ইংলিশ রোডের মাথায় এসেও কোন রিক্সা পেলাম না ! কোন বাসও দেখা যাচ্ছে না ! গুলিস্তানে কি জানি গন্ডোগোল হয়েছে কোন বাস এদিকে আসছে না ! আর কোন রিক্সাও ওদিকে যেতে চাচ্ছে না ! কি যে করি !
মাঝে মাঝে এতো মেজাজ খারাপ হয় !
এখন একটা গাড়ি থাকতো !! নিজের গাড়ি ! কোন বাসের জন্য আর অপেক্ষা করতে হত না !
গাড়িতে উঠতাম আর চল হে গাড়ি যে দিকে দুচোখ যায় !!
কিন্তু হায় !!
একটা দীর্ঘশ্বাস বের করে আবার হাটা দিলাম ! কোন কিছু করার বাই ! দেখি সামনে গিয়ে কোন রিক্সা পাওয়া যায় নাকি ?
দু পা সামনে এগিয়েছি ঠিক তখন সিলভার রংয়ের কোরোলা গাড়িটা রাস্তার পাশে এসে থামলো ! একেবারে আমার পাশেই !
থামতেই পারে ! কিন্তু কোরোলা গাড়িটা মনে হয় আমার পরিচিত ! তবে এই শহরে কোরোলা গাড়ি অনেক আছে ! পরিচিত নাও হতে পারে !
আমি থামবো কি থামবো না যখন এই কথা ভাবছি তখনই গাড়ির পেছনের কাঁচটা নিচে নেমে গেল !
পরিচিত একটা হাসি দেকখতে পেলাম !
এটা নিহিনের গাড়ি !
নিহিন আমার ক্লাস মেইট !
নিহিন ! আমার ......।
নিহিন বলল
-বাসায় যাচ্ছ ? নাকি অন্য কোথাও ?
আমি একটু হেসে বললাম
-না বাসায়ই !
-বাইরে তো বাসটাস নাই ! রিক্সাও পাও নি দেখছি ! আসো আমি নামিয়ে দেই !
আমাদের ক্লাসের অনেকেই নিহিনের গাড়িতে উঠছে ! কিন্তু কেন জানি আমার ওর গাড়িতে উঠতে খুব বেশি অস্বস্তি লাগে !
আমি বললাম
-না ঠিক আছে । আমি চলে যাবো ! কোন সমস্যা নাই !
-আরে বাবা ! সমস্যার কথা কেন আসছে ! আমিতো যাচ্ছি ! আর গাড়িতেতো আর কেউ নাই ! হেটে হেটে যাওয়ার তো কোন মানে নাই ! নাকি ? নাকি আমার সাথে যেতে সমস্যা ? বল যে আমার সাথে যেতে চাও না তাহলে তো আর কোন কথা নাই ?
এই মেয়ে গুলো কথার এমন মার প্যাচ জানে ! এখন কি করি ?
আমি একটু হেসে বললাম
-নাহ ! কি বল ! তোমার সাথে যেতে সমস্যা কেন থাকবে ?
নিহিন বলল
-তাহলে?
আমি কি বলবো ঠিক খুজে পেলাম না ! নিহিন আমার দিকে তাকিয়েই আছে ! আমি মনে মনে যুতসই অজুহাত খুজতেছি ! বললাম
-আসলে তোমার বাসা আর আমার বাসাতো দুদিকে ? কিভাবে উঠি ?
-বলেছে তোমাকে ?
-হ্যা ! তাইতো !
-আচ্ছা ! ঠিক আছে ! শাহবাগ পর্যন্ততো চল এসসাথে ! নাকি তোমার বাসায় যেতে হলে অন্যদিক দিয়ে যাও তুমি !
আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না ! আসলে আমার বাসা যেদিকেই হোক না কেন, শাহবাগ পর্যন্ত আমাকে যেতেই হবে !
নিহিন দরজা খুলে দিল ! আমি গাড়িতে উঠে বসলাম !
গাড়ি চল্টে শুরু করলে নিহিন বলল
-যাক শেষ পর্যন্ত আমার গাড়িতে তোমাকে ওঠাতে পারলাম ! আমি তো ভেবেছিলাম তুমি কোনদিন উঠবেই না আমার গাড়িতে !
-না ! এমন কোন বিষয় না ! আসলে সুযোগই হয় নি !
-সুযোগ না কচু ! তুমি ইচ্ছে করে উঠনি এতো দিন !
এই মেয়ে কি লাগাই লো গো !!!
অবশ্য নিহিন সত্যি কথাই বলছে । নিহিনের গাড়িতে আমি এতো দিন বলতে গেলে ইচ্ছা করেই উঠি নাই ! কিন্তু এই কথা তো আর বলা যায় না । আমি বললাম
-সত্যি বলছি !
নিহিন আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-তাই না ? যেদিন যুবায়ের স্যারের ফেয়ারওয়েল ছিল তুমি কই ছিলা ? সব কিছু তুমি করলে সকল প্লান ছিল তোমার কেবল গিফট কেনার সময় সাহেবের খবর নাই! কেন নাই ? কারন গিফট আমার গাড়িতে করে কিনতে যেতে হবে বলে !!
আমি কিছু বলতে মুখ খুলতে যাবো ঠিক তখনই নিহিন বলল
-চুপ থাকো ! মিথ্যা কথা বলতে হবে না !
আমি চুপ করলাম ।
কিছুক্ষন চুপচাপ রইলাম ! নিহিন এবার কেন জানি হাসতে লাগল !
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম
-হাসছো কেন ?
নিহিন কোন রকম হাসি আটকে বলল
-এমনি হাসছি !
তারপর আবারও হাসতে লাগলো !
কি রে এই মাইয়া কি পাগল হইয়া গেল নাকি !!
নিহিন অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল
-আচ্ছা তোমাকে বলেই ফেলি !
-বল !
-নিহিন আমার দিকে আর একটু এগিয়ে এসে বলল
-জানি আমাদের ক্লাসে আমার একটা প্রেমিক আছে !
আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না !
-তাই নাকি? কই কোনদিন তো শুনি নাই !
-শুনবা কেমনে আমি নিজেই তাকে দেখেছি নাকি ?
-মানে কিছু না ! সে আমাদের ক্লাসে পড়ে কেবল এই টুকুই জানি ! আমার মোবাইলে মেসেজ পাঠায় ! কখনও কল করে না, ধরেও না !
-আচ্ছা !
নিহিন বলল
-মাঝে মাঝে কবিতাও লিখে পাঠায় ! কাল রাতে কি কবিতা লিখে পাঠিয়েছে ?
নিহিন তার মোবাইলের ইনবক্স ওপেন করে আমাকে দেখালো ! প্রথম মেসেজটা ওপেন করলো
সেখানে লেখা
আমি তোমার প্রজা
তুমি আমার রাণী !
আমি তোমার কাঁঠাল
পাঁকাও আমায় কিলাই !
আমি পড়তে পড়তেই দেখলাম নিহিন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো ! আরে এতো হাসির কি আছে ! ব্যাচারা কবিতা তো লিখেছে !!
নিহিন বলল
-আমার মনে হয় এটা লিখলে আরো ভাল হত
আমি তোমার ইদুর
আমি তোমার বিলাই
আমি তোমার কাঁঠাল
পাঁকাও আমায় কিলাই !!
এই কথা বলে নিহিন আবারও হাসতে লাগলো !! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি আর কবিতা পেলে না ?
আমার মনে আমি কানে ভুল শুনলাম ! আমি কোন মতে বললাম
-কি বললে তুমি ?
নিহিন হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি বললাম যে তুমি আর কবিতা পাওনি আমাকে পাঠানোর মত !
-আ আমি পাঠবো কেন ?
-আমি খুব ভাল করেই জানি যে তুমিই পাঠিয়েছ ! ঠিক আছে ! আর আজকে থেকে না ! অনেকদিন আগে থেকেই জানি ! ভেবেছিলাম আরো কিছুদিন মজা দেখবো কিন্তু কালকে এতো হেসেছি যে আজ আর থাকতে পারি নি !
-দেখো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে নিশ্চই ! আমি এই এই কাজ করি নি ! আমি কেন তোমাকে এসএমএস পাঠাবো বল ? আর আমার নিজের গার্লফ্রেন্ড আছে ?
-ও হ্যা ! কি যেন নাম আভা না কি যেন নাম ! তাই না ?
-হ্যা !
-কত দিন ধরে যেন তোমাদের রিলেশন ?
-এই তিন বছর !
-আচ্ছা !!
নিহিন একটু যেন অবাক হল ! তারপর বলল
-তুমি সিমির কাছে বলেছিলে চার বছর ! আর সুমন আমাকে বলল যে পাঁচ বছর ধরে ভালবাসো আভা কে !
আমি কোন কথা খুজে পেলাম না ! নিহিন বলল
-অপু বলতো সত্যি কথা বলার সব থেকে বড় এডভান্টেজটা কি ?
আমি নিহিনের দিকে তাকিয়েই রয়েছি ! এই মেয়েটা এসব কি বলছে
!!
নিহিন বলল
-পারলে না ? সত্যি কথা বললে কখন কি বললে সেটা মনে রাখার দরকার প্রয়োজন পড়ে না ! বুঝেছ ?
-দেখ ! এটা হতেই পারে ! তারমানে এই না যে আমিই মেসেজ গুলো পাঠিয়েছি !
-আচ্ছা !! এখনও স্বীকার করবে না ? দেখি তোমার মোবাইল দাও !
-না ! আমি মোবাইল কেন দিব ? কারো মোবাইল ......
আমি আমার কথা শেষ করতে পারলাম না নিহিন এক প্রকার জোর করেই আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিল ! আসলে আমি ভাবতেই পারি নি নিহিন এমন করে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিবে !
লজ্জায় আমার মুখটা লাল হয়ে গেল । নিহিন মোবাইলের ওয়ালপেপারের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো এক ভাবে !
তাকিয়ে তো থাকবেই !
কারন মোবাইলের ওয়ালপেপারে ওর ছবি লাগানো রয়েছে !
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ছবিটা ভাল হয়েছেতো ! কখন তুললে ? আমি তো টেরই পাইনি !
আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না ! কেবল অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম !
আজকে এমন একটা লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে পাড়তে হবে জানলে আমি নিহিনের গাড়িতে উঠতামই না !
আমি নিহিকে পছন্দ করি অনেক আগে থেকেই ! সব সময়ই ওর কাছ থেকে আমি দুরে দুরে থাকতাম ! আমার ভয় ছিল আমার আচরনে নিহিন নিশ্চই টের পেয়ে যাবে ! কিন্তু এখন দেখছি নিহিন সবই জানে !
নিহিন আমার মোবাইল ঘাটতে লাগলো ! আমি দুর্বল কন্ঠে বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে ! মোবাইল দাও ! আই এম সরি !
-উহু ! মোবাইল তো দিবো না ! আর কেবল সরিতে কাজ হবে না !
-আর কি করতে হবে ?
নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাকে তো পানিশমেন্ট পেতে হবে !
-কি পানিশমেন্ট !
-সেটা আমি ঠিক করবো !
নিহিন আমার আর একটু কাছে এসে বলল
-আমার ছবি গুলো আর কোথায় রেখেছ ! আমি খুজে পাচ্ছি না ! একটু খুজে দাও তো !
নিহিনের মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও আমার এই অবস্থা দেখে খুব মজা পাচ্ছে !! তবে একটা ব্যাপার আমি একটু শান্তি পাচ্ছি যে নিহিন রাগ করে নি !
প্রথম প্রথম আমি ভাবতাম নিহিন মনে হয় রাগ করবে তারপর দেখলাম যে না রাগ করে নি !
আমি নিহিনের ছবি গুলো বের করে দিলাম !
নিহিন চুপচাপ ছবি গুলো দেখতে লাগলো !
আমি আবার ক্ষীণ কন্ঠে বললাম
-তুমি কিভাবে টের পেলে ?
নিহিন আমার দিকে একটু তাকিয়ে বলল
-তোমার যেমন এটিটিউড ! আমি না ক্লাসের সবাই জেনে গেছে যে কাজটা তুমিই করেছ !
-সত্যি !
-জি ! সত্যি !! এরকম একটা গাধামী করবা আমি ঠিক মত ভাবি নি ! প্রথম প্রথম এমন মেজাজ খারাপ হত ! কিন্তু .....
-কিন্তু .???
নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কিন্তু তোমার মাথা !!
আমি আবার চুপ করে রইলাম ! মেয়েদের বুঝা আসলেই ঝামেলার একটা কাজ !!
দেখতে দেখতে শাহবাগ চলে এল ! আমি নামতে চাইলাম ! নিহিন তখনই আমার হাত চেপে ধরে বলল
-কই যাও ?
নিহিনের হাত ধরেছে এটা আমার সামলাতে বেশ কিছুক্ষন সময় লাগলো ! বললাম
-শাহবাগ চলে এসেছে .....।
-বললাম না তোমার জন্য পানিশমেন্ট আছে !! চুপচাপ বসে থাকো !! আর আজ থেকে তুমি টের পাবা ! লুকিয়ে লুকিয়ে মেসেজ পাঠানো ! আমি তোমার কাঁঠাল পাঁকাও আমায় কিলাই। তোমাকে আমি কিলিয়েই পাকাবো !!
আমি কেবল নিহিনের দিকে তাকিয়ে থাকি ! এই মেয়েটা কি সত্যি সত্যি আমাকে কিলিয়ে পাকাবে নাকি !
নিহিন আবার কালকের কবিতা কি ঐ চার লাইনই লিখেছিলে নাকি আরো আছে ?
আমি এখন কি বলবো ?
সত্য কথা তো আরো লিখেছিলাম ! কিন্তু এই চার লাইন পড়ে নিহিন যেভাবে হেসেছে না জানি বাকি লাইন গুলো পড়ে কি বলবে !
আমি বললাম
-না ! এই চার লাইনই লিখেছি ! আর লিখি নি !
-তাই !!
নিহিনের মনে হল যেন একটু মন খারাপ হল ! বলল
-কেন লিখো নি ! কবিতাটা তো সুইট হচ্ছিল !
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম
-সত্যি?
-হুম ! গার্লফ্রেন্ড কে পটানোর জন্য এমন কবিতা খুব কাজে লাগে ! তোমার উপর একটু রাগই ছিলাম আমি ! মুখ ফুটে কথাটা বলতে পারো না খালি লুকিয়ে লুকিয়ে মেসেজ পাঠানো ! কিন্তু কাল রাতে তোমার মেসেজটা পেয়ে এতো হাসলাম ! তোমার উপর রাগ গুলো সব চলে গেল !
আমি বললাম
-কবিতা টা আরো কিছু লিখেছি !
-সত্যি ?
-আজ রাতে আরো কয়েক লাইন পাঠাবো ভেবেছিলাম !
-আচ্ছা !!
নিহিন কি যেন ভাবলো ! তারপর বলল
-এখন থেকে প্রতি ঘন্টায় আমাকে এই সুইট সুইট মেসেজ পাঠাবা ! মনে থাকবে তো ? তা না হলে কিন্তু সত্যি সত্যি কিন্তু কিলিয়ে তোমাকে পাকাবো !!
বলেই নিহিন হাসতে লগলো !
আমি কেবল তাকিয়েই রইলাম !!
বিঃদ্রঃ গল্পে ব্যবহার করা কবিতাটি ব্লগার রোমান সৈনিকের ফেসবুক স্টাটাস থেকে নেওয়া ! আসলে মোশারফ ভায়ের কবিতাটা পড়েই আমার গল্পটা লেখার কথা মাথায় এসেছে !! ভাইকে ধন্যবাদ তার কবিতা খানা আমার গল্পে ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য !!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০৫