ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে । একটু কোমরটা সোজা করলাম । এতোক্ষন মোটামুটি বাঁকা হয়েই ছিলাম । এতো খাটাখাটনি সব ঐ ফাজিল মেয়েটার জন্য । নিজে কিছু করবে না আমার ঘারে চাপাবে !
ফাজিলের ফাজিল !
আজ সকালে ক্লাস করতেছি এমন সময় নিশি আমাকে একটা ফাইল দিয়ে বলল
-এই নে ।
-কি এটা ?
-আমার এসাইনমেন্টের টপিক ।
-আমি কি করবো ?
নিশি যেন একটু বিরক্ত হল ।
-তুই কি করবি মানে ? এসাইনমেন্ট তুই করবি আর তুই নিবি না ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । কি বলে এই মেয়ে । আমি ওর এসাইনমেন্ট করতে যাবো কোন দুঃখে ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-মানে ?
নিশি আমার কথা শুনতে পাই নাই এমন একটা ভাব করে বলল
-শোন কালকে জমা দেওয়ার শেষ সময় । ভাল করে করবি । নাম্বার যদি কম পাই তোর কিন্তু খবর আছে ।
কি রে বাবা ! আমি এসাইনমেন্ট করে দেবো কি না সেটার ঠিক নেই এই ফাজিল মেয়ে নাম্বার নিয়ে আমাকে ধমকাচ্ছে ।
আশ্চার্য !
আমি আর একবার আড়মোড়া ভাঙ্গছি । এখন একটু ঘুমানো দরকার । কত আড়াম করে ঘুমাতাম কিন্তু ঐ ফাজিলটার জন্য দেরী হয়ে গেল । মনে মনে নিশিকে বকতেছি আর তখনই ফোনটা বেজে উঠল । যা ভেবেছিলাম তাই ।
নিশির ফোন ! আশ্চর্যের ব্যাপার হলেও সত্য যে আমি আগে যতবার নিশিকে মনে মনে বকা দিয়েছি ও ঠিক বুঝে গেছে । কেমনে বুঝে কে জানে ? আমি ফোন রিসিভ করলাম ।
-কি কাজ শেষ ?
-হুম ।
-আমাকে বকছিলি কেন রে ?
-আমি তোকে বকছিলাম ?
-দেখ ঢং করবি না । তুই খুব ভাল করে জানিস যে আমি ব্যাপারটা টের পেয়ে যাই ।
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে থাকি । নিশি বলল
-জানিস আজকে না জেরিনকে দেখতে এসেছিল । আমরা সবাই ওখানেই ছিলাম ।
-জেরিন ? তোর ঐ কাজিন ?
-হুম ।
-তারপর ? পছন্দ হয়েছে ?
-হবে না আবার ? তুই তো ওকে দেখেছিসই ।
-হুম ।
-আর একটা মজার ব্যাপার ঘটেছে ।
-কি ?
-ওরা আমাকেও পছন্দ করেছে ।
হঠাত্ করে যেন আমি একটু ধাক্কার মত খেলাম । কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললাম
-তারপর ?
নিশি বলল
তার আর পর কি ? ছেলে তো ভালই দেখলাম ।
-তুই রাজি ?
-দেখা যাক ! আচ্ছা শোন । এখন খুব ঘুম আসছে । কালকে সকাল সকাল আসিস । আচ্ছা ?
নিশি ফোন রেখে দিল ।
আমি কেবল চুপ করে কিছুক্ষন বসে রইলাম । কেন জানি সব কিছু ফাঁকা লাগছে । একটু যেন এলোমেলো । কতক্ষন ঐ ভাবে বসেছিলাম ঠিক বলতে পারবো না ফোনের আওয়াজেই আমার তন্ময় ভাঙ্গল ।
আবারও নিশির ফোন ! ঘড়িতে চারটা বেজে গেছে । তারমানে এক ঘন্টা বসেছিলাম একভাবে !
-বল !
-ঘুমাস নি ?
-এই তো ঘুমাবো !
-মিথ্যা কথা কেন বলিস ? ঘুম আসছে না তাই না ?
আমি কেন জানি লুকানোর চেষ্টা করলাম না আর । বললাম
-হুম । ঘুম আসছে না ।
-কেন ?
-জানি না ।
-আমি জানি ।
কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম দুজনেই । হঠাত্ নিশি বললাম
-ঐ দিন আমার হাত ধরেছিলি মনে আছে ?
কদিন আগে নিশি হাতে খুব সুন্দর করে মেহেদি দিয়েছিল । ওর সাথে রিক্সা করে যাওয়ার সময় বললাম
-বাহ ! সুন্দর করে মেহেদী দিয়েছিস তো !
-দেখ
এই বলে নিশি হাতটা এগিয়ে দিল । আমি ওর হাতটা ধরলাম । বলে বোঝানো যাবে না কিন্তু মনের ভিতর কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছিল । একটা ভাল লাগার অনুভুতি !
তারপর থেকে সুযোগ পেলেই আমি ওর হাত ধরতাম । কেন জানি ভাল লাগতো ।
কিন্তু হঠাত্ আজকে ও এই কথা টা বলল কেন ? আমি বললাম
-হুম । মনে আছে ।
-এখন আমি কি করছি জানিস ?
-কি ?
-ঐ রকম ভাবে মেহেদী দিচ্ছি ।
-তাই ?
-হুম । শোন কালকে সারাদিন তোর সাথে ঘুরবো । বুঝেছিস ? কোন কাজ রাখবি না । মনে থাকে যেন । এখন ঘুমা । জেগে থাকবি খবরদার !
নিশি ফোন রেখে দিল । আমি জেগে রইলাম । কেন জানি না । নিশি বলল আমার জেগে থাকার কারন ও জানে । আসলেই কি জানে ? কালকে জিজ্ঞেস করতে হবে ।