তরু স্যারের পড়ে সবে মাত্র বের হয়েছি ঠিক তখনই সৈকত পেছন থেকে টান দিল ব্যাগ ধরে ।
-আরে কি হল ?
-আর আয় না ।
এক প্রকার টানতে টানতেই একেবারে শেষ কর্ণারে নিয়ে গেল । তূর্য আগে থেকেই ওখানে ছিল । বুঝলাম না আমাদের দুজনের সাথে এমন কি দরকার ! সৈকত বলল
-দোস্ত খুব চাপে আছি !
মেজাজটা খানিকটা গরম হল । খিদে লেগেছে । খেতেই যাচ্ছিলাম । এখন আমাকে টেনে এনে বলছে দোস্ত চাপে আছি । আমি বললাম
-চাপে আছিস তো আমরা কি করবো ? দেখ এই কাজে তোকে আমরা কোনই সাহায্য করতে পারবো না । দেখ সামনের ডান দিকে বাধরুম আছে ওখানে গিয়ে চাপ মুক্ত করে আয় ।
-আরে দুর ঐ চাপ নাকি ?
-তাহলে আবার কি ?
সৈকত কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো । ওর মুখ দেখে সিরিয়াস কিছু মনে হচ্ছে । এতোক্ষন তূর্য কোন কথাই বলে নি । চুপ করে শুনছিল । তূর্য একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
-কি সমস্যা ?
-সমস্যাটা বুবলীকে নিয়ে ।
বুবলী সৈকতের গার্লফ্রেন্ড । আমি তো আগেই বুঝেছিলাম সমস্যা ঐ খানেই থাকবে । আসলে নারী যেখানে সেখানেই সমস্যা । আমি বললাম
-বুবলী আবার কি করল ?
-আসলে ...
সৈকত একটু ইতস্তঃ করতে লাগল ।
-আসলে .....? কি ?
-ডিসেম্বরের বার তারিখ আসছে না ?
-হুম ।
-ঐ দিন একটা ইউনিক দিন না ? ১২.১২.১২ ।
তূর্য বলল
-ইউনিক ডেট ! এখানে সমস্যা কিসের ?
আমিও ঠিক বুঝতে পারলাম না ঐ দিন নিয়ে বুবলী আবার কি প্রবলেম করতে পারে !
হ্যা, এক হতে পারে ঐ দিন একসাথে ঘুরতে চাইতে পারে । এটা তো তেমন কোন সমস্যা না । আমি ব্যাগ থেকে পানি বের করে মুখে দিলাম । পানি অর্ধেক ও গিলতে পারি নি সৈকত মিনমিনে গলায় বলল
-ঐ দিন বুবলী আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে !
আমার প্রথমে মনে হল আমি বোধহয় ঠিক শুনছি না । কিন্তু গলার ভিতরকার পানি ততক্ষনে বাইরে বেরিয়ে এসেছে । আমি তূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ হা হয়ে গেছে । তার মানে আমি ভুল শুনিনি । আমরা দুজনেই এবার একসাথে বলে উঠলাম
-কি করতে চাচ্ছে ?
-এই ... ...
আমি আর কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারলাম না । এটা কি সত্যি হতে পারে ? হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে ?
যে পোলা এখনও মায়ের কথা ছাড়া বাথরুমে পর্যন্ত যায় না সেই পোলা কয় বিয়া করবে । তাও গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে ! আন্টি যদি জানতে পারে তাহলে ওকে একেবারে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে !
আমি সৈকতকে বললাম
-পুরো লাইন আবার বল । আস্তে আস্তে বলবি ।
সৈকত বলল
-বুবলী আমাকে বারই ডিসেম্বর বিয়ে করতে চাইছে ।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে তূর্য বলল
-মামা এই কাম তো তোমার একাই করা লাগবো । তোর সাথে সাথে তো আর আমরা বিয়া করতে পারি না । আর শামসের তো জিএফও নাই ও চাইলেও বিয়া করতে পারবো না ।
তূর্য কে ধরে কষে একটা চড় মারার ইচ্ছা খুব কষ্টে দমন করলাম । আগে সৈকতের কথা শুনে নেই তারপর তোরে দেখতাছি । আমি সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললাম
-তো তুই আমাদের কাছে কি চাস ?
-দেখ মোটামুটি সব ব্যবস্থা বুবলী করেই ফেলেছে । শুধু ..
আমি সৈকতকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
-কি ব্যবস্থা করে ফেলেছে ?
-মানে কোথায় বিয়ে হবে ! কে বিয়ে পড়াবে !
আমি খনিকটা কৌতুহল হল । কাজী ঠিক করেছে ! কেমনে !!
আমি বললাম
-কে বিয়ে পড়াবে ?
-ওর বন্ধু আছে ঠিক বন্ধু না কাজিন । মাওলানা টাইপের । ও বিয়ে কিভাবে পড়াতে হয় জানে । ও আমাদের বিয়ে পড়াবে । তারপর মনে কর যে বুবলীর পক্ষ থেকে যে সাক্ষী দরকার সেটাও মেনেজ করেছে । শুধু আমার পক্ষের সাক্ষী ..
তূর্য বলল
-তা মামা তুমি চাও যে তুমি যে গলায় দড়ি পরতেছো তার সাথে সাথে আমরাও ফাঁন্দে পড়ি ।
সৈকত বলল
-আরে এখানে ফাঁদে পড়ার মত কি আছে ? তোরা কেবল যাবি আমার সাথে । আমার বুকে একটু বল দিবি । আর একটু সই করবি ।
আমি বললাম
-সই করবো মানে ? কোথায় সই করবো ?
-আরে বিয়ে করবো , কাবিন নামা থাকবে না ?
তূর্য বলল
-দেখছোস শামস ফান্দে কেমনে ফেলবো !
তারপর সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলল
-মনে কর তোর বিয়েতে আমরা সাক্ষী হলাম । সইও করলাম । তারপর এটা জানা জানি হয়ে গেল তখন সব চেয়ে বড় বাঁশটা খাব আমি আর শামস !
সৈকত বলল
-কিভাবে ?
তূর্য বলল
-এটা যখন তো মা জানবে তখন তোর সাথে সাথে আমাদের কেও প্যাঁদানী দিবে । তারপর আমার বাপের কাছে বলবে তখন সেও আমাকে প্যাঁদানী দিবে । তোর বিয়ে তুই যেখানে একবার প্যাঁদানী খাবি আমরা দুজনে সেখানে খাবো দুইবার ।
তাই তো ! যদি জানাজানি হয়ে যায় তাহলে তো সত্যিই খবর আছে !!
প্রথমে সৈকতের মা আমাদের ঝাড়বে । তারপর বলবে আমার আম্মুর কাছে আম্মুও আমাকে ঝাড়বে । এরপর আম্মু বলবে আব্বুর কাছে । তখন আব্বু আবার আমাকে ...
আমি আর ভাবতেই পারলাম না । তূর্য আবার বলল
-তার উপর বুবলীর আব্বা যদি কেইস করে দেয় যে তার নাবালিকা মেয়েকে আমরা ফুসলিয়ে বিয়ে দিয়েছি তাহলে আমাদের চৌদ্দ গুষ্টিশুদ্ধ জেলে ঢুকতে হবে !
সৈকত বলার চেষ্টা করলো
-আরে এটা জানা জানি কিভাবে হবে ?
-না মামা ! এসব কথা চাপা থাকে না কিছুতেই । শামস ! তুই থাকলে থাক । আমি এর ভিতরে নাই । একদমই নাই ।
আমি বললাম
-আমিও নাই । সেই দিন আমার বাপ আমাকে রদ দিয়ে পিটাইছে । আমি খাইতে চাই না ।
সৈকত আমার হাত চেপে ধরে বলল
-দোস্ত তুই আন্তত যাইস না । তোকে বাটনরোজে লাঞ্চ করাব ।
আমার একটু লোভ হল অবশ্য । বুফেতে অনেক দিন খাই না । তবুও বললাম
-যেই রোজেই খাওয়াও মামা কোন লাভ নাই । আর আমি ডায়েটে আছি । জানিস না ?
আমি সৈকতকে রেখে চলে আসলাম ।
সন্ধ্যার সময় তানভীর স্যারের কাছে পড়তেছিলাম আম্মু এসে বলল যে বুবলী ফোন দিয়েছে । আমি হ্যালো বলতেই বুবলী কেমন ফুপিয়ে কেঁদে উঠল ।
-আরে কি সমস্যা ? কি হল ?
কিছুক্ষন কান্না কাটি করার পর বুবলী বলল
-আমি মনে করতাম তুমি সৈকতের সব থেকে ভাল বন্ধু । সেই হিসাবে আমারও ভাল বন্ধু । আর সেই তুমি আমাদের একটু হেল্প করবা না ? বল করবা না ?
আসলে মেয়ে মানুষ যত ঝামেলা উত্পাদন কারী প্রানীই হোক না কেন মেয়েদের মুখের উপর না বলাটা খানিকটা কষ্টকর !
বুবলী এতো করে অনুরোধ করতে লাগলো যে আমি আর না করতে পারলাম না কিছুতেই ।
বুবলীর ফোন রাখার সাথে সাথে তূর্যের ফোন এসে হাজির ।
-শালা এতোক্ষন কার সাথে কথা বলছিলি ! কতক্ষন ধরে ফোন দিচ্ছি ।
-আরে বুবলী ফোন দিছিল ।
-তাই নাকি ? আমাকেও তো দিছিল ।
-তোকেও রাজি করিয়ে ফেলেছে ।
তূর্য বলল
-হুম । কি করবো বল ? এমন ভাবে কান্নাকাটি করতে লাগল যে আর মানা করতে পারলাম না ।
-এখন ? এই রকম ডেকে বিপদ আনার কি কোন মানে আছে ?
তূর্য বলল
-কিছু করার নেই রে । কপালে যা থাকবে হবে । শোন তুই এই বিষয়ে ক্লাসের আর কারো সাথে কোন রকম আলোচনা করবি না । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা ।
-আমাদের ভয় কেবল সৈকতের আম্মুকে নিয়ে । যদি আন্টি জানে না পারে তাহলে আর কোন সমস্যাই হবে না । বুঝেছিস ?
-হুম । আচ্ছা রাখ । তূর্য ফোন রেখে দিল ।
অনেক অপেক্ষার পর সেই কাঙ্খিত দিন এসে হাজির হল !
১২/১২/১২
সকাল বেলাতেই সৈকত আমাদের বাড়িতে হাজির । একা ।
ওকে দেখেই বুঝলাম রাতে ওর খুব বেশি ভাল ঘুম আসে নি । না আসাটাই স্বাভাবিক । বিয়ের আগে দিন যে কারোই ঘুম আসে না । তাও আবার গোপনে বিয়ে !
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম
-একা এসছিস ?
-হুম !
-আন্টি কে কি বলেছিস ?
-বলেছি যে তোর বাসায় যাচ্ছি ! সারা দিন তোর সাথে থাকবো !
-তোর মা শুনলো ?
-আরে আজকে একটা স্পেশাল দিন না । মা কে বুঝলাম । আর আম্মু তোর সাথে থাকলে একটু ভরশা পায় !
-হুম বুঝলাম ।
তূর্য এলো আরো ঘন্টা খানেক পর । আমরা বের হলাম আরো কিছুক্ষন পর । আমাদের যেতে হবে বনশ্রীর মধ্যপাড়ায় একটা বাসায় ! ওখানে সব আয়োজন হয়েছে ।
বাসা থেকে বের হয়ে সৈকত বলল
-দোস্ত কিছু নিয়ে যাওয়া দরকার না ?
তূর্য বলল
-কি নিবি ?
-মিষ্টি নেই ! বিয়ের পর মিষ্টি মুখতো করা দরকার ।
আমি বললাম
-চল । মিষ্টি নিয়ে চল । শ্বশুর বাড়ি যখন যাচ্ছ মিষ্টি না নিলে কি হয় ?
আমরা যখন আমাদের গন্তব্যে পৌছেছি তখন প্রায় এগারোটা বেজে গেছে ।
দরজা খুলে দিল বুবলী নিজেই । আমাদের দেখে মিষ্টি করে হাসল । আমি বললাম
-বিয়ে কখন হবে ?
বুবলী আমাকে বলল
-আস্তে । এটা নিলাদের বাসা । আন্টি বাসায় আছে ।
-আচ্ছা আচ্ছা ।
বাসায় আরো সবাই আছে । বাবুলীর আরো দুই বান্ধবী বের হয়ে এল । এদের কে আমি চিনি সবাই আমরা একসাথেই পড়ি । সুমি আর পিংকি ।
প্রথমে আমরা আন্টি মানে সুমির আম্মুর সাথে পরিচিত হলাম । আন্টিকে বোঝানো হল আজ একটা বিশেষ দিন । তাই আমরা সবাই এক সাথে আড্ডা দিতে এসেছি এসেছি ।
বাবুলী আমাদের তিন জনকে একটা রুমের ভিতর রেখে চলে গেল । বলল
-এখানে একটু বস । আমি এখনই আসছি ।
আমি ঘরের এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম । তূর্যও তাই করতে লাগল । কিন্তু সৈকতকে দেখলাম কেমন সোজা হয়ে বসে আছে । কেমন নার্ভাস লাগছে ওকে !এতোক্ষন তো স্বাভাবিকই ছিল ! এখন আবার কি হল ! তূর্য বলল
-কিরে? তোকে এমন লাগছে কেন ?
-দোস্ত যদি আম্মু জেনে যায় ?
আমি সৈকতেয় চেহারায় কেমন একটা ভয়ের চিহ্ন দেখতে পেলাম । আমি কেন জানি নিজের বুকের ভিতরও কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম । আমার চোখের সামনে আমার আব্বার চেহারা ভেসে উঠল ।
আল্লাহ জানে কপালে !
সৈকত আবার বলল
-দোস্ত আমার এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হচ্ছে না । তূর্য তুই ঠিকই বলেছিলি রে । এসব জিনিস একদম চাপা থাকে না ।
তূর্য বিরক্ত হয়ে বলল
-শোন মামা এখন এসব বলে লাভ নাই । বন্দুক থেকে গুলি ছুটে গেছে । ফেরানোর আর কোন উপায় নাই ।
সৈকত আমার হাত চেপে ধরে বলল
-দোস্ত তোর মাথায় তো বুদ্ধি ভাল আছে । কিছু একটা বুদ্ধি বের কর । এমন কিছু কর যেন বিয়ে টা না হয় । আমার এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক করছি না । বুবলী আসলে আমাকে এমন ভাবে ধরলো যে আমি কিছুতেই না করতে পারি নি !
আর এখন বার বার আম্মুর চেহারা টা ভেসে উঠছে । যদি জানতে পারে আমারতো খবর ই আছে !!
আমি বললাম
-আমি কিছু জানি না ।
কিন্তু সৈকতের চেহারা দেখে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারলাম না । বললাম
-আচ্ছা । ঠিক আছে । তুই বাধরুমে গিয়ে হাজির হ । যতক্ষন দেরি করা যায় আর কি ! ততক্ষন আমরা কিছু ভাবি !
আমার কথা শুনে সৈকত বলল
-আমি জানি তুই কিছু একটা বের করে ফেলবি । আমি গেলাম ।
সৈকত আর এক মুহুর্তও দাড়াল না । বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল । তূর্য আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি করবি ?
-আমি কি জানি কি করবো ?
-আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয় ?
কেমন হয় আর শোনা গেল না তার আগেই বুবলী দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো । আমাদের দুজনকে দেখে বলল
-সে কই ?
-বাথরুমে !
তূর্য বলল
-ওর মনে লুজমোশন শুরু হয়ে গেছে ।
বুবলী খানিকটা হাসি মুখে বলল
-বিয়ের টেনশনে ? হাহাহা । ওকে তাড়াতাড়ি বের হতে বল । আমার কাজিন চলে এসেছে ।
বুবলী চলে গেল । ও চলে যেতেই আমি তূর্যকে বললাম
-কি যেন বলছিলি ?
তূর্য আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-ভুলে গেছিরে । মাথায় দুর্দান্ত একটা আইডিয়া এসেছিল ।
তূর্য মুখের ভাব এমন করতে লাগল যেন এখনই সেই দুর্দান্ত আইডিয়া টা মনে পড়ে যাবে । কিন্তু আমি খুব ভাল করেই জানি তা হবে না । যা করার আমাকেই করতে হবে ।
আচ্ছা কি এমন করা যায় যাতে বিয়েটা না হয় ?
কি এমন করা যায় ?
সব কিছু ঠিক থাকতো যদি কাবিন নামাটায় সই না করতে হত ! তাহলে আর কোন সমস্যাই হত না । তূর্য বলল
-আচ্ছা পলিনকে খবর দেই ?
আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম
-পলিনকে খবর দিবি ক্যান ? এমনি আমরা বাঁচি না আমাদের জ্বালায় তার উপর আবার আর একটা ঝামেলা নিয়ে আসতে চাচ্ছিস !
-আরে শুনবি তো ! শোন আমরা পলিনকে ফোন দিয়ে বলব যে সৈকত এখনও তোমাকেই ভালবাসে কিন্তু বুবলী ওকে জোর করে বিয়ে করে ফেলছে । তুমি এসে ওকে বাঁচাও ।
তূর্যের উপর বিরক্তিটা আরো একটু বাড়ল । বললাম
-তোর ফোন পেয়ে পলিন উড়তে উড়তে চলে আসবে ? বাংলা সিনেমা পেয়েছ ? বুদ্ধি দিতে পারলে দিবি না হলে চুপ করে বসে থাকবি । কিছু ভাবতে দে !
তূর্য চুপ করে করে গেল । আমি ভাবতে লাগলাম কি এমন করা যায় ? তূর্য আবার বলল
-আচ্ছা ওর মাকে ফোন দেই ।
-আবার তুই কথা বলছিস ? ওর মাকে ডেকে .......
আরে হ্যা । ওর মাকে ডাকলে কেমন হয় ! গুড আইডিয়া । কেবল একটু বুদ্ধি করে কিছু কথা বলতে পারলেই হল । আমি তূর্য কে বললাম
-ভাল বলেছিস তো ?
-দেখছিস ! বুদ্ধি কিন্তু আমার মাথা থেকেই বের হয়েছে ।
-বুঝলাম । কিন্তু আন্টি কি বলবি বলত ?
-কি বলব ? বলব যে সৈকতকে বুবলী জোর করে বিয়ে করে ফেলছে আপনি ওকে বাঁচান ।
-তাই না ? তুই সারা জীবন বেকুব, বেকুব ই রয়ে গেলি । এই কথা বললে আন্টি হাজারটা প্রশ্ন করবে । প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে জান বের হয়ে যাবে ।
-তাহলে ?
-দে তোর ফোনটা দে ! আমি দেখছি ।
আমি তূর্যের ফোন দিয়ে আন্টি কে ফোন দিলাম । আন্টি রিসিভ করতেই বললাম
-আন্টি আমি শামস !
-কি ব্যাপার শামস ?
আমি লক্ষ্য করলাম আমার বুক কাঁপছে । কথা বলতে গিয়ে দেখলাম আমার গলাও খানিকটা কাঁপছে ।
-জি আন্টি ।
-ফোন দিলে যে ? কোন সমস্যা হয়েছে ?
-আসলে আন্টি ..
আন্টি মনে হয় কিছু আচ করতে পেরেছেন । খানিকটা তীক্ষ কন্ঠে বলল
-সৈকতের কিছু হয়েছে ?
-জি আন্টি । আমরা এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে এসেছিলাম । তারপর থেকে সৈকত কেমন জানি করছে !
-কেমন করছে ?
-আসলে আন্টি আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না । কেবল বলছে আমি আমার আম্মুকে খুব ভালবাসি । আর বারবার বাথরুমে যাচ্ছে । আর কারো কথা শুনছে না ।
-তোমরা কোথায় আছো ?
আমি ঠিকানা বললাম । আন্টি বলল
-আমি এখুনি আসছি ।
আমি খানিকটা প্রশন্ন বোধ করলাম । এখন আর কোন টেনশন নেই । আন্টি চলে আসলে আর কোন সমস্যাই থাকবে না । আমি ফোন রাখতে রাখতেই বুবলী ঘরে ঢুকে পড়ল ।
কিছু শোনে নাই তো ?
-কই তোমার বন্ধু ? এখনও বের হয় নাই ? সব কিছু রেডি ।
এরপর নিজেই বাধরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে লাগল । কিন্তু দরজা খোলার কোন নাম নাই । আমি বুবলীকে বললাম
-তুমি যাও আমি ওকে নিয়ে আসছি । আসলে প্রথম বিয়েতো তাই একটু নার্ভাস হয়ে আছে ।
-তাই ? আচ্ছা দশ মিনিট সময় দিলাম । ওকে নিয়ে আসো !
-আচ্ছা ! তুমি যাও । আমি আসছি ।
বুবলী চলে যাওয়ার পরপরই আমি বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিলাম ।
-সৈকত কই ?
কোন সারা শব্দ নাই । আরো কয়েকবার ডাকার পর ওর খোজ পাওয়া গেল ।
-দরজা খোল ।
ভিতর থেকে আওয়াজ এল
-না আমি দরজা খুলবো না ।
-আরে বাবা খোল না । প্রবলেম মোটামুটি সমাধান হয়েছে । তুই দরজা টা একটু খোল তো !
একটু পরেই সৈকত দরজা খুলে দিল । দরজা খুলেই সৈকত বলল
-বুবলী রাজি হয়ে গেছে ?
-আরে না ।
দরজা খুলেই ওর মুখে যে ৬০ পাওয়ারের বাল্বের মত আলো দেখেছিলাম তা যেন ঠুশ করে নিভে গেল ।
-তাহলে ?
-শোন একটা বুদ্ধি বের করেছি । যদি টাইমিং ঠিক থাকে তাহলে তোর বিয়েটা হবে না নিশ্চিত থাকে ।
সৈকত বলল
-আর যদি টাইমিং ঠিক না থাকে ?
পেছন থেকে তূর্য বলে উঠল
-তোর বিয়ে হয়ে যাবে নিশ্চিত থাক ।
সৈকত বলল
-না রে ! আমি বাথরুম থেকে বের হব না ।
এই বলে ও আবার বাথরুমের ভিতর ঢুকতে চাইল । আমি ওর হাত চেপে ধরলাম ।
-এতো টেনশন নিস না তো । আমার উপর ভরশা রাখ ।
কিন্তু সৈকতের চোখ দেখে মনে হল না যে ও খুব বেশি ভরশা করতে পারল আমার কথায় । আমি ওকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এলাম ।
বুবলী আমাদের পাশের রুমটাতে গিয়ে গেল । দেখলাম ওখানে আগে থেকেই সবাই হাজির । বুবলীর দুই বান্ধবী আর একটা মোটামত ছেলে । আমাদের থেকে একটু মনে হয় বড় হবে বয়সে । মাথায় টুপি পরা ।
এই তাহলে বিয়ে পড়াবে ।
আমি মনে মনে হিসাব করলাম । সৈকতদের বাসা এখান থেকে খুব বেশি হলে দশ মিনিটের পথ । আর আন্টিকে ফোন করেছি প্রায় মিনিট দশেক । তার মানে যে কোন সময় আন্টি চলে আসতে পারে !
এখন কেবল অপেক্ষার পালা । আমরা সবাই গোল হয়ে হয়ে বসলাম । সৈকতের দুই পাশে আমি আর তূর্য । আমি সৈকতের করুন মুখটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
একটু ভরশা দেওয়ার চেষ্টা আর কি !
কিন্তু মনে মনে আমি নিজেও খুব নার্ভাস ফিল করছিলাম । আন্টি সময় মত আসবে তো ?
যদি না আসে ?
তাহলে !
বুবলী ঐ মোটামত ছেলেটাকে বলল শুরু কর ।
আমি আল্লাহ কে ডাকছি ! এই মটকু সত্যি সত্যি বিয়ে পড়িয়ে ফেলে ! আন্টি আপনি কই ?
জলদি আসেন !!
জলদি !!
মোটা ছেলেটা মানে আমাদের কাজি যখন কেবল দোয়া পড়া শুরু করতে যাবে তখনই কলিংবেল বেজে উঠল !
একবার না বেশ কয়েকবার ! ঘন ঘন !
মনে হচ্ছে যেন কেউ অস্থির ভাবে বেল বাজাচ্ছে !
আমার জানে পানি এল । নিশ্চই আন্টি !!
আমরা সবাই সৈকতের আম্মু কে যমের মত ভয় পাই ! সারা জীবন দোয়া করি এই ভদ্র মহিলার সাথে যেন কোন দিন দেখা না হয় !
কিন্তু আজ আন্টির আসা দেখে সত্যি মনটাতে একটা আনন্দের অনুভুতি হল !
সুমি বলল
-কে এল আবার ! তোমরা বস আমি দেখে আছি !
সুমি দৌড়ে চলে গেল ।
ঠিক যেভাবে নিলা দৌড়ে গেল তার চেয়েও দৌড়ে হাজির হল । ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা হয়েছে !
সুমি বলল
-সৈকতের আম্মু চলে এসেছে !
ঘরের ভিতর যেন একটা বোমা ফাটলো !
আমি আর তূর্য তো জানতাম তাই আমরা খুব বেশি অবাক হলাম না । কিন্তু সৈকত ব্যাপারটা জানতো না !
ও আমার দিকে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ! যেন কিছু বুঝতে পারছে না । তারপর দেখতে দেখতে ফিট হয়ে পড়ে গেল ।
আসলে ওর মন ছিল একটু নার্ভাস ! তার উপর আন্টির আসার খবর ঠিক মত নিতে পারে নি !
বুবলী বলল
-এখন কি হবে ?
আমি বুবলী কে শান্ত হতে বলললাম ।
-তোমরা টেনশন নিয়ো না । তোমরা দুজন পাশের ঘরে যাও ! সুমি থাকুক ! আমি দেখছি ।
বুবলীরা চলে গেল । আমি আর তূর্য মিলে সৈকত কে শুইয়ে দিলাম । তারপর সুমিকে নিয়ে দরজা খুলতে গেলাম ।
দরজা খুলতেই আন্টি আমাকে বলল
-সৈকত কই !
-আসুন আমার সাথে !
আন্টি সৈকতের ঐ অবস্থা দেখে আর এক মুহুর্তও থাকলেন না । সোজা ওকে নিয়ে হাটা দিলেন ! আমরাও পেছন পেছন বেরিয়ে এলাম !
পরদিন সকালে সৈকত আমাকে যেন পারলে চিবিয়ে খায় !
ওর মুখে কেবল একটাই কথা
-শালা তোর জন্য আর একটু হলেই আমি মারা পড়তাম !
আমি একটু মুচকি হেসে বললাম
-পড়িস নাই তো ! আর আমি না থাকলে তো কাল তোর খবরই ছিল ! এখন ক্ষনে তুই জীবিত থেকে বিবাহিত হয়ে যেতিস !
সৈকত একটু মাথা নাড়াল ।
-তা অবশ্য তুই ঠিক ই বলেছিস ! আমার খবরই ছিল ! আসলে বুবলী এমন ভাবে আমাকে বলতে লাগলো আমি ঠিক বুঝতেই পারি নি । নিলাদের বাড়ির যাওয়ার পরই কেমন যেন মনে হচ্ছিল ! আমি যে ভুল করতে যাচ্ছিলাম সেটা বুঝতে পারি ! ভাগ্যিস তোরা ছিলি । তবে আম্মুকে দেখে যে ভয় পেয়েছিলাম ! একবার আমাকে বলতে পারতিস !
আমি বললাম
-ইচ্ছা করেই বলি নি ! তোর একটু শিক্ষা হওয়া দরকার ছিল ! বল আর কোনদিন মেয়েদের কথায় নাচবি ?
সৈকত কান ধরলো !
-আর কোনদিন নাচবো না ! তবে তুই আম্মুকে কিভাবে মেনেজ করলি বলতো ? আম্মু তো আমাকে একটা প্রশ্নও করলো না !
আমি রহস্যময় হাসি দিলাম !
আমার কথা: আমার স্টুডেন্টের সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভাল ! আমার অনেক গল্পের মাঝেই তার নাম আছে ! এমনকি আমার কয়েকটা গল্পের থিম আমি পেয়েছি তার সাথে গল্প করার সময় ! সে মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের এমন কিছু অদ্ভুদ আর হাস্যকর গল্প আমার কাছে বলে যে আমি না হেসে পারি না । সেই রকম একটা হাস্যকর গল্প থেকেই এই গল্পের সৃষ্টির !
গল্পের কাহিনী কাল্পনিক হলেও চরিত্রগুলো সব বাস্তব ! আর গল্পের বক্তার চরিত্রে আছে আমার ছাত্র !!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৩