বিছানায় বেড টি খাওয়ার অভ্যাস আমার কোন কালেই ছিল না । কিন্তু এ বাড়ীর নিয়ম কানুন সব আলাদা । কেমন একটা বড়লোক বড়লোক ভাব । অবশ্য নিশিরা এমনিতেই বড় লোক । বড় লোক ওয়ালা ভাব না থেকে কি পারে !
চায়ের কাপ থেকে চোখ সরিয়ে নিশির দিকে তাকালাম । মুখটা কেমন একটু চিন্তিত লাগল । উঠে বসতে বসতে বললাম
-কি হয়েছে ? চেয়েহারা এমন কেন লাগছে ?
আমার দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল
-নাহ কিছু না । নে চা নে ।
-নিশি তোর কি লজ্জা শরম বলে কিছু নেই ।
-মানে কি ? লজ্জা শরম থাকবে না কেন ?
-আরে তোর জামাই, রীতিমত পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহ দিয়ে বিয়ে করেছি । আর তুই আমাকে তুই তুই করছিস ।
-ওহ ! অপু ফাজলামো করবি না তো ! এমনিতেই টেনশন লাগছে খুব । আর তার উপর তুই ফাজলামো শুরু করেছিস ।
-টেনশনের কি আছে ?
নিশি বলল
-তোর কোন টেনশন নাই । সব টেনশন তো আমার ! কি ঝামেলায় যে আমি পরেছি ! দাদী মনে হয় এবার রিকভার করে ফেলবে !
-কি বলছিস তুই ?
কথাটা এমন ভাবে বললাম যেন নিশির দাদি এ যাত্রায় বেঁচে গেলে আমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে । কিন্তু একটু পরে নিজের কাছেই লজ্জা লাগল । ছি ছি কি ভাবছি আমি । আমি বললাম
-সরি !! কিছু মনে করিস না ।
-না ঠিক আছে । আমিও খানিকটা চিন্তিত । আমি ভাবিনি এমনটা হবে ! নিজে আটকেছি তোকেও আটকেছি । তার উপর ...
নিশি চুপ করে গেল ।
-তার উপর ?
নিশি বলল
-বাবা তোকে আজ অফিস নিয়ে যাবে বলছিল !
-কি বলিস তুই ? উনি কি সিরিয়াস ?
-হুম ।
-সেকি ! কি সর্বনাসের কথা ? কেন ?
-কেন মানে ? তুমি তার এক মাত্র মেয়ের একমাত্র জামাই । তোমাকেই তো সব কিছুর দায় দায়িত্ব নিতে হবে !
-আরে জামায়ের গুল্লি মারি !
কথাটা মনে হয় একটু জোরেই বলেফেলেছিলাম । নিশি বলল
-আরে আস্তে !
আমি গলা নামিয়ে বললাম
-জামায়ের গুল্লি মারি । জামাই তো আর আসল না । ভূয়া জামাই ।
-জামাই যে ভূয়া সেটা তুই জানিস , আমি জানি , কিন্তু তোর শ্বশুর মশাই তো আর জানে না ।
-নিশি তা তো আমি জানি । তুই কি বুঝতে পারছিস যে এই খবর যদি আমার বাসায় পৌছায় তাহলে কি হবে ? আমার বাপ যদি জানতে পারে যে আমি বিয়ে করে ফেলেছি তাহলে আমাকে স্রেফ গুলি করে দিবে । আর তুই আমার বৌ না তোকেও গুলি করবে । আমার বাবার কাছে একটা ব্রিটিস আমলের দোনালা বন্দুক আছে । আমার দাদার ।
-বন্দুক আছে বুঝলাম কিন্তু আমাকে কেন গুলি করবে কেন ? আমি কি করেছি ?
-কি কয়েছিস ? আমার বাপ কি মনে করে জানিস ? আমার বাপ মনে করে আমি হলাম গাধা আর আমাকে যে বিয়ে করবে সে হবে আমার থেকেও বড় গাধা । আর তার মতে গাধাদের বেশি দিন বেঁচে থাকার অধিকার নাই ।
নিশি বলল
-ঠিক আছে । বেশি কথা বলতে হবে না । ফ্রেস হয়ে জলদি নাস্তার টেবিলে আয় ।
নিশি চলে গেল । আমি বাধরুমে ঢুকলাম । আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । নিশির এই বাধরুমটা আমার খুব পছন্দ ।
পুরো বাধরুম টা একদম নীল রংয়ের । বাথটাব টাও নীল রংয়ের । যখন বাথটাবে গা ভিজিয়ে শুয়ে থাকি জীবনটা বড় আনন্দ ময় মনে হয় । ইস যদি নিশি ঐ দিন আমাকে কথাটা না বলতে তাহলে এই নীল বাথরুমে গোছল করাই হত না । জীবনটা অর্ধেক বৃথাই হয়ে যেত !
নিশি সাথে সাখ্যতা প্রথম থেকেই ছিল । তুই তোকারির সম্পর্ক । প্রথম থেকেই ও আমার খুব ভাল বন্ধু । তাই বন্ধুর উপকার করতে এসেছিলাম আর এসে যে এমন ভাবে আটকে যাবো ভাবি নি ।
ক্লাসে একদিন নিশি আমাকে দেকে বলল
-তুই কি কয়দিনের জন্য আমার হাজবেন্ড হতে পারবি ?
আমি প্রথমে ভেবেছিলা নিশি হয়তো এমনিতেই ফান করছে কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হল না ও বেশ সিরিয়াস !
-তুই কি সিরিয়াস ?
-রাজি কি না বল ? না হলে অন্য কারো কাছে যাই !
-কেস টা কি আগে বল ? তারপর না হয় বলি । নিশি বলল
-এখানে বলা যাবে না । আগে বাইরে চল ।
ক্যাম্পাসে বাইরে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম ।
-এবার বল !
নিশি কিছুক্ষন চিন্তা করে নিল । যেন কিছু গুছিয়ে নিল । তারপর বলল
-আামর দাদীর অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল । আই সিইউ তে আছে । খু বেশি দিন আর স্টে করবে না ।
-ও !
-দাদীর খুব ইচ্ছা মরার আগে উনি তার নাত জামাই দেখ যাবেন ।
-ও !
-ও ! মানে ?
আম কিছু বুঝলাম না । নিশি বলল
-আরে গাধা , মানে হল আমার জামাই দেখতে চান উনি !!
আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম নিশির দিকে । এই মেয়ে ঠিক কি বলতে চাইছে ?
নিশি বলল
-আমি চাই তুই আমার হাসবেন্ড হয়ে দাদীর সামনে যাবি !!
-একটা কথা বলব?
-বল !
-আমি যতদুর জানি তুই তোর দাদিকে একদম পছন্দ করিস না । তাহলে ?
-আর বলিস না । আমি পছন্দ না করলে কি হবে আমার বাপতো তার মাকে পছন্দ করে ! নিজের মার শেষ ইচ্ছা বলে কথা ! আমাকে তো আর জোর করে কিছু বলতে পারছে না কিন্তু আব্বুর মুখটা দেখে আমা রকেমন জানি খুব মায়া লাগছে !
-তাহলে সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেল !
নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-দেখ এডভাইস দিবি না । তুই হেল্পটা করবি কি না বল !!
-তা না হয় করলাম ! কিন্তু যখন সত্য টা সামনে আসবে তখন কি করবি ? তোর বাপকে কি জবাব দিবি ?
-সে চিন্তা আমার !! এখন এই ঝামেলাটা তো দুর হোক !! তুই হবি ?
আমি হাসলাম । বললাম
-হতে পারি !! একটু নাইসলি বল ! আমার সামনে হাটু গেড়ে বল যে অপু হাসান আমি তোমার প্রেমে দেওয়ানা হয়েছি । তুমি কি আমার হাসবেন্ড হবে ?
-আহা !! সাধ কত !!
-কি বলবি না ?
-মরে গেলেও না ।
-ওকে আর কি করা ! তবে একটা কথা । এই কথা যেন আমার বাসায় না পৌছায় !! যদি আমার বাপ জানতে পারবে তাহলে কিন্তু আমার খবর আছে !
-আরে কোন সমস্যা নাই ! ভার্সিটি তো এখন বন্ধ ! সপ্তাহ খানেক তুই আমাদের বাসায় থাকবি । ব্যাস ! আর কিছু না ।
-তোদের বাড়ি মানে ঘর জামাই !
নিশি হাসলো !
আমরা ভেবেছিলাম নিশি দাদি খুব বেশিদিন টিকবে না । আর আমাদের কোন সমস্যা হবে না । কিন্তু এখন দেখছি অবস্থা খারাপ ! যদি এ যাত্রায় টিকে যায় আমার তো খবর আছে !!
আর কোন ভাবে যদি বাসায় জেনে যায় তাহলে তো আর কোন কথাই নাই !!
চুপচাপ নাস্তা খাচ্ছিলাম । এমন সময় নিশি বাবা বলল
-আজকি তোমাদের দুজনের কোন প্লান আছে নাকি ?
নিশি বলল
-কেন আব্বু ?
-না আলসে আমি অপুকে আমাদের অফিসে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম । কি বল অপু?
আমি নিশির দিকে তাকালাম । ও চোখ দিয়ে ইসারা করলো না বলতে । আমি নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমি অফিসে গিয়ে কি করবো ?
নিশির বাবা বলল
-এটা কেমন কথা ! সামনে গিয়ে তুমি তো অফিরের দায় দায়িত্ব নিবে !
-আমি ?
আমি হাসলাম ! বললাম
-কিন্তু আমি কিভাবে নিবো ?
-এ সব তো এখন তোমারই !
-আঙ্কেল আপনার একটু ভুল হচ্ছে মনে হয় ! আপনি হয়তো ভেবেছেন নিশির হাসবেন্ট হিসাবে আমি এসব কিছুর দায়িত্ব আমি নিব কিন্তু আমি এটা করতে পারবো না ।
নিশির বাবা আমার দিকে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকলো । আমি বললাম
-এসব কিছু আপনার আপনার থেকে নিশি পাবে । এগুলোর মালিক নিশি হবে ।এর দেখোশুনার দায়িত্বও নিশির । যদি এর সব কিছুর দায়িত্ব আমি নেই তাহলে মানুষ বলবে যে আমি শ্বশুরের টাকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি । এটাতে আমার আপত্তি আছে ।আমি আমার নিজের যোগ্যতায় বড় হতে চাই !
আমার কথা শুনে নিশির বাবা বেশ পুলকিত হলেন বলে মনে হল । নিশিও দেখলাম অর্থপূর্ণ চোখ তাকালো !
নিশির বাবা বলল
-আচ্ছা তুমি যা চাও তাই হবে ! আমি জোর করবো না । তা তোমার বাবার নাম্বার টা আমাকে একটু দাও !!
আমার বুকের ভিতর কেমন করে উঠল ।
-জ্বি??
নিশি বলল
-আব্বু তোমাকে আমি কি বলেছিলাম !
-আরে আমার মনে আছে তো ! আমি ওনাকে আগেই বিয়ের কথা বলবো না । আমি ওনাকে আগে বিয়ের জন্য প্রপোজাল পাঠাবো ! রাজিতো হয়েও যেতে পারে । তারপর দেখা যাবে । আর যদি না রাজি হয় তাহলে ফোন রেখে যাবো ! কোন তো সমস্যা নাই !
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-দাও নাম্বার টা দাও !
আমি একবার নিশির দিকে তাকালাম আর একবার নিশির বাবার দিকে তাকালাম ।
মোবাইল টা বের করতে যাবো ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল ।
আব্বার ফোন !!
আমার বুকটা ধুক করে উঠল !
আমি ফোন রিসিভ করলাম
-আস্লামালাইকুম আব্বা !
-কোথায় তুমি?
সর্বনাশ ! তুমি??
আমার আব্বা আমাকে সবসময় তুই করে বলেন কিন্তু যখন কোন সিরিয়াস বিষয় হয় তখন তুমি !
তারমানে কিছু হয়েছে !!
কি হয়েছে ?
-কি হল কথা বলছো না ? কোথায় তুমি ?
-আমি ?
-শ্বশুর বাড়ি ??
আমার বুকটা মনে হল এখনই ফেটে যাবে ।
আমি শ্বশুর বাড়ি এটা আমার বাপ জানলো কিভাবে ?
-তুমি থাকো ওখানে আমি আসছি তুমি এতো বড় লায়েক হয়ে গেছ যে আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছ । তার উপর শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উঠছ,ঘর জামাই হয়ে ! তুমি থাকো আমি আসছি !!
আব্বা ফোন রেখে দিল ।
ফোন রাখার পর নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি হয়েছে ?
আমার আব্বা আসছে !
-মানে ? উনি জানলেন কি ভাবে ?
-আমি কিভাবে বলবো ?
আমি উঠে পড়লাম । এখানে থাকা এখ ন একদম নিরাপদ নয় ।
আমার অবস্থা আসলে খারাপ । নিশির আব্বা বলল
-আরে তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন ?
-আপনি আমার বাবা কে চিনেন না ? উনার মত রাগি মানুষ আমাদের এলাকাতে আর একটাও নাই ! আমাকে যদি এখন এখানে পায় একদম চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ! আমাকে এখ পালাতে হবে । যে করেই হোক !!
-আরে পালাবে কেন ?
নিশির বাবা কি যেন ভাবলো !
আচ্ছা ঠিক আছে । তোমাদের তো হানিমুন হয় নি ! আর মার অবস্থাও এখন মোটামুটি ভাল । তোমরা এক কাজ কর, সিলেট চলে যাও ! ঠিক আছে ! ওখানে আমার একটা বাংলো বাড়ি আছে । ওখানে কয়দিন থেকে আসো !
আর আমি এদিকে তোমার বাবার জন্য ওয়েট করি । উনি আসলে না হয় ওনাকে সামলাবো আমি !
আমি আর কিছু ভাবলাম না । আসলে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । আমার কেবল মনে হচ্ছে আব্বা আসার আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে !
আমি জলদি ঘরের দিকে রওনা দিলাম । নিশি আমার পেছন পেছন এল !!
( গল্পটা অনেকটা নাটকের মত হয়ে গেল তাই না । কাল রাতে এমন একটা থিম মাথায় আসলো তাই নামিয়ে দিলাম । এখনও শেষ হয় নি । আরো একটা পর্ব লিখবো হয়তো)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৫