সন্ধ্যার কাছাকাছি সময় । তাড়াহুড়া করে বাসার সামনে হাজির হলাম । গেট খুলতে যাবো ঠিক তখন একটা সুদর্শন মত যুবক গেট খুলে বের হয়ে এল ।
এই বাসায় এই ছেলেটা আবার কোথা থেকে এল ?
আগে তো দেখি নি ?
কিন্তু আমার দেখার আরও একটু বাকি ছিল । সুদর্শন যুবকের পেছনেই বাড়িয়ালার মেয়েটি বের হয়ে এল এবং এমন একটা ভাব করলো যেন আমাকে চেনেই না ।
আমার সামনেই দুজন হাসাহাসি করতে করতে চলে গেল ।
আমার সামনে দুজন এমন ভাবে চলে যাবে আমি ভাবতেই পারি নি । মিস্টার সুদর্শন চলে যাক সেটা আমার কোন মাথা ব্যাখা নাই কিন্তু বাড়িয়ালার মেয়েটা এভাবে চলে গেল কেন ?
আমি গেটের সামনে দাড়িয়েই দুজনের চলে যাওয়া দেখলাম । মনের ভিতর ক্ষীন আশা ছিল যে বাড়িয়ালার মেয়ে একবার হলেও পেছন ফিরে তাকাবে । কিন্তু তাকাল না ।
ফাজিল মাইয়া !!
একবার তাকালি না ক্যান ?
আমার সত্যিই বিশ্বাস হল না যে মেয়েটা একবারও পিছন ফিরে তাকাল না ।
আসলেই মেয়েগুলো এমন কেন হয় ? এতো দিন আমার প্রতি এতো আগ্রহ দেখালো আর এখন আমাকে চিনেই না ?
আমার থেকে সুদর্শন কাউকে পেয়ে গেছে বলে ?
চেহারা এতোই জরুরী ?
হয়তো যুবক ভাল জব করে !
এগুলোই কি জরুরী ?
নাহ !
এগুলোই জরুরী !
মেয়েরা কেবল এগুলাই দেখে !!
আমি মন খারাপ করে রুমে ফিরে এলাম । আমার মনে হয় আজ আর বাড়িয়ালার মেয়ের সাথে কথা বলা হবে না । প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা মেয়েটার সাথে আমার কথা হয় ।
ছাদের উপর ।
দুজন যে খুব কথা বলি অথবা পাশাপাশি বসি তা কিন্তু না । মেয়েটা কখনও এক জায়গায় বসে না । ছাদের এক মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত হাটা হাটি করে আমি কোন সময় দাড়িয়ে থাকি কোন সময় মেয়েটির পাশে পাশে হাটি । টুকটাক কথা হয় ।
কখনও বা চুপ করেই থাকি ।
কিন্তু দুজনেই সময় কাটে খুব চমত্কার ।
আমি ঠিক এই সময়টার জন্যই তাড়াহুড়া করে আসছিলাম কিন্তু এখন মনে হয় আর এসে লাভ নাই । বাড়িয়ালার মেয়েটি আজ মনে হয় আর আসবে না । সময় কাটানোর জন্য আমার থেকেও ভাল কাউকে পেয়ে গেছে !
ঘরের ভিতর বসেই পুরো সন্ধ্যা কাটিয়ে দিলাম । পুরো দুইদিন তার কোন খবর নাই ।
তিন দিনের দিন তার সাথে দেখা হল । সকালের দিকে । ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলাম ।
-কোথায় যাচ্ছেন ?
পিছনে তাকিয়ে দেখি তিনি হাজির ! হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
-ক্যাম্পাসে ।
-যেতেই হবে ? আমার একটু নিউ মার্কেটে যাওয়ার দরকার ছিল ।
স্পষ্ট ইঙ্গিত তার সাথে !
না ।
আমি আর ফাঁদে পা দিবো না ।
আর না ।
অনেক হয়েছে !
বললাম
-আমি যাবো না !
মেয়েটির মুখ একটু কালো হয়ে গেল । আমি আবার বললাম
-আপনি সেদিন কার সুদর্শন যুবকের সাথে যান । আমার কাজ আছে ।
আমি আর দাড়ালাম না । এই মেয়ের পেছনে ঘুরে আর লাভ নাই । সারা বছর আমার সাথে টাংকি মারবে আর সময় হলে অন্য জনের হাত ধরে চলে যাবে ।
মেয়েটি নিশ্চই আমার কাছ থেকে এই কথা আশা করে নি ।
না করুক !
মেয়েদের সব আশা অনুযায়ী কাজ করার কোন মানে নেই ।
বিকেল বেলা ক্যাম্পাস থেকে ফিরছি । গেট দিয়ে ঢুকতে যাবো সেই ফাজিল সুদর্শনের সাথে আবার দেখা হয়ে গেল ।
ঐ দিনের মতই প্রথমে সুদর্শন যুবক বের হল । তারপর বাড়িয়ালার মেয়েটি । কিন্তু আজকে বাড়িয়ালার মেয়ের পর আরও একটা মেয়ে বের হল ।
আমি কেন জানি দুজনের চেহারার ভিতর বেশ খুজে পেলাম !
বোন না তো দুজন ?
আমার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল বাড়িয়ালার মেয়েটি বলল
-আপু তাহলে তোরা যা । তাড়াতাড়ি আসবি ।
তারপর সুদর্শন যুবকের দিকে তাকিয়ে বলল
-দুলাভাই আমার গিফট কিন্তু চাই । তা না হলে কিন্তু আজ কে ঘরে ঢুকতে দিবো না !
আমি তাকিয়ে রইলাম মেয়েটির দিকে । আপু আর দুলাভাই রিক্সায় উঠে চলে গেল । বাড়িয়ালার মেয়েটি এবার আমার দিকে একটু তাকিয়ে উপরে উঠে গেল ।
হায় হায় আমি করেছি কি ?
যদিও জানি যে মেয়েটা আসবে না তবুও ক্ষীন আশা নিয়েই ছাদে হাজির হলাম সন্ধ্যা বেলা ।
মেয়েটা কি আসবে ?
মরয়রদের মন তো একটু নরম হয় ! আমার উপর রাগ করে থাকবে ! কিন্তু মনে হয় আসবে !
আমি অপেক্ষা করেই রইলাম । ঠিক যখন মনে হল মেয়েটা আর আসবে নি তখনই মেয়েটা ছাদে পা রাখল ।
কিন্তু আমার দিকে এল না । ছাদের অন্য কর্ণারে গিয়ে দাড়াল ।
আমি ও কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলাম । তারপর মেয়েটার দিকে হেটে গেলাম ।
আচ্ছা আজ মেয়েটার হাত যদি ধরি !
চট করে হাত ধরলে মেয়েটা একটু চমকাবে !
আমি ঠিক মেয়েটার পাশে গিয়ে দাড়াই !
আর একটু কাছে !
এই তো ! হাত বাড়ালেই হাত ছোঁয়া যাবে !!
ধরবো নাকি ?
যদি কিছু বলে ?
বললে বলবে !
কেউ কোন কথা বলছে না । আমি অপেক্ষা করছি ! কিসের জন্য জানি না । কিন্তু করছি !
বাড়িয়ালার মেয়েটি এবার ঘুরে চলে যেতে চাইলো ! ঠিক তখনই আমি ওর হাত ধরলাম !
-হাত ছাড়ুন!
-এই প্রথম হাত ধরলাম ! আর এখনই বলছ ছাড়ো !
মেয়েটি আমার হাড় থেকে হাত ছাড়া নোর চেষ্টা করলো !
আমি বললাম
-এট লিষ্ট আমাকে সরি বলার সুযোগ দাও !
-আপনি কেন সরি বলবেন ! আপন এমন কিছু করে নি যে সরি বলবেন !
-সত্যি !
চারিদিকে অন্ধকার তবুও মেয়েটির চোখ দেখা যাচ্ছিল ! চোখে পানি টলটল করছিল তাও দেখা যাচ্ছিল !
আমি বললাম
-দেখ আমি বুঝতে পারি নি ! তোমার সাথে তোমার দুলাভাই কে দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে । খুব বেশি !
-কেন ? কেন খারাপ লেগেছে ?
-তুমি জানো না ?
-না আমি জানি না ! বলেন !
আমি পরলাম বিপদে ! এই কথা এখন কেমনে কই !
-আসলে ...............
-বলেন !!
মেয়েটি তার হাত ছাড়িয়ে নিল আমার কাছ থেকে !
-আমার ঐদিন আপনার কথা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল ! কিন্তু তারপর ..।
আমি একটু আশার আলো দেখতে পেলাম । বললাম
-তারপর?
-তারপর বুঝলাম আপনি কেন রাগ করেছেন ! তারপর আর মন খারাপ করে থাকি নি ! যে কারোই মন খারাপ করে থাকতো !
-সত্যি???
-তবে খারাপ লেগেছে আপনার ঐদিনের কথা শুনে ! আপনি আমাকে একবার জিজ্ঞেস করতে পারতেন না ?
-পারতাম !১ সরি !
মেয়েটি হেসে দিল !! তারপর বলল
-আর যেন না হয় !! হবে না তো ?
আমি কানে ধরলাম । আর হবে না !
বাড়িয়ালা সিরিজের অন্যান্য গল্পগুলো !
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!
অপেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=
বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি
আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।
সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন