পাঁচটা সতের !
একটু যেন অস্থিরতা দেখা দিল ওর মনের ভিতর ! নিশির বারবার মনে হচ্ছে এখনও কেন আসছে না ছেলেটা ?
কোন কি সমস্যা হয়েছে ?
প্রতিদিনতো পাঁচটার ভিতরই চলে আসে তাহলে আজ আবার কি হল ?
তারপরেরই নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করলো ।
নিজেকেই বলল
ছেলেটা প্রায়ই আসে তার মানে এই না যে প্রতিদিনই তাকে রুটিন করে ঠিক ৫টার সময়ই আসতে হবে । দুই দশ মিনিট লেট হতেই পারে ।
আবার আজন নাও আসতে পারে !
তাতে কি হয়েছে ?
বিকেল বেলা এই এলাকাতে সবাই বেড়াতে আসে ! তার মানে এই না যে প্রতিদিনই একজন কে আসতেই হবে । এই তো গত সপ্তাহে নিশি নিজেও তো আসে দুইদিন । ওর বড় ভাই এসছিল । তার সাথে থাকে হয়েছে !
ছেলেটারও নিশ্চই এমন কোন কাজ বেধে গেছে তাই আজ হয়তো আসবে না । অথবা আরো একটু পরে আসবে !
কিন্তু নিশি নিজের মনকে ঠিক ভাবে শান্তনা দিতে পারলো না ।
ছেলেটা যে এখনও আসছে না এটা নিশি ঠিক মত মেনে নিতে পারছে না । গত কালও ছেলেটা এসেছিল । ঠিক সময়েই । বসে ছিল সেই নির্ধারিত জায়গাতেই ।
নিশি এখন সংসদ ভবনের সামনে বসে আসে । প্রতিদিনই ও এখানে আসে ! আগে আসতে ওর রুম মেটের সাথে এখন একা একাই আসে । ও ফার্মগেটে থাকে তাই খুব বেশি সমস্যা হয় না !
আগে এমনি আসতো এখানে । মানুষ জন দেখতো, গল্প করতো ফুসকা খেত । কিন্তু ইদানিং আসে ছেলেটাকে দেখতে !
ব্যাপারটা শুরু হয় খুব সাধারন ভাবেই । নিশি যখন বিকেল বেলা আসতো একটা ছেলেকে প্রায়ই দেখতো !
প্রধান কমপ্লেক্সের একটু পাশে যে বড় নারিকেল গাছ টা আছে তার ঠিক পাশে একটা ছেলে বসে আছে । আর কেমন উদাশ হয়ে আকাশের দিকে কখনও বা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ।
তবে নিশির মনে হয় ছেলেটা যেন কিছুই দেখছে না । শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কোন দিকে !
প্রথম প্রথম নিশি খুব বেশি আমলে নেয় নি তবে কিন্তু ছেলেটা কে প্রতিদিন একই জায়গায় একই ভাবে বসে থাকতে দেখে কেমন একটা কৌতুহল জেগেছে ।
সব থেকে বেশি আকর্ষন করে ছেলেটা বিষন্ন ভরা মুখ ! ছেলেটাকে এমন বিষন্ন কেন লাগে ?
এই প্রশ্নটা বারবার ওর মনে এসেছে ! বারবার কেবল এই কথা টাই নিশির মনে হয়েছে । অনেক বার চেয়েছে ছেলেটার সাথে একটু কথা বলতে কিন্তু সংকোচের কারনে পারে নি ।
আগেতো নিশি পুরো এলাকাতেই ঘুরে বেড়াতো কিন্তু ইদানিং ঠিক পাঁচটার কিছু আগে সে এই ঐ জায়গাতে এসে বসে যেখান থেকে ছেলেটাকে ভাল ভাবেই দেখে ।
ছেলেটার কর্মকান্ড দেখে !
ঐ তো আসছে ছেলেটা । নিশির মন টা শান্ত হয় !
এখন ছেলেটা ঐ নারিকেল গাছটার পাশে বসবে । তারপর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একপাশে রাখবে ।
ছেলেটা যেই রকম ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে কেউ যদি মোবাইলটা পাশ থেকে নিয়ে যায় মনে হয় না যে ছেলেটা টের পাবে !
আচ্ছা আজ যদি সরাসরি ছেলেটার সাথে গিয়ে কথা বলি ?
এই ভাবনা নিশির মনে এল !
ছেলেটাকি খুব বেশি কিছু মনে করবে ?
অথবা ছেলেটাকে গিয়ে একটা ধমক দেওয়া যায় !
বলা যেতে পারে
এই ফাজিল ছেলে, তোমার জন্য কত ক্ষন ধরে বসে আছি । আর তুমি দেরি করলে ?
ছেলেটার মুখের অবস্থা তখন কি হবে ? এই কথা ভাবতেই নিশির হাসি চলে আসলো !! এরকম করলে কেমন হয় ?
ছেলেটা প্রতিদিন প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকে ! কিন্ত আজ বেশি ক্ষন বসলো না । প্রতিদিনের মত এক প্লেট ফুচকা খেয়েই উঠে পরলো । নিশির মনটা একটু খারাপই হল ! আজ এমনিতেই ছেলেটা এসেছে দেরি করে আবার চলেও গেল আগে আগে !!
ছেলেটার উপর একটু যেন রাগ করলো ! অথবা একটু অভিমান !
মনে মনে বলল যাও তোমার সাথে আর কথা বলবো না ! তোমার সাথে আড়ি !!
কি আশ্চার্য মানুষের মন !
যে ছেলেটাকে নিশি চেনেই না এমন কি তার নাম পর্যন্ত জানে না তার সাথে আড়ি দিচ্ছে !!
কি হাস্যকর !!
নাহ ! কালকে ছেলেটার সাথে কথা বলতেই হবে ! ছেলেটা নিশ্চই ওকে মারবে না !!
নিশি মনে মনে ঠিক করেই ফেলল যে কালকে যখন আসবে ঠিক তখনই ছেলেটার সাথে ও কথা বলবে । অন্তত পরিচিত হবে !!
-আফা নেন !!
নিশি চিন্তার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এল । সামনে ফুচকার ছেলেটা দাড়িয়ে । হাতে এক প্লেট ফুচকা !
-আমি এখনও অর্দার দেই নাই !
-অপু ভাইজান আপনেরে দিটে কইছে !
-অপুটা কে ?
-ঐ যে ঐ খানে বইস্যা ছিল ।
ফুচকার ছেলেটা হাত দিয়ে নারিকেল গাছটার পাশের স্থানটা দেখালো ।
নিশি শুধু চমকালো না বেশ ভাল ভাবে চমকালো !!
নিশি বলল
-কি বলল তোমার অপু ভাই ?
-কইছে হ্যেই চইল্লা গেলে যেন আপনেরে ফুচকা দেই !
নিশি ফুচকার প্লেট টা হাতে নিল ।
ও ঠিক মত বুঝতে পারছে না কি করবে ! আসলে নিশি কখনও কল্পনাও করতে পারে নি যে এমন কিছু হতে পারে !
কাল আসুক ছেলেটা !
কালতো কথা বলবেই !!
কিন্তু পরের দিন ছেলেটা আসলো না । নিশি সন্ধ্যা হবার পরও ছেলেটার জন্য বসে থাকলো কিন্তু আসলো না ছেলেটা !
খুব কান্না আসতে লাগলো নিশির । বারবার মনে হল ছেলেটা এমন কেন করলো ? এমন কেন করবে ?
সে কি জানে একজন তার জন্য অপেক্ষা করে আছে ! তার আসার উচিৎ !!
প্রতিদিন যখন আসে আজও আজও আসা উচিৎ ছিল !
যখন বুঝলো ছেলেটা আর আসবে না নিশি কিছুতেই কান্না আটকে রাখতে পারলো না ।
তারপর পুরো সপ্তাহ ছেলেটা এল না ।
নিশি প্রতিদিন আসে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকে । তারপর চোখে জল নিয়ে ফিরে যায় !!
পরের সপ্তাহে নিশি যখন বিকেল বেলা আবার সংসদ ভবনের সামনে গেল এই আসাই যে এই সপ্তাহে নিশ্চি ছেলেটা আসবে !
কিন্তু আজও তাকে বিফল হয়ে ফিরে যেতে হল । নিশি যখ উঠতে যাবে ঠিক তখন ফুচকার ছেলেটা নিশির দিকে একটা খাম বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-অপু বাই দিয়া গেছে আপনার জন্য !!
-এতো ক্ষন কেন দেও নি !
-ভাই কইছে আপনে যখন যাইবেন তহন দিতে !!
-তোমার ভাই আর কিছু বলে নি !
-হ ! আপনের খোজ খবর নিতাছিল !! আর কিছে আর আইবো না সে !
-কেন ?
-তা তো কইতে পারি না !
নিশি হাতের খামটার দিকে তাকালো ! খামটা হাতে নিয়েই বসে রইলো ।জানে আর বসে থেকে লাভ নাই, তবুও বসে রইলো । অন্তত ছেলেটা ওকে কিছু লিখে পাঠিয়েছে ।
আচ্ছা চিঠিতে ছেলেটা কি লিখেছে !!
নিজের সম্মন্ধে লিখেছে !
আর কি লিখেছে !
ওকে নিয়ে কিছু লিখেছে কি ?
লিখবে তো অবশ্যই !!
নিশি চিঠির খামটা খুল্লো না ! খুল্লেই তো সব কিছু শেষ হয়ে যাবে !!
নিশি খাম টা খুলল না !!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৫৭