সারা দিনে আজকে বেশ পরিশ্রম গেছে ! এখন একটু ঘুমানো দরকার !
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি খুব বেশি রাত হয় নাই ! তবুও ঘুম আসতেছে ! আমি বিছানা ঠিক করতে শুরু করলাম !
মা এসে আমাকে ঘর বিছানা গোছাতে দেখে একটু অবাকই হল ! আমাকে বলল
-কি রে ! শরীর খারাপ নাকি ?
-নাহ ! একটু ক্লান্ত ! এখন ঘুমাবো !
-সে কি রে খাবি না ?
-নাহ ! ভাল লাহছে না !
-কেন !
-এমনি মা ! তুমি ভাত বেড়ে রাখো ! আমি পরে খেয়ে নিবো !
মা আর বেশি কথা বললেন না ! রুম থেকে চলে গেল ! আমি ঘরের লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম !
পাঁচ মিনিটও যায় নাই দেখলাম ফোন বেজে উঠল !
নিশিন !
এই সময়ে ! আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না ! নিশিন সাধারনত এমনিতে আমাকে ফোন টোন দেয় না ! যদিও আমাদের পাশের বাসাতেই থাকে !
ওর সাথে আমার কথা হয় প্রায়ই ! যখনও ছাদে যাই তার কিছু পরেই নিশিন এসে হাজির ! প্রথমে এদিক ওদিক হেটে বেড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসবে ! তারপর নিজ থেকেই কথা শুরু করবে !
মেয়েটা খারাপ না ! খুব মিষ্টি করে কথাও বলে ! আর চেহারা ছবিও যে খুব খারাপ তা না !
মাশাল্লা ভাল !
মেয়েটা কে আমার ভালই লাগতো ! আমি প্রথমে মনে করতাম নিশিন আমাকে পছন্দ করে ! এই জন্যই মনে হয় আমার সাথে কথা বলে ! কিন্তু আমার ভুল ভাঙ্গতে খুব বেশি সময় লাগলো না !
একদিন বাসার সামনেই দেখি নিশিন একটা রোগা পাতলা ছেলের সাথে কথা বলতেছে ! কথা বলার স্টাইল দেখে আমার কেন জানি মনে হল এই ছেলেটা ওর বয়ফ্রেন্ডই হবে !
ছাদের যখন ওর সাথে দেখা হল ওকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম ছেলেটা কে ?
আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিশিন বলল
-আপনি দেখেছেন ?
-হুম !
-কেমন লেগেছে ?
আরে মর জ্বালা আমি জানতে চাই ছেলেটা কে ! আর এই মেয়ে বলে কেমন লেগেছে ! আমি বললাম
-ভাল তো !
নিশিন বলল
-ভাল না ! অনেক ভাল ! রাজীব আমার অনেক টেক কেয়ার করে ! আজ সকালে একটু দাঁত ব্যাথা করছিল এই কথা শুনে আর না থাকতে পেরে চলেই এসেছে আমাকে দেখতে ! বলুন এমন কাউকে পাবো আমি ?
-নাহ ! পাবে না তো !
আমি একটু শুকনো হাসি দিলাম ! আরে মেয়ে এই বগের ঠ্যাংয়ের মত ছেলে তোমার কি দেখাশুনা করবে ! বেটা তো নিজেকেই ঠিক মত দেখা শুনা করতে পারে না !
যাক তবুও কেন জানি নিশিনের দাঁত ব্যাথা শুনে নিজের কাছেই কেমন লাগলো ! দাঁত ব্যাথার কষ্ট অনেক !
আমি নিশিনের ফোন রিসিভ করলাম !
-আপনি কি ঘুমিয়ে পরেছেন ?
-হুম ! কেন ?
-আমার একটু উপকার করতে হবে !
-বল !
নিজের ক্লান্তির কথাটা আর বললাম না ! অন্য কেউ হলে হয়তো বলতাম পারবো না কিন্তু নিশিন বলে কথা ! ওকে কিভাবে ফিরিয়ে দেই ! নিশিন বলল
-আপনি কি এখন একটু বাসা থেকে বের হতে পারবেন ?
-এখন ?
-হুম ! খুব জরুরী ! প্লিজ না করবেন না ! বের হতেই হবে !
আমি একটু ভাবলাম ! এখন বাসা থেকে কি বলে বের হব ? মা তো কিছুতেই শুনবে না ! আর এখন সবাই টিভির ঘরে বসে টিভি দেখছে ! ওদের সামনে ছাড়া বেরও হওয়া যাবে না !
আমি নিশিন কে বললাম
-আচ্ছা ! সমস্যা নাই ! আমি আসতেছি ! কোথায় আসতে হবে বল !
-আপন পাঁচ মিনিটের ভিতর আমাদের বাড়ির সামনে যে চায়ের দোকানটা আছে ঐ খানে আসেন ! ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
-শুনুন !
-হুম !
-আপনার কাছে ক কিছু টাকা হবে ?
-কত ?
-যা পারেন !
-আচ্ছা ! আমি আনছি ! সমস্যা হবে না !
লাইট জ্বেলে আবার জামা কাপড়রে নিলাম ! হাজার দুয়েক টাকা ছিল সেটাও নিলাম ! বাসা থেকে বের হতে যাবো তখন মা থামালো !
-কোথায় যাচ্ছিস ?
-মা ! ঐ শাহরিয়ার দাড়িয়ে আছে বাইরে ! কি যেন কাজ ! তাই দেখা করতে যাচ্ছি ! সামনের চায়ের দোকানেই আছি চলে আসবো !
মা আর বেশি কিছু বলল না ! শাহরিয়ার আমাদের এলাকাতেই থাকে ! মায়ের বান্ধবীর ছেলে ! তাই আর কিছু বলল না !
আমি বাইরে বের হয়ে এলাম !
চায়র দোকানে কোন কাষ্টমার নাই ! মামা দোকান বন্ধ করে দিবে এখনই ! আমি কাছাকাছি আসতেই দেখলাম নিশিন বের হয়ে এল ! আমি ওকে দেখে একটু অবাকই হলাম ! কালো জিন্সের সাথে কালো কামিজ পরেছে ! সাথে কালো ওড়না !
চায়ের দোকানের টিমটিম আলোতে ওকে কেন এক অপস্বরীর মত লাগছে ! আমি রো অবাক হলাম ওর হাতে একটা হ্যান্ড ব্যাগ দেখে !
আমি কিছু বলার আছেই নিশিন বলল
-এখানে কিছু বলতে পারছি না ! আমার বাবা মা যে কোন সময়েই বুঝে ফেলবে যে আমি বাসায় নাই ! আগে বাসস্ট্যান্ডের দিকে চলেন !
-মানে কি ?
-বলছি ! আগে একটা সিএন জি নেন !
সিএনজি পাওয়া গেল না ! তবে রিক্সা পাওয়া গেল । রিক্সা করেই কল্যানপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিলাম ! আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না ! এই মেয়ের সমস্যা কি ?
এই মেয়ের মাথায় কি কাজ করছে আমি আসলেই ঠিক মত ধরতে পারছি না !
রিক্সায় নিশিন নিজেই বলল সব ! সব শুনে আমার মাথায় বাশ !
নিশিন আজকে তার বয়ফ্রেন্ড রাজীবের সাথে করে বাসা থেকে পালাবে ! কল্যান পুরে রাজীব তার জন্য অপেক্ষা করছে ! আমার দায়িত্ব হল নিশিন কে কল্যানপুর পর্যন্ত পৌছে দেওয়া !
মনে রভিতর একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে গেল !
হায়রে আমার পোড়া কপাল !
যখন কল্যান পুরে নামলাম তখন প্রায় এগারোটা বেজে গেছে ! কল্যানপুর সব সময়ই লোকে লোকারন্য থাকে ! আমরা দুজন সোহাগের বাস কাউন্টারে গিয়ে বসালাম ! রাজীবের নাকি এখানেই আসার কথা !
এতোক্ষন পরে আমি একটু চিন্তা করার সময় পেলাম ! এতোক্ষন আমার মাথা গরম ছিল ! আসলে নিশিনের এই ভাবে কথা বলাটা আর এই ভাবে চলে আসা টা আমার কেন জানি মানতে একটু কষ্ট হচ্ছিল ! মেয়েটাকে আমি মোটামুটি পছন্দই করি ! মোটামুটি কেন বলছি ভালই পছন্দ করি !
নিশিন যে দিন আমার সাথে প্রথম কথা বলেছিল সেদিনই একটা মিষ্টি ভাল লাগা ভেসে বেড়াচ্ছিল আমার চারিদিকে ! যাই হোক ! এই মেয়েটা এই ভাবে চলে যাবে !
আর সব থেকে বড় কথা এই মেয়ে যে পালাচ্ছে এটার দোষ তো আমার ঘরে এসে পড়বে ! নিশিনের সাথে রিক্সায় উঠতে আর কেউ না দেখলেও ঐ চায়ের দোকানদার মামা তো ঠিকই দেখেছে !
যদি একবার আমার নাম বলে দেয় ! যাই হোক সবার আগে গিয়ে মামাকে হাত করতে হবে ! কিন্তু সেই ব্যাটা এখনও আসে না কেন ?
রাজীব না আসলে তো আমি যেতে পারতেছি না ! আমা মুখের ভাব দেখে নিশিন বলল
-আপনি চলে যেতে পারেন ! রাজীব এখনই চলে আসবে !
-না ! আমি আছি !
-না কোন সমস্যা হবে না ! আপনি এমনিতেও আমার খুব বড় উপকার করলেন ! আপনি ছাড়া আমার কি যে হত !
আসলেই আমি ছাড়া যে কি যে হত !
আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম ! দেখতে দেখতে ঘড়ি বারোটার কাটা ছুলো কিন্তু তার খবর নাই !
আমার কেমন যেন অস্ঠির লাগা শুর হল ! কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা সমস্যা হবে ! এরই মধ্যে নিশিন দুইরার ফোন দিয়ে ফেলেছে ! কি জানি কি কথা বলেছে ! দেখলাম নিশিনের মুখ শান্ত ! তার মানে এখনও কিছু হয় নাই ! কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না !
আমরা বসে রইলাম !
বাসা থেকে কেউ ফোন দিতে পারে ভেবে আমি ফোন বন্ধ করে রেখেছি ! ফোন রাখার আগে মাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি যে আসতে একটু দেরি হতে পারে ! শাহরিয়ারদের বাসায় যাচ্ছি ! মা আর কিছু বলে নাই !
কিছুক্ষন পরে কাউন্টার ম্যান এগিয়ে এসে বলল
-আপনাদের গাড়ি চলে এসেছে ! ইচ্ছা করলে গাড়িতে গিয়ে বসতে পারেন ! সাড়ে বারোটায় ছাড়বে !
আমি নিশিনের দিকে তাকালাম চিন্তিত মুখে ! রাজীব এখনও এল না ! কিন্তু নিশিনকে দেখলাম একদম নিশ্চিন্ত ! দেখে মনেই হচ্ছে না এই মেয়েটা বাড়ি থেকে একটু আগে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে ! আর আমি তাকেই পালাতে সাহায্য করেছি !
আমি বললাম
-এখন কি হবে ?
-কি হবে ! গাড়ি ছেড়ে দিবে ! আপনি বরং চলে যান !
-কিন্তু রাজীব যে এল না ?
-সে চিন্তা করে লাভ নাই ! রাজীব আসবে না !
আমার প্রথমে মনে হল আমি যেন ভুল শুনছি ! কি বলছে এই মেয়ে ! রাজীব আসবে না মানে ?
আমি কোন মতে বললাম
- কি বললে ? আসবে না !
-হুম ! সে আমাকে বলেই দিয়েছে সে পালাতে পারবে না !
-এখন ?
-জানি না !
-জানি না মানে কি ?
-জানি না মানে হল আমি এখন গাড়িতে উঠবো !
-তারপর ?
-তারপরের টা তারপর ! দেখা যাক কি হয়?
-দেখ ! এটা পাগলমো করার সময় না !
-আপনি বুঝতে পারছেন না আমি কি অবস্থার ভিতর পরেছি ! বাসা থেকে এখন সবাই জেনে গিয়েছে ! আমি এখন বাসায় যাবো কিভাবে ! আব্বা আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলবে !
আমি কোন কথা বলতে পারলাম না ! কি বলবো ?
আমার কি বলার আছে ?
মেয়েটা !!
নিশিন গাড়িতে উঠে পরলো !
আমি গাড়ির সামনে দাড়িয়েই রইলাম ! কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ! আমার কি করা উঠিৎ তাও ঠিক মত মাথায় ঢুকছিল না !
কিন্তু গাড়ি ছাড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে আমি নিজে গাড়িতে উঠে পরলাম ! কেন বসলাম জানি না ! কিন্তু এই মেয়েটা কে একা রেখে যেতে মন চাইল না কিছুতেই !
সামনে আমার জন্য খবরই আছে !
কালকের ভিতরই সারা এলাকা খবর হয়ে যাবে যে আমি নিশিন কে নিয়ে পালিয়েছি ! কোন ভুল নাই !
নিশিন আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছিল ! আমি ওর পাশে সিটে গিয়ে বসলাম ! সব থেকে যে ব্যাপারটা আমার কাছে অবাক লাগছিল সেটা হল ওকে একদম শান্ত লাগছিল ! মেয়েটা এতো শান্ত কিভাবে থাকতে পারছে ! আশ্চার্য !
এই যে আমি ওর পাশে এসে বসলাম এটা দেখেও ওর ভিতর এমন কোন পরিবর্তন হল না ! যেন ও জানতো আমি আসবো !
আমি বললাম
-এখনও সময় আছে ! একবার ভেবে দেখো !
-নাহ ! এখন আর সময় নাই ! এই দেখন বাস ছেড়ে দিয়েছে !
আসলেই বাস ছেড়ে দিয়েছে !
আল্লাহ জানে সামনে কি আছে ! হঠাৎ নিশিন আমার দিকে একটা বন্ধ খাম এগিয়ে দিয়ে বলল
-এটা পড়েন তো !
-কি ?
-আহা ! পরেন না !
আমি খাম ছিড়ে পড়তে শুরু করলাম ! এবং খানিকটা ধাক্কার মত খেলাম ! সেখানে লেখা
আমি তোমাকে একবারও আসতে বলবো না ! বরং বারবার বলবো চলে যেতে ! কিন্তু আমি জানি তুমি যাবে না ! যখন বাসে উঠবো তখনও তোমাকে ডাকবো না ! কিন্তু তবুও তুমি চলে যাবে না ! আমি জানি তুমি যাবে না ! তুমি যেতে পারবে না ! আমাকে একা রেখে যাওয়া ক্ষমতা তোমার নাই ! আমি জানি আমার সাথেই বাসে উঠবে ! আমার পাশেই বসবে ! আশ্চর্য এতো যখন আমার কথা ভাব তখন কেন আরো আগে আমাকে বল মুখ ফুটে ! ভালবাসি বলাটা কি খুব বেশি কঠিন ?
আমি চিঠি হাতে কিছুক্ষন বসে রইলাম ! মাথার ভিতর কেমন যেন লাগতেছে ! সেই সাথে একটা ভাল লাগাও কাজ করতেছে !
হঠাৎ অনুভব করলাম নিশিন আমার হাত ধরেছে !
কি নরম তুলতুলে ওর হাত !!
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:১১