গতকাল ঢাকা থেকে বাসায় এসেছি । আর আজকেই টিয়াপাখির সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারি নি ! কাল যখন গাড়িতে ছিলাম টিয়াপাখির ফোন এসে হাজির । বললাম
-আমার সাথে দেখা করবে তো ? আমি কেবল তোমার সাথে দেখা করার জন্যই কিন্তু বাসায় আসছি ।
কিন্তু টিয়াপাখি আমাকে হতাশ করলো । বলল
-দেখা করা সম্ভব না ।
-কেন ?
-কেন মানে বোঝ না ??
আমি সব বুঝি । কিন্তু মনতো বোঝে না । কিছুতেই এই মন বোঝে না ! মনটা কেবল তোমাকে দেখতে চায় ! তোমার হাত টা ধরতে চায় !!
বাসায় আসার পরও তাই মনটা খানিকটা বিষন্নই ছিল । রাসেলকে ফোন দিয়ে বললাম যে বিকেল কোন কাজ নাই । আড্ডা মারা যাক !
রাসেলের কাছেই যাওয়ার জন্যই গোসল করছিলাম । আমার আবার গোসল করতে বরাবরই দেরি হয়ে যায় !! কেবল মাথায় পানি দিয়েছি তখনই মবাইলটা বেজে ওঠে ! আর কেঁপে ওঠে আমার বুকটা !
টিয়াপাখি ফোন দিয়েছে !!
কাঙ্খিত রিংটোনটা বেজে ওঠেছে !!
আমি ভেজা মাথা নিয়েই ঘরের দিকে দৌড় দিলাম ।
-হ্যালো !
-কি কর ?
-গোসল ! কেবল পানি ঢেলেছি !
-আশ্চর্য !! তাহলে ফোন কেন ধরলে ? পরে ধরতে !!
আমি হাসলাম । বললাম
-এখন গোসল করা থেকে তোমার ফোন ধরাটা আমার কাছে বেশি জরুরী ! এই সময় ফোন দিলা ?
-না মানে নিউমার্কেটে যাবো একটু পরে ! তুমি যদি আসো তাহলে ডেখা হতে পারে ।
-সত্যিই ??
-হুম ! আসো !! কেমন ??
-আমি আসছি । আসছি মানে চলে এসেছি !!
আর ভাল করে গোছল করা হল না । কোন রকম পানি ঢেলেই রওনা দিলাম । কতদিন পর টিয়াপাখিকে দেখবো !!
আমার টিয়াপাখিকে !!
আমি একটা ব্যাপার এখনও লক্ষ্য করি যে যখনই টিয়াপাখির সাথে দেখা হয় আমার বুকের ভিতর কেমন যেন একটা ধরফড়ানি শুরু হয় ! কিছুতেই শান্ত হয় না ।
আজও হল তাই । টিয়াপাখিকে দেখ মনটা আরো কেমন যেন উতলা হয়ে গেল । কিছুতেই মনটাকে ধরে রখতে পারছিলাম না । বারবার মনর হচ্ছিল আড়ো একটু কাছে যাই ।
হাতটা ধরি ওর !!
একটা চুম খাই !!
ইদানিং এই ইচ্ছাটা খুব প্রবল ভাবে দেখা দেয় !!
আচ্ছা এটা কি অন্যায় !
টিয়াপাখিকে বললাম কথাটা । সে চোখ রাঙ্গিয়ে বলল
-এটা অন্যায় ! এটা করা যাবে না ।
-এতো দিন পরে এসছি ! প্রায় ৪০ দিন পরে !
-৪০দিন কেন ৪০ বছর পরে এলেও এটা অন্যায় ।
মন খারাপ করে বলি
-এখন সবাই.........
কথাটা শেষ হল না । টিয়াপাখি বলল
-তাহলে সবার কাছে যাও ! আমার কাছে আসা লাগবে না ।
আমি আর কিছু বলতে সাহস পেলাম না । টিয়াপাখি একবার যেটা না বলবে সেটা হ্যা বলার কোন উপায় নাই । আমি ওর পিছন পিছন ঘুরতে থাকি !
এটাই বা কম কি !
বাসায় যাওায়র আগে টিয়াপাখিকে পাউন্ড খানেক কেক কিনে দিলাম । টিয়া পাখি কেক খুব পছন্দ করে ।
রাতের বেলা ফোন কথা হচ্ছিল !! দেখলাম মনটা ভালই ওর !! আমার মনটাও ভাল খুব । আজতো ওর সাথে দেখা হয়েছে । এটার থেকে আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে !
আমি বললাম
-মন ভাল তোমার ?
-হুম ! ভাল । খুব ভাল ।
-কেন ?
-তোমার সাথে দেখা হল না !
আমার মনটা ভাল হয়ে গেল আরো । আমি আবার বললাম
-কেক খেয়েছো?
-হুম ! বাড়ির সবাই খেয়েছে !
-আচ্ছা, কেক টা খেতে তোমার কতক্ষন লেগেছে ! মানে কতক্ষনে শেষ করেছ ।
-সবাই মিলে ?
-না । কবলে তুমি যত টুকু খেয়েছ সেটা খেতে কতক্ষন লেগেছে ?
-এই দুই আড়াই মিনিট । কেন ?
-আচ্ছা কেউ যদি তোমাকে তোমার প্রিয়া জিনিসটা খাওয়ায় তোমারও নিশ্চই উচিৎ তাকে তার প্রিয় জিনিসটা খাওয়ানো । তাই না?
টিয়াপাখি কি যেন ভাবলো কিছুক্ষন ! তারপর বলল
-হুম ! তা তো উচিৎ ।
-আমি তোমাকে তোমার প্রিয়া কেক খাইয়েছি ! এখন.........
-আচ্ছা বল কি খাবা ?
-বলবো ?
-হুম ! কি রান্না করে খওয়াবো ? নাকি কিছু কিনে খাওয়াবো ? তোমার প্রিয় জিনিসটাই খাওয়াব ! নাম বল !
-আমি এমন একটা জিনিস খেতে চাই যেটা রান্না করা যায় না । কেনাও যায় না । কিন্তু খেতে খুব মিষ্টি !
টিয়াপাখি খানিক ক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-তুমি আসলেই অনেক দুষ্ট হয়ে গেল । সারাক্ষন মাথার ভিতর কেবল এই বদ চিন্তা !
-তুমি কিন্তু বলেছ দিবে !
-আসো দিচ্ছ !
-সত্যি আসবো !!
-সরররররররররররর !!
আমি বললাম
-এখনতো দিচ্ছ না । আগে কেবল বিয়ে হতে দাও । যেদিন থেকে তোমার নাম মিসেস রহমান হবে সেদিন তোমার খবর আছে !
টিয়াপাখি হাসতে হাসতে বলল
-কি করবা ? মারবে আমাকে ?!
-মারবো ?? আগে হও আমার বউ । তারপর দেখাবো মজা !! এখনতো কিছু দিচ্ছ না তখন শুধে আসলে উসুল করবো !!
-কচু করবা ? আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুমি কিছু করতেই পারবে না । তোমার দৌড় আমার জানা আছে !!
এই বলে টিয়পাখি আবারও হাসতে থাকে !!
আসলে কথা সত্য ! ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভবই না !
যদিও গল্পের নামটা বিরহ বেলার গল্প কিন্তু কোন বিরহের কথা লেখা হয় নি । আসলে টিয়াপাখিকে সারাটা সময় এতোপরিমান মিস করি যে আলাদা করে বিরহের কথা লেখা সম্ভব না । লিখতে গেলে যেন আর লেখা শেষই হবে না !! আমি ঐ বিরহের কথা গুলো মনে রাখতে চাই না কিছুতেই !! আমি কেবল তার সাথে কাটানো সুন্দর কথা গুলোই মনে রাখতে চাই !!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৫