সাদা চুরিদাড় বা সাদা ল্যাগিংসয়ের উপর আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে । কোন মেয়ে যদি এই সাদা ল্যাগিং বা চুরিদাড় সেলোয়ার কামিজ পরে এসে আমাকে প্রোপোজ করে আমি নির্ঘাত হ্যা বলে দেব ।
যদিও সেই সম্ভাবনা খুবই কম । এই টাইপের পোষাক পরা মেয়ে গুলো কেন জানি খুবই মুডি হয় । অন্য কারো দিকে ফিরেও তাকায় না । তারা খুব ভাল করেই জানে যে মানুষ জন তাদের দিকে তাকাবে ।
কিন্তু এই মেয়েটা আমার দিকে তাকাচ্ছে কেন ?
বড়ই রহস্যময় ব্যাপার !
সকাল বেলা এই মেডিক্যাল কলেজ মোড় টাতে এসেছিলাম আড্ডা মারতে । সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হয়েছে । এখনও ক্লাস শুরু হয় নাই । তার উপর আমার কম্পিউটার টা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে । সময় কাটানোর এক মাত্র উপকরন হচ্ছে এই আড্ডা ।
কিন্তু আজকে যেন একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছি । রমিজ মামার দোকানের পাশে দাড়িয়ে চা খাচ্ছি ঠিক তখনই মেয়েটাকে দেখতে পেলাম ।
আকাশী রংয়ের একটা শর্ট কামিজের সাথে ধবধবে সাদা ল্যাগিং । আর হাতে এপ্রোন । মানে ডাক্তার ! এই মেয়ের ভাব বেশি হবার কথা !
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন । খানিকটা অবাক লাগছে যে মেয়েটির চেহারা কেমন যেন পরিচিত মনে হল ।
অবশ্য প্রত্যেক লুল পাবলিকেরই সুন্দর চেহারার মেয়েদেরকে পরিচিত মনে হয় ।
তাই আর সেদিকে গেলাম না । কিন্তু একটু পর আমি অবাক হলাম এই দেখে মেয়েটিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
হ্যা, এমন হতে পারে যে যখন কোন ছেলে কোন মেয়ের দিকে তাকায় তখন মেয়েটিও ছেলেটির দিকে তাকায় । খানিকটা বিরক্তও হয় মাঝে মাঝে । অবশ্য সবাই হয় । সেটা হয় স্বল্প সময়ের জন্য ।
কিন্তু এই মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে খানিকটা পরিচিত ভঙ্গিতে । একটু যেন হাসি মুখে । বহু দিন পরে যেন কোন পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেছে এমন একটা কিছু ।
তাহলে কি মেয়েটি সত্যি আমার পরিচিত ?
গিয়ে কি কথা বলব ?
আমি আমার আসে পাশে একবার তাকিয়ে নিলাম । এটা নিশ্চিত হওয়া দরকার যে মেয়েটি আসলেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে । দেখা যাবে মেয়েটি আমার দিকে না আমার পিছনে বা আসে পাশের কারো দিকে তাকিয়ে হাসছে । কথা বলতে গিয়ে শেষে বেইজ্জত হব ।
একবার বসুন্ধরায় দাড়িয়ে আছি । হঠাত্ পাশে একটা মেয়ে এসে বলল
-কেমন আছে ? বহুদিন কোন খোজ খবর নেই যে !
অপরিচিত মুখ তবুও আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । বললাম
-আমি ভাল আছি ।
মেয়েটি আমার দিকে কিছুক্ষন শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল । তারপর চুলের আড়াল থেকে কানের হেড ফোন খুলে বলল
-আপনি আমাকে কিছু বললেন ?
আমি থ হয়ে গেলাম । এই মেয়েটি আসলে ফোন কথা বলছিল আর আমি বেকুবের মত ভেবেছি আমাকে বলেছে ।
অতি উত্সাহী লুল পাবলিকের যা হয় আর কি !
আমি তাই এই বার আর রিক্স নিলাম না । এই সকাল বেলা বেইজ্জত হওয়ার কোন ইচ্ছাই আমার নাই । আমি আসেপাশে আর একবার তাকিয়ে নিলাম ।
চা ওয়ালা মামা আর আমি ছাড়া তো আর কাউকে দেখাও যাচ্ছে না ।
তাহলে কি ?
আমি আবার যখন মেয়েটির দিকে তাকালাম তখন দেখি মেয়েটি আমার দিকে হাটতে শুরু করেছে ।
ও মাই গড !
এদিকেই আসছে নাকি ?
মেয়েটি আমার কাছেই এল । আমি যে বেঞ্চে বসেছিলাম মেয়েটি তার অপর প্রান্তে বসল । তারপর মামাকে চা দিতে বলল ।
মেয়েটি যখন চায়ে চুমুক দিচ্ছে তখন আমি খানিকটা সাহস নিয়ে বললাম
-এক্সকিউজ মি ?
মেয়েটি আমার দিকে তাকাল ।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করব ?
মেয়েটি কোন জবাব না দিলেও মাথা নুইয়ে সম্মতি দিল । ওর মুখ দেখে মনে হল ও খুব কৌতুক বোধ করছে ।
-আমি কি আপনাকে চিনি ? মানে আমাদের কি আগে দেখা হয়েছে ?
আমার মনে হল মেয়েটি এখনই বলবে এই কথা আর কয়জন কে বলেছেন ?
কথা অবশ্য সত্যি এর আগেও আমি এই কথা অনেককেই বলেছি । মেয়েদের সাথে কথা শুরু করার একটা পুরানো স্টাইল ।
কিন্তু মেয়েটি যা বলল তাতে আমি খানিকটা না বেশ খানিকটা অবাক হলাম ! মেয়েটি বলল
-আমি তোমার পরিচিত কিনা বলতে পারছি তবে তুমি আমার পরিচিত অপু সাহেব !
এই বলে মেয়ে রহস্যময় হাসি দিল ।
এই মেয়েটি আমার নাম জানে ! তার মানে মেয়েটি আমাকে চেনে । সেই হিসাবে আমারও মেয়েটিকে চেনার কথা । আমি খানিকটা ইতস্তত করে বললাম
-আপনি আমার.....
আমাকে মেয়েটি থামিয়ে দিয়ে বলল
-তুমি !
-আচ্ছা । তুমি আমাকে চিনো ? আমায় নাম জানো ?
-আমি যতদুর জানি তোমার নাম অপু । তোমার বাবা একজন ব্যাংকার । তাই না ?
তারপর মেয়েটি আস্তে আস্তে অনেক কথাই বলল যার মানে মেয়েটি আমার পরিচিত । কিন্তু মেয়েটিকে আমি চিন্তে পারছি না কেন ? এতো সুন্দরী মেয়ে আমার পরিচিত অথচ আমি চিন্তে পারছি না ! মেয়েটি আর কিছু বলল না ।
আমি অনেক জিজ্ঞেস করার পরেও কিছু বলল না । কেবল হাসল । বলল
-চেষ্টা করে দেখো আমাকে চিন্তে পারো কিনা । কালকে দেখা হবে আবার ।
মেয়েটি আর দাড়াল না ।
-আমার ক্লাস আছে । যাই ? আর চায়ের বিলটা দিয়ে দিও । টাটা ।
মেয়েটি হাসতে হাসতে চলে গেল ।
-নামটা অন্তত বলে যাও ।
-নাম বললেই তুমি চিনে যাবে । তবে এই টুকু বলি আমি তোমার স্কুলের বন্ধু । ভাল থেকো ।
মেয়েটি চলে গেল ।
আমি রুমে এসেও মেয়েটিকে মাথা থেকে বের করতে পারলাম না । স্কুলের কথা গুলো মনে করতে লাগলাম ।
কে হতে পারে ?
এই মেয়েটির সাথে মিল এমন কাউকে তো মনে পড়ছে না ।
ওয়েট !
একটা মেয়ে ছিল !
মেয়েটার মুখের সাথে এই মেয়েটার বেশ মিল ।
লিরা নাম মেয়েটার ।
মেয়েটির কথা আমার খুব ভাল মনে আছে ।
কিন্তু লিরা তো খুব মোটা ছিল । এই মেয়ে সেই মেয়ে হতে পারে না ।
তাহলে ?
রাতেও অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু মেয়েটাকে কিছুতেই চিনতে পারলাম না ।
পরদিন সকালে আবারও মেয়েটার সাথে দেখা । আমি ঐ মামার দোকানে বসে ছিলাম । কেন জানি মনে হচ্ছিল মেয়েটা আসবে !
বসে বসে চা খাচ্ছি ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ আমার কাধে হাত রাখল । পিছনে তাকিয়ে দেখি সে ।
-হাই । কি খবর ?
-ভাল ।
-চিন্তে পারলে আমাকে ?
খানিকটা কনফিউজ ছিলাম কিন্তু তবুও বললাম
-তুমি লিরা !
মেয়েটি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর বলল
আমি জানতাম তুমি আমাকে ঠিকই চিনবে ।
যাক ধারনা ঠিক হয়েছে । এ লিরাই ।
-কিন্তু তুমি এতো ...
আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে লিরা বলল
-কবছর পরে দেখা হচ্ছে ?
-পাঁচ বছর তো হবেই !
-এই সময়ে কত কিছু চেঞ্জ হয় !
-হুম । আমাকে মনে রেখেছ ?
লিরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাকে মনে রাখবো না ? এক মাত্র তুমিই ছিলে যে কেবল আমার মনের সাথে বন্ধুত্ব করেছিল । অন্যেরা তো কেবল আমার মোটা শরীরটাই দেখতো ।
আসলেই লিরা অনেক মোটা ছিল ।
মোটামুটি সবাই ই ওকে নিয়ে হাসি মশকরা করত । আমি নিজেও করতাম । কোনদিন চিন্তা করি নি ওর মনের অবস্থা কেমন হবে । একদিন টিফিন পিরিয়ডে লিরা দেখলাম স্কুলের পেছনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে । ঐদিন সকালেই ওকে নিয়ে একটু হাসাহাসি করেছিলাম ।
নিজের কাছে এতো খারাপ লাগল । খুব বেশি অপরাধী লাগছিল নিজের কাছে ।
স্কুল ছুটির পরে আমি লিরার জন্য অপেক্ষা করছিলাম । লিরা এমনিতে সবার পরে বের হত । আমি ওর পথ রোধ করে দাড়ালাম । আমাকে ওভাবে দাড়াতে দেখে লিরার মুখটা একটু কালো হয়ে গেল ।
-বাসায় যাবে ?
-না ।
-টিউশনী ?
-হুম ।
-আজকে না গেলে হয় না ?
-কেন ?
-তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যেতাম !
-কেন ? আমি তোমার সাথে কেন যাবো ?
-কারন আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত্ !
-কিসের সুযোগ ?
-আমি একটা অপরাধ করেছি সেই অপরাধটার প্রাশচিত্ত করার সুযোগ ।
-কি অপরাধ ?
-একজনের মনে কষ্ট দিয়েছি ।
লিরা কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল আমার দিকে । বোঝার চেষ্টা করছিল যে আমি ওর সাথে ফান করছি কি না ! আমি বললাম
-দেখো আমি সবার সাথে এমনি ইয়ার্কি ফাজলামি করি । কিন্তু কাউকে কষ্ট দিতে চাই নি কোন দিন ।
লিরা আমার কথা শুনছিল মন দিয়ে ।
আমি জানি আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি । একটা সুযোগ দাও ।
লিরা রাজি হল । ঐ দিন লিরাকে নিয়ে অনেক ঘুরলাম । প্রথম প্রথম ও একটু অস্বস্থি বোধ করছিল তারপরে ঠিক হয়ে গেল । পার্কে ঘুরতে গেলাম ফুচকা খেলাম । নিজে হাসলাম ওকে হাসালাম । যদিও মানুষজন ওকে আর আমাকে দেখে কেমন চোখে তাকাচ্ছিল । আমাদের ঐ দিকে তাকানোর টাইম কই ?
সন্ধ্যার সময় যখন ওকে বাসায় পৌছে দিলাম ওর চেহারায় কেমন একটা চমক ছিল । আমি বললাম
-তুমি আমাকে মাফ করেছ তো ?
লিরা হেসে বলল
-আমি আমার সারা জীবনে এতো চমত্কার সময় কাটাই নি ।
-আহা ওযেট কর না । সামনে আরো মজা হবে ।
-তাই ?
-হুম । আচ্ছা আমি যাই । কালকে দেখা হবে আবার ।
-হুম ।
হঠাত্ আমার কেন জানি একটু দুষ্টামী করতে মন চাইলো । লিরাকে বললাম
-একটু চোখ বন্ধ কর তো ।
-কেন ?
-আহা কর না ।
লিরা চোখ বন্ধ করলো । আর আমি তখনই ওর গালে টুপ করে একটা চুমু খেলাম । ওর চোখ সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেল । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল খুব অবাক হয়েছে ।
খুব বেশি অবাক !
-এটা কি করলা ।
-কিছু না । রাগ কর কেন ?
আমি ওকে টাটা জানিয়ে চলে এলাম ।
সেই মোটা লিরা আজ আমার সামনে এটা ভাবতেই অবাক লাগছে । লিরা এখন যেমন স্লিম হয়েছে দেখতেও তেমনি সুন্দর হয়েছে । আর নিজেকে তেমনী মাবে প্রেজেন্ট করতে শিখেছে ।
-এই কি ভাবো ?
-কিছু না । তোমাকে দেখতেছি ।
-তুমি আসলেই লিরা তো ?
-কেন ? বিশ্বাস হচ্ছে না ?
-না মানে তুমি এতো সুন্দর হলে কিভাবে ?
লিরা আমার কথার জবাব না দিয়ে একটু রহস্যময় হাসি দিল । আমি বললাম
-ইস ! আবার যদি ঐ সময়টা পাওয়া যেত !
-কোন সময়টা ?
-ঐ যে তোমাকে নিয়ে ঘুরতাম । আর ...
-আর ?
-সন্ধ্যা বেলা যখন তোমাকে বাসায় পৌছে দিতাম তখন !
-তখন .?
-অপু তুমি ফাজিলের ফাজিলই আছো ।
-কিন্তু তুমি অনেক বদলেছো সুন্দরী !
-হয়েছে । এবার থামো ।
আমি বললাম
-আজকে সারা দিন তোমাকে নিয়ে ঘুরবো । তারপর সন্ধ্যার সময় তোমাকে বাসায় পৌছে দিব । সন্ধ্যা । আহা ! কতদিন এই রকম সন্ধ্যা আসে নাই ।
-তাই না ?
লিরাকে মিচমিচ হাসতে দেখলাম ।
-তুমি আসলেই ফাজিলই রয়ে গেছ !!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৩ রাত ১:৩২