গাড়িটা যখন জঙ্গলের মধ্য ঢুকে পড়ল নিশির একটু যেন ভয় মত লাগল । মনে হল গাড়িটা জঙ্গলের মধ্যে যাচ্ছে কেন ?
কোন সমস্যা হবে না তো !
তাহলে কি ভূলই করল !
কোন ছেলের সাথে আর সব থেকে বড় কথা এখন বৃষ্টি আসবে কোথা থেকে ! জঙ্গলে ঢোকার আগে তো আকাশটা একদম পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল । এখনও অবশ্য গাছগাছালীর ফাঁক দিয়ে আকাশটা দেখা যাচ্ছে । কিন্তু গাড়িটা যতই এগিয়ে যাচ্ছে আলোর পরিমানটা আরো কমে আসছে । এই ভরদুপুর বেলাও কেমন আলোটা মিইয়ে এসেছে গাছগুলোর জন্য ।
সত্যি একটু ভয় ভয় করতে লাগল ওর । নিশির চেহারা দেখে মনে হয় আবীদ কিছুটা আঁচ করতে পারল । নিশির দিকে তাকিয়ে বলল
-ভয় পাচ্ছ তুমি ? ভয় পেও না । আমার দ্বারা তোমার কোন ক্ষতি হবে না কখনও ।
আবীদ একটু হাসল । আবীদের ঐ হাসির মধ্যে কি ছিল কে জানে নিশির সব ভয় উড়ে গেল নিমিশেই । আবীদের কথাটা সত্যি ওর বিশ্বাস হল । ওর অমন নিষ্পাপ চোখ দিয়ে যখন নিশির দিকে তাকিয়ে ছিল নিশির সত্যি সত্যিই মনে হল যে আবীদ কোন দিন ওর কোন ক্ষতি করতে পারবে না ।
নিশি বলল
-তুমি এই জঙ্গলের মধ্যে থাকো ?
-হুম ।
-কুড়ে ঘরে নাকি ট্রি হাউজে ?
-আবীদ খুব হাসল নিশির কথা শুনে ।
-বল চল আর একটু গেলেই দেখতে পাবে ।
-আর একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
-কর ।
-এখন তো আকাশ তো একদম পরিস্কার । বৃষ্টি কোন ভাবেই আসবে না । তাহলে ?
আবীদ আবার হাসল । তবে এবার কার হাসিটা কেমন জানি একটু রহস্যময় মনে হল নিশির কাছে । নিশি আর কথা বলল না ।
আবীদ আর নিশি এক সাথেই পড়াশুনা । আবীদ সব সময় কেমন জানি একটু চুপচাপ । কথা বার্তা বেশি বলত না । নিশিদের বন্ধুবান্ধব দের মধ্যে ওকে নিয়ে খানিকটা কৌতুহল ছিল সব সময় । কিন্তু সেটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের নয় ।
দিন গুলো ভাল ভাবেই চলে যাচ্ছিল তারপর একদিন সব গড়বড় হয়ে গেল । নিশি ভার্সিটিতে আসছিল ঠিক এমন সময় ওর সামনে একটা কালো ফারারী গাড়ী ব্রেক করল । প্রথমে একটু ভয় পেলেও সামলে নিল । কারন গাড়িটা ওর পরিচিত । আবীদ এই গাড়িটাতে চড়ে ভার্সিটিতে আসে । আর ফারারী গাড়ি খুব একটা চোখেও পড়ে না ।
গাড়ির কাঁচ নামিয়ে আবীদ বলল
-ক্লাসে যাচ্ছ ?
-হুম ।
-আমি এগিয়ে দিলে সমস্যা ?
এটা নিশির কাছে নতুন । আবীদ ওকে সেধে লিফট দিতে চাইছে , এর মানে কি ? কিন্তু নিশি খানিকটা ইতস্তত করলো । বলল
-দেখো তোমার গাড়িতে উঠলে মানুষ জন নানা কথা বলবে । আর আমার বাসায় জানলে সমস্যা হবে । তুমি প্লিজ কিছু মনে কর না । আমি তোমার গাড়িতে উঠব না ।
আবীর মুখটা একটু মলিন হয়ে গেল । জোর করে হাসি ফুটিয়ে বলল
-আচ্ছা সমস্যা নাই ।
কাঁচ উঠিয় যখন কালো ফারারী চলে গেল নিশির মনে হল গাড়িটাতে চড়লেই হত ! কিছুই তো হত না । বরং একটু ভাব নেওয়া যেত বন্ধুদের কাছে । এই টুকু অন্তত বলতে পারতো দেখ ঐ ছেলে কাউকে পাত্তা না দিলেও আমাকে পাত্তা দায় ।
আবীর আসলেই ক্লাসের কারো সাথেই বিশেষ কথা বার্তা বলে না । নিজের মন থাকে । ক্লাসে পিছনের দিককার একটা বেঞ্চে বসে থাকে ।
ঐ দিন নিশি বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টি দিকে তাকিয়ে ছিল ।
-বাসায় যাবে না ?
-হ্যা ! বৃষ্টি হচ্ছে তো ।
নিশির কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে । যে ছেলেটা কোন দিন কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলে না আর আজ ওর সাথে পরপর দুবার কথা বলল ।
আবীর ওকে বাসায় পৌছে দিতে চাইল ।
-আবীর আসলে ..
-না ঠিক আছে আমি বুঝতে পারছি তোমার সমস্যা হবে ।
এই বলে আবীদ কিছুক্ষন চুপ করে রইল । তারপর বলল
-আসলে নিশি আমি অনেক দিন ধরেই তোমাকে বলব বলব ভাবছিলাম । আজকে সুযোগ এসেছে ।
-কি ?
নিশির মনে হল হয়তো আবীদ ওকে প্রোপজ করতে যাচ্ছে ।
-আমি বৃষ্টি অনেক ভালবাসি । অনেক বেশি । আমার অনেক দিনের ইচ্ছা আমি তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো । মাত্র একটা বার । অল্প কিছুক্ষনের জন্য । সম্ভব ?
নিশি প্রথমে কিছু বুঝতে পারলো না যে ছেলেটা আসলে কি বলতে চাইছে । নিশি বলল
-আমার সাথে ? কেন ?
-আই ডোন্ট নো । প্রতিদিন যথন ঘুম থেকে উঠি মনে হয় আজ তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজা হবে ? কিন্তু কোন দিন বলাই হয় নি । আজ বলেই ফেললাম ।
-আবীদ দেখো, তোমাকে আমি আগেই বলেছি যে আমার ফ্যামিলি একটু স্ট্রিক এই সব ব্যাপারে । প্লিজ তুমি কিছু মনে কর না । আমার পক্ষ্যে সম্ভব না ।
আবীদের মুখটা আবার মলিন হয়ে গেল । আবীদ কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বৃষ্টির ভিতরে নেমে গেল । কিছুদুর গিয়ে ফিরে চাইলো নিশির দিকে । নিশির কেন জানি বুকের ভিতরটা হুহু করে উঠল আবীদ কে দেখে ।
বারবার মনে হয়ে লাগল একবার বৃষ্টিতে ভিজলে এমন কিই বা হত । ছেলে নিশ্চই কত খুশি হত । পর দিন আবীদ ক্লাসে এল না । কেউ হয়তো লক্ষ্যও করলো না কিন্তু নিশি কিছুতেই নিজের মনে শান্তি পাচ্ছিল না । বারবার কেবল একটা কথাই মনে হচ্ছিল যে একবার ভিজলে কি এমন হত । ছেলেটা কত আশা নিয়ে এসেছিল ।
আবীদের বাসাটা আসলেই নিশির খুব পছন্দ হল । বনের ভিতর এমন সুন্দর বাড়ি যে ঠাকতে পারে এটা নিশির ধারনাই ছিল না । বাড়ির সীমানার ঠিক পেছন থেকেই একটা নদী প্রবাহিত হয়েছে । আর দুইপাশে জঙ্গল ! বেশ ঘন জঙ্গল ! কি চমৎকার একটা পরিবেশ !
-চল !
নিশি বলল
-কোথায় ?
-বৃষ্টিতে ভিজবে না ?
-কিন্তু বৃষ্টি কোথা্য় ? আকাশ তো একদম পরিষ্কার ! বৃষ্টি আসবে কেমন করে ?
-আরে আসো তো !
আবীদ হাসলো ।
নিশি কিছু বুঝলো না । আবীদ নিশিকে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল
-এটার ভিতর একটা পোষাক আসে । দেখ তোমার পছন্দ হয় নাকি ।
নিশি কিছু বলল না । ছেলেটা যা বলছে কেন জানিকরটে ইচ্ছা করছে । ঘরের ভিতর গিয়ে প্যাকেট টা খুলে দেখলো একটা কালো রংয়ের চুড়িদার ! এটা নিশির কাছে ভাল লাগলো । আর একপাতা কালো টিপ ।
চেঞ্জ করে যখন বাইরে এল দেখলো আবীদও কালো রংয়ের পাঞ্জাবী পরেছে ।
কালোতে ছেলেটাকে ভালই লাগছে !
আবীদ কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলো ননিশির দিকে ! বলা চলে মুগ্ধ চোখে !
আবীদ বলল
-জানো, আজ আমার জীবনে রসব থেকে বড় ইচ্ছেটা পুরন হবে ।
-কিন্তু !! বৃষ্টি কোথায় ?
-আরে আসো তো !
আবীদ ওকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এল । নিশি আবার উপরের দিকে তাকালো । চারিদিকে কেবল গাছগাছালিতে ভরা !
নিশি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে যদিও জানে বৃষ্টি আসবে না । আবীদ ওর দিকে একভাবেই তাকিয়ে আছে ।
হঠাৎ একফোটা পানি যেন নিশির গালে স্পর্শ করলো ।
তারপর আরও এক ফোটা !
-আশ্চর্য ! পানির ফোটা আসছে কোথা থেকে ?
নিশি কেবল অবাক হয়ে তাকালো আবীদের দিকে ! আবার তাকালো আকাশের দিকে !
আকাশ এখনও পরিষ্কার !
নিশি আবীদের দিকে তাকিয়ে দেখলো আবীষ হাসছে মিটি মিটি !!
দেখতে দেখতে তুলুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল !!
নিশি আবার বলল
-বৃষ্টি আসলো কোথা থেকে ?
-আগে বৃষ্টিতে ভিজো ! তারপর বলছি ।
নিশির আসলেই কেমন যেন অদ্ভুদ লাগছে ।
এই আবীদটা আবার মানুষ তো ? যদি কোন জ্বীন ভুত না তো ?
হা হা হা হা !!
নিজের মনেরই হাসলো ! কি ভাবছে !
আবীদ বলল
-এই একটা মুহুর্তের জন্য আমি অনেকদিন অপেক্ষা করেছি !! কত প্রস্তুতি নিয়েছি । বৃষ্টি জন্য যেন আমাকে অপেক্ষা করে থাকতে না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি !
-কি রকম?
-এটা কিন্তু আসল বৃষ্টি না ।
-মানে?
-মানে হল পুরো এলাকাতে যত গাছ আছে সেগুলোট ডালে ডালে ঝর্ণা সেট করা । সুইট টিপ দিলেই সেখান থেকে পানি পড়া শুরু করে ।
নিশি সত্যি অবাক না হয়ে পারলো না ।
-তুমি এসব করেছ কেবল আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে বলে ?
আবীদ হাসলো ! এটা একটা কারন । তাছাড়া আরো একটা কারন আছে ।
নিশি আসলেই কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলো ন । ও ভাবতেই পারছে না একটয়া ছেলে কেবল ওর জন্য বৃষ্টিতে ভেজার জন্য এতো আয়োজন করতে পারে ।
-আর কি কারন?
আবীদ নিশির সামনে হাটু গেড়ে বসলো !
-আর একটা কারন হল, আমি এই বৃষ্টির ভিতর তোমাকে প্রোপজ করটে চাই !
তারপর পকেট থেকে একটা আংটি বের করে বলল
-নিশি ! ম্যারি মি !
নিশি কেবল অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো । আর ক্ষ্যাল করলো যে ওর হাট তা আবীদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ! ও নিজেকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারলো না । কেবল মনে হতে লাগলো এই আংটি না পড়লে ও দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে !
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪২