মীরা আমার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । ওর সামনে পিচ্ছি মত একজন রুগীকে দেখলাম জিহ্বা বের করে আছে । মনে মীরা রুগীটাকে পরীক্ষা করছিল । আমাকে দেখে সেই দিকে লক্ষ্য দিতে ভুলে গেছে ।
আমি একটু হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু মীরা সহজ হল না ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকেও আপনার হাত কেটে গেছে ?
-কি করবো বলুন ?
-তাই বলে পরপর তিন দিন একই জায়গায় কিভাবে কাটে ? আর কালকে যে আমি ঐ খানে স্টিক লাগিয়ে দিলাম সেটা কই ?
মনে মনে বললাম সেটা আমি তুলে ফেলেছি সুন্দরী তানা হলে তুমি তোমার নরম হাত দিয়ে আমাকে আবার সেটা লাগাবে কিভাবে ?
আমি খানিকটা বিভ্রান্ত হবার ভান করলাম । বললাম
-আসলে সেটাই বুঝতে পারছি না । রাতে ঘুমিয়েছিলাম তখন ছিল কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি আর নেই !
মীরা আমার কথা খুব একটা একটা বিশ্বাস করলো বলে মনে হয় না । আসলে না করারই কথা ! পরপর তিন দিন যদি কেউ একই ভাবে একই জায়গায় একই কাটা নিয়ে হাজির হয় তখন সবার মনেই একটু সন্দেহ দেখা দেয় ।
মীরা বলল
-আজ আমি ব্যস্ত ! আপনি সেলিমকে বলেন আপনার হাতে ব্যন্ডেজ বেধে দিবে ।
কি ?
এতো কষ্ট করে হাত কাটলাম সেলিমের হাত থেকে ব্যন্ডেজ বাধার জন্য নাকি ?
আমি বললাম
-আমি কম্পাউন্ডারকে বিশ্বাস করি না । এম বি বি এস ডাক্তার ছাড়া আমি চিকিৎসা করাবো না ।
মীরা ততকক্ষনে সামনে বসা সেই পিচ্চিকে পরীক্ষা করা শুরু করে দিয়েছে । আমার দিকে না তাকিয়েই বলল
-আপনার যে হাত কেটেছে সেই জন্য এমবিবিএস ডাক্তার লাগে না ।
-তাই ??
ঠিক তখনই আমি একটা পাগলমো করে বসলাম । মীরা সামনে একটা মেডিক্যাল নাইফ ছিল । আমি ওটা হাতে নিয়ে নিজের বা হাতে বেশ জোরেই একটা টান দিলাম !!
আউউউউউ !!
কে বলে যে প্রেমের জন্য রক্ত ঝরালে নাকি ব্যাথা লাগে না ??
আমার তো খবর খারাপ হয়ে গেল । আগে তো একটু রক্ত বের হচ্ছিল । এখন সত্যি সত্যি অনেক রক্ত বের হচ্ছে । মীরার সামনে যে পিচ্ছি ছিল সে দেখলাম জোরে একটা চিৎকার দিল ।
সেলিম বাইরে ছিল চিৎকার ভিতরে চলে !
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি সব্বনাশ !!
আমি মীরা দিকে তাকিয়ে বলল
-সেলিম কি পারবে এখন ? পারলে বলেন আর একটু বেশি কাটি !!
মীরা কয়েক মূহুর্ত আমার দিকে তাকিয়ে সেলিম কে বলল তুলা নিয়ে আসতে ।
মীরা নিজেই আমার দিকে এগিয়ে আসলো । তারপর আমার হাত ধরে আমার ক্ষত পরীক্ষা করতে লাগলো ।
মীরাকে প্রথম দেখি আমাদের বাড়ির সামনে । যেদিন ওর চেম্বার ঠিক করছিল সেদিন । আমাদের বাড়ির নিচেই ওর চেম্বার । আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ওর বাবার চেম্বার কিন্তু অবাক হলাম যে ওর নিজের । আশ্চর্য এই টুকু পিচ্চি মেয়ে তাও আবার ডাক্তার ।
কিভাবে কথা বলবো ভাবছিলাম । তখনই একটা মুভিতে দেখলাম এই বুদ্ধিটা ! নিজের হাত কাটো তারপর ডাক্তারের চিকিৎসা নেও !!
হাহা !!
মীরা যতক্ষন আমার হাত ধরে আমার চিকিৎসা করছিল সত্যি আমি যেন অন্য জগতে ছিলাম ।
বাস্তবে ফিরে এলাম খুব জলদিই !
মীরার দিকে তাকিয়ে দেখি ও ওর জায়গায় ফিরে গেছে ! হাতে দিকে তাকিয়ে দেখি হাতে সাদা ব্যান্ডেজ জড়ানো !
আমার দিকে তাকিয়ে মীরা বলল
-সুমন সাহেব জীবনটা সিনেমা না ?
-তা তো অবশ্যই !!
-তাহলে এই কাজটা কেন করলেন ?
-কোন কাজটা ?
মীরা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন !
আমি বললাম
-ও আচ্ছা !
-আপনি কি জানেন আর একটু জোরে টান দিলে আপনার রগ কেটে যেতে পারতো !
-তাই ? তাহলে তো ভালই হত !! আপনার সাথে আবারও দেখা হত !
-এই কাজটা না করলেই কি হত না ?
আমি কোন কথা বললাম না ! মীরা বলল
-কেন করলেন এমনটা ?
এই মেয়ে কি গাধা নাকি ?
কেন একটা ছেলে বার বার নিজের হাত কেটে ওর সামনে আসছে সেটা বুঝে না ?
আমি বললাম
-একটা নাটকে দেখেছিলাম ! মেয়েটা ডাক্তার থাকে । মেয়েটার কথা বলার জন্য ছেলেটা প্রায়ই নিজের হাত কেটে মেয়েটার সামনে আসে ।
মীরা বলল
-নাটক না । মুভি ! হিন্দি মুভিতে ! জান্নাত টু মনে হয় মুভি টার নাম !
-আরে তাই তো !! আপনি হিন্দি মুভি দেখেন নাকি ?
-দেখি মাঝে মাঝে !
-ভাল লাগে ?
-লাগে !
-আমারও লাগে ! দেখছেন আমার আর আপনার পছন্দের কি মিল !!
মীরা কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি বললাম
-দেখুন তো কোন জায়গা দিয়ে কাটলে রগ কাটবে না ?
-মানে ?
মীরা আমার কথা বুঝতে পা পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । আমি বললাম
-না মানে আবার যখন হাত কাটবো তখন তো এই জিনিসটা লক্ষ্য রাখতে হবে !
-আপনি আবার হাত কেন কাটবেন ?
-বারে ! তা না হলে আপনার কাছে কোন উছিলায় আসবো ! আর আপনি আমার হাত ধরবেন কিভাবে !
মীরা কেবল আমার দিকে তাকিয়েই রইলো !
আমি বললাম
-দেখাবেন না ? দেখেন যদি রগটগ কেটে গিয়ে হাত অকেজো হয়ে যায় তখন আপনিই বলবেন যে হাত খোড়া ছেলের সাথে আমি বিয়ে করবো না !
এই লাইনটা বলে মনে হল যে ঠিক হয়নি বলাটা । এতো জলদি এতো দুর যাওয়া ঠিক না । মীরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকাতে থাকতে হেসে ফেলল ! বলল
-সুমন সাহেব ! আপনি এখন বাসায় যান ! আমি রুগী দেখি ! কেমন !!
-সমস্যা নাই ! আপনি রুগী দেখেন । আমি আপনাকে দেখি !
-আপনার অফিস নাই ?
-আছে ! তবে এটা বেশি জরুরী ! এক চাকরী গেলে হাজারটা আসবে কিন্তু এক মীরা গেলে আর আসবে না !!
মীরা মুখটা আরো একটু উজ্জল হয়ে উঠলো !! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
আসলে সব মেয়েদের ভিতর কিছু কমন ব্যাপার থাকে । একটা মেয়ে যখন দেখে একটা ছেলে সব কিছু থেকে তাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সেই মেয়েটা খুশি হয় !! মীরা চোখে মুখে সেই খুশি আমি দেখতে পাচ্ছি !!
মীরা বলল
-ঠিক আছে আপনি কাউন্টারে গিয়ে বসুন !
-আচ্ছা আমি যদি কম্পাউনডারের কাজটা নেই কেমন হয় বলুন তো !! ডাক্তা বউ আর কম্পাউন্ডার স্বামী ! কেমন হয় ?
এবার দেখলাম মীরার মুখ একটু লাল হয়ে হয়েছে ।
আমি খুশি মনে কাউন্টারের দিকে হাটা দিলাম ।
(গল্পটা লেখায় মন নাই !! কিছুই যেন ভাল লাগছে না !!)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৬