একটু আগে চেরাগ থেকে বেড়িয়ে হু হা করতে করতে বলল
-হুকুম করুন মালিক ! আমি আপনার তিনটি ইচ্ছা পূরণ করবো । আর এখন কেমন মাথা নিচ করে দাড়িয়ে আছে !!
আমি আবার বললাম
-আমার তিনটা ইচ্ছা তোমার পুরন করতে হবে না । কেবল একটা ইচ্ছাই তুমি পূরণ কর !!
বেটা ফাজিল জ্বিন তবুও কোন কথা বলল না । কেমন আস্তে আস্তে ধোঁয়ায় পরিনত হতে হতে চেরাগের ভিতর চলে যেতে লাগলো !
-বদমাইশ জ্বিন যাস কই !! আমার ইচ্ছা তোর পূরণ করতেই হবে । এই বলে আমি জ্বিন বেটাকে ধরতে যাই । দৌড়াতে থাকি দৌড়াতেই বালির মধ্যে উল্টে পরি .....
এমন সময়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় !
ইদানিং কি সব উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখি !! আালদিনের জ্বিন !! তিনটা ইচ্ছা !!
আপন মনে একটু হাসি আসে !
আচ্ছা এমনটা যদি সত্যিই হত !
ছুটির দিন ! অবেলায় ঘুমিয়েছিলাম । ঘড়িতে সময় দেখি ১২টার কিছু বেশি বাজে ! কতক্ষন ঘুমিয়েছি কে জানে ! ঘুম ভাঙ্গার পর আমার কেন জানি সব সময় নিশিকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে । প্রতিদিন সকাল বেলা নিশির ডাকেই ঘুম ভাঙ্গে । চোখ মেলেই আমার সোনা বউটার হাসি দেখি ! দিনটা কি সুন্দর ভাবেই না শুরু হয় ।
দিন যদিও আগেই শুরু হয়ে গেছে তবুও নিশিকে একবার দেখতে ইচ্ছা করছে ।
আমার বউটা গেল কই ?
ওর নাম ধরে ডাক দেই !
রান্না ঘর থেকে আওয়াজ আছে ।
এই মেয়েটা কে নিয়ে আমি কি করবো ? কতবার বলেছি বান্নাঘরে না যেতে তবুও.......
একটু বিরক্ত হয়েই রান্না ঘরের দিকে হাটা দিলাম ।
নিশি রান্না ঘরে ইলিশ মাছ ভাজছে । সুগন্ধ সারা বাড়ি ছেয়ে গেছে । সুবাসেই বলে দিচ্ছে মাছটা খুব স্বাধ হবে খেতে !
আমি আর একটা জিনিস খ্যাল করলাম, নিশি আজ স্কার্ট পরেছে । কেমন হিন্দি সিনেমার টিনএজ নায়িকাদের মত লাগছে । আগে তো এই স্কার্ট একদম পরতে চাইতো না ।
হানিমুনে ওনে নিয়ে গোয়াতে গেছিলাম । এখান থেকেই কেনা স্কার্ট টা । আমি যখন ওকে স্কার্ট টা কিনতে বললাম ও যেন আকাশ থেকে পরলো । বলল
-এই জিনিস আমি পরবো ?
-কেন সমস্যা কি?
-সমস্যা কি মানে? আপু আমি দেশের মেয়েরা এমন পোষাক পরে না ।
-কে বলছে ? এখন তো অনেকেই পরে
-আচ্ছা ইদানিং মেয়েদের পোষাকের দিকে খুব লক্ষ্য করা হচ্ছে !! তাই না?
এই জন্য মেয়েদের সামনে কিছু বলার উপায় নাই । কোন কথা কোন দিক দিয়ে ঢরবে ঠিক নাই ।
আমি বললাম
-আরে আশ্চর্য ! কিসের ভিতর কি কথা ! এইটা নাও ! তোমাকে ভাল মানাবে !
-জি না ! আমি এ জিনিস পরবো না । এ পোষাকে আমি বাইরে যেতে পারবো না ।
-আচ্ছা তোমাকে বাইরে যেতে হবে না । আমি যখন বাসায় থাকবো তখ ন কেবল পরবে ।
-জি না ।
ও রাজি না হলেও আমি ইচ্চা করেই কিনেছিলাম । আগে পরতো না । কিন্তু এখন দেখি প্রায়ই পরে । যখন আমি বাসায় থাকি । বিশেষ করে ঐ ঘটনা পর থেকে আমার সব পছন্দের কাজ গুলোও এখক কেবল নিশি করে এখন । সব সময় কেমন যেন আমাকে খুশি করার চেষ্টা ।
আরে আমি কথা কেন ভাবছি । আমি না ওকে বকা দিতে এসেছিলাম ।
আমি ডাক দিলাম
-নিশি !!
-হুম !
আমার দিকে চোখ না তুলেই ও বলল কথা টা । মাছ ভাজাতেই ব্যস্ত !!
আর একটু কঠিন স্বরে বললাম
-নিশি ! কি করছো ?
-মাছ ভাজছি ! দেখতে পারছো না ?
-মাছ ভাজছো বুঝলাম । কিন্তু রান্না ঘরে কেন ?
নিশি এবার আমার দিকে তাকালো । এমন একটা ভাব করলো যেন আমি খুব বোকার মত একটা প্রশ্ন করে ফেলেছি ।
-রান্না ঘরে ছাড়া আর কোথায় মাছ ভাজবো ? ড্রয়িং রুমে কেউ মাছ ভাজে ? শুনেছ এমন কথা ?
-তোমাকে আমি রান্না ঘরে যেতে মানা করি নি ? করেছি কি না বল ! তুমি তো বাচ্চা খুকি না ! একটা কথা বললে তো সেটা শুনবা নাকী !
নিশি অন্য দিকে তাকাল । নিশির এই একটা দোষ ওর সাথে কথা বললে বিশেষ করে ওকে বকা দেওয়ার সময় ও অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে ! ঠিক মত বকা দেওয়াও যায় না । আমি আবার বললাম
- কি ব্যাপার ওদিকে তাকিয়ে আছো কেন ? আমি কথা কানে যাচ্ছে না ?
নিশি এবার আমার দিকে তাকালো । বকা দিলে বাচ্চা মেয়েরা যেমন মুখ করে তেমন মুখ করে বলল
-আমাকে এভাবে বকছ কেন ? আর কয়টা দিনই তো ! তারপর তো আর তোমাকে মাছ ভাজি করে খাওয়াতে পারবো না !!
আমার বুকের ভিতরটা কেমন যেন হু হু করে উঠে ! কি কঠিন একটা কথা কত সহজ ভাবেই বলে ফেলল মেয়েটা ।
লাইন গুলোর প্রতিটা শব্দ যেন আমাকে চিৎকার করে বলছে যে তোমার প্রিয় মানুষটা তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে । তুমি কিছুউ করতে পারছো না । কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া !
না !! এই কথা আমি বিশ্বাস করি না । আমার নিশি আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না কিছুতেই ।
আমি নিশির দিকে এগিয়ে গিয়ে যাই । ওকে জড়িয়ে ধরি !!
তবুও কেন জানি বুকের তোলপাড় থামে না !! নিশি বলল
-আই এম সরি অপু । আমার এই কথাটা বলা উচিৎ হয় নি ।
-অবশ্যই উচিৎ হয় নি । তুমি কোথায় যাবে আমাকে ছেড়ে ! আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না !! কোথাও না !
আমি নিজেও জানি কথাটা সত্যি না । আমি ওকে আটকে রাখতে পারবো না । যে মরন ব্যাধি ওর শরীরে বাসা বেধেছে সেটা ওকে আমার থেকে দুরে নিয়েই যাবেই !!
নিশি বলল
-এই ছাড়ো ! ছাড়ো ! মাছ পুড়ে যাচ্ছে !!
আবার মাছ !!
এই মাছের গায়ে আমি আগুন ধরিয়ে দিতে পারতাম !
আমার বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিশি মাছ ভাজায় মন দিল । আমি ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম
-তোমাকে না ডাক্তার আগুনের সামনে আসতে মানা করেছে ! তুমি কেন শুন না ?
-আরে বাবু কিছু হবে না ! তুমি বুঝ না তোমার জন্য এই কাজ গুলো করতে পারলে আমার কি পরিমান ভাল লাগে !! যাওায়র আগে এই আনন্দ থেকে আমাকে বঞ্চিত কর না প্লিজ !
-আবার ??
-আচ্ছা বাবু !! আর বলবো না । এখন বসার ঘরে গিয়ে বস ! আমি মাছ ভাজি নিয়ে আসছি ! যাও ......
আমি কিছুই করতে পারি না । কেবল দিন গুনি । যতটা দিন পার হয় আমার মনটা ততই উতলাই হয় । অফিস যাই না । যেতে ভাল লাগে না । ইচ্ছে হয় সারাক্ষন কেবল নিশির পাশেই থাকি । ওর সব কথা শুনি ।প্রতিটা হাসি নয়ন ভরে দেখি !! ওর সব ইচ্ছা পুরন করি । রাতের বেলা নিশিকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই । কিছুতেই ও হারিয়ে না যা্য
বেটা ফাজিল জ্বিনটা আবার এসেছে । আমি ওটাকে কে চলে যেতে বললাম । বেটা তবুও গেল না । বলল
-আপনার হুকুম না পালন করলে আমি মুক্তি পাবো না ।
-আমি তো তোমাকে হুকুম দিয়েছিই । ঐটা পালন কর ।
জ্বিন বেটা মাথা নিচু করে রাখে !!
-আমি এই হুকুম পুরন করতে পারবো না মালিক । আমাকে অন্য হুকুম দেন
-দুরে গিয়া মর বেটা । আমার অন্য হুকুমের দরকার নাই ।
আমি মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকি । বেটা আমার পাশে এসে বসে ।
দুজনই বসে থাকি চুপচাপ !!
একসময় জ্বিন বলল
-পৃথিবীতে ভালবাসা উপেক্ষা করা খুব কঠিন একটা কাজ । যে কেউ এই কাজ পারবে না । নিশিও পারবে না !!
কেন জানি আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে ! আমি নিজেকে এতো দিন খুব ভাল করে শাসন করে রেখে ছিলাম যে কাঁদবো না কিছুতেই । আমার চোখে পানি দেখলে নিশিও যেন কেমন হয়ে যায় !! আমার সাথে রাগ করে ! কথা বলে না ।
গাল ফুলিয়ে বলে
-তোমার সাথে কথা নাই ! আামি ভাল থাকি তা তুমি চাও না, আমি কাঁদলেই তো তুমি খুশি হও !
আমি ভেবে পাই না । এই কথা কেন বলে । কারন জানতে চাইলে বলে
-তাহলে তুমি কেন কাঁদো ? আমি কেমন করে নিজের ধরে রাখবো যখন তোমার কন্না দেখবো ।
সেদিন থেকে ওর সামনে কান্না বন্ধ ! কিন্তু এখন এই জ্বিনাটর কথা শুনে কেন জানি আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না । তবে এটা দঃখের না আনন্দের কান্না !!
ঘুম ভেঙ্গে দেখি সত্যি আমার চোখে জল । নিশি আমার বুকে মাথা রেখে কি আরাম করেই না ঘুমাচ্ছে ! আমি তাকিয়ে থাকি !! আমার চোখে দিয়ে জল পড়তেই থাকে !!