খানিকটা অপরিচিত পরিবেশ । তবে অপরিচিত জায়গা না । অপুর সাথে আর একবার এসেছিল এখানে । আজকেও অবশ্য অপুর জন্যই এসেছে । কিন্তু ওকে না জানিয়েই । এই মানিক মিয়া এভিনিউ অপুর খুব পছন্দের জায়গা । প্রায় প্রতিদিনই ও এখানে আসে । বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় । ফুসকা খায় । এই সবই স্পর্শীয়ার জানা । কিছুটা শুনেছে অপুর মুখ থেকে কিছুটা ওর বন্ধুদের কাছ থেকে ।
তাই আজকে চলে এসেছে এখানে । অপুর খোজে । অপুকে একটা ফোন দেওয়া উচিত্ ছিল ।
ও যদি আজকে না আসে তখন ?
কিন্তু স্পর্শীয়া কেন জানি ফোন দিতে পারে নি । অপুর ব্যাপারে ওর সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু কেন জানি খুব অস্বস্থি লাগে কথা বলতে । ইচ্ছা করে কথা বলতে কিন্তু এই সংকোচের কারনে স্পর্শীয়া পারে না ।
স্পর্শীয়া গাড়ি থেকে নামল । আর একবার নিজেকে জানালার কাঁচে দেখে নিল ।
আজকে স্পর্শীয়া কালো জিন্সের সাথে সাদা আর আকাশী মেশানো টপস পরেছে । গলায় একটা স্কার্প । চোখে ঘন করে কাজল দিয়েছে । অপু চোখে কাজল পছন্দ করে । চুল গুলো বাধতে চেয়েছে কিন্তু খোলাই রেখেছে ।
স্পর্শীয়া কয়েক কদম হেটে ওর ড্রাইভারের কাছে এল । বলল
-আপনি এখানে দাড়ান । গাড়িটা পার্ক করেন । আমি যাওয়ার সময় আপনাকে ডেকে নিবো ।
ড্রাইভার বলল
-এখানে একা একা নামবেন ? বড় সাহেব জানলে রাগ করবে ।
-সমস্যা নাই । আমার এক বন্ধু আছে এখানে ।
ড্রাইভার মুখ দেখে মনে হল না খুব বেশি সন্তুষ্ট হল । স্পর্শীয়া আর কিছু না ভেবে সামনের দিকে হাটা দিল ।
আসলে ওর নিজের ও কেমন জানি লাগতেছে । এতো মানুষ , এতো অপরিচিত মুখের ভিতর আসলেই স্পর্শীয়ার একটু অস্বস্থি লাগতে শুরু করলো । একবার মনে হল দরকার দেখা করার । সোজা বাসায় চলে যায় । অপুতো আর জানবে না যে ও এসেছিল ।
কিন্তু মনের অন্য একটি অংশ শুনতে চাইলো না কথাটা । মন বলল যখন এতো দুর চলেই এসেছে আর দেখা যাক না ।
যদি দেখা হয়ে যায় !
আর স্পর্শীয়ার কেন জানি মনে হচ্ছে যে অপুর সাথে ওর দেখা হবে । আরও কিছুদুর গিয়েছে তখনই অপুকে দেখতে পেল । বড় নারিকেল গাছটার গোড়ায় চুপ করে বসে আছে । অপুকে দেখতেই স্পর্শীয়ার বুকের ভিতর আবার সেই অস্বস্থি শুরু হল । এবার ওর সত্যি সত্যি মনে হল চলেই যায় ।
অপু ওকে এখানে দেখলে কি মনে করবে ?
কি ভেবে বসতে পারে ?
নাহ ।
যা ভাবে ভাবুক ।
ওর সামনে দিয়ে হেটে যেতে হবে তারপর হঠাত্ করেই যেন দেখা হয়েছে এমন একটা ভাব করতে হবে ।
হুম ।
স্পর্শীয়া আবারও হাটা শুরু করলো । এইতো আর অল্প কয়েক কদম । স্পর্শীয়ার মনে হল ওর বুকের ভেতরটা কেমন যেন কাঁপছে । হাটার সময় মনে হল ওর পাও যেন একটু একটু কাঁপতেছে ।
-আরে স্পর্শী ! তুমি ?
স্পর্শীয়া হাসলো একটু অপ্রস্তুত হয়ে ।
-এই তো !
-এখানে ?
-এই তো এক বন্ধুর বাসায় এসেছিলাম । যাওয়ার সময় ভাবলাম একটু হেটে যাই ।
-এখানে ?
অপুর মুখ দেখে মনে হল না ওর কথা খুব একটা বিশ্বাস করলো না ।
হেসে বলল
-এই এলাকায় বন্ধু আছে নাকি তোমার ?
-কেন থাকতে পারে না ? তুমি আছো না ?
-হুম । তা থাকবা কিছুক্ষন নাকি চলে যাবা এখনই ।
-বসি ! কিছুক্ষন ?
-হ্যা ।
অপু একটু সরে গিয়ে ওর বসার জায়গা করে দিল । স্পর্শীয়া আবারও সেই অস্বস্থিটা শুরু হল । কিন্তু এখন এই অস্বস্থির সাথে একটা ভাল লাগা লেখে আছে । স্পর্শীয়া অপুর পাশে গিয়ে বসল । হঠাত্ অপু বলল
-আমার গা দিয়ে কি ঘামের দুর্ঘন্ধ বের হচ্ছে ?
স্পর্শীয়া খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-কেন এই কথা কেন বলতেছ ?
-না মানে এই যে এক হাত ফাঁকা রেখে বসে আছো । মানুষজন দেখলে কি ভাববে ?
স্পর্শীয়া হেসে ফেলল । মুহুর্তের ভিতরে ওর সব অস্বস্থি দুর হয়ে গেল । স্পর্শীয়া একটু হেসে ওর কাছে এসে বসল ।
-আর একটু কাছে এসে বস । যেন মানুষ তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড মনে করে ।
-মানে ?
-না মানে দেখো আমি তো এখানে প্রতিই প্রায় আসি । বেশ কিছু কাপলও এখানে নিয়মিত আসে । আমার দিকে তারা কেমন চোখে তাকায় । বিশেষ করে ছেলে গুলো । এমন একটা ভাব যেন দেখ বেটা আমার গার্লফ্রেন্ড কত সুন্দর । আজকে তারা আসুক । তোমাকে এভাবে আমার পাশে বসতে বসে থাকতে দেখে ...
স্পর্শীয়া অপুর মুখের কথা শেষ করতে দিল না ।
-দেখে কি মনে করবে ?
-এই যে তোমার ভত এতো চমত্কার একটা মেয়ে আমার পাশে বসে আছে । তাই না ?
স্পর্শীয়া ওর হাত দিয়ে চুল ঠিক করলো ।
-আরে ! কি তুমি হাতে মেহেদি দিয়েছ ? ওয়াও । দেখি ।
বলতে বলতে অপু স্পর্শীয়ার হাতটা ধরলো । হাতটা ধরতেই স্পর্শীয়ার হাতটা একটু যেন কেঁপে উঠল ।
-সরি ।
স্পর্শীয়া বলল
-সরি কেন । এই যে তোমার হাত ধরে ফেলল । তুমি কিছু মনে কর নাই তো !
-একটু আগে বললা মানুষ জন যেন আমাকে তোমার গার্রফ্রেন্ড মনে করে ।
-হুম ।
-হাত ধরলে তো সেই ধারনাটা আমি স্পষ্ট হবে ।
অপু খুশি উঠল । ওর স্পর্শীয়ার হাতটা ধরেই রইল । একটু একটু করে ওর হাতের আল্পনা দেখতে লাগল । আর স্পর্শীয়া ওকে দেখতে লাগল ।
কি বাচ্চার মত একটা ছেলে !
ইস !
এই ছেলেটা যদি সারা জীবন ওর হাত ধরে থাকতো ।
-এই একটু হাটবা ?
-চল ।
তারপর ওরা হাটতে লাগলে মানিক মিয়া এভিনিউ এর রাস্তা ধরে । স্পর্শীয়ার হাতটা তখনও অপুর হাতে ।
-এই ।
-হুম ।
-ঐ ছেলেটাকে দেখছো না ?
-কোনটা?
-ঐ যে ফর্সা মত । কালো গেঞ্জি পরা ।
-হুম ।
-ঐটা খুব ভাব নিতো আমার সামনে ওর জি এফ নিয়ে । আজকে মনেহয় ওর জিএস আসে নাই । হাহাহা । এই বেটা দেখ । আজকে আমার সাথে কে রয়েছে ! তোর গার্লফ্রেন্ড থেকে হাজার গুন সুন্দর । দেখ বেটা । এদিকে তাকা !
অপুর ছেলে মানুষী দেখে স্পর্শীয়ার কেন জানি খুব ভাল লাগে । স্পর্শীয়ারও একটু দুষ্টামি করতে ইচ্ছা করে । স্পর্শীয়া হঠাত্ অপুকে টেনে নিয়ে ঐ ছেলেটার সামনে নিয়ে দাড়ায় । অপু একটু অবাক হয় । ছেলেটাও অবাক হয় বেশি । স্পর্শীয়া ছেলেটাকে বলল
-ভাইয়া একটা উপকার করবেন ?
ছেলেটা আসলেই একটু অবাক হয়েছে । বাস্তবে ফিরে আসতে একটু সময় নিল । তারপর বলল
-জি বলুন ।
-আমাদের একটা ছবি তুলে দিবেন প্লিজ ।
-হ্যা ।
-থ্যাঙ্কিউ ।
স্পর্শীয়া নিজের সনি এক্সপেরিয়াটা ছেলেটার হাতে দিয়ে অপুর সাথে দাড়াল খানিকটা কোল ঘেসে । ছেলেটা বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিল । আবার যখন ওরা হাটতে শুরু করলো অপু বলল
-এটা তুমি কি করলে ?
-না মানে ছেলেটা আর কখনও তোমাকে অবজ্ঞার চোখে দেখবে না । হাহা ।
স্পর্শীয়ার কেন জানি খুব ভাল লাগে । সারাটা বিকেল ও অপুর সাথেই কাটালো । মনেহচ্ছিল যেন স্বপ্নের ভিতর ছিল । সব স্বপ্ন যেমন ভাঙ্গে এই স্বপ্নটাও শেষ হওয়ার সময় এল ।
কিন্তু সুন্দর স্বপ্ন ভাঙ্গার পরেও যেমন একটা ভাল লাগা সারা দেহ মনে ছড়িয়ে থাকে তেমনি স্পর্শীয়া যখন ফেরার জন্য গাড়িতে উঠল ওর মনের ভিতরেও একটা ভাল লাগা ছড়িয়ে রইলো ।
কেবল একটাই কথা মনে হতে লাগল যে ইস ও যদি সত্যি সত্যিই অপুর গার্লফ্রেন্ড হত ।
গাড়ি কিছু দুর গিয়েছে এমন সময় স্পর্শীয়া পিছনে তাকিয়ে দেখে অপু মোবাইলে কি যেন করছে ।
স্পর্শীয়ার একটু মন খারাপ হয় । ও আশা করছিল অপু মনে হয় ওর দিকে তাকিয়ে থাকবে ।
কিন্তু কেনই বা থাকবে ?
ঠিক তখনই স্পর্শীয়ার মোবাইলে একটা এসএমএস আসলো । অপুর মেসেজ ।
স্পর্শী এবার থেকে আমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করলেই চলে আসবে এখানে । কোন সংকোচ না করেই । ইস ! তুমি যদি আমার সত্যি ...
অপু আর কিছু লেখে নি । কিন্তু স্পর্শীয়ার বুকের ভেতরই এই অর্ধেক মেসেজ পরেই তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে । স্পর্শীয়া আবার পেছনে দিকে তাকাল । এবার দেখল অপু ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । স্পর্শীয়া ড্রাইভারকে বলল
-গাড়ি ঘোরান !
-আফা ! এখন গাড়ি কিভাবে ঘোরাবো ?
স্পর্শীয়া আর কিছু শুনলো না ! কেবল গাড়ির দরজা খুলে অপুর দিকে দৌড় দিল ! ওর কেবল মনে হতে লাগল অপুর অসমাপ্ত কথাটা ওর শুনতেই হবে !
শুনতেই হবে !
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৫৩