কর্মসূচি ?
হাস্যকর ?
এই অপুটা এমন সব কথা বার্তা বলে ! আর নিশি নিজেও ওর ভাষায় বলতেছে !
কি হাস্যকর !
কর্মসূচি ! হাহাহা !
গতকাল রাতে যখন অপুর সাথে কথা হচ্ছিল এক পর্যায়ে অপু ওকে বলল
-আমি তোমাকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম ! সেই টাইম কিন্তু পার হয়ে গেছে ! এখন নতুন কর্মসূচি দিবো ?
নিশি হেসে বলল
-কর্মসূচি ? আল্টিমেটাম ? মানে কি ?
-মানে বুঝো না ? তুমি জানো না আমি ব্লগার ! এখন আমরা কেবল কর্মসূচি আর আল্টিমেটাম দেই !
-তাই না ? তা তুমি কি আল্টিমেটাম দিয়েছিলে শুনি ?
-তোমার মনে নাই ! আমি কি বলেছিলাম তোমাকে ?
নিশি বলল
-আচ্ছা বলগার সাহেব বলেন কি আপনি কি আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন ?
-আমি তোমাকে ছবি পাঠাতে বলেছিলাম মনে নাই ! সময় বেধে দিয়েছিলাম আজ রাত পর্যন্ত ! তুমি পাঠিয়েছ ?
-আচ্ছা ! আচ্ছা ! এই টা আপনার আল্টিমেটাম !
নিশি হাসতেই থাকে !
আসলেই অপু কদিন থেকেই ওকে দেখার জন্য কেমন উঠে পরে লেগেছে ! সব কথা বলে ! আর ঘুরে ফিরে সেই একই কথা ! কবে ছবি পাঠাবা ?
আচ্ছা এভাবে কি যেকোন একটা ছেলেকে ছবি পাঠনো যায় !
অবশ্য অপু যেকোন একটা ছেলে না ! এই কয়দিনে কেমন একটা মায়া জন্ম গেছে ওর উপর !
প্রথম যখন অপুর গল্প পড়ে কেমন একটা অনন্দ অনুভুত হয়েছিল ! কিন্তু নিশির নিজের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে ! তাই চাই নি কখনই যেন সীমা অতিক্রম না করে !
কিন্তু মন কি এসব মানে ?
না কোন কথা শুনে ?
প্রথমে ওর ইয়াহুতে যুক্ত হল ! তারপর ওর ফেসবুকে ! সারা দিন কেবল ওর সাথেই কথা বলতো !
নিশির আম্মু অবশ্য খুব বকাবকি করতো এসব দেখে !
তার একই কথা ! সারা দিন কোন কাজ নাই কেবল ল্যাপ্টপের সামনে বসে থাকা !!
নিশি এসব কোন কিছুই কানে নেয় নি !
কেবল সারা দিন অপুর সাথেই কথা বলেছে ! কি যে ছিল ! নিশি যেমনটা ব্যাকুল হয়েছিল অপু নিজেও তেমন টা হয়েছিল ! আর ব্যপার টা যখন ওরা দুজনেই যখন বুঝতে পারলো তখন আর কেউই দুরে থাকতে পারে নি !
প্রথমে ওরা ঠিক করেছিল যে কেবল নেটেই ওদের যোগাযোগ করবে ! কিন্তু ফোন নাম্বার আদান প্রদান করটে দেরি হল ! আগে তো সারা দিন নেটে থাকতো এখন সারা দিন কানে ফোন লাগিয়ে কথা বলা শুরুহল !
নিশির মা এবার বলতে লাগলো কি ব্যপার তোমাকে তো আগে এতো গান শুনতে দেখি নি এখন এতো গান শুনো কেন ?
আসলে নিশি ওর মাকে বলেছিল যে কানে হেডফোন লাগিয়ে এখন সে গান শুনে !
কথা যখন হত না তখন মিনিটে মিনিটে মেসেজ ! এটাও যেন একটা অভ্যাসে পরিনত হল !
নিশির মনে আছে একদিন সকালবেলা ওর এক ভাইয়ের বাসায় ওর যাওয়ার কথা ছিল ! বাড়িতে ঢোকার আগে ওকে ফোনকরে মানা করে যেন আর মেসেজ না দেয় ! যে কারো চোখে পরতে পারে কিন্তু অবাক হবার বিষয় যে কয়েক মিনিট পর পর ও নিজেই মোবাইল চেক করতে লাগলো যে কোন মেসেজ এসেছে কি না !!
কি অদ্ভুদ ব্যাপার !
অপু কিছুক্ষন চুপ করে থাকল । তারপর বলল
-আচ্ছা তোমার হাসি আসছে তাই না ?
-তো আর কি আসবে ! তোমরা ব্লগাররা কেবল আল্টিমেটাম আর কর্মসূচিই দিটে পারো ! কাজের কাজ কিছুই হয় না !
-শুনো তুমি আমাকে অন্য কারো সাথে তুলনা কইরো না ! অপু তানভীর যা বলে তাই করে !
নিশি হাসতে হাসতে বলল
-আমি জানি আমার ক্ষতি হয় এমন কিছু তুমি কোন দিন করতে পারবো না !
-তা পারব না ! কিন্তু আমি কষ্ট পাই এমন কাজ যদি আমি করি !
নিশি এবার একটু যেন চিন্তিত হল !
অপু এই কথাটা কেন বলল ? নিশি খুব ভাল করেই জানে অপু মাঝে মাঝে খুব পাগলামো করে ! নিশি বলল
-কি কর্মসূচি দিবা তুমি ? আরে দুর, কি করবা তুমি ?
অপু বলল
-শুনো, আমি শান্তি প্রিয় ব্লগার ! আমার সব কাজ হল শান্তিময় !
-মানে কি ?
-মানে হল, আজকের পর থেকে যত দিন তুমি আমাকে তোমার ছবি পাঠাবা না ততদিন আমি দুপুরে বেলা কিছু খাবো না !
-মানে কি ?
-তুমি শুনেছ আমি কি বলেছি ! যদি তুমি চাও আমি অনাহারে কষ্ট না পাই তাহলে তুমি আমাকে ছবি পাঠাবা !
-দেখ এটা কিন্তু ইমোশনাল ব্লাকমেইল !
-তুমি যদি তাই মনে কর তা হলে তাই ! দেখ সোনাপাখি ভালবাসায় সব কিছু জায়েজ আছে ! সব কিছু করা যায় !!
-না, তুমি এটা করবা না !
-হা হা হা ! আমি আগেই বলেছি ! আমি যা বলি তাই করি ! এবং এটা আমি করবো ! আমার কর্মসূচি আমি পালন করবো ! শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি !
নিশি খুব ভাল করেই জানে ওর পক্ষে ছবি পাঠানো সম্ভব না ! এই কথাটা ও আগেই বলেছে অপুকে ! অপু তখন মেনেও নিয়েছিল ! কিন্তু এখন এমন সব পাগলামো করছে !
কেন করছে ?
দুপুরের আগে অপুকে ফোন দিয়ে লাভ নাই ! ও ঘুমিয়ে থাকে ! এই সময়টা নিশির খুব উৎকন্ঠায় কাটে ! নিশির কেবল মনে হতে লাগলো বিরোধীদলের কর্মসূচিতেও সরকার এতো উৎকন্ঠা বোধ করে না যত না ও নিজে করছে !
বারবার মনে হচ্ছে ও খাবে না ! এটে কেমন করে হয় !
এটা কোন কথা হল ?
বেলা ১২ টার দিকে অপু নিজেই ফোন দিল !
-কই তুমি ?
অপু বলল
-এই তো ঘুম থেকে উঠলাম !
-খাবা না ?
-খাবো ! তুমি ছবি পাঠিয়েছ ?
-প্লিজ অপু ! এমন করে না ! তুমি আমার দিকটা একটু ভেবে দেখার চেষ্টা কর ! আমি পারবো না !
-ওকে সমস্যা নাই তো ! আমি তো বলি নি আমি আর খাবোই না ! মানে আমরন অনশন তো করছি না ! কেবল এক বেলা আহার বর্জন করেছি ! সমস্যা তো নাই ! মানুষকি একবেলা খেয়ে বাচে না !
-দেখো ভাল হবে না বলতেছি ! তুমি এখনই খাবা ! দুপুরে খাবা !
-জি না সোনা পাখি ! আমি খাবো না ! আমি এক কথার মানুষ ! যা বলেছি টা করবই !
-প্লিজ ফ্লিজ বলে লাভ নাই !!
দুপুর বেলা নিশি কিছু মুখে নিতে পারলো না ! বারবার মনে হতে লাগলো অপু কিছু খাচ্ছে না ও কিভাবে খাবে ?
নিশির মা ওকে না খেতে দেখে বলল
-কি ব্যাপার খাচ্ছিস না কেন ?
-ভাল লাগছে না মা !
নিশি হাত ধুয়ে উঠে পরলো ! আর পারছে না ! নিশি খুব ভাল করে বুঝে গেছে এই পাগলটার হাত থেকে ওর নিস্তার নাই ! ও যা বলবে এখন ওর তাই করতে হবে !
অপুকে ফোন দিল ও !
-বল জান পাখি আমার !
-ঢং রাখো !
-ঢং ?
-তুমি খাবা না ?
-না ! রাতে খাবো !
-প্লিজ !
ও পাশে থেকে গানের আওয়াজ ভেসে আসে ! অপু গান গাইছে !
-এই ! এই পাজি ছেলে ! তুই আমার কথা শুনিস না কেন ?
-শুনি তো মিষ্টি মেয়ে ! তুমিও শুনো না আমার কথা !
নিশি বলল
-তোমার খিদে লাগে নি ! কষ্ট হচ্ছে না ?
-সত্যি কথা বলবো ?
-হুম ! একটু কষ্ট হচ্ছে ! না খেয়ে থাকার অভ্যাস নাই তো !!
নিশির কেমন জানি অসহায় বোধ হয় ! বুকের মাঝে কেমন একটা অস্থির মত লাগে !!
নিশির কেবল মনে হল ওর নিজের কষ্ট হচ্ছে !
না !
আর একটা মুহুর্তও না !
নিশি বলল
-আমি এখনই ছবি পাঠাচ্ছি ! প্লিজ খেয়ে নাও ! প্লিজ !!
নিশি জানে এটাই শেষ না ! আস্তে আস্তে অপু ওর সব দাবী গুলো ঠিকই আদায় করে নিবে ! নিশির কিছুই করার থাকবে না !
এই পাগল ছেলেটাকে নিয়ে কি করবে ও !
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:০০