-মানে কি ? কথায় কথায় এই রকম খুন ফেলবো ? খুন করা কি এতোই সহজ ?
-তুমি কথা ঘুরাবা না । এখন বল আমার গান কই ?
-আরে বাবা আগে কথা বলতে দাও । তুমি যে কথায় কথায় বল যে খুন করে ফেলবো তোমার তো এটেম্ট টু মার্ডার কেসে ফাসি হয়ে যাবে ।
-এই । একদম ফালতু কথা বলবা না । এখন বল আমার গান কই ?
-তোমার গান মানে ? তুমি আবার পিস্তল কিনলে কবে ? আর কিনলেই বা কি ? সেইটার কথা আমিজানবো কিভাবে ?
-দেখো । কথা ঘুরাবা না বলতেছি ।
আমি একটু চুপ করি । নিশির কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারছি ও রেগে যাচ্ছে। যাই হোক । এবার একটু ওকে ঠান্ডা করতে হবে ।
আমি বললাম
-আচ্ছা বল ।
-তুমি বলেছিলে যে আমাকে গান মেইল করবা । কিন্তু কর নাই ।
-আমার মনে নাই তো ।
আমার কথা শুনে নিশি খানিকটা অভিমানের সুরে বলল
-তা থাকবে কেন ? এখন তো আমি পুরানো হয়ে গেছি । তাই না ?
আবার সেই কথা ?
এই মেয়েটার সমস্যা কি ? কথায় কথায় বলে যে আমি পুরানো হয়ে গেছি । আমাকে আর ভালবাসো না । আমাকে আর আগের মত ভালবাস না । এটা একটা কথা ?
আমি বললাম
-এই কথাটা কেন বল বারবার ?
-তাহলে তুমি আমাকে গান পাঠাও নাই কেন ? আমার বুঝি শুনতে ইচ্ছা করে না ? আমার বাবুটা কি গান শুনে সেই গান বুঝি আমার শুনতে ইচ্ছা করে না ।
আমি এটু চুপ করি । মন টা কেন জানি ভাল হয়ে যায় মুহুর্তের ভিতরেই । নিশির এই ব্যাপার গুলো আমার খুব ভাল লাগে । আমি কি করি সেইটা ওর কাছে সব থেকে বেশি জরুরী ।
তখন প্রথম দিককার কথা । একদিন রাতে এমনিতেই ওকে বলেছিলাম যে আনলাকি থার্টিন গানটা আমার খুব পছন্দের । পরদিন সারাটা সময় ও নিউমার্কেট এলিফ্যান্ট রোড আর বসুন্ধরার সব দোকান ঘুড়ে বেরিয়েছে এই গান টার খোজে । আমাকে বলে নি । ওর মনে কেবল এই কথাটাই রয়েছে যে গানটা আমার ভাল লেগেছে । এটা ওর শুনতেই হবে । কি আশ্চার্য এই পাগলামী
আমার ভালই লাগে । এখন তার আবদার আমি প্রতিদিন কি গান শুনি সেইটা তাকে মেইল করতে হবে । কোন কথা নাই ।
যেদিন মেইল করবো না সেদিন নাকি আমি তাকে ভালবাসি নাই ।
তাকে মনে রাখি নাই ।
এইটা একটা কথা হল ।
আবার আমি গানের নাম বললে হবে না । সে নিজে নেট থেকে নামাতে পারবে না । আমি তাকে পাঠাবো তাহলেই সে শুনবে । তা না হলে হবে না । কোথায় যাবো আমি ।
-কি হল কথা বল না কেন ? নাকি এখন আমার সাথে কথা বলতেও ভাল লাগে না । তা লাগবে......
-আরে বাবা থামো । থামো । আর বল না ।
-তাহল কেন পাঠাও না কেন গান ।
আমি কিছু বলতে পারি না । আসলে নেটের বিল কয়েক মাস ধরেই বাকি রয়েছে । গত কালকে লাইন কেটে গেছে । কিভাবে পাঠাবো । মোবাইল থেকে মাঝে মাঝে দেখি । হাতে টাকাও নেই যে আবার লাইন নিবো ।
এই কথা আবার বলতেও পারছি না ওকে । আমার হাতে টাকা নাই এটা জনলে আবার ও অস্থির হয়ে যাবে ।
কি দরকার ।
নিশি বলল
-আমি কিন্তু .....
-আমি অন্যভাবে ব্যবস্থা করি ?
-কি ভাবে ?
-ব্লুটুথ দিয়ে ?
-মানে ?
-মানে আমি মনে কর তোমার বাড়ির সামনে আসলাম । তোমার জানলার কাছে তুমি বসলে । তখন গান ট্রান্সপার করা যাবে । কি বল ?
-আমার বাড়ির সামনে আসবা ?
-হুম । সমস্যা কি ? আমি তো তোমার বাড়ির সামনে দিয়েই যাই ।
-কিন্তু এখন তো আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে ?
-আরে আমি তো টিউশনিতে এসেছি । সমস্যা নাই । যাওয়ার পথে দিয়ে যাবো । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা । আই লাভ ইউ ।
আমি মনে মনে হাসি । কেমন অল্পতে মেয়েটা খুশি হয়ে যায় ।
কিন্তু সমস্যা হল আসলেই কাজটা করা ঠিক হবে । নিশিরা যেই এলাকায় থাকে মোটামুটি ভিআইপি এলাকা । আমাকে যদি কেউ ওদের বাড়ির পাশে এমনি এমনি দাড়িয়ে থাকতে দেখে তাহলে কি মনে করবে ?
কি জানি কি আছে কপালে ?
একবার অবশ্য একটু বিপদে পরতে পরতে পরি নাই । ওর সাথে দেখা করতে গেছি ওদের বাড়ির সামনে । দাড়িয়ে আছি ঠিক ওর জানালার সমানে । ফোন দিতেছি কিন্তু নিশি আর ফোন ধরে না । একবার ভাবলাম ডাক দেই । কাছেই তো । ডাক দিতে যাবো ঠিক তখনই নিশির জানলা দিয়ে এক মাঝ বয়সী মহিলার মুখ বেরিয়ে এল ।
-এ ছেলে কি কর এখানে ?
-কিছু না আন্টি ।
-কিছু না মানে ? সেই কখন থেকে দেখছি এখানে ঘুরঘুর করছো । দাড়াও ।
এই বলে তিনি উচু গলায় কাকে যেন ডাক দিল । তখনই নিশির এসএমএস আমার মোবাইলে । সেখানে লেখা ভাইয়া আসছে । জলদি পালাও ।
আমি জানি না নিশির ভাই এসেছিল কি না আমি আর এক মিনিটও দাড়াই নাই ।
আজকেও যদি এমন কিছু হয় তাহলে তো খবরই আছে ।
নিশিদের ফ্ল্যাট টা দোতলায় । ও যে রুম টাতে থাকে সেটা ঠিক রাস্তার দিকে না । এই জন্য সমস্যাটা হয়েছে । যদি রাস্তার দিকে হত তাহলে কোন সমস্যাই হত না । ওর রুমটা একটা গলির দিকে মুখ করে । আবার গলির ওয়ান ওয়ে । ঐ গলির শেষ মাথায় আবার তিন চারটা বাড়ির মাথা । সেখানে আবার দারোয়ান দাড়িয়ে থাকে সব সময় ।
এই জন্য সমস্যা ।
আমি জানালার কাছে গিয়ে ফোন দিলাম ।
-এসেছো ?
-হুম । জানালা খোল ।
-কেন ?
-তোমাকে একটু দেখি ।
-দেখতে হবে না । ব্লুটুথ অন করছি গান সেন্ড কর ।
আমি গান সেন্ড করতে লাগলাম । হঠাৎ সামনের বাড়ি থেকে কে যেন বেরিয়ে এল । আমি প্রথমে ঠিক চিন্তে পারি নি । মনে করেছি হয়তো বাড়ির ডাড়োয়ান হবে হয়তো । কিন্তু একটু কাছে আসতেই আমার বুকটা ধুক করে উঠল ।
নিশির বাবা ।
নিশিরা আগে সামনের ঐ গলির বাসাটাতেই থাকতো । ঐ বাড়িওয়ালার সাথে ওর বাবার খুব ভাল সম্পর্ক । নিশিই বলেছিল আমাকে । যাই হোক আমি আর একটুও দাড়ালাম না, জোর কদম পা চালিয়ে রওনা দিলাম ।
-এই ছেলে ?
আমি নিশ্চিত আমাকেই ডাকছে । একবার মনে হল না দাড়িয়ে চলে যাই কিন্তু তাতে একটু রিস্ক আছে । যদি তিনি চোর চোর বলে চিৎকার করেন তাহলে আমার তো খবর ই আছে । আমি দাড়িয়ে পড়লাম ।
নিশির বাবা আমার কাছ এসে বলল
-তোমাকে আগেও এখানে দেখেছি । কি করছো এখানে ?
-আমাকে ? কি বলেন ? আমি তো আজকেই এখানে প্রথম এলাম ।
-তাই ।
-জি । আসলে আমার চেহারা খুব কমন তো তাই এমন টা মনে হচ্ছে আপনার ।
নিশির বাবা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-হুম । ঠিক । তা এখানে কি করছো ?
-ঐ গাছ টা কে দেখছিলাম ।
-কোন গাছটা ?
-ঐ যে আপনার ফ্ল্যাটের পাশে যে গাছ টা ।
এই কথা বলেই মনে হল হায় হায় কি করলাম । ঐ যে ওনার ফ্ল্যাট এই তো আমার জানার কথা না ।
নিশির বাবা বলল
-আমার ফ্ল্যাট মানে ? তুমি কিভাবে জানলে আমার ফ্ল্যাট ঐ টা ?
-আরে আপনার ফ্ল্যাট তো বলি নাই । বলেছি আপনাদের ফ্ল্যাট । মানে আপনাদের আর কি ?
এবার মনে হল আরো বিপদে পরলাম । আমিই বা কিভাবে জানবো যে উনি এই বাড়ি তে থাকে ?
আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল নিশির বাবা বলল
-আমি যে এই বাড়িতে থাকি এটা তুমি কিভাবে জানলে ?
আসলে ? কি বলবো ?
আমার মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ?
কি বলবো ?
-কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন ?
-আরে এটা তো বোঝাই যায় । আমি এই খাৎাতে দাড়িয়েছিলাম যদি আপনি এই বাড়ির না হন তাহলে তো আমাকে এই কথাটা জিজ্ঞেসই করতে না । তাই না ?
কি জানি কি হল তবে দেখলাম নিশির বাবা একটু যেন বিভ্রান্ত হলেন । আমার কথা ঠিক মত মেনে নিতে পারছেন না আবার ঠিক ফেলেও দিতে পারছেন না ।
আমি বললাম
-আর আঙ্কেল আপনার চেহারার ভিতর একটা খানদানী ভাব আছে । যে কেউ তো আর এই বাড়িতে থাকতে পারে না । তাই বললাম আর কি ।
আমার এই কথায় মনে হল কাজ হল ।
-আচ্ছা ঠিক । যাও এখন । এদিক বেশি ঘোরাঘুরি কর না ।
-জি জি ।
আমি ছাড়া পেয়ে পারলে দৌড় দেই । এখানে থাকা আর নিরাপদ না ।
আর এদিকে আসাও যাবে না খুব একটা ।।
নাহ । কাল পরশুর ভিতর নেট লাইন টা আবার নিতেই হবে । এভাবে আর রিস্ক নেওয়া যায় না !
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:০৭