শাড়ি পরে এসেছে । ঐ দিনকার মত এতো গহনাও পরে নি । মানে আমি ওকে সেদিন যে যে কথা গুলো বলেছিলাম সেই ভাবেই এসেছে । চেহারায় আজ কোন অহংকারি ভাব নেই বরং একটা নমনীয়তা আছে ।
-বসবো ?
-হ্যা । বসুন ।
কিছুক্ষন কোন কথা নাই । আমি বললাম
-আপনি এতো সকালে ? আমার অফিসে ?
আফসানা মিষ্টি করে হাসলো । বলল
-ঐ দিন আসলে আমার ভুল হয়েছিল । ঐ রকম আচরন আপনার প্রাপ্য ছিল না ।
-না ঠিক আছে ।
-না ঠিক নাই । আপনি বলেন আপনি কিছু মনে করেন নি !
-আচ্ছা ঠিক আছে । আমি কিছু মনে করি নি ।
-তাহলে আজকের ডিনার আমার সাথে করবেন, যদি না করেন তাহলে বুঝবো আপনি এখন আমার উপর রাগ করে আছেন ।
আফসানার আরো কিছুক্ষন কথা হল ।
আজকে কি হচ্ছে এই সকাল বেলা । সব ঐ কনফেশন পেজের দোষ ! কনফেশন পেজের কথা মনে হতেই ফেসবুক অন করলাম ।
বেশ কিছু ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এসেছে । ইনবক্সও দেখি করেছে অনেকে । দেখতে দেখতে আটকে গেল একটা মেসেজে । সেদিনের ঐ মেয়েটা যে আমার বিয়ের পাত্রী হতে চেয়েছিল ।
আজকে লিখেছে আমি যদি ওকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করি তাহলে সে সুইসাইড খাবে ।
কি রে ভাই !
এমন পাগল হইলি কেন । আমি মেসেজের রিপ্লে দিতে যাবো দেখি পলিন আমাকে নক করল
-জনি ভাই ।
-বল ।
-আপনার লেখা পড়ছি । আপনি এতো হাসাতে পারেন ।
এরই মাঝে দেখি ঐ মেয়েটা ।
-জনি ! আমি জানি তুমি তুমি পিসি সামনে আছো । এখনই রিপ্লে দাও ।
পলিনঃ শুনেন আপনাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি ।
-কি ?
ঐ মেয়েটাঃ এই তুমি কেন রিপ্লে দাও না ?
পলিনঃ শুনেন আমার কয়েকটা বান্ধবী আপনাকে রিকোয়েষ্ট পাঠাবে । আপনি খবরদার কিন্তু ওদের টা এক্সসেপ্ট করবেন না ।
ঐ মেয়েটাঃ জনি । এই জনি ।
আমিঃ কেন ?
পলিনঃ করবেন না । ব্যাস করবেন না ।
ঐ মেয়েটাঃ জনি তুমি যদি এক মিনিটের ভিতর রিপ্লে না দাও ..
ওপাশ থেকে আবার কে নক করে ?
নাহ !
আর বাঁচি না । আর একটা চ্যাট বক্স খুলতেই যাবো মোবাইল বেজে উঠল ।
আফসানা !
আজকে আমি শেষ ! হঠাত্ করে এতো নারীর আগমন ঘটলো কেন আমার জীবনে ?
-হ্যালো ।
আফসানা বলল
-কাজ করছেন ?
-একটু ব্যস্ত আরকি ।
-আচ্ছা বেশি সময় নেব না ।
-বলুন ।
-একটু কথা বলতে ইচ্ছা হল ।
ঐ দিকে পলিনঃ জনি ভাই । আপনি রাগ করলেন ?
ঐ মেয়েঃ কথা বলছো না কেন জনি ।
পলিনঃ বলুন না ।
ঐ মেয়েঃ এই জনি ।
আফসানাঃ আচ্ছা আপনার ঐ কবিতাটা আমি পরেছি ...
হঠাত্ আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল । চোখে মুখে কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার ঠেকছে ।
কেউ যেন দুর থেকে আমাকে ডাকছে ।
কে ডাকছে ?
কোন মেয়ের ডাক শুনতে চাই না আর !
(গল্পটি জনি ভাইয়ের অনুরোধক্রমে লেখা। সব চরিত্র কাল্পনিক)