মৌসুমির কথা শুনে জিনা কেবল একটু হাসলো ! কিন্তু সে হাসিতে কেন জানি প্রাণ ছিল না ! জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষন ! ইদানিং জিনার কি যেন হয়েছে ! সময় পেলেই কেবল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে !
আকাশের ঐ বিশাল শূন্যতা নিজের ভিতর অনুভব করার চেষ্টা করে !
সহসাই জিনা বলে উঠে
-মানুষের মন বড় অদ্ভুদ জিনিস ! তাই না ?
মৌসুমী জিনার কথা ঠিক মত বুঝতে পারলো না ! বলল
-কি বলছিস ?
-দেখ না আমি আগে কেমন ছিলাম আর এখন কেমন হয়ে গেছি ! একটা ছেলেকে চিনিও না জানি না কিন্তু ছেলেটা আমার মনের উপর কি প্রকার কব্জা করে রেখেছে !
-তুই এই সব কি বলতে চাচ্ছিস ? আচ্ছা শাহেদ ভাই কি জানে ?
জিনার মুখটা আবার যেন কেমন একটু বিষন্ন হয়ে উঠল ! অন্য দিকে তাকিয়ে বলল
-নাহ ! শাহেদ জানে না !
-শাহেদ ভাই জানলে কি হবে তুই বুঝতে পারছিস ?
-হুম ! কিন্তু আমি কি করবো বল ?
-কি করবি মানে ? দুই দিনের পরিচিত একা মানুষ ঠিক মত চিনিসও না তার জন্য শাহেদ ভাইকে কষ্ট দিবি ?
-দুদিনের পরিচিত না রে ! ওর মনটা কেমন যেন আমার খুব পরিচিত মনে হয় !
মৌসুমি কপট রাগ দেখিয়ে বলল
-চুপ থাক ! তোর ফালতু কথা বাদ দে ! এখন কেবল শাহেদ ভাইয়ের দিকে মন দে বুঝলি ! অন্য কারো দিকে মন দেওয়ার মন দেওয়ার কোন দরকার নাই ! অপুকে সরাসরি বলে দে যে তুই আর ওর সাথে কোন যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক না ! ঠিক আছে ?
জিনা কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো কেবল মৌসুমীর দিকে ! তারপর বলল
-আমি জানি কি করবো ! এখন ওসব বাদ দে ! আমি তোকে যে করতে বলেছিলাম করেছিস ?
-হুম ! কিন্তু আমি ঠিক এটা বুঝতে পারছি না যে তোর হঠাৎ এই জিনিস পরার শখ হল কেন ? তুই তো এমন পোষাক কোন দিন পরিস না !
-অপু বলেছে !
-মানে ?
-কোন মানে নাই ! কই দে !!
মৌসুমী কোন কথা বললে না ! গত দিনে কিনে আনা সাদা টাইলস্ টা জিনাকে এনে দিল ! জিনা ঐটা কিছুক্ষন হাতে নিয়ে বসে রইলো চুপচাপ ! আসলেই কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না ! কেন যে কালকে মৌসুমীকে এইটা কিনে আনতে বলল?
অপু বলেছে বলে ?
অপু বলেছে বলেই কি এই টা করতে হবে !
এই সব কাজের কি কোন মানে হয় !
সেদিন দুম করে অপুকে নিজের ছবি পাঠিয়ে দিল ! ছবি পাঠিয়ে দিয়েই মনে হল এটা কি করলো সে । আজ পর্যন্ত কারো সাথে সে নিজের ছবি শেয়ার করে না আর আজকে কি করলো ! কিন্তু না করে জিনার কোন উপায় ছিল না !
সব ঐ পাজি ছেলেটার দোষ !
পাজিটা এমন ভাবে জিনার মনের ভিতর এসে বসেছে যে কিছুতেই সে পাজিটা কে মন থেকে বের করতে পারছে না !
পাজি অপুটা যা বলছে জিনা চুপচাপ তাই করছে ! আজ পর্যন্ত শাহেদ কেও নিজের ছবি পাঠায় নি আর অপুকে ! আজকে সে হাজির হয়েছে ছবি তুলতে !
অপু খুব পছন্দের পোষাক এই সাদা টাইলস এর সাথে সাদা কামিজ !
কদিন ধরেই আবদার করতেছে যে একটা ছবি পাঠতে !
জিনা না না করছে কিন্তু অপু শোনার বান্দা না ! ও যা চায় ঠিকই সেটা উশুল করে নেয় !
জিনা যখন নিজে চেঞ্জ করে এসে আয়নার সামনে দাড়ালো তখন নিজের কাছএই যেন কেমন লাগছিল ! আয়নায় নিজেকে দেখেছিল আর কেমন মনে হচ্ছে !
কিছুতেই যেন চিনতে পরছে না !
মৌসুমীকে বলল
-শোন ! আমার কয়টা ছবি তুলে দে তো !
-ছবি ??
মৌসুমী যেন আকাশ থেকে পড়লো ! বলল
-তুই ছবি তুলবি ?
-বাংলা শুনতে পাচ্ছিস না ! চল ছাদে ছল ! ছাদ ফাকা আছে না ! চল ওখানে !
মৌসুমী আসলেই জিনার কোন কাজ বুঝতে পারছে না ! এই মেয়েটার কোন কাজই বুঝতে পারছে না ! এই মেয়েটা তো এমন ছিল না !
অনেক্ষন ধরে ছবি তুলল দুজনে !
ছবি তুলে মৌসুমী যখন আবার রুমে আসলো তখন মৌসুমী শক্ত করে ধরলো ! বলল
-তুই এটা ঠিক করছিস না জিনা !
জিনা চুপ করে রইলো আবার ! তারপর বলল
-ঠিক বলছিস ! আমি জানি আমি ঠিক করছি না ! ভুল করছি ! কিন্তু ...
-কিন্তু ?
-কিন্তু ঐ পাজি ছেলেটার জন্য খুব মায়া লাগে রে !
মৌসুমী কিছু না বলে চুপ করর রইলো ! জিনা আবার বলা শুরু করলো
-জানিস অপুর প্রতি আমার এতো টান কেন ?
-কেন ?
-আমার যখন অবস্থা খুব খারাপ ছিল আমার আসে পাশে যখন কেউ ছিল না তখন অপু আমার পাশে ছিল ! আমি আমার কষ্ট গুলো ওর সাথে শেয়ার করেছি ! ও হাসি মুখে আমার কষ্ট গুলো শুসে নিয়েছে ! জানিস আমি যখন ওর সাথে কথা বলি আমার আর কিছু মনে থাকে না ! আর আমি জানি অপু টাও ঠিক এমন টাও ভাবে !
মৌসুমী কেবল লক্ষ্য করলো জিনার চেহারায় কেমন একটা আভা দেখা যাচ্ছে ! অপু কথা বলতে যেন ওর খুব ভাল লাগছে !
মৌসুমী বলল
-কিন্তু শাহেদ ভাইয়ের কথাটা একটু চিন্তা কর !
-আমি কি চিন্তা করবো বল ? সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল ! তারপর পরেই অপু এসেছে আমার জীবনে ! আমার পাশে দাড়িয়েছে ! আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে ! যখন আমার মন খারাপ হত তখন আমাকে প্রফুল্ল রেখেছে ! তারপর শাহেদ হঠাৎ করে আবার জীবন ফিরে এল ! আমি এই ভয়টাই করছিলাম ! যে শাহেদ যদি আবার ফিরে আসে !
-এখন ?
-এখন কি জানি না ! যেদিন আমি শাহেদের কথা ওকে বললাম ও কেবল বলল আমি কি চাই ! বলল আমি যেন তাই করি আমার মন চায় ! ঐ রাতে যখন আমি অপু সাথে কথা বললাম আবার ওর কন্ঠস্বরটা শুনে আমি .......।
জিনা চুপ করে রইলো কিছুক্ষন ! মৌসুমী বলল
-কি মনে হল ?
-মেন হল যেন আমার পুরা পৃথিবীটা যেন ভেঙ্গে পড়ছে ! ও সব সময় জানতো আমাদের সামনের ভবিষ্যৎ ভাল হবে না তবুও ও সব সময় আমার পাশে ছিল ! আমাকে ছেড়ে যায় নি ! তাহলে আমি কিভাবে ওকে ছেড়ে যাই ? বল তুই কিভাবে ওকে ছেড়ে যাবো ?
জিনা আবারও জানলার কাছে আসলো ! আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! যতই দিন যাচ্ছে পাজী ঐ ছেলেটা কিভাবে ওকে আস্তে আস্তে জয় করে নিচ্ছে ! এখন জিনা অপুকে ছাড়া আর কিছু যেন ভাবতেই পারে না ! যখনই কোন কথা মনে হয় বা কোন ভাল কিছু দেখে সবার আগে অপু কথা গুলোই মনে হয় ! অপুর স্বপ্নের কথা গুলো মনে হয় !
জিনা মৌসুমীর দিকে তাকিয়ে বলল
-ও আমাকে কি বলে জানিস ?
-কি ?
-ও সব সময় বলত তুমি যেখানেই যাও না কেন আমার হাত থেকে তোমার কোন মুক্তি নাই ! হা হা হা !
-তাই !
-হুম ! আর কথাটা সত্যি ! অপুর হাত থেকে আসলেই আমার মুক্তি নাই ! ওর মত করে আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না ! আমি এটা খুব ভাল করে জানি !
-আচ্ছা বাদ দে ! শাহেদ ভাইয়ের কথা বল !
-ওর কথা আর কিবলবো ? জব পেয়েছে !
-তাই নাকি ! তাহলে তো সমস্যা সমধান হয়ে গেল ! ওনাকে বল বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে বল !
-হুম ! সামনের সপ্তাহে পাঠাবে !
-সত্যি ?
-হুম !
-এই পাজি ছেলে কি কর ?
-তোমার কথা ভাবি !
-তাই ? কি ভাবো !
-ভাবছি তোমার ঠোটে কিভাবে চুম খাবো ? মানে কোন দিকে দিয়ে শুরু করবো !
-চুপ ! পচা কথা বলবা না ! পাজি !
-পাজি ?? আআআআমি???
-জি আপনি !
জিনা জানতো অপু ঠিক এমটাই করবে ! এমন আহ্লাদ করে বলবে ! জিনার এই কথা গুলো কেন জানি খুব সুন্দর লাহে শুনতে !
-এই পাজি ছেলে !
-হুম ! বলল
-মেইলটা চেক করেছ ?
-না তো ! কেন ?
-তোমার ছবি পাঠিয়েছি ! তুমি যেমনটা চেয়েছিলে তেমন ভাবে !
-সত্যি ??
-হুম দেখ !!
-আই লাভ ইউ !
-মি টু !
জিনা কিছু বলতে গিয়েও কেন জানি বলতে পারলো না ! শাহেদের সামনের সপ্তাহে প্রস্তাব পাঠানোর কথা ছিল কিন্তু শাহেদ আজই চলে এসেছে ! কথা বার্তা মোটামুটি পাকাপাকি করে গেছে !
জিনা একটা সময় শাহেদ কে ছাড়া আর কিছু চিন্তা করত না ! ওর সব কিছু ঘিরে কেবল শাহেদই ছিল ! কিন্তু তারপর একটা সময়ে শাহেদ ওকে রেখে চলে গেল পরিবারের দোয়াই দিয়ে ! অবশ্য শাহেদ কেও দোষ দিতে পারে না ও ! ওপরিবারের একমাত্র ছেলে ! পড়ালেখা শেষ চাকরী পাচ্ছিল না, ওর মানষিক অবস্থা তখন ভাল ছিল না !
জিনাকে যখন শাহেদ সেদিন ব্রেকআপের কথা বলছিল তখন জিনা কেবল চুপ করে ছিল ! কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছিল ওর কাছ থেকে ! তার পরের দিন গুলো জিনার জন্য খুব কষ্টের ছিল !
এই সময়ই অপুর আগমন! ছেলেটা কিভাবে ওর কষ্ট গুলো মুছে দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিল !
আর আজকে ও অপুকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে !!
খানিকটা কি স্বার্থপরের মত কাজ করছে না ?
-এই মিষ্টি মেয়ে !
-হুম !
-তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে ! খুব সুইট ! আর সেক্সি !
-এই ! আমার পচা কথা বল !
-এটা ? এটা পচা কথা হল ?
-চুপ ! পাজি ছেলে !
-আচ্ছা চুপ করলাম ! আই লাভ ইউ !
-আই লাভ ইউ ! পাজি ছেলে !
-হুম !
-পাজি ছেলে ! পাজি ছেলে !
-হুম !
-এই !!
জিনার চোখ কেমন যেন ঝাপসা লাগে ! চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে ! বারবার কেবল এই কথাই মনে হয় এই পাজি সুইট ছেলেটাকে ও কিভাবে কষ্ট দিবে ? কিভাবে ছেড়ে চলে যাবে !!
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১১