তিথি কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকালো ! পুরো ক্লাসটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা ! অল্প কয়েকজন ছেলে মেয়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আসে !
আজ কি তাহলে ক্লাস হবে না ?
তিথির একটু চিন্তা হতে লাগলো । অপুকি তাহলে চলে গেছে ! অপুর এই অভ্যাসটা খুব আছে ! ক্লাস না হলে সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাস থেকে হাওয়া ! ার ধারে কাছে আসবে না । কত নাকি কাজ থাকে ওর !!
ক্লাস না হলেও কত মানুষ বসে আড্ডা দেয় । কত কথা বলে ! তিথির খুব ইচ্ছা করে অপুর সাথে এমন করে সময় কাটাতে । কিন্তু গাধাটা যদি একটুও বোঝে ??
তিথি একজন কে জিজ্ঞেস করলো ক্লাস হবে কি না । যে উত্তরটা শুনতে চাইছিলনা ঠিক সেটাই শুনতে হল ! ডিপার্টমেন্টের জহির স্যার নাকি এক্সসিডিং করেছে । তাই ক্লাস ক্যানসেল করা হয়েছে ।
তিথির মনটা খারাপ হয়ে গেল । অপু নিশ্চই চলে গেছে ! আজ আর দেখা হবে না ওর সাথে !! একটা দিন ওর সাথে দেখা হবে না এটা ভাবতেই তিথির কান্না আসতে লাগলো ! এই একটা দোষটা তিথির খুব আছে । খুব অল্প বিষয় নিয়েই তিথি কান্না চলে আসে । আর কান্না আসলে তিথি কিছুতেই কান্না আটকাতে পারে না ।
এতো বড় মেয়ে হয়ে গেছে তবুও এই ব্যাপারটা ওর গেল না ।
এনফ্যাক্ট এই কান্নার জন্যই অপুর সাথে এর পরিচয় হয়েছে । তিথির এখনও সেদিনটার কথা খুব ভাল করে মনে পড়ে !
ফার্ষ্ট ইয়ারের প্রথম দিন ছিল । প্রথম ক্লাস ছিল । স্যার সবার নাম পরিচয় শুনছিল । তিথির কাছে আসতেই তিথি কেন জানি খুব নার্ভাস হয়ে গেল ! কিছুতেই এতোগুলো মানুষের সামনে কথা বলতে পারছিল না । ওর এই অবস্থা দেখে অনেকেই হেসে উঠল । এটা দেখে তিথি আো নার্ভাস হয়ে গেল । কোন রকম নাম আর জেলার নাম বলল । হঠাৎ কে যেন ওর জেলা নিয়ে একটা কটু মন্তব্য করলো । সবাই এটা শুনে হো হো করে হেসে উঠল ।
কিন্তু তিথির চোখে ততক্ষনে পানি চলে এসেছে ! এতো গুলো মানুষের সামনে একটা ১৯ বছরের মেয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল ।
ষ্সবাইকে ধমক দিলেও খুব একটা কাজ হল না । তিথিকে বসতে বলে তিনি অন্য প্রশঙ্গে চলে গেলেন ।
ক্লাস শেষে সবাই যখন বের হয়ে যাচ্ছিল তিথি বসেই ছিল !
একটা ছেলে ওর সামনে এসে দাড়ালো ! তিথির চোকখ তখনও ভেজা ! চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে একটা ফর্সা মত চশমা পড়া ছেলে এর সামনে দাড়িয়ে । মুখটাতে খানিকটা অপরাধির ভাব ! ছেলেটা বলল
-আই এম সরি ! আমি আসলে বুঝতে পারি নি যে তুমি জোকটা সহজ ভাবে নিতে পারবে না । আমি সত্যি খুব সরি !
ছেলেটা মুখ দেখে তিথি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো । কোন রকম বলল
-ঠিক আছে !
-যাক ! এপোলজি গ্রান্ট করলে ! হাই আমি অপু । তুমি তিথি ?
তিথি কেবল মাথা ঝাকালো .।
তিথি আর দাড়ালো না ওখানে । এখন ওকে বাধরুমে যেতে হবে ! এতো গুলো মনুষের সামনে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদা মোটেই ভাল হবে না ।
অপুর সাথে এমন না দেখা হওয়াটা প্রায়ই হয় । তখন তিথির প্রায়ই হয় । কিন্তু আজকে কান্নাটা আসার আরো একটা কারন আছে !
সকাল বেলা আজ তিথি নিজ হাতে অপুর জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছে । বেচারা হলে থাকে ! ঠিক মত বাসায় যায় না । কি খায় না খায় ! তিথির খুব মায়া লাগে । খুব ইচ্ছা করে নিজ হাতে যত্ন করে ওকে কিছু খাওয়াতে !!
মাস খানেক আগে অপুকে একবার অপুকে তিথি ওর মামার বাড়ি দাওয়াত দিয়েছিল ।
মামার বাড়িতেই থেকে পড়াশুনা করে ! মামা ঐদিন বাড়িতে ছিল না । মামীকে বলল
-মামী আমার একটা বন্ধুকে কাল দাওয়াত দিবো দুপুরে খাওয়ার জন্য?
মামীর সাথে ওর ভাল সম্পর্ক তবুও খানিকটা সংকচ হচ্ছিল !
মামী একটা হেসে বলল
-ছেলে বন্ধু !
তিথি খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল
-হ্যা মামী ! মামাকে বলবা না তো ? মামা জানলে আব্বা কে বলে দিবে ! প্লিজ মামী !
-আচ্ছা আমি কি মানা করেছি নাকি ! কিন্তু সাবধান ! তোর মামা জানলে কিন্তু খবর আছে !
পরদিনই অপু এসে হাজির । অপু যখন খাচ্ছিল তিথি কেবল তাকিয়েই ছিল একভাবে ! এতো ভাল লাগছিল দৃশ্যটা দেখতে আর কিছু ভাবছিল না । কেবল মনে হচ্ছিল যে এমন ভাবে যদি সারা জীবন অপুকে খাওয়াতে পারতো !! তিথির চোখে বারবার পানি আসছিল ।
অপু চলে যাওায়র পর তিথির মামী বলল
-তুই ওকে ভালবাসিস, তাই না?
তিথি মিথ্যা বলতে পারে নি । স্বীকার করেছিল ।
-বলেছিস ওকে ?
-না !
-কেন?
তিথি চুপ করে থাকলো ! মামী আর জনতে চাইলো না । কারনটা তিনি ভাল করেই জানেন ।
তার এই ভাগনীটার মনটা অসম্ভব ভাল । কিন্তু সে দেখতে খুব একটা ভাল না ! ছেলেরা যে সব দেখ একটা মেয়েকে পছন্দ করে তার কোন গুনই তিথির ভিতর নাই । এরকম মেয়ে কেবল ভাল বন্ধু হতে পারে ! ভাল প্রেমিকা না !
তিথি আরো জোরে পা চালালো । চোখ দিয়ে পানি বের হওয়ার আগেই ওকে বাথরুমে ঢুকতে হবে !!
এইতো টয়লেট !
তিথি দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে ঠিক এমন সময় ওর হাত চেপে ধরলো কে যেন !!
ফিরে তাকিয়ে দেখে অপু !!
তিথি প্রথমে বুঝতে পারলো না কি করবে !
ঠিক তখনই টুপ করে ওর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো !
অপু বলল
-কিরে কতক্ষন ধরে ডাকছি ! শুনিস না ? আর এটা ছেলেদের টয়লেট এখানে ঢুকছিস কেন ?
সত্যিতো এটা তো ছেলেদের টয়লেটই !!
-আর কাঁদছিস কেন ? তোকে নিয়ে আর পারা গেল না । তুই এমন ফ্যাসফ্যাস করে কেন যে কাঁদিস !!
তিথি কোন কথাই বলতে পারলো না । কিছুক্ষন কেবল তাকিয়েই রইলো অপুর দিকে !
অপু আবার বলল
-কি হল এভাবে হাবার মত তাকিয়ে আছিস ক্যান? চল এখান থেকে ! নাকি বাথরুমে যাবি ?
-বাথরুমে যাবো না ।
-তাহলে এর মধ্যে যাচ্ছিলি কেন !
আরো কিছু বলতে গিয়ে অপু থেমে গেল । কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো !
তারপর বলল
-আমাকে খুজছিলি?
তিথি কেবল মাথা নাড়লো !
-তোকে নিয়ে আসলেই পারা যাবে না । তুই কি বাচ্চা মেয়ে নাকি ?
তিথি কোন কথা বলে না । কেবল চেয়ে থাকে অপুর দিকে !!
তিথির নিজের ব্যাপারটা ভালই লাগে যখন অপু ওকে বকা দেয় ! কেমন একটা আপন আপন লাগে !
-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ? চল এখন !!
-অপু !
-হুম !
-তোর জন্য কিছু এনেছি আমি !
-কি? কি এনেছিস ?
-আয় আামর সাথে !
তিথি অপুর হাত টা ধরে কমন রুমের দিকে নিয়ে গেল । এখন ক্লাস আওয়ার । কমন রুম ফাঁকা পাবার কথা !
মোটামুটি ফাকাই ছিল । ওরা শেষের দিকে বসলো !
ব্যাগ থেকে টিফিন বাটি টা বের করে অপুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-আমি নিজে হাতে রান্না করেছি !
-তাই নাকি ! খেয়ে বেচে থাকব তো?
-অপু........
অপু খুব তৃপ্তি নিয়েই খাচ্ছিল । আর তিথি সে তৃপ্তি নিয়ে দেখছিল । মনে মনে কেবল বলল "তুই কি একটুও বুঝিস না তোকে কত টুকু ভালবাসি.....।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১১