আপনার হাজবেন্ট মারা গেছে ?
মেয়েটি তার সামনে রাখা ভ্যানিলার আইসক্রিমের বাটি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকাল । চেহারায় এখনও সেই বিষন্নতার ছোঁয়া ।
কি ব্যাপার ? মেয়েটির কি আসলেই স্বামী মারা গেছে নাকি ?
আমার নিজের একটা থিওরি আছে । কোন স্বাভাবিক মেয়ে সামনে আইসক্রিমের বাটি নিয়ে বিষন্ন হয়ে বসে থাকতে পারে না । আপনার গার্লফ্রেন্ড যদি আপনার উপর রাগ করে অথবা অভিমান করে তাহলে তার সামনে এক বাটি আইসক্রিম রাখেন । দেখবেন আইসক্রিম যত দ্রুত গলবে তার থেকে দ্রুত আপনার গার্লফ্রেন্ডের অভিমান গলবে । আর আইসক্রিম যত মজাদার আর দামি হবে বিষন্নতা তত তাড়াতাড়ি গায়েব হয়ে যাবে ।
আর এই মেয়ে কি না ভ্যানিলার এতো বড় বাটি সামনে নিয়ে বিষন্ন হয়ে বসে আছে ।
আশ্চার্য ব্যাপার !
তাও আবার এই এরিয়্যানস এর মত আইসক্রিম পার্লারে ।
দি এরিয়্যানস ।
এটা আমার সব সময়ের পছন্দের জায়গা । যখনই আইসক্রিম খেতে মন চায় তখনই এখানে চলে আসি । বিশেষ করে যখন স্কুল ছুটি হয় । এই আসাদ এভিনিউ এর এই দিকটা বেশ ভিআইপি এলাকা । আর বেশ কয়েকটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে । পিক আওয়ারে দলে টিনএজ মেয়েরা এখানে আসে । কিচির মিচির করে । আমি মজা নিয়ে দেখি । মাঝে মাঝে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় । সে সব গল্প টল্প লেখার চেষ্টা করি ।
আর একটা কারন অবশ্য আছে । এই আইসক্রিম পার্লারটা একটু বিদেশী বিদেশী ভাব আছে । বিয়ার পাব গুলোতে যেমন দেখতে হয় এখান কার লুকটাও খানিকটা ঐ রকম ।
যাই হোক আজ বিকেল বেলা একটু বাইরে বের হয়েছিলাম । আসার পথে মনে হল একটু ঢু মেরেই যাই । আইসক্রিম নিয়ে বসেই ছিলাম তখনই মেয়েটার দিকে আমার চোখ গেল ।
কালো টিশার্টের সাথে কালো জিন্স পরেছে মেয়েটা । এই গরমের ভিতরেও যে মেয়েটা এমন কালো পোষাক পরেছে এটা ভেবে খানিকটা অবাক লাগছে । আর সব চেয়ে অবাক লাগেছে মেয়েটার বিষন্ন মুখ দেখে ।
আইসক্রিম সামনে নিয়ে বসে আসে ।
আশ্চর্য !
আমি মেয়েটির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার বললাম
-কি কিছু বলছেন না যে ?
মেয়েটি খানিক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল । বোঝার চেষ্টা করল আমি তার সাথে ফাজলামো করার চেষ্টা করছি কি না । আমি আমার চেহারায় একটা গাম্ভীর্য ধরে রাখার চেষ্টা করলাম । মেয়েটি বলল
-আমাকে কি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিবাহিত বা আর স্বামী আছে ?
-না । তা ঠিক মনে হচ্ছে না । তবে আজ কাল কার মেয়েদের বিশ্বাস নেই । যে হারে মেক আপ ব্যবহার করে এমনি তেই বয়স ১০ বছর কম মনে হয় ।
আমার এই কথা শুনে মেয়েটি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-আপনি কি চান আমার কাছে ?
-না মানে এই আপনার আইসক্রিমটা নষ্ট হচ্ছে । এটা আমার ভাল লাগছে না ।
-আপনি খাবেন ?
-আপনি খাবেন না ?
মেয়েটি বলল
-নাহ । আমার খেতে মন চাইছে না ।
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম
-কি বলেন এই সব ? আপনিতো দেখছি মানষিক ভাবে অসুস্থ । কোন স্বাভাবিক মেয়ে আইসক্রিম খেতে ভাল লাগছে না এমন কথা বলতেই পারে না । বলতেই পারে না ।
আমার এই কথা শোনার সাথে সাথেই মেয়েটির চোখ দুটো কেমন জানি তীক্ষ হয়ে উঠল । আমি খানিকক্ষন তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে মেয়েটির চোখে পানি জমতে শুরু করেছে ।
আমি চট জলদি বলে উঠলাম
-আরে আরে আমি তো এমনি এমনি বললাম । ইয়ার্কী মেরেছি । প্লিজ আপনি সিরিয়াসলী নেবেন না ।
মেয়েটি কিছুক্ষন সময় নিল নিজেকে সামলানোর জন্য ।
-না ঠিক আছে । বসুন । আইসক্রিম গলে যাচ্ছে ।
-আরে তাইতো ।
আমি আইসক্রিম খেতে বসে গেলাম ।
আহা ! এই মজার আইসক্রিম কেউ না খেয়ে থাকতে পারে ?
-আরে আপনিও নিন না ?
মেয়েটি হঠাত্ বলল
-আপনাকে দেখ একজনের কথা খুব মনে পড়ে গেল । অভিও এমন পাগলামো করত ।
-অভি ?
দেখলাম মেয়েটির মুখটা আবার বিষন্ন হয়ে গেল ।
-আরে আগে আইসক্রিম খান । কথা পরে হবে ।
আসাদ এভিনিউ সব সময় ব্যস্ত রাস্তা । সব সময় গাড়ি ঘোড়া আসছেই । কিন্তু আজকে পুরো রাস্তা কেমন ফাঁকা লাগছিল । বহুক্ষন পরপর একটা দুটো গাড়ি ভুস করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে । অবশ্য একটু রাত হয়ে গেছে ।
রাস্তায় হলুদ বাতির নিচে আমি হাটছি । সাথে মেয়েটি । অনেকক্ষন কেউ কোন কথা বললাম না । হঠাত্ মেয়েটি বলল
-আমার নাম লিয়ানা ।
-আমি অপু ।
-অপু সাহেব কাল রাতে আমি ঠিক করেছি যে সুইসাইড করবো ।
আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম
-এই জন্য পছন্দের আইসক্রিম খেতে এসেছিলেন শেষ বারের মত ?
-হুম ।
-আগে অভির সাথে আসতেন ?
-হুম । নিয়মিত আসতাম । আমি রাগ করলেই ও আমাকে এখানে নিয়ে আসতো । আমার সামনে কত রকমের আইসক্রিম এনে রাখতো । আমি রাগ কয়ে থাকতেই পারতাম না ।
আমি লিয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি কাঁদছে । এই হলুদ আলোতে মেয়েটির অশ্রু ভরা চোখে দেখতে কেমন অদ্ভুত লাগছে । অদ্ভুত সুন্দর ।
-কিভাবে সুইসাইড করবেন বলে ঠিক করেছেন ?
মেয়েটি দাড়িয়ে পড়ল ।
-আপনি আশ্চর্য মানুষ তো । আমি সুইসাইড করতে যাচ্ছি আপনি এটা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন । কারন জানতে চাইছেন না কিভাবে মরব সেটা জানতে চাইছেন ?
-কারনটা তো সোজা । অভি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে । আপনি এতো দিন ওকে ছাড়া থাকতে চেষ্টা করেছেন । এখন আর পারছেন না । তাই না ?
লিয়ানা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । আমি বললাম
-আসলেই আমার বন্ধু বলটু ঠিকই বলে । মেয়েদের মাথায় একটু বুদ্ধিসুদ্ধি কমই থাকে ।
লিয়ানা তীক্ষ কন্ঠে বলল
-মানে কি ?
-মানে হল যে প্রেমের কারনে ছেলেদের থেকে মেয়েদের সুইসাইডের সংখ্যা বেশি । আচ্ছা এটা কি বেকুবী না যে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য আপনি মরতে চলেছেন অথচ আর কত গুলো মানুষ আপনার আসেপাশে আছে যারা আপনাকে ছেড়ে যায় নি । কত গুলো মানুষ সামনে আসবে । তা না ...
আমি চুপ করে গেলাম । দেখলাম মেয়েটিও চুপ করে গেল । দুজন হাটতে হাটতে সংসদ ভবনের সামনে চলে এলাম । একটা জায়গা দেখে বসলাম চুপ করে । চারিদিকটা কেমন চুপচায হয়ে গেছে । লোক জনের সংখ্যাও বেশ কম । হঠাত্ আমি বললাম
-গাড়ির নিচে ঝাপ দিবে নাকি ? যদি চাকার নিচে ঠিক মত পড়তে পারেন তাহলেই কেল্লা ফতে ! কিন্তু ঠিক মত না পড়লে কাজ হবে না ।
-আপনি আচ্ছা ফাজিল তো ! আমাকে মরার বুদ্ধি দিচ্ছেন ?
-আরে আশ্চার্য । আপনার আইসক্রিম খেলাম । একটা দায়বদ্ধতা আছে না ?
মেয়েটি কিছু বলতে গিয়ে হেসে ফেলল । মেয়েটি বলল
-আপনি খুব মেয়ে পটাতে পারেন না ? কয়জন পটিয়েছেন এই পর্যন্ত ।
আমি একটু চিন্তা করছি এমন একটা ভাব করে বললাম
-এই সাড়ে বাইশ টার মত ।
-সাড়ে বাইশ ?
-হুম । বাইশটা তো পটিয়েছি । আর হাফ .. আপনাকে পটালাম ।
-তাই না ? এতোই সহজ ! শুনুন মিষ্টার মেয়েদের পটানো এতো সহজ না । অন্তত আমাকে তো না ।
-ওকে ঠিক আছে তাহলে বাইশটাই এন্ড ওয়ান ফোর্থই সই । এটাই কম কি ! দেখুন ওয়ান ফোর্থ তো আপনা পটেছেনই । তাই না ? তো কি ঠিক করলেন ? কিভাবে মরবেন ?
লিয়ানা এবার আসলেই জোরে হেসে উঠল । বলল
-আপনি আসলেই খুব ফাজিল টাইপের ছেলে !