মিথিলা ওদের মগবাজারের ভাইয়ার বাসাতে বসে বসে টিভি দেখছিল ! এটা ওর ভাইয়ার গবেষনা কেন্দ্র ! কোন কাজ না থাকলেই ও এখানে চলে আসে । আজকেও এসেছিল সময় কাটানোর জন্য !
বেশ কিছুক্ষন ধরেই নিথিলা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছে !
একটু যেন অদ্ভুদ ! একবার মনে হল ওর মনে ভুল এমন টা হতে পারে না । কিন্তু যখন টিভিতেও ব্যাপারটা দেখতে পেল তখন অবাক না হয়ে পারলো না !
তার মনে সে কেবল একা না আরো অনেকেই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে ! মিথিলা আস্তে আস্তে সব নিউজ চ্যানেল বদলাতে থাকে । প্রত্যেকটা নিউজ চ্যানেলে একই জিনিস দেখাচ্ছে !
আশ্চর্যরের ব্যাপার ! এমনটা হয় নাকি ?
মিথিলা আবার ভাবতে লাগে । কিন্তু মাথায় কিছু ঢুকে না ওর ! বার বার মনে হতে থাকে যে কুকুর না হয় থেকে একসাথে ডাকতে পারে তাই বলে মানুষ কেন কুকুরের মত এক সাথে ডেকে উঠবে !
এটা কোন কথা ?
ঘন্টা খানেক আগে থেকেই মিথিলা এ ব্যপারটা টের পাচ্ছে ! আধ মিনিট পর পরই ওর বাসার কুকুর গুলো যেন এক যোগে ডেকে উঠছে ! মিথিলার বড় ভাই মামুন একজন বিজ্ঞানী ! নানান জিনিস নিয়ে তার পড়াশুনা ! নানান এক্সপেরিমেন্ট ! কিন্তু সবই আকামের ! কোন কাজের বিষয় নিয়ে মামুন গবেষনা করে না ।
মিথিলার মা প্রায়ই বিরক্ত হয়ে বলে এই করে কি লাভ ? যদি কিছু নিয়ে কাজ করতেই হয় তাহলে ভাল কিছু নিয়ে গবেষনা কর ! মানুষকে যেন বলতে পারি !
মামুন এই কথায় হেসে বলে সব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে গবেষনা করার জন্য হাজারও লোক আছে এক আধ জন এই দিকে গেলে কোন সমস্যা নাই তো !
অবশ্য মিথিলার ভালই লাগে ! মামুন আসলেই মজার মজার জিনিস নিয়ে কাজ করে ! মিথিলার খুব যত্নের একটা আম গাছ ছিল ছাদে ! খুব যত্ন করতো ! আর অপেক্ষা করতো কবে গাছটাতে আম ধরবে । কিন্তু আম গাছে আর আম ধরেই না !
মামুন ভাইয়া কে বলতেই মামুন আমগাছের মাটিতে কি যেন একটা মিশিয়ে দিল ! ব্যস !
পরদিন গিয়েই দেখে গাছে থোকায় ঠোকায় আম ধরে আছে !
মিথিলা তো তাজ্জব !
ভাইয়া কে চেপে ধরলো !
-ভাইয়া বল কি জাদু করেছ ? বলতেই হবে !
মামুন বলল
-আরে এমন কোন ব্যাপার না ! আমি কেবল কিছু এনজাইম মিশিয়ে দিয়েছি !
মিথিলা কিছু বুঝতে পারে না !
মামুন বলল
-শোন গাছের কিছু নির্দিষ্ট কোষের কাজ হল ফুল ফল তৈরি করা ! আমি কেবল এমন কিছু এনজাইম দিয়েছি যা ঐ কোষ গুলোর কার্যপ্রনালী হাজার গুনে বৃদ্ধি করেছে ! আর কিছু না !
মামুনের এইবারে এক্সপেরিমেন্টের বিষয়টাও বেশ ইন্টারেস্টিং ! মামুন এবার মানুষের অনুভুতিকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য একটা যন্ত্র বানাচ্ছে ! নাম দিয়েছে এইচইসি ! হিউম্যান ইমোশন কনট্রোলার !
কিন্তু সসম্যা হল প্রত্যেকটা মানুষের ইমোশন ভিন্ন রকম ! সুতরাং একেক জনের ইমোশন কে কনট্রোল করতে একেক রকম যন্ত্র দরকার ! তা মামুন নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা করছে । মামুনের চেষ্টা হল প্রত্যকটা মানুষের ভিতরে কমন কিছু ব্যাপার থাকে ! মামুন চাচ্ছে এই কমন ব্যাপারটা কে ভিত্তি করে মানুষের ঐ ইমোশন গুলো কন্ট্রল করতে হবে ! এটা যদি পারা যায় তাহলে আস্তে আস্তে সব হয়ে যাবে ! কিন্তু সবার যে কাজটা করতে হবে সেটা হল ষেই অনুভুতিটা ধরটে হবে !
মামুনের এই কথা শুনে মিথিলা এক যেন অবাক হল ! বলল
-ভাইয়া অনুভুতি তুমি কেমন করে ধরবে ?
মামুন একটু চুপ করে থেকে বলল
-তুই কি নজর লাগা ব্যপার টা জানিস ?
-হুম ! কুদৃষ্টি !
-রাইট ! কুদৃষ্টি বা নেমেটিভ রে ! সাইন্স এই ব্যাপারটা না মানলেও আমার মনে হয় এটার অস্তিত্ব আছে ! তুই তো জানিস প্রত্যেকটা জিনিস থেকে একটা আলোর তরঙ্গ এসে আমাদের চোখে লাগলেই আমরা সেইটা দেখতে পাই ! তাই না ?
-হুম !
-আমি সেই তরঙ্গটা ধরতে চাইছি !
-হুম !
-এখন মনে কর কেউ আমার দিকে খুব ভালবাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আবার কেউ আমার দিকে খুব ঘৃণার দৃষ্টি নিয়ে তাকালো ! এখন দেখ যখন ঐ মানুষটা আমাদের দিকে ভালবাসা নিয়ে দেখবে আমরা কিন্তু সেই দৃষ্টি দেখেই বুঝতে পারবো ! তারমানে কি ? তার ঐ তরঙ্গ থেকে আমার মনের উপর একটা ইফেকট ফেলবে ?
-হুম !
আচ্ছা এখন বল ঐ দুটি দৃষ্টির তরঙ্গ কি এক রকম হবে ?
মিথিলা কিছু বুঝলো না !
মামুন বলল
-না হবে না ! আমি এটা জানি ! আমার কাজ হবে সেই পার্থক্যটা বের করা ! আমি যদি পার্ক্যটা বের করতে পারি তাহলে আমি সেই তরঙ্গ উৎপাদন করে ঐ রাগ বা ঘৃণা কে নিয়ন্ত্রন করতে পারবো ! দেখ সব কিছুই যেহেতু মস্তস্ক থেকে বের হয় তার মানে ঘৃণার বা ভালবাসার তরঙ্গও খেল টাও মস্তিস্কেরই ! আমার মনে হয় ঐ তরঙ্ক বের করতে পারলেই কেল্লা ফতে...
-কিন্তু একেক জনের ঘৃণার মাত্রা তো একেক রকম ! তাহলে ?
-হুম ! এটা একটা সমস্যা বটে !! দেখা যাক কি হয় !
সেই জন্যই মামুন গত মাসে দুটো কুকুর কিনে এনেছে ! মানুষের উপর তো আর পরীক্ষা করা যাবে না ! তাই কুকুরের উপর পরীক্ষা চলতেছে ! প্রানী কুলের ভিতর কুকুরই হল সব থেকে প্রভু ভক্ত ! মামুন এই প্রভুভক্তের অনুভুতিটাই ধরতে চাইছে !
মিথিলা ভাইয়ার ঘরে দুইবার ধাক্কা দিল ! ভেবেছিল ভাইয়া হয়তো দরজা খুলবে না । ভাইয়া এমনটা করে ! দিনের পর দিন দরজা বন্ধ করে সে কাজ করে ! কারো ডাকে সাড়া দেয় না ! কিন্তু মিথিলা কে অবাক করে দিয়ে দরজা খুলে গেল ! মিথিলা ও রভাইয়ার হাস্যজ্জল মুখ দেখতে পেল ! কোন কিছুতে সফল হলেই মামুনের চেহারা এমন হাসি হাসি থাকে !
মামুন বলল
-আয় ভিতরে আয় !
-ভাইয়া তোমার কুকুর গুলো ডাকছে না কেন ?
-কে বলল ডাকছে না ! এই দেখ ডাকছে !
মিথিলা দেখলো কুকুর গুলো একটা কাচের বাক্সের ভিতর ঠিক একই ভাবে বসে আছে ! আর কিছুক্ষন পরপরই ডেকে উঠছে । কিন্তু আওয়াজ হচ্ছে না !
মিথিলা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই মামুন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-ওটা একটা সাউন্ড প্রুফ বাক্স ! তাই আওয়াজ আসছে না !
-তার মানে তুমি সফল হয়েছে !
-পুরোপুরি না ! কিছুটা ! শোন আমি কেবল এখন কুকুরের প্রভুভক্ত অনুভুতিটা ধরতে পেরেছি ! এই দেখ এই যন্ত্রটা দেখছিস না ?
মিথিলা দেখলো বড় সাইজের একটা সিআরটি মনিরের মত একটা যন্ত্র ! ওটা থেকে বিভিন্ন তার বে রহয়ে গেছে । কয়েকটা এন্টিনার সাথে যুক্তু ! একটা রাডারের মত যন্ত্রের সাথেও যুক্ত !
মামুন বলল
-এইটা দিয়ে আমি তরঙ্গ ছাড়ি ! এই তরঙ্গের ভিতরেই থাকে সিগনাল । মানে হল যেই যেই কুকুর গুলো প্রভুভক্ত তারা যখন এই সিগনালের ভিতর আসবে তখন তারা এই রকম আধা মিনিট পরপর ডেকে উঠবে !
-আচ্ছা ভাইয়া এই তরঙ্গ কত দুর পর্যন্ত যাবে ?
-এই মনে কর মগবাজার ! পিছনে মনে কর রেললাইন ! কেন ?
মিথিলা বলল
-আচ্ছা এই তরঙ্গ কি মানুষের উপর কাজ করবে ?
-না তা তো কাজ করার কথা না ! কিন্তু .....?
মিথিলা বলল
-যদি কোন মানুষের ভিতরের কুকুরের মত এই রকম প্রভুভক্তি থাকে !
মামুন একটু মাথা চুলকালো !
তারপর বলল
-কি জানি হতেও পারে !! এই দেখ কুকুর যেমন মালিকের কথা চোখ বুজে শুনে ! কোন ভাল মন্দ বিচার করে না ! তেমনি কোন মানুষ যদি তার কোন লোকের কথা চোখ বুঝে শুনে ! কোন ভাল মন্দ বিচার না করে তাহলে এমন টা হতে পারে ! কেন ?
মিথিলা আর কিছু না বলে কেবল বলল
-তুমি এসো ! দেখে যাও !
তারপর ওরা দুজনেই টিভি রুমে আসলো ! তখনও চ্যানেল ২১ সেই একই খবর দেখাচ্ছে। সুন্দর মত একটা মেয়ে হাতে মাইক্রফোন হাতে নিয়ে রিপোর্ট করে চলেছে: আমরা লাইভ বলছি মগবাজার থেকে !!
দর্শক আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন আমার পিছনে এই লোক গুলো কে ! এরা সেই কখন থেকে কুকুরের মত উবু হয়ে বসে আছে ! আর ঠিক ৩০ সেকেন্ড পরপর কুকুরের মত ডেকে উঠছে ! এর কোন ব্যাখ্যা আমরা এখন পাই নি ! আমরা খবর পেয়েছি .....
(এটি একটি লজিক ছাড়া আষাঢ়ে গল্প !)
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৬