নিশি কথাটা আবার বলল । মেজাজটা এমনিতেই খারাপ ছিল নিশির কথাটা শুনে আরো একটু বেশি খারাপ হয়ে গেল । বললাম
-তুমি বড় বেশি কথা বল । একবার বললাম না বলতে ইচ্ছে করছে না তবুও শুনতে চাচ্ছ কেন ?
আমি জানি নিশি এই কথায় শান্ত হবে না । আবার জানতে চাইবে । আমি ওকে আরো কঠিন একটা ধমক দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই ।
-বললে কি হবে ? সব তো ঠিক ছিল । সুমন আর ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার পর থেকেই কেমন গম্ভীর হয়ে গেলে । বল না কি হয়েছে ?
সুমনের গার্লফ্রেন্ড এই শব্দটা শুনে সত্যিই মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেল । নিশি কে বলল
-এতো প্রশ্নের জবাব আমি তোমাকে দিবো না । তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড না ! আমরা কমিটেড না যে সব কিছু শেয়ার করতে হবে ! চুপচাপ বসে থাকবা তা না হলে সামনে থেকে দুর হয়ে যাবা ।
নিশি আমার ধমক শুনে মন খারাপ করলো । অন্য সময় হলে আমার মনটা নরম হয়ে আসতো । ওকে সরি বলে আবার কথা বলা শুরু করতাম কিন্তু এখন মাথাটা গরম হয়ে আছে ।
-একটু বল না ?
নিশি আবার অনুনয় করলো ।
দুর !!
এই প্যানপ্যান করা মেয়েকে নিয়ে আর পারা যাবে না । রিক্সায়ালাকে থামতে বললাম ।
-মাহিব শোন প্লিজ ।
-চুপ একটা কথা না । রিক্সা করে সোজা হলে যাবা । আর এক সপ্তাহ আমার ধারে কাছে আসবা না খবরদার ।
নিশির চোখে এইবার পানি দেখলাম । মেয়েটার যদিও কোন দোষ নাই তবুও এখন এসব কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না । মাথার মধ্যে কেবলই সুমনের গার্লফ্রেন্ডের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে ।
সুমনের গার্লফ্রেন্ড !
সুমনের গার্লফ্রেন্ড অরিন ।
কদিন থেকেই সুমন বন্ধু মহলে খুব হইচই করছিল । আমাদের যে ফ্রেন্ড সার্কেল টা আছে তার মধ্যে কেবল সুমনেরই কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না । আমারও অবশ্য নেই । কিন্তু বন্ধুদের সবাই নিশি আর আমাকে কাপল মনে করে ।
যা হোক সুমন কত সপ্তাহে এসে বলল যে সে একজনের সাথে রিলেশন করেছে । আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে । সেই সুবাদেই আজ দেখা হওয়া ।
কিন্তু যখন আড্ডায় সুমন তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে হাজির হল আমি কেবল নাই হয়ে গেলাম মেয়েটা কে দেখে !
একে বারে নাই !
সবার আগে আমার সাথেই পরিচয় করিয়ে দিল ।
-এ হচ্ছে আমার সব চেয়ে কাছের বন্ধু মাহিব ।
আমি যেমন অরিনকে দেখে চমকে গিয়েছিলাম অরিনের চোখ দেখে মনে হল ও ঠিক একই ভাবে চমকে গিয়েছে আমাকে দেখে ।
কিন্তু দ্রুত সামলে নিল নিজে কে । একটু হেসে বলল
-হ্যালো ভাইয়া ।
আহ ।
সেই কন্ঠস্বর !
সেই হাসি !
এতোদিন পরেও হাসিটা চিরোচেনাই মনে হল ।
অরিন স্বাভাবিক আচরন করলেও আমি কেন জানি স্বাভাবিক থাকতে পারছিলাম না । কাজ আছে এই অজুহাতে চলে এলাম আড্ডা থেকে । আর আমি চলে আসলে নিশিতো আসবেই আমার পিছন পিছন ।
সকাল সকালই আজ শুয়ে পড়লাম । অন্যদিন একটা দুইটার আগে কখনই ঘুমাই না কিন্তু আজ কিছুই ভাল লাগছিল না । বারবার কেবল পুরনো কথা গুলোই মনে পড়ছিল । তখন সবে মাত্র সিগারেট খেতে শিখেছি । কিন্তু নিজ এলাকায় সিগারেট খাওয়ার মত এতোটা দুঃসাহস তখনও হয়ে ওঠে নি ।
বাবা সম্মানীয় ব্যাক্তি ছিল । আমাকে কেউ সিগারেট খেতে দেখলেই রিপোর্ট সোজাসুজি বাসায় পৌছে যেত । তাই সিগারেট খেতে হলে পাশের এলাকায়ে যেতাম প্রায় । ওখানে আমার বন্ধুও ছিল কয়েক জন । একদিন সিগারেট খেতে গিয়ে দেখি প্যাকেট খালি । তখনও বন্ধুদের কেউ আসে নি । ভাবলাম ওদের আসার আগেই আমি কিনে এনে টানতে থাকি । তারপর না ওরা আসলে ওদের কাছ থেকে নেওয়া যাবে ।
কাছেরই একটা মুদি দোকানে গিয়ে উকিঝুকি দিতে লাগলাম কিন্তু দোকান খালি । কোন লোক নাই । চলে আসবো বলে ঘুরেছি ঠিক তখনই পিছন থেকে চিকন সুরে কেউ বলে উঠল
-ভাইয়া কি লাগবে ?
যাক এতোক্ষনে দোকানদার এলো !! দোকানদারের উপর খানিকটা বিরক্ত লাগলই এতো সময় দোকান ফাকা রেখে কোথায় ছিল !!
আমি ঘুরে দাড়াতেই স্তদ্ধ হয়ে গেলাম । আমি তখন ঠিক মনে পড়ল না এমন মিষ্টি চেহারা আমি আর কোন দিন দেখেছি কিনা ।
কিছুক্ষন একভাবে তাকিয়েই কেবল রইলাম মেয়েটার দিকে ।
-ভাইয়া কি লাগবে ?
মেয়েটি আবার জানতে চাইল ।
-হুম ?
আমি বাস্তবে ফিরে এলাম ।
-কিছু নিবেন ভাইয়া ?
হুম! নিবো মানে তোমার মনটা নিবো । আমি জানি না এই অনুভূতির নাম কি তবে এই টুকু নিশ্চিত যে প্রথম দেখাতেই মেয়েটাকে আমার ভাল লেগে গেল ।
খুব বেশি ভাল লেগে গেল ।
আমি হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমার বুকের ভিতরটা খুব বেশি পরিমান লাফাচ্ছে । আমার হাটুর নিচে কেমন একটা কেমন একটা দুর্বল ভাব অনুভব করলাম ।
আমি কোন রকম বললাম সিগারেট দেওয়ার জন্য ।
মেয়েটি সিগারেটের প্যাকেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিতে বলল
-আমি বুঝি না আপনারা ছেলেরা কেন যে সিগারেট খান ? কি এমন আছে এর ভিতর ? এর থেকে জুস খেলেই পারেন ।
আমার মাথায় তখন আর কিছু নাই । কেবল মেয়েটার চেহারাটা ভাসছে ! আর মেয়েটার কথা গুলো ! কি মিষ্টি করেই না মেয়েটা কথা গুলো বলল !!
কি মেয়েটা সিগারেট পছন্দ করে না ?
মেয়েটা সিগারেট পছন্দ করে না !
আমি বললাম
-শুনুন ।
-জি ।
আমি সিগারেটের প্যাকেট টা ফেরৎ দিয়ে বললাম
-আমাকে এক প্যাকেট জুসই দিন ।
আমার কথা শুনে মেয়েটা একটু চমকালো । কিছু যেন বোঝার চেষ্টা করলো যে আমি ঠিক ওর সাথে ইয়ার্কী করছি কি না !!
একটু যেন খুশিও হল । একটা ছেলে কেবল তার এক কথাতেই সিগারেট ফেলে দিয়ে জুসের প্যাকেট নিল এটা খুশি হবার মতই কথা ।
আমি যখন প্যাকেট টা হাত দিয়ে নিতে গেলাম একটু যেন স্পর্শ লাগল মেয়েটার হাতের সাথে !
কি এক বিদ্যুৎ খেলে গেল আমার পুরো শরীর জুড়ে ।
আমি কেবল তাকিয়েই রইলাম মেয়েটার দিকে ।
ফিরে যাবার সময় যতবার ফিরে তাকালাম ততবারই দেখলাম মেয়েটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে ।
ফোন বাজছে ।
অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে আসতে হল । নিশির ফোন । একবার মনে হল ফোনটা না ধরি । কিন্তু ফোন ধরেও উপাই নাই । যতক্ষন না ফোন ধরবো নিশি বিরাম হীন ভাবে ফোন করেই যাবে । ফোনটা ধরলাম ।
-বল ।
-মন ভাল হয়েছে ?
-কি কারনে ফোন দিয়েছ বল ?
- মাহিব তোমার কি হয়েছে আমাকে বল প্লিজ । একবার বল !
-শোন তোমার সাথে এখন কথা বলতে ভাল লাগছে না ।
-আমি জানি কিছু একটা প্রবলেম হয়েছে । আমার সাথে শেয়ার কর । তোমার ভাল লাগবে ।
এবার আমার মেজাজ টা সত্যিই খারাপ হল ।
-শোন মেয়ে , একটা কথা তোমার কানে যায় না নাকি মাথায় ঢোকে না ? আমি তোমার সাথে এটা শেয়ার করতে চাই না ।
নিশি চুপ করে থাকলো । আমি নিশ্চিত এখন ও কাঁদবে । আমি বললাম
-দেখো আমার মেজাজটা এখন সত্যিই খারাপ । কি বলতে কি বলছি । তুমি আর এখন ফোন দিও না ।
এই বলে আমি ফোন রেখে দিলাম ।
ফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গে আবার ফোন বেজে উঠল । আমি ভাবলাম নিশি হযতো আবার ফোন কয়েছে । খুব বড় একটা ধকম দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম কিন্তু ফোন স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার ।
কে ফোন দিল ?
নিশির ফোন হবার সম্ভাবনা কম । আমি যতদুর জানি মেয়েটা এখন বালিশে মুখ লুকিয়ে অথবা বাধরুমে গিয়ে কাঁদবে ।
তাহলে ?
ফোন রিসিভ করলাম ।
-ইয়েস !
-মাহিব ! আমি ...
কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে গেলাম । মেয়েটির নাম বলার দরকার হল না । আমি কেবল অবাক হলাম এই ভেবে যে এতো গুলো দিন পার হয়ে যাওয়া সত্তেও মেয়েটির কন্ঠস্বর আমি ভূলি নি ।
আশ্চর্য !
ঐ দিনের পর আমার মনের শান্তি যেন সব উড়ে গেল । সারা দিন কেবল ঐ মুদি দোকানে দেখা হওয়া মেয়েটার কথাই ভাবতে লাগলাম । দুদিনের ভিতরেই মেয়েটার নাম পরিচয় সব খুজে বের করে ফেল্লাম ।
মেয়েটার নাম অরিন !
আমার বছর খানেকের জুনিয়র । আমি আর যেন নিজেকে ধরে রাখতেই পারছিলাম না । সারা দিন কেবল ঐ দোকানের আসে পাশেই ঘোরাঘুরি করি কিন্তু ঐ অরিনের দেখা আর পাই না । কেবল এক বুড়ো মত লোক কে দেখতে পাই দোকানে বসে আছে ।
তবে ভাগ্য খুব বেশিদিন বিপক্ষে থাকলো না । একদিন ওদের এলাকা থেকে আসছি দেখি আমার ঘুম হারাম করা মেয়েটি আমার এলাকার এক ছোট বোনের সাথে হেটে আসছে ।
আর দেরি না করে ঐ ছোট বোনকেই গুরু দায়িত্ব দিলাম । তারপর কদিন যে কি উত্কন্ঠায় কাটলো !!
তিন দিন পর আমার মোবাইলে এক আননোন নাম্বার থেকে ফোন এল । রাতের বেলা । সবে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়েছি । ফোনটা এল তখনই ।
-ইয়েস ! কে বলছেন ।
-মাহিব ভাইয়া বলছেন ? আমি ...
যদিও এখনও ফোনে আমি তার কন্ঠস্বর কোনদিন শুনিনি কিন্তু আমাকে বলে দিতে হল না যে কে ফোন দিয়েছে ।
নিজেকে সংযত করলাম ঐদিন কার পরস্থিতি আর আজকের পরিস্থিতি এক না । ঐদিন আমি যেরকম উচ্ছাসিত হয়েছিলাম আজ সেরকমটা হওয়া মানায় না । আমি বললাম
-কেন ফোন দিয়েছ ?
অরিন কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বলল
-তোমাকে আজ দেখে আমি আসলেই খুব অবাক হয়েছি জানো ? আমি কখনও ভাবি নি তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে যাবে ।
অরিনের কথা বলার ধরন দেখে আমি অবাক না পারলাম না । এমন একটা ভাব যেন কিছুই হয় নি ।
-তুমি কি এই কথা বলার জন্য আমাকে ফোন দিয়েছ ?
-না মানে ! কাল তোমার সাথে একটু দেখা করতে চাই ।
-তুমি চাইলেই যে আমি দেখা করবো এটা তুমি কিভাবে ভাবলে ?
-একবার দেখা করলে কি এমন হবে ? তোমার সাথে কয়টা কথা ছিল । তোমার বন্ধু সুমনের ব্যাপারে ।
-সুমনের ব্যাপারে ??
সুমনের ব্যাপারে কি কথা থাকতে পারে ? ব্যাটা সুমন একটা আস্ত গাধা । প্রেম করার আর মানুষ পাই নি জগতে ! অবশ্য সুমনকে দোষ দিয়ে আর লাভ কি ! আমি নিজেও তো একই ভুল করেছিলাম ।
ঐ দিনের কথার পরে থেকে অরিন ছাড়া যেন জীবনে আর কিছুই ছিল না । সকাল বিকাল যেতাম অরিনদের দোকানে । অরিন ঐ সময়টাতেই বসতো ।
আহা কথা বলতাম কত !!
ও যখন কলেজে যেত ওর যাওয়ার পথে কিংবা আসার পথে ! মাঝে মাঝে ও আসতো আমার কলেজের সামনে । দিন গুলো আসলেই ভাল কাটছিল । কিন্তু ভাল দিন খুব বেশি যায় না ।
একদিন আমার এক বন্ধু আমার মোবাইলে একটা ভিডিও ক্লিপ ট্রান্সফার করে বলল
-দেখ মামা একেবারে দেশি মাল ।
আমি ভিডিওটা ওপেন করে দেখলাম একটা কলেজের ড্রেস পরা একটা মেয়ে একটা ছেলে কে কিস করছে ।
মেয়েটাকে কেমন চেনা চেন .......
আমি মনের কথা মনেই রয়ে গেল । আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না । ক্লিপের মেয়েটা আর কেউ না আমার গার্লফ্রেন্ড অরিন । অরিনের সম্পর্কে আরো খোজ খবর নিয়ে যা কিছু জানতে পারলাম তা জানে আমি এবার সত্যি সত্যিই নাই হয়ে গেলাম ।
কেবল আমি তার একা বয়ফ্রেন্ড না আরো গোটা কয়েক বয়ফ্রেন্ড তার আছে ।
আর ...
আমি কিছু ভাবতে পারলাম না ।
অরিন আজ সাদা রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ পরেছে । স্বীকার করতে লজ্জা নেই যে অরিন আগের থেকে আসলেই আরো সুন্দর হয়েছে । যদি ওর আসল চেহারাটা আমি না জানতাম তাহলে হয়তো অরিনের দিক থেকে চোখ ফেরানো আমার পক্ষে সহজ হত না ।
কিন্তু ওর ভিতরটা এতো কুৎসিত যতটা ওর বাইরের রুপটা সুন্দর !
আরিন আমার সামনে এসে আমাকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখলো । তারপর বলল
-তুমি আগে থেকে আরো সুন্দর হয়েছে , জানো ?
-সুমনের কি কথা বলবা বল ।
অরিনের কোন কথা না বলে হাসলো ।
-মাহিব তোমার প্রতি আমার সব সময় একটা আলাদা টান ছিল জানো ?
-মানে ?
এই মেয়েটা কি বলতে চাইছে !!
-মানে তুমি একমাত্র ছেলে যে আমাকে উপেক্ষা করে চলে গিয়েছিলে । আর কোন ছেলে পারে নি । আমার সব কথা জানার পরও না । সবাই আমার পিছন পিছন ঘুরেছে । তোমার ঐ বন্ধু সুমনও ঘুরবে ! তাই ওকে আমার ব্যাপারে বলে কোন লাভ নাই । বুঝেছ ?
আমি ঠিক বুঝলাম না অরিন আসলে ঠিক কি বোঝাতে চাইছে । আমি তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে !
অরিন আবার বলল
-আমার আকর্ষন সে এড়াতে পারবে না । সে তো আর তুমি নও ! তবে আমি তোমার প্রতি হতাশ !
আমি আবার কিছু না বলে কেবল তাকিয়ে রইলাম অরিনের দিকে !
-আমি ভেবে পাই না তুমি নিশির মত একটা মেয়ের সাথে প্রেম করলে শেষ পর্যন্ত !
আমি অনুভব করলাম আমার বুকের ভিতয়ে কেমন একটা ক্রোধ বোধ হচ্ছে ।
-দেখতো তো একটুও ভাল না । আমার তুলনায় তো পেত্নী বলা চলে ।
আমার ভিতরটা যেন বিশ্ফোরন হল ।
এই বেশ্যার বেশ্যা বলছে কি ?
আমার পরীর মত নিশিকে বলছে ...........
এতো বড় সাহস !
আমার হাত শক্তই হয়ে ছিল সোজাসুজি অরিনের গালে কষে একটা চড় মারলাম ।
ক্লিপ দেখা আর অরিনের আসল কথা জানার পর নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারি নি । সোজাসুজি ওর কলেজে গিয়ে হাজির হলাম । ওকে কলেজের পিছনে ডেকে নিয়ে এসে ক্লিপ দেখালাম ।
ও কিছু না বলে মাথা নিচ করে দাড়িয়ে রইল কিছুক্ষন । আমার তখন রাগে সারা শরীর জ্বলছে ।
এই মেয়েকে আমি ভালবেসেছি এটা ভাবতেই আমার নিজের উপরেই রাগ হচ্ছিল । অরিন কিছু বলতে যাচ্ছিল আমি আর সহ্য করতে পারলাম না । অরিনের গালে পরপর দুটো চড় মেরে ওখান থেকে চলে আসলাম । আমি আর কিছু ভাবতেই পারছিলাম না ।
আমার পুরো পৃথিবী যেন ধ্বংশ হয়ে গেছে । এতো বিশ্বাস করে যাকে ভালবাসলাম সে এমন বের হল ।
সেদিন অরিনকে যে ভাবে চড় মেরেছিলাম আজ তার থেকে বেশি জোরে মেরেছি । আসলেই কিছুটা জোরেই মেরেছি । নিজের হাতটা কেমন ব্যাথা করতে লাগল ।
অরিন কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়েই রইলো । চোখে খানিকটা যেন অবিশ্বাস !
-তোর মত একটা মেয়ের সাথে নিশির তুলনা চলে না । আর একবার ওকে একটা বাজে কথা বলেছিস তো একেবারে মাটির নিচে পুতে ফেলবো ।
আমি আর দাড়ালাম না ওখানে । আসলে এতো দিন পর নিশির প্রতি টান টা আমি বুঝতে পারলাম । ওর ব্যাপারে একটা বাজে কথা আমার সহ্য হল না ।
অরিন কে এই ব্যাপারে একটু ধন্যবাদ দিতেই হয় । তা না হলে ঠিক বুঝতে পারতাম ওর প্রতি আমার ফিলিংসটা কেমন !
ইস!! বেচারীকে খামোখা কত কষ্টই না দিয়েছি ।
ওকে একটা ফোন দেই ।
-হ্যালো ।
এতো দিন ফোন করলেই নিলি আমাকে আগে জিজ্ঞেস করতো যে মন ভালো ? আজ আমি বললাম
-মন ভালো তোমার ?
কিছুক্ষন নিরবতা ! আমি আবার বললাম
-কি মন ভাল তোমার ?
-হ্যা ।
নিশির কন্ঠে কেমন একটা উচ্ছাস ।
-খুব ভাল ।
আমি বললাম
-আজ বিকালে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে ?
-বিকালে ? আমি এখন আসি ?
না এখন আসতে হবে না । বিকালে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
-আর ঐ নীল রংয়ে চুড়িদার পরে এসো ! আর সম্ভব হলে মেহেদী দিও হাতে ! সম্ভব !!
নিশি বলল
-খুব সম্ভব !!
আমি আর কিছু বললাম না । কিছুটা কৌতুহল বিকেলের জন্য বাকী থাকুক ! নিশি নিশ্চই খুব খুশি হবে ! ও অলরেডি কত খানি খুশি এটা আমি ওর কন্ঠস্বর শুনেই আমি বুঝতে পারছিলাম !
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম যে নিশিকে বিনা কারনে কষ্ট দিবো না ! আর সব থেকে বড় কথা সুমন গাধা টাকে আগে থেকে সাবধান করতে হবে !!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৩