মাংস কি ভাজবো ? নাকি ?
প্রশ্নটা অনীকার দিকে ছুড়ে দিয়ে মনে হয় ওকে একটু বিপদে ফেলে দিলাম । অন্তত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তো তাই মনে হল ।
অনীকা একবার আমার দিকে তাকাল আর একবার সদ্য কাটা মুরগিটার দিকে তাকালো ।
একটু ঠোট কামড়ালো ।
কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না ! আসলে যে মেয়ে কোন দিন রান্না ঘরে ঢোকে নি সেই মেয়ের কাছে এই প্রশ্ন করাটা বৃথা ।
আমি এখন অনীকাদের রান্না ঘরে অনীকার সাথে মুরগি রান্না করার প্রস্তুতি নিচ্ছি ।
হ্যা এখন এই প্রশ্নটা আসতে পারে যে আমি অনীকাদের রান্নাঘরে কি করছি ?
ভাল প্রশ্ন ।
দুপুরের কিছু আগে হঠাত্ আমাদের কলিংবেলটা বেজে উঠল । আমি দরজা খুলে দেখিই অনীকা ! একটু ইতস্তত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । কিছু বলতে চায় । কিন্তু বলতে খানিকটা ইতস্তত করছে । আমি বললাম
-কিছু বলবা ?
-হুম ।
-বল ।
-আসলে আমার আম্মুর শরীরটা খুব খারাপ ।
-ও ! হাসপাতালে নেওয়া লাগবে ?
-না । মানে আম্মু বিশ্রাম নিচ্ছে । আর আব্বা একটা জরুরী কাজে অফিসে । এখন বুয়া আসে নাই ।
-ও আচ্ছা ! তো তুমি কি চাচ্ছ ?
-আসলে এখন দুপুর হচ্ছে । বাসায় কিছু রান্না নাই । আম্মুকে রেখে বাইরেও যেতে পারছি না ।
-আমি খাবার কিনে এনে দেই ?
অনীকা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-আসলে আমাদের বাসায় সব বাজার করা আছে ফ্রীজে । আমি জানি আপনি খুব ভাল রান্না করেন । আমাকে যদি একটু হেল্প করেন ।
কোন মেয়ে আমার যদি আমার রান্নার প্রশংসা করে তাও আবার অনীকার মত একজন তাহলে তাকে সাহায্য করতেই হয় ।
সেই থেকে আমার অবস্থান অনীকাদের রান্না ঘরে । অবশ্য ঘরে ঢুকেই আগে অনীকার মায়ের সাথে দেখা করেছি । আন্টির শরীর আসলেই খারাপ । বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না । আমাকে ডেকে আনাতে অনীকাকে কিছুক্ষন বকাবকী করলো । আমি আন্টিকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
-আন্টি ! এটা কোন ব্যাপার না । আমি ওকে একটু দেখিয়ে দিলেই পারবে । বেশি সময় লাগবে না ।
অনীকার মা বলল
-যে মেয়ে কোন দিন রান্না ঘরে ঢুকে নাই সে কিভাবে পারবে ?
-আচ্ছা আন্টি কোন ব্যাপার না ।
অনীক আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কোন করলে ভাল হয় ? ভাজলে ভাল হবে ?
-মাছ হলে রান্না করা দরকার ছিল । কিন্তু মাংস না ভাজলেও চলে । আমার মনে হয় মাংস না ভাজলেই বরং বেশি ভাল । স্বাদটা বেশি ভাল বোঝা যায় ।
-তাহলে ভাইয়া ভাজার দরকার নাই ।
-দেখো সব কাটাকুটি শেষ । এখন তেল দিলাম কড়াইয়ে ।
অধীকা বলল
-এই না বললেন মাংস ভাজার দরকার নাই । তাহলে আবার ?
আমি হাসলাম ।
-আরে এই তেল মাংশ ভাজার জন্য না । দেখো এই দিলাম আদা আর রসুন । যতক্ষন না এইগুলা ভাজা না হয় ততক্ষন একটু ওয়েট করি ।
অনীকা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি যে মেয়ের সাথে বিয়ে করবেনহেই মেয়ের তো কপাল খুব ভাল হবে ।
-কেন ?
-এই যে আপনি এতো সুন্দর রান্না করতে পারেন ।
-হুম । বুঝলাম । এই দেখো ভাজা হয়ে গেছে । এবার পিয়াজ দিলাম । সাথে কাঁচা ঝাল । এবার যতক্ষন পর্যন্ত পিয়াজ একটু লাল না হয়ে যাবে ততক্ষন ভাজতে হবে । ঠিক আছে !
-হুম । ঠিক আছে । আচ্ছা বললেন না তো ?
-কি বললাম না ?
-আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড নাই ?
আমি একটু হেসে বললাম
-কেন ? এই কথা কেন জানতে চাইছো ?
-না মানে সেই লাকি গার্লের নাম জানতে মন চাচ্ছে ?
-আগে বল তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি ?
-ইস ! আমি আগে প্রশ্ন করেছি ।
-তো কি হয়েছে ? উত্তরও তুমি আগে দাও ।
-ইস !
এই বলে অনীকা আমাকে মুখ ভেঙ্গালো ।
-আহা বলেন না !
-এই তো দেখো পিয়াজ একটু লাল হয়ে গেছে । এখন মাংস দিয়ে দিলাম । এইটা কিন্তু একটু লক্ষ্য করার বিষয় । প্রথমে মাংশটা একটা পিয়াজের সাথে ভেজে নিবা । ঠিক আছে ?
-জি ঠিক আছে । সুমন ভাই । বললেন না ?
-তুমি কেন জানতে চাচ্ছ ?
-এমনি ! এমনি জানতে চাচ্ছি । আর একটা কথা বলি আমার কেউ নাই । আমি চেংরা ছেলেদের পাত্তা দেই না ।
-না দেওয়াই ভাল । শুনো এবার মাংশে একটু পানি দিতে হবে । কিন্তু তার আগে হলুদ মরিচ আর লবন দিতে হবে । এই দেখো । এবার আমাদের কাজ মোটামুটি শেষ । ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিলাম । তাহলে কসানোটা জলদি হবে । আর চুলার জ্বালটাও একটু বাড়িয়ে দিলাম ।
-এখন কি করবেন ?
-কিছু না, অপেক্ষা করতে হবে ।
-চলেন আপনাকে একটা জিনিস দেখাই ।
কি ?
-আহা ! চলেন না !
আমি অনীকার সাথে ওর রুমে গেলাম । অনীকা আমাকে ওর খাটের উপর বসিয়ে জানলার পর্দা গুলো খুলে দিল ।
-কি বলবা বল !
অনীকা একটু মিসকি হেসে বলল
-আপনি দেখতে পাবেন না । যার দেখার সে দেখে নিয়েছে ।
-মানে কি ?
-মানে কিছু না ।
এই বলে অনীকা হাসতে লাগল । আমি কিছুক্ষন পরে আবার রান্না ঘরের দিকে হাটা দিলাম । ততক্ষনে মাংশের সুগন্ধ বের হয়ে গিয়েছে । আমি মাংশ একটু নাড়তে নাড়তে দেখি অনীকা আমার পেছনে চলে এসেছে ।
-জানেন আপনাকে কেন আমার রুমে নিয়ে গেলাম ?
-কেন ?
আমি আবার ঢাকনা ঢেকে দিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এলাম ।
-আসলে ..
অনীকা আমার পিছন পিছনই আসতেছে ।
-আরে এতো পেচাচ্ছ কেন ? বলে ফেলো ।
-রাগ করবেন না তো ?
-রাগ করবো কেন !
-না বলেন রাগ করবেন না ।
-আচ্ছা রাগ করবো না । এবার বল ।
-আসলে যে জানলাটা দেখলেন না আমি খুলে দিলাম । ঐ বরাবর একটা ফাজিল ছেলে থাকে । আমাকে খুব জ্বালায় ।
-তারপর ?
-আমি ওকে সেদিন বললাম যে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে ।
-কিন্তু তুমি তো বললে তোমার বয়ফ্রেন্ড নাই ?
-আরে নাই তো ! আমি ওর হাত থেকে বাঁচার জন্য বলেছি ।
-ও ।
-কিন্তু ঐ পাজি ছোকরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না যে আমার বিএফ আছে ।
-তারপর ?
-প্রমান চায় ।
আমি কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম । আস্তে আস্তে সব কিছুই আমার মাথার আসতে লাগল । আমি বললাম
-আচ্ছা আমি হলাম সেই প্রমান ।
অনীকা একটু হেসে বলল
-জি ।
-কিন্তু এ তো ভুয়া প্রমান ।
-আপনি চাইলে সত্য প্রমান হতে পারে ।
আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম অনীকার দিকে । ওর চোখ দুটো একটু একটু হাসছে । দুষ্টামীর হাসি ! আমি কিছু বলতে যাবে তখনই আমার মনে পড়ে গেল যে এতোক্ষনে মাংসের পানি মনে হয় শুকিয়ে গেছে । আরে এখনই তো পানি দিতে হবে । না হলে পুড়ে যাবে ।
আমি আবার রান্না ঘরের দিকে দৌড় দিলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:১৬