খানিকটা অস্বস্তি লাগছে কারন এটা মেয়েদের হোস্টেল । একটু তো অস্বস্তি লাগবেই । নিশির বের হবার কথা । কিন্তু ওর বের হবার নাম নাই।
ওকে নিয়ে নিউমার্কেটে যেতে হবে । বেচারী এক কাপড়ে চলে এসেছে । কিছু জামাকাপড় তো কিনে দিতে হবে ।
আমি আবার ঘড়ি দেখলাম । পনের মিনিটের বেশি দাড়িয়ে আছি । আশ্চর্য এই মেয়েগুলোর বের হতে এতো সময় লাগে কেন ? আমি অন্তত এক ঘন্টা আগে ফোন করে বলেছি যে আমি আসছি । এখানে এসে আরো পনের মিনিট দাড়িয়ে ! এর কোন মানে হয় ।
আবার ফোন দিতে যাবো ঠিক তখনই নিশি বের হয়ে এল । পেছনে লিজা ।
নিশি লিজার রুমেই উঠেছে ।
চারদিন আগে নিশি যখন ফোন করে বলল
ওর বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল ।
বলে কি এই মেয়ে ?
আমি কেবল বললাম
-তুমি ওখানে কবুল বলবা আর আমি এখানে ১০ তলা বিল্ডিংয়ের উপর থেকে লাফ মারবো ।
-আমি কি করবো বল?
-আমি জানি না তুমি কি করবা তবে তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে
পারবে না কিছুতেই । দাড়াও আমি আজ রাতেই বাসায় আসছি ।
-তোমাকে আসতে হবে না । আমি দেখি কি করা যায় ।
তারপর নিশি যা করল আমি তা কল্পনাই করি নি । করতে পারিও নি ।
নিশি একটা জব করে । বাসা থেকে বাসে করে খানিক দুরে যেতে হয় । নিশি ঐ দিন অফিস যাবার জন্য বাসে উঠল । তবে উঠল ঢাকার বাসে । বিকেল পর্যন্ত কেউ সন্দেহ করবে না । কারন সবাই ভাববে অফিসেই আছে ।
আর বিকেল হতে হতে ঢাকায় পৌছে যাবে । নিশিকে যখন মাজার রোডে নিতে গেলাম দেখলাম ওর চোখ গুলো কেমন ভেজা ভেজা ।
বাপ মা ছেড়ে কোনদিন যে মেয়েটা একটুও কোথায় যায় নি এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল একা একা !
সিএনজির মধ্যে অনেকক্ষন কাঁদল আমাকে জড়িয়ে ধরে । আমি কেবল ওকে জড়িয়েই ধরতে পারলাম । আর কিছু বলতে পারলাম না ।
লিজার সাথে আগে থেকেই কথা বলাই ছিল । সন্ধ্যার কিছু আগে লিজার হোস্টেলে দিয়ে এলাম । কয়টা দিন ওখানেই থাকুক । আমার বাসায় রাখা নিরাপদ না । যেকোন সময় ওর ভাই অথবা মামা চাচারা হানা দিতে পারে !
তবুও আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে নিশি একচুয়ালী চলে এসেছে । সব কিছুকে উপেক্ষা করে কেবল আমার জন্য চলে এসেছে ।
লিজা পেছন পেছন আসছিল । আমাকে বলল
-তোমার বউতো কেবল মুখ লুকিয়ে কাঁদে । যতই বোঝাই যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে , সে কিছুতেই বুঝতে চায় না ।
আমি নিশির দিকে তাকালাম । আসলেই ওর চোখ দুটো কেমন ফোলা ফোলা । আমি বললাম
-ঠিক আছে । আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে ।
লিজা চলে গেল ।
আমি নিশির দিকে একটু ভালকরে তাকালাম ।
আজ ও জিনস পরেছে । গত ঈদে ওকে জিনসটা কিনে দিয়েছিলাম । কিন্তু ও পরতে চাইতো না । বলত যে মফস্বলে এরকম পোষাক নাকি পরা যায় না । মানুষজন নাকি ভাল বলে না ।
আমি বললাম
-তোমাকে তো সুন্দর লাগছে জিনসে !
-কেন অন্য পোষাকে লাগে না ?
-আমার বউ বলে কথা । লাগবে না মানে ? তবে সবচেয়ে কোন পোষাকে তোমাকে সুন্দর লাগে জানো ?
নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । তারপর বলল
-শোন ফাজলামো করবা না !
-কেন করবো না ? আমি কি অন্য কারো সাথে ফাজলামো করছি ? আমার নিজের বিয়ে করা বউ তিন লক্ষ একটাকা দেনমোহরে বিয়ে করেছি ।
নিশি হাসল একটু । বলল
-যাও ঐ ওভারব্রীজটার উপরে দাড়িয়ে চিৎকার করে বল ।
সত্যি সত্যিই আমার আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে যে
তোমরা সবাই দেখো আমি এই মেয়েটাকে জয় করেছি । এই মেয়েটা শুধুই আমার । শুধুই আমার ।
গল্প ঠিক বলা যাবে না এটাকে ! আামর মনে একান্ত ইচ্ছা যে এমন একটা ঘটনা ঘটুক ! টিয়াপাখি সব কিছু ছেড়ে আমার কাছে চলে আসুক !
কিন্তু আমি জানি সে আসবে না । সে কখনই আসবে না ।
টিয়াপাখির জন্য একটা বিয়ের প্রপোজাল এসেছে কাল । ছেলে ডাক্তর !
মনের ভিতর কেন জানি শান্তি লাগছে না । কোন কিছু করেই শান্তি পাচ্ছি না । এবার বুঝি সে হারিয়েই চলে যাবে আমার জীবন থেকে !!
আমার সব কিছু বোধহয় এবার হারিয়ে যাবে
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৫৬