somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়িয়ালর ভাগ্নি স্নেহা এবং আমার ছোট্ট গল্প

০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-মেয়েগুলা মাঝে মাঝে এমন বেকুবী কেন করে বলতো ?
পল্টু একটা সিগারেটে সবে মাত্র টান টা দিয়েছে ! এখনও ধোয়া বের হওয়ার সময় পাই নাই ! পল্টু আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকালো ! একটু পরে ওর নাক মুখ দিয়ে কেমন ধোঁয়া বের হতে শুরু করলো ! আমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে যে এই পিচ্চি কালেও পল্টুটা কিভাবে সিগারেট ফুকছে !
পল্টু এবার আমাকে বলল
-কি বললি তুই ? বেকুব মেয়ে মানে ?
-না মানে ! দেখ মেয়েদের ভুলের কারনেই তো তাদের নাম্বারটা ছড়ায় ! তারপর ছেলেরা যখন মেয়েটা কে ফোন করে তখন মেয়েটাই ছেলেটাকে অসভ্য বলে গালি দেয় ! কেন ? নিজের নাম্বার টা নিজে সেভ করে রাখা যায় না ?
পল্টু আমার দিকে আবার তাকিয়ে বলল
-দেখ নিলয় অতো প্যাচাল না পেড়ে কি হয়েছে বল ?

আমি একটা কাগজ পল্টুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
-দেখ !
পল্টু হাতে নিলো কাগজটা ! তারপর আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো ! বলল
-এই স্নেহা টা আবার কে ?
-আমাদের বাড়িয়ালার ভাগ্নি ! দুই তলায় থাকে !
-এটা কে দিলো তোকে ?
-ও ই দিয়েছে !
-মানে কি ?

গতরাতের ঘটনা ! আমি নিচে নামছিলাম মোবাইলে টাকা ভরার জন্য ! দুইতলাট সিড়ি বেয়ে নিচে নেমেছি তখনই মেয়ে মানে স্নেহা আমাকে পিছন থেকে ডাক দিল ! আমি দাড়ালাম ! আমার কাছে এসে বলল
-আপনি কি মোড় পর্যন্ত যাবেন ?
-হ্যা !
-আমার একটা ফোন করতে হবে একজন কে ! কিন্তু মোবাইলে টাকা নাই ! আপনি কি এই ৫০ টাকা আমার মোবাইলে পাঠাতে পারবেন ?
-হ্যা ! সমস্যা না ! আপনার মোবাইল নাম্বার টা ?
-এই নিন !
এই বলে মেয়েটা আমাকে ওর মোবাইল নাম্বার লেখা কাগজটা দিল !
আমার কাছে সব ঘটনা শুনে পল্টু বিরক্ত বলল
-গাধা !
-হুম ! আসলেই মেয়েটা গাধা ! নাম্বার দেওয়ার দরকার কি ? কার্ড কিনে আনতে বললেই পারতো !
আমার কথায় দিগুন বিরক্ত হয় বলল
-ঐ মেয়ে গাধা না ! তুই গাধা !
-মানে কি ?
-মানে বুঝিস না ? বেকুব ! ঐ মেয়ে তোকে পছন্দ করছে ! তাই তোকে নাম্বারটা দিছে !
-তা কেন হবে ! মেয়েটা মাত্র কদিন এসেছে এখানে, এর মধ্যেই আমাকে পছন্দ করে ফেলল !
-আরে বেটা ! মেয়েটা যদি কেবল টাকাই ভরতে তোকে ফোন নাম্বার দিয়ে থাকে তাহলে কাগজে ওর নাম লিখবে কেন ? এটা স্পষ্ট ইঙ্গিত ! এই টাও যদি না বুঝিস !!
-কিন্তু ..।
-কোন কিন্তু না ! এখনই মেয়েটাকে ফোন দে !
-কিন্তু কি বলে দেবো ! আসলে আমি ...
পল্টু আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল
-আর একটা কথা বলল, মেয়েটা দেখতে কেমন ?
-ভাল ! বলতে গেলে সুন্দরী !
-তাহলে তুই ফোন দে ! না হলে আমি দেই !

কেন জানি পল্টুর এই কথাটা ভাল লাগলো না ! স্নেহা আমাকে ফোন নাম্বার দিয়েছে আমি কেন পল্টুকে ফোন করতে দেব ! আমি বললাম
-আচ্ছা আমিই দিচ্ছি !

পল্টুর কাছ থেকে দুরে চলে এসে স্নেহার নাম্বারে ফোন দিলাম ! রিং শুরু হতেই বুকের মাঝে একটা চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হল ! আচ্ছা পল্টুর কথা শুনে তো ফোন দিয়েই দিলমা এখন যদি মেয়েটা এমন কিছু না ভেবে থাকে ?
আর স্নেহার সাথে আমি কি কথা বলবো ?
আমি ফোন কেটে দিতে যাবো ঠিক তখনই স্নেহা ফোন রিসিভ করলো !
-হ্যালো !
আমি চুপ ! আমার বুকের ভিতরকার চাপা উত্তেজন যেন একটু বেড়ে গেল !
স্নেহা আবার বলল
-হ্যালো ! কে বলছেন ?
-আমি !
-আমি কে
খানিকক্ষন নিরবতা ! তারপর স্নেহা বলল
-ও ! আপনি ! বলুন !
কি বলবো ! আমি কি বলব ? কোন কিছুই মাথায় আসছে না ! বললাম
-কালকে টাকা পাঠিয়েছিলাম ঠিক মত গিয়েছিল ?
আমার কথা শুনে স্নেহা একটু হেসে ফেলল । বলল
-আপনি কি আমাকে এই কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছেন ?
-না মানে !!
আমি কোন কথা খুজে পাই না ! চুপ করে থাকি !
স্নেহা নিজেই যেন কথা শুরু করে ! কেন জানি আমারও ওর সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে ! আর আমি বুঝতে পারছি স্নেহারও ভাল লাগছে কথা বলতে !
আশ্চার্য !!

কথা শেষ যখন ফোন রাখলাম পল্টু আমার দিকে তাকিয়ে দেখি মিসকি মিসকি হাসছে ! আমি বললাম
-কি ব্যাপার হাসছিস কেন ?
-তোর চেহারা দেখে ! মামা ! তুমি তো প্রেমে পড়ে গেছ !
আমি কেবল হাসি !
আসলেই কি তাই !

স্নেহার সাথে আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু হল ! দিন আসলেই ভাল কাটতে লাগল ! স্নেহা এমনিতে কথা বলতো কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতো না ! আমিও কিছু বলতাম !
বিকেল বেলা ছাদের দেখা হত ! সরাসরি কথা হত না ! কারন আসে পাশে বাড়ির আরো অনেকেই থাকতো ! এই ভাবে তো আর চাইলেই কথা বলা যায়না !
তবে হাতে ফোন থাকতো ! কিছু একটা বলতে চাইলেই আমি ওকে মেসেজ পাঠিয়ে দিতাম ! ও সেইটা দেখে সেইটা করতো !

কিন্তু একদিন স্নেহা আমাকে রাতের বেলা ফোন দিয়ে ছাদে আসতে বলল ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় ১২ টা বেজে গেছে !
এতো রাতে !
একটু ভয় ভয় লাগছিল ! যদি কেউ দেখে ফেলে !
আর স্নেহা ওর মামার মামীর চোখ ফাকি দিয়ে কিভাবে আসবে এতো রাতে ?

আমি তবুও ছাদে হাজির হলাম ! একটু পরেই স্নেহা এসে হাজির ! আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! আমিও ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু না বলে !
আসলে আমি কি বলবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না ! আর আমি তো কিছু জানিও না ! কেন হঠাৎ আমাকে এখানে আসতে বলল ! বাসা থেকে আবার জেনে যায় নাই তো !
আমি বলল
-কি হয়েছে ?
স্নেহা চুপ করেই রইলো ! তারপর বলল
-আমার কপালে বুঝি আর সুখ সইবে না !
-কেন ? এই কথা কেন ?
-কালকে আমি চলে যাবো !
-সে কি কোথায় ?
-বাসায় !
-কেন ! তুমি না বললে আরো একমাস থাকবা তুমি এখানে ! তাহলে !
-আমিও তাই জানতাম ! কিন্তু আব্বা কালকে আসবে আমাকে নিতে ! আমি ....
এই টুকু বলেই স্নেহা চুপ করে গেল । কিছুক্ষন পরেই দেখলাম ও কেঁদে উঠল ! ওর চোখে পানি দেখে কেন জানি আমার বুকটাও আন্দোলিত হয়ে উঠলো ! আমি কিছু না বলে কেবল ওর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম ! স্নেহাও আর কিছু না বলে কেবল আমার বুকের মাথা রেখে ফোঁপাতে লাগলো !
কতক্ষন ছিলাম জানি না এক সময় মনে হল যে ওর এখন যাওয়া দরকার ! ওর মামা টের পেলে খবর আছে !
আমি কেবল বললাম
-চল যাবে তো কি হয়েছে ! আমার মাঝে টো যোগাযোগ থাকবে ! তাই না ?
একটু চুপ করে থেকে স্নেহা বলল
-তাহলে তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা হলে কি করবো ? যখন দেখতে ইচ্ছা করবে তখন কি করবো ?

আমি কোন কথা না বলে কেবল চুপ করে থাকি ! আসলেই তো ওকে যখন দেখতে ইচ্ছা হবে তখন কি করবো ?
আমি জানি না ! জানি না সামনের দিন গুলো কেমন কাটবে !!

পরদিন সকালেই স্নেহারা চলে গেল ! আমি কেবল তার চলে যাওয়া চেয়ে চেয়ে দেখলাম ! কেন জানি মনে হল আবার দেখা হবে তো ?
মান্না দে র একটা গান আছে না !
আবার হবে তো দেখা !
এই দেখাই শেষ দেখা নয় তো ?


ফেবু লিংক

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৪৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×