-আপনি এলেন না কেন ? জয়ন্তী খানিকটা অভিমানের শুরেই বলল কথাটা ।
সকালবেলা মুখে ব্রাশ নিয়ে কেবল বাইরে বের হয়েছি এমন সময় এমন দেখি জয়ন্তী সামনে দাড়িয়ে ।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেকি ওর চোখে পানি টলমল করছে । জয়ন্তী চেষ্টা করছে পানি আটকে রাখার জন্য কিন্তু কতক্ষন আটকে রাখতে পারবে কে জানে ।
জয়ন্তী আবার বলল
-আপনি এলেন না কেন ?
আমি বললাম
-আমি বলেই ছিলাম আমি আসবো না ।
-আমি অপেক্ষা করছিলাম আপনার জন্য ।
-সেটা তোমার সমস্যা । আমি তো তোমাকে অপেক্ষা করতে বলি নি ।
জয়ন্তী কিছুক্ষন নিরব চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল ।
জলভরা চোখে কি অদ্ভুদ সুন্দর লাগছিল মেয়েটাকে । এই সকাল বেলা মেয়েটার চোখে জল দেখে আমার নিজের মনও খানিকটা সিক্ত হয়ে গেল ।
জয়ন্তী বলল
-আপনি খুব খারাপ । একজন মানুষ আপনার সাথে দেখা করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলো আর আপনি এলেন না। আচ্ছা আর আসতে হবে না ।
এই বলেই জয়ন্তী চুপ করে গেল । দেখলাম জয়ন্তীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে । মেয়েটার চোখের পানি দেখে আসলে কেমন যে লাগল নিজের কাছে ।
যদিও আমি কিছুই করি নি । আমি কাল ওকে ভাল ভাবেই বলে দিয়েছিলাম যে আমি আসবো না । তার পরেও যদি সে আমার জন্য অপেক্ষা করে সেটা নিশ্চই আমার দোষের ভিতর পড়ে না ।
কিন্তু তবুও আমার কাছে কেমন যেন খারাপ লাগছে ।
কেন লাগছে ?
আশ্চর্য!
জয়ন্তী আর দাড়াল না । জল ভরা চোখ নিয়ে পেছনে হাটা দিল । আমি দাড়িয়ে রইলাম ।
একটু দুরে গিয়ে জয়ন্তী পিছন ফিরে তাকাল । ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে তখনও । আমি কেবল ওবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে ।
মেয়েটার অশ্রু মাখা চোখের দিকে ।
আমার ভাবতেই অবাক লাগছে যে এই অশ্রু আমার জন্য । মেয়েটা কাঁদছে কেবল আমার জন্য ।
আশ্চর্য ।
আশ্চর্যের উপর আশ্চর্য !!
জয়ন্তী আমার দিকে তাকিয়েই আছে । আমার অস্বস্তি আস্তে আস্তে বাড়ছেই । আমি বললাম
-এটা ঠিক হচ্ছে না । এখানে এভাবে আশাটা তোমার উচিৎ হয় নি ।
জয়ন্তী হাসল একটু । বলল
-চলে যাবো ?
চলে যাবে ! মনটা কেন জানি চাইলো না জয়ন্তী চলে যাক ! থাকুক না আর একটু ।
কি ?
কি ভাবছি এটা ?
কলিগের বউ সে এখন !!
এসব ভাবা উচিৎ না কিছুতেই !
-দেখো তোমার এখানে ...
আমি আমার কথা শেষ করতে পারলাম না । মেয়েটা চলে যাক এটা আমি বলতে পারলাম না ।
জয়ন্তী আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি যদি আমাকে চলে যেতে বলতে পারো তাহলে আমি এখনই চলে যাবো । পারবে বলবে ?
জয়ন্তীর আচরন দেখে আমি কেমন ধাঁধায় পড়ে গেলাম । ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ও খুব ভাল করেই জানে আমি তা পারবো না । এতো বছর পরেও ও এতোটা নিশ্চিত কেমন করে ?
আশ্চর্য !
জয়ন্তী সব সময় নিশ্চিত ছিল আমার ব্যাপারে । আমি কি করবো সেই ব্যাপারে যেন আগে থেকেই ও জানে, এমন একটা ভাব ।
ঐ দুপুর বেলা জয়ন্তী একটা পিচ্চি ছেলের হাতে আর একটা চিরকুত দিয়ে পাঠাল । একটা মাত্র লাইন তাও আবার অসমাপ্ত ।
আজ কে যদি না আসেন ...........
কোথায় আসবো কখন আসবো কিছুই লেখা নাই । তবে অনুমান করে নিতে খুব বেশি কষ্টা হল না ।
বিকেল বেলা পুলিশ পার্কে গিয়ে হাজির হলাম ।
মনে মনে বললাম কি দরকার ছিল এমনটা করার ?
কি দরকার ছিল এতো ভাব নেওয়ার !
কালকে আসলেই হত !
কালকে আসলে অন্তত মেয়েটার চোখের জল দেখতে হত না ।
জয়ন্তী এল কিছুক্ষনের মধ্যেই । আকাশী রংয়ের একটা কামিজ সাথে সাদা ল্যাগিংস । হালকা সেজেছে কিন্তু ঠোটে লিপষ্টিক নাই । চুল গুলো পিছনে ক্লিপ দিয়ে আটকানো । তবে কিছু চুল বেড়িয়ে এসেছে । বাতাসে বারবার মুখের উপর চলে আসছে । জয়ন্তী বারবার হাত দিয়ে অবাধ্য চুল গুলো পিছনে সরিয়ে দিচ্ছে ।
আমি জয়ন্তীকে দেখে কিছুক্ষন থ হয়ে গেলাম । যতবার জয়ন্তীকে দেখেছি স্কুল ড্রেসেই দেখেছি । ও দেখতে যে সুন্দর এটা জানা ছিল কিন্তু আজকের সাথে কোন কিছুরই তুলনা করা যায় না । আমি এই মেয়েটাকে কাঁদিয়েছি এ কথা ভাবতেই নিজের কাছে খারাপ লাগছে ।
জয়ন্তীর মুখটা একটু যেন গম্ভীর । সকালের কান্নার রেশ বোধ হয় এখনও কাটে নি । জানি না বাসায় গিয়ে আবারও কেঁদেছে কিনা । জয়ন্তী চুপচাপ এসে আমার পাশে বসলো ।
দুজনেই চুপচাপ বসে থাকলাম কিছুক্ষন । আমি আসলে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম কিন্তু খানিকটা অস্বস্তি লাগছিল বিধায় কোন কথা বলে চুপচাপ বসে ছিলাম । কিছুক্ষন চুপ থাকার পর জয়ন্তী বলল
-কি ? কোন কথা বলবেন না ? চুপ করেই থাকবেন ?
-না মানে তুমি কি বলবে বলেছিলে ?
-ও তারমানে আপনার কোন আগ্রহ নাই আমার সাথে কথা বলার ?
-আমি সেটা মিন করি নি !
-তাহলে ?
-আসলে...............
আমি কি বলব ঠিক খুজে পেলাম না । জয়ন্তীর পাশে এভাবে বসে থাকতে একটু অস্বস্তিই লাগছিল । নিজেকে খুব বেশি মানিয়ে নিতে পারছিলাম না । জয়ন্তী বলল
-একটা কথা বলব আপনাকে ?
-বল ।
-আপনি কিন্তু আমাকে দুদুবার কষ্ট দিয়েছেন । একদম বিনা কারনে ।
আমার অস্বস্তিটা আরো একটু বেড়ে গেল । মেয়েটাকি এই কথাই বলবে ।
-কিন্তু তবুও আমি আপনার উপর রাগ করতে পারিনি । জানেন আমি সারা জীবন যেই রকম ছেলে কল্পনা করে এসেছি আপনি তেমন একটা কথা ছেলে ।
এই কথাটা বলেই জয়ন্তী দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকলো । আমি এই রকমই কিছু আশা করেছিলাম কিন্তু তবুও সহজ হতে কিছুটা সময় লাগল ।
জয়ন্তী হাত দিয়ে মুখ ঢেকেই আছে । আমি পড়লাম ঝামেলায় ।
কি করবো এখন ?
একটু সাহস নিয়ে জয়ন্তীর হাত দুটো সরিয়ে দিলাম ।
দেখি ও কাঁদছে ।
আরে এই মেয়ের সমস্যা কি ? এই মেয়ে কাঁদছে কেন ?
-কি হয়েছে তোমার ? কাঁদছো কেন ?
জয়ন্তী কোন কথা না বলল না । কেবল তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । ওর চোখের দিকে তাকাতেই আমার নিজের ভিতরেই কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম ।
আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না । জয়ন্তীর ঐ চোখেই যেন সব প্রশ্লের উত্তর ।
(চলবে)
আমি খুব দুঃখিত আরো একটা পর্ব বাড়ানোর জন্য ! ইচ্ছা করলে একসাথে শেষটা দিয়ে দেওয়া যেত কিন্তু লম্বা সময় ধরে কেন জানি লিখতে পারছি না । মাথার ভিতর কেমন জানি করছে । আশা করি সবাই বুঝবেন ব্যপারটা !
ধন্যবাদ !
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৭