কেবল চায়ের কাপটা দুহাত দিয়ে এমন ভাবে ধরে যে খুব মূন্যবান কিছু ! তারপর অল্প অল্প করে চায়ের কাপে চুমুক দিবে ! একবার চুমুক দেওয়ার পর কয়েক সেকেন্ড বিরতি তারপর আবার !
ডিবি অফিসের সামনে যে চায়ের দোকানটা আছে সেখানে বসার কোন ব্যবস্থা নাই ! লোকজন দাড়িয়েই চা খায় !
আমি আর নিহিন চায়ের দোকানের ফুটপাতের উপর বসে আছি ! বসে বসে চা খাচ্ছি ! একটু আগে নিহিনের মুখটা কেমন অন্ধকার ছিল তা এখন পুরোপুরি কেটে গেছে ! নিহিন আনন্দের সাথে চা খাচ্ছে ! আর আমি তাইয়ে আছি ওর দিকে ! কেন জানি ওর চা খাওয়া দেখতে বেশ ভাল লাগছে ! নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-খাচ্ছ না কেন ?
-তোমার চা খাওয়া দেখছি !
-তোমরা ছেলেরা এমন ঢং করতে জানো না?
-কেন এই কথা কেন বললা ?
-কেন বললাম বুঝলা না ? কাল রাতে তুমি আমার সাথে কেমন আচরন করেছ তোআমর মনে আছে ? আর এখন এমন ভাব করছো যে আমার কত ভালবাসো !
নিহিনের কথায় খানিকটা কষ্ট লাগলো ! আজ এই অপ্রিয় প্রসঙ্গটা ও অনেক বার তুলেছে ! ইচ্ছে করেই তুলেছে !
অবশ্য ওকে দোষ দেওয়া যায় না !
ঐদিনকার পর নিহিনের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব দ্রুতই ভাল হয়ে উঠল ! আমি যেমন আগেই উপলব্ধি করেছিলাম যে নিহিনের প্রেমে পড়েছি, কদিন পর আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম নিহিন নিজেও আামর উপর দুর্বল হতে শুরু করেছে ! ওর আচরনে সেটা স্পষ্ট ধরা পড়তে শুরু করলো ! একদিনতো হঠাৎ করে ও বলেই ফেলল ।
আামদের ঘোড়াঘুড়ির মেইন স্পট ছিল এই মিন্টু রোডটাই ! প্রা্ই প্রতিদিন আমরা এখানে আসতাম । টিউশনীর পরে অথবা আগে ! ঐদিন টিউশনী ছিল না । তাই পুরো বিকেলটাই আমাদের ছিল । হাটছিলা আর গল্প করছিলাম ! হাটতে হাটতে ডিবি অফিসের সামনে চলে এলাম । এখনে বড় করে সাইনবোর্ডে লেখা আপনার পরিচয় দিন । সাইনবোর্ডটার সামনে আসতেই নিহিন হঠাৎ করে একটা কাজ করে ফেলল ! যে পুলিশটা গেটের কাছে দাড়িয়ে ছিল তাকে সরাসরি বলল
-আামর নাম নিহিন । সাদিয়া আফসান নিহিন ! তারপর আমাকে আমাকে দেখিয়ে বলল
-ও আমার বয়ফ্রেন্ড । ওর নাম অপু ! অপু তানভীর ।
একথা বলেই নিহিন আমার দিকে ঘুরে চলে এল ।
এভাবে হঠাৎ করেই কোন মেয়ে যদি কাউকে তার নাম বলে যে কেউ অবাক হবে ! ঐ পুলিশ লোকটাও অবাকে হল । তার থেকে বেশি অবাক হলাম আমি । এমনটা কেউ করে নাকি ! আমার কাছে আসতেই বললাম
-এটা কি করলে ?
নিহিন হেসে বলল
- দেখছো না লেখা আছে আপনার পরিচয় দিন ! তাই আমার তোমার পরচয় দিয়ে এলাম ।
আমি খানিকটা চমকালাম নিহিনের কথা শুনে ।
মেয়েটা বলল কি ?
বয়ফ্রেন্ড ?
নাকি আমি ভুল শুনলাম ? আমি নিহিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি বললে তুমি ?
-কি বললাম ?
নিহিন হাসল কেবল ।
-একটু ফান করলাম ।
-না ফান করলে ঠিক কিন্তু কি বললে ? ঐ পুলিশটাকে কি বললে ?
-আমি আমার পরিচয় দিলাম ।
-আর আমাকে কি বললে ?
-অপু !
-তার আগে কি বললে ?
নিহিন এইবার কেমন একটা মিশকি হাসি দিলো । তারপর বলল
-কেন তোমার ভাল লাগে নি কথাটা শুনে ?
আমি চট করেই কিছু বলতে পারলাম না । কেবল নিহিনেয় দিকে তাকিয়ে রইলাম । নিহিন আমার হাতটা ধরে বলল
-জানো কোথা থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝলাম না । কিভাবে তোমাকে ভাল লাগতে শুরু হল তাও বুঝলাম না । কেবল মনে হল তুমি আপন কেউ !
নিহিন চা খাওয়া বন্ধ করে আমার দিকে তাকাল । চায়ের কাপটা আমার দিকে বাড়িয়ে বলল
-তোমার কাপ দাও ।
আমার তখনও অর্ধেক চা খাওয়া বাকী । নিহিন এই পাগলামোটা প্রায়ই করে । আমার খাওয়া চায়ের কাপে চুমুক দিতে নাকি ওর অনেক ভাল লাগে ।
ঐ দিনের পর নিহিনের সাথে যোগাযোগ বেড়ে গেল আরো বহুগুনে । আগে তো টিউশনীতে যাওয়ার আগে কিংবা পরে দেখা হত । ঐ দিনের পর আগেও দেখা করতে হত আবার পরেও দেখা করতে হত !
ঘটনাটা গত পরশু দিনের । নিহিনের সাথে কথা বলে টিউশনীতে ঢুকেছি । পড়াচ্ছিলাম ঠিক এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল । আমার বেশি পাত্তা দেবার কথা নয় অনেকেই তো আসতে পারে কিন্তু বাড়ির কাজের মহিলাটা যখন দরজা খুলে দিল আমি ধাক্কার মত খেলাম ।
নিহিন ?
নিহিন !
আমি যে ঘরটাতে বসে পড়াই সদর দরজা থেকে সেটা খুব ভাল করে দেখা যায় । নিহিন সরাসরি এই ঘরেই এসে হাজির ।
-তুমি এখানে ?
স্টুডেন্টের সামনে কেমন একটা অস্বস্তি লাগছিল । কিন্তু নিহিনকে দেখলাম একদম স্বাভাবিক । বলল
-তুমি এতো দেরি কেন করছো ? তাই চলে এলাম ।
তারপর নিহিন যা করলো তা দেখে আমার অস্বস্তির সীমা থাকলো না । সামনে চায়ের পেয়ালা ছিল । স্টুডেন্টের বাসায় রেগুলার চা আর কি ! নিহিন আমার স্টুডেন্টের সামনেই ঐ চায়ের কাপ তুলে চুমুক দিয়ে ফেলল ।
এই মেয়েটার কি সাধারন কমন সেন্স বলে কি কিছু নেই ? কার সামনে কি আচরন করা উচিত্ এটাও কি বোঝে না ।
আর কি কান্ড করে ফেলে ভেবে আর পড়ালাম না । নিহিনকে নিয়ে বের হয়ে এলাম ।
নিহিনের চা খাওয়া শেষ হয়েছে । আমাকে বলল
-তুমি সত্যি করে বলত কালকে তুমি ঐ কথাটা কেন বললে ? আমাকে কি তোমার আর ভাল লাগছে না ?
-ছিঃ এসব কি ধরনের কথা ? তুমি জানো তোমাকে আমি কি পরিমান পছন্দ করি ।
-তাহলে কেন বললে বল ? আমি শুনতে চাই ।
আমি ভেবেছিলাম আন্টি নিহিনের ব্যাপারটা কিছু মনে করবে না । কিন্তু পরদিন আন্টি আমাকে ফোন করে আসতে বলল । আমার পড়ানো ছিল না । আমি ভেবেছিলাম অন্য কিছু বলবে হয়তো ! কিন্তু নিহিনের ব্যাপারটা নিয়ে কথা তুলল ! আমাকে খুব পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দিল যে আমার অবস্থান টা কোথায় আর নিহিন কোথায় !!
তার সাথে এই ইঙ্গিতও দিল যে আমি যদি এটা বদলাই তাহলে হুতো আমার আর এখনে টিউশনি করানো হবে না ! মোটামুটি আমার খরচের অর্ধেকটা আসে এখান থেকে । যদি এই টিউশনীটা হাত ছাড়া হয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে কে জানে ??
আমি আন্টিকে আচ্ছা বলে নিচে নেমে এলাম । মেইন গেট দিয়ে বের হচ্ছিলাম দেখলাম নিহিনের গাড়ি ঢুকছে !!
আমার তখন আন্টির কথাটা কেন জানি ঠিক মনে হল ।
নিহিন ওর আই ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই আমাকে লক্ষ্য করে নি !
সত্যি ওর অবস্থান আর আমার অবস্থান কত পার্থক্য !!
ওর হাতে আইফোন আর আমার হাতে চাইনিজ মাইফোন !! ও যেখানে ল্যান্ডক্রুজারে চড়ে আমি সেখানে চড়ি মেগাসিটি বাসে...
আমি কি ভেবে নিহিনকে ভালবাসলাম !!
আশ্চর্য !!
রাতে নিহিন ফোন দিছিল আমি ওর সাথে মোটামুটি খারাপ ব্যবহারই করলাম ! সরাসরি বললাম আমার সাথে আর যোগাযোগ না করতে !!
কিন্তু নিহিনের সামনে কথা গুলো কেন জানি বলতে পারলাম না ! নিহিন আবার বলল
-কই বল? কি কারন ? আমি জানতে চাই তুমি আমার সাথে কেন এমনটা করলে ?
-আমি আসলে............
-কি বল ।
আমি কোন কথা বলতে পারি না । কেবলই নিহিনের দিকে চেয়ে থাকি !!
এমনটা কে হয় ! আমি নিহিনকে হারাতে চাই না কিছুতেই ! কিন্তু ওকে পাবার স্বপ্নও আমার দেকতা সাহস হয় না ! বারবার মনে হয় আহা চলুক না যেমন চলছে ! যতদিন না যও হারিয়া যায় আমার কাছ থেকে ওর পাশাপাশি থাকি কিছুক্ষন....। এটাই বা কম কিসের…………..
নিহিন আর আমার গল্প