"চলে এসেছ ?"
আমি মাঝে মাঝে অবাক না হয়ে পারি না এই মেয়েটার আচরনে । এই মেয়েটাকে কখনও কিছু বলতে হয় না । কিভাবে জানি সব কিছু টের পেয়ে যায় ।
প্রতিদিন সকাল বেলা যখন আমার ঘুম ভাঙ্গে ঠিক তখনই নিশির গুডমর্নিং এসে হাজির হয় । এমন না যে প্রতিদিন আমার ঘুম একই সময় ভাঙ্গত । কোন দিন ছয়টায় আবার কোন দিন নটায় কিন্তু গুডমর্নিং মেসেজ ঘুম ভাঙ্গার ঠিক পরপরই এসে হাজির হত ।
এমন কোন দিন হয় নি যে আমার ঘুম ভাঙ্গার পরপরই নিশির কোন এসএমএস আসে নি ।
রিপ্লে তে একটা স্মাইলি পাঠিয়ে দিলাম কেবল ।
নিশি আবার পাঠাল
"আমার সাথে একটু দেখা করবে ? তোমাকে কত দিন দেখি না ।"
কথা সত্য নিশির সাথে প্রায় ৭ দিন দেখা হয় নি । ঈদের ছুটিতে বাসায় গেছিলাম সেই কবে । কিন্তু এখন নিশির সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করছে না । বাসায় গিয়ে একটা গোছল দেওয়াটা খুব বেশি দরকার । লিখে পাঠালাম
"এখন না প্লিজ"
"প্লিজ এক বার । অল্প একটু সময়ের জন্য !"
আমি মনে মনে হাসলাম । নিশির একটু সময় মানে ঘন্টা পার হয়ে যাবে । এখন যদি ওর সাথে দেখা করতে যাই তাহলে আমাকে সহজে ছাড়বে না ও ।
আমি লিখে পাঠালাম
"এখন না" ।
একটু পর ওর মেসেজ আসল ।
এতো গুলো রাগের ইমো ।
নিচে লেখা
"এখন আমার সাথে আর দেখা করতে ভাল লাগবে না । বাসা থেকে তোর টিয়ার সাথে দেখা করে এসেছিস ! এখন আর আমার দরকার কি ? তুই আর কখন আমার কাছে ফোন দিবি না !"
আমি নিশির ছেলেমানুষী দেখে হাসি মনে মনে । মেয়েটা চট করে এমন রেগে যায় ! আর রেগে গেলেই তুই তোকারী শুরু করে দেয় ।
আমি খুব ভাল করে জানি নিশি একটু পরেই আবার ফোন দিবে ।
একটু কাঁদবে ।
সরি বলবে ।
মেয়েটা এমনই ।
রাগ যেমন চট করে ওঠে আবার চট করেই চলে যায় ।
কিন্তু টিয়া এমন না । টিয়া যদি একবার রেগে যেত তাহলে সেই রাগ ভাঙ্গাতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হত !
এবার আসলেই টিয়ার সাথে দেখা হয়েছে । কতদিন পর টিয়াকে দেখলাম !
অবশ্য টিয়াকে প্রতিবার আমি বেশ সময় ব্যবধানেই দেখি । কিন্তু এবার দেখা হওয়াটা একটু অন্য রকম ছিল ।
প্রতিবারই যখন বাসায় যেতাম টিয়ার সাথে দেখা করার জন্য খুব অস্থির হয়ে যেতাম । কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম যে টিয়ার সাথে যেন দেখা না হয় !
এই জন্য আমি ঈদে বাসাও যেতে চাচ্ছিলাম না । কিন্তু বাড়িতে না গেলে কেমন হয় । দেখাটা হয়েছেও খুব অপ্রস্তুত ভাবে ।
বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম আড্ডা মারতে । বাড়ির সামনে বসে আড্ডা মারছিলাম ঠিক তখনই বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভুতি সৃষ্টি হল । কেমন যেন । লিখে প্রকাশ করা যাবে না ।
কিন্তু প্রতিবার যখন টিয়ার সাথে দেখা হতে যায় ঠিক তখনই এই অনুভূতিটা আমার হয় । আজ এতো দিন পর এই রকম অনুভূতিটা হবে ভেবে একটু অবাকই হলাম ।
অনেক সময় অনুভূতিটা অমূলকও হয় । তবে আজ হল না । গলির ভিতর থেকে টিয়া বের হয়ে গেল । কোলে ওর ভাইয়ের মেয়ে । আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । টিয়া নিজেও অপ্রস্তুত হল ।
কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল কেবল নিস্পল চোখে ।
আহা !
কতদিন এই চোখ দুটো দেখি না । ভেবেছিলাম হয়তো আর কোন দিন ঐ চোখ দেখবো না । আমি নিজেও চাচ্ছিলাম না ওর সাথে আমার আর দেখা হোক ।
কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে ?
আমি ভেবেছিলাম টিয়া আমার সাথে কথা বলবে না । এর আগে যতবার দেখা হয়েছে আমরা চাইলেও কথা বলতে পারতাম না । ওর সাথে আমার একটা পরিচয় আছে কাউকে বুঝতে দেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না ।
টিয়া কেবল আমার দিকে তাকিয়েই রইল চুপ করে । ওর মুখটা দেখে আমি আমার বুকের ভিতর কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম । কেমন একটা কষ্টের কাঁপন !
এই মানুষটাকে দেখার জন্য একটা সময় আমি কি পরিমান অস্থির হয়ে থাকতাম আর এখন কি যে একটা কষ্ট হচ্ছে না এখানে আর থাকা যাবে না । থাকলেই কেবল কষ্ট বাড়বে ।
কেবলই বারবে ।
বন্ধুর কাছে বিদায় নিয়ে হাটা দিলাম ।
আবার ফোন বাজছে । নিশি ফোন দিয়েছে । আমি মনে মনে হাসলাম । মেয়েটা পাঁচ মিনিটও রাগ ধরে রাখতে পারে নি ।
-কি হল ? ফোন দিবা না বলে ?
আমি হাসি ।
-একটু আসলে কি হবে ? আমি নিচে নামবো না । বারান্দা দাড়িয়ে দেখবো ।
এই মেয়েটার পাগলামো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।
আমি ফোন রেখে দিলাম । সারাটা রাত একদম ঘুম হয়নি । এখন একটা শান্তির ঘুম খুবই দরকার ।
আমি রিক্সায় উঠে পড়লাম । শরীর খুব বিশ্রাম চাইছে কিন্তু মন ?
মন বলছে নিশির সাথে একটু দেখা করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে ?
ঐ দিনও আমি মনের কথাটাই শুনেছিলাম । যখন ফিরে আসছিলাম খুব চাইলাম যে টিয়ার দিকে ফিরে চাইবো না ।
কিছুতেই চাইবো না ।
কিন্তু না তাকিয়ে পারলাম না । ফিরে চাইতেই হল । টিয়া আমার দিকেই তাকিয়েই ছিল ।
ওর চোখের দিকে তকিয়ে কেমল কষ্টের ফোয়ারাটা আর একটু জোরে বইতে শুরু করল ।
আর কিছু না ।
ঐ দিন যেমন কষ্ট বাড়লেও আমার মন বলছিল ফিরে তাকাতে তাই তাকিয়েছিলাম ।
আজও মনের কথাটাই শুনলাম ।
নিশির বাড়ির সামনে গিয়ে ফোন দিলাম ওকে ।
-আমাকে কষ্ট দিতে তোর খুব ভাল লাগে তাই না ?
-আবার তুই ?
-তুই ফোন কেন দিয়েছিস কেন ? যা তুই বাসায় যা । বাসায় গিয়ে ঘুমাগা যা ।
-চলে যাবো ? তোমার বাসার সামনে এসেছিলাম । আচ্ছা যাই !
-সত্যি ?
-হুম । বারান্দায় আসো । দেখতে চেয়েছিলা । দেখো ।
আমি রিক্সায় বসে নিশির বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছুক্ষনের মধ্যেই নিশির দেখা পেলাম । তবে বারান্দায় না গেটে ।
ও এতো জলদি নিচে নেমে এল কিভাবে ?
নিশি আমার সামনে এসে দাড়াল । আমার হাত ধরে বলল
-চল ।
-কোথায় যাবো ?
-বাসায় চল ।
-এই জন্য কিন্তু আমি আসতে চাই নি ।
-এসেছ কেন ? কে আসতে বলেছে ?
-নিশি !
নিশি বলল চোখ
-রাঙ্গিয়ে লাভ নাই । চল ।
-একটু বোঝার চেষ্টা কর । এভাবে বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না ।
-না হলে না ।
-দেখো আমি খুব ক্লান্ত । আমার ঘুমানো খুব দরকার ।
-আমার বাসায় বিছানা নাই ?
আমি আর কোন যুক্তি দেখাতে পারলাম না । আর নিশি যখন একবার বলেছে আমাকে ওর বাসায় না নিয়ে শুনবে না । যেতেই হল । নিশি বলল
-তুমি শাওয়ার নিয়ে আসো আমি তোমার জন্য খাওয়া রেডি করি ।
-এতো সকালে কি করবা ?
-তুমি যাও তো আমি দেখছি ।
বেশ সময় নিয়ে গোছল করলাম । বাথরুম থেকে বের হয়ে কাপড় পড়লাম । খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি টেবিলে ধোয়া ওঠা ভাত ।
পাশে আলু ভর্তা ।
এতো জলদি ভাত রাধলো কিভাবে মেয়েটা ?
আমি টেবিলে বসতে বসতে নিশি ডিম ভাজা নিয়ে এল । বলল
-আপাতত এই টুকু খেয়ে ঘুম দেও । দুপুরে অনেক কিছু খাওয়াব ।
আমি যখন খাচ্ছিলাম নিশি আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে ছিল । মুখে ভাতের নলা নেওয়ার সময় কি মনে হল বললাম
-খাবে ?
-খাইয়ে দিলে খাবো ।
আমি হাসলাম । ভাতের নলা টুকু ওর মুখে তুলে দিলাম । আর একবার ভাত মাখিয়ে ভাত মুখে তুলে দেবো দেখি ওর চোখে পানি ।
এই মেয়েটা এমন কথায় কথায় কেঁদে ওঠে কেন ? বললাম
-এখানে কাঁন্নার কি হল ?
চোখ ভরা জল নিয়ে নিশি বলল
-কিছু হয় নি ।
তারপর হাসল । কি অদ্ভুদ সুন্দর সেই হাসি । আমি কেবল তাকিয়ে থাকি ।
টিয়ার যেদিন বিয়ে হয় মনে হয়েছিল বেঁচে থাকার বোধহয় আর কোন কারনই নেই । কিন্তু এখন এই মেয়েটা আমাকে কি ভালবাসাতেই না জড়িয়ে রেখেছে । কি আশ্চার্য ভাবে !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬