কিন্তু আজ ফেসবুক ওপেন করে দেখলাম একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে । সেনডারের নাম ফাইজা রহমান নিশি ।
মেয়ে ?
খানিকটা অবাক হলাম । একজন অপরিচিত মানুষ আমার কাছে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে তাও আবার কোন মেয়ে !
সবার উপরে কথা হল মেয়েটার নাম নিশি !
যারা আমার লেখা পড়েন তারা সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে নিশি নামটার উপর আমার একটা দুর্বলতা আছে । আর সেই নিশি নামের কেউ আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে , মনের ভিতর খানিকটা আকুপাকু তো করবেই ।
মেয়েটা যেহেতু ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে তারমানে অবশ্য একজন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আছে । সত্যি তাই । মিউচুয়াল ফ্রেন্ডে ক্লিক করে দেখলাম রাশান শাহরিয়ান নিপুন ।
সামু ব্লগে এই ব্লগারই কেবল আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে আছে । মেয়েটা নিপুনের ফ্রেন্ড । তারমানে এক্সসেপ্ট করা যায় !
কি জানি !
নিপুনের কাছে একবার জিজ্ঞেস করে নেই । ফোন দিলাম নিপুনকে ।
-ভাই ভাল আছেন ?
-আছি ।
-তুমি কেমন আছো মিয়া ?
-এইতো আছি ।
-ভাল কথা তোমাকে যে জন্য ফোন দিছি , ফাইজা নিশিকে চিনো ?
-ফাইজা নিশি ?
নিপুন কি যেন একটু ভাবল
-হ্যা ভাই চিনিতো ? কেন বলুন তো ?
-না এমনি ।
নিপুন বলল
-ভাই, নিশি আপু কিন্তু আপনার লেখার খুব বড় একজন ফ্যান । আপনি যে নিশি আপুরে নিয়া লিখেন এইটা সে খুব পছন্দ করে ।
- ও আচ্ছা । আচ্ছা মানুষ হিসাবে কেমন ?
-ভাইয়া সরাসরি তো কথা হয়নি তবে ভার্চুয়ালী প্রায়ই যোগাযোগ হয় । আমার কাছে তো ভালই মনে হয় । কেন ভাই ?
-না এমনি ।
-না ভাই এমনি তো না । নিশ্চই কিছু একটা আছে । বলেন বলেন জলদি বলেন ।
-আরে মিয়া কিছু না রে । বলার মত কিছু হলে আমি বলব । আচ্ছা সামুতে কি ওনার একাউন্ট আছে ?
-হুম আছে । ফাইজা নিশি নামেই ।
আমি ফোন রেখে নিশির রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করলাম । সামুতেও নিশির প্রোফাইলে গেলাম ।
তারপর একটু অবাক হতেই হল । একটা লেখা আমাকে নিয়ে । যদিও আমার নাম নিয়ে লেখা না তবে লেখা পড়ে মনে হল আমাকে নিয়েই লেখা হয়েছে । আশ্চার্য এই ফাইজা নিশি আমার ব্লগে নিয়মিত এসেছে অথচ আমি লক্ষ্যই করি নি ।
ভাবতে খানিকটা অবাক লাগছে যে আমার লেখার ফ্যান কেউ হতে পারে ! তাও আবার কোন মেয়ে ।
-থ্যাঙ্ক ইউ ।
দেখলাম মেয়েটা অন লাইনে চলে এসেছে ।
-কিসের জন্য ?
-এই যে আমার রিকোয়েস্ট গ্রহন করলেন ।
-এ আর এমন কি ?
-আপনি জানেন না আমি আপনার লেখা কত পছন্দ করি !
-সত্যি নাকি ?
-হুম ! সত্যি ।
নিজের কাছে একটু ভাল লাগল । একটা মেয়ে আমার লেখা পছন্দ করছে এটা তো ভাল লাগার মতই বিষয় ।
-আচ্ছা আপনার কি সত্যি গার্লফ্রেন্ড আছে ?
কি রে ভাই এটা আবার কি রকম কথা হল ? তবুও কিছু বললাম না ।
-কেন আমার লেখা পড়ে মনে হয় নি ?
-না মানে আপনি যেমন কল্পনার কথা দিয়ে গল্প লেখেন হয়তো আপনার টিয়াপাখিও আপনার কল্পনার একটা অংশ ।
-না এমন কোন সম্ভবনা নাই । আমার টিয়াপাখি একদম বাস্তব ।
-আচ্ছা আপনার টিয়া পাখির নাম কি নিশি ?
-না । কেন ?
-তাহলে আপনার সব গল্পের নায়িকার নাম নিশি কেন ?
-খুব বড় কোন কারন নাই । এমনি নামটা আমার পছন্দ বলতে পারেন ।
-আমার নামও কিন্তু নিশি ।
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি ।
-আচ্ছা আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড দেখশাম মাত্র ৩২ জন । এতো অল্প কেন ?
-কারন আমি সাধারনত অপরিচিত কাউকে এড করি না ।
-আমাকে করলেন যে ।
-ঐ যে বললাম সাধারনত ।
-সত্যি করে বলেন , আমার নাম নিশি বলে আমার রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করলেন ?
আমি হাসির ইমো দেই ।
-বলতে বলতে পারেন ।
এভাবেই ফাইজা নিশির সাথে কথা চলতে থাকে । আস্তে আস্তে কথার পরিমান বাড়তে থাকে । কিন্তু একদিনএকটা অঘটন ঘটে গেল ।
রাতে নিশির সাথে বসে চ্যাট করছিলাম । মোবাইলটা সাইলেন্ড ছিল । এদিকে টিয়াপাখি কল দিয়েছে আমি টের পাই নি । যখন ফেসবুক অফ করে মোবাইল হাতে নিলাম আমার মাথায় হাত ।
টিয়াপাখি ২২ বার কল দিয়েছে ।
রাত অনেক হয়েছিল । কল দেওয়ার উপায় ছিল না । আর কল দিলে খুব ঝারি খওয়ার সম্ভাবনা আছে । আমি একটা মেসেজ পাঠলাম সরি লিখে ।
দেখি সঙ্গে সঙ্গেই টিয়াপাখি ফোন দিল ।
একবার ভাবলাম ফোনটা না ধরি কিন্তু না ধরে উপায় ও তো নাই ।
টিয়াপখি অনেক কথা শোনালো । বলল আমি নাকি তাকে আর আগের মত সময় দেই না । আরো কত অভিযোগ ।
সত্যি তাই । নিশির সাথে যোগাযোগ হবার পর থেকে টিয়াকে যে একটু ইগনোর করাই হচ্ছে । কিন্তু এটা ঠিক হচ্ছে না । মোটেও ঠিক হচ্ছে না । নাহ !! এই কাজ আর করবো না ।
আর যাই হোক টিয়াপাখিকে কিছুতেই কষ্ট দেওয়া যাবে না ।
নিশির সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিলাম । ফেসবুক অপেন করলেও অফলাইনে থাকা শুরু করলাম ।
একদিন দুপুর বেলা আননোন নাম্বার থেকে একটা কল এল আমার নাম্বারে ।
-কে বলছেন ?
-আমি ...
একটা মেয়ের কন্ঠ ।
-আমি নিশি । আপনার নাম্বারটা আপনার ফেসবুক থেকে পেয়েছি ।
আামর সব কন্ট্যাক ফেসবুকে দেওয়া আছে । বললাম
-বলুন !
-আপনি কি আমাকে এভোয়েড করছেন ?
-কেন বলুনতো ? এমন কথা কেন বলছেন ?
আসলে আমিতো সত্যিই চাচ্ছিলাম নিশিকে এভোয়েদ করতে । ওর সাথে বেশি যোগাযোগ রাখতে গেলেই টিয়াপাখিকে অবহেলা করা হয়ে যাবে । আর যাই কিছু ঘটে যাক টিয়াপাখিকে কষ্ট দেওয়া যাবে না কিছুতেই ।
-দেখুন আমি আসলে আমার ভার্চুয়াল লাইফটা আমার পার্সোনাল লাইফ থেকে আলাদা রাখতে চাই ।
-আমাকে তাহলে ইগনোরই করতে চাচ্ছেন ?
আমি পরক্ষ্য ভাবে এই প্রশ্নটার উত্তর দিয়েছি তার পরেও যদি মেয়েটা না বোঝে ! আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিশি বলল
-আচ্ছা আমার সাথে কি আপনি একটু দেখা করবেন প্লিজ !
-দেখুন আমি কিন্তু আপনাকে বলেছি যে আমি আমার ভার্চুয়াল লাইফ আর পার্সোনাল লাইফ আলাদা রাখতে চাই ।
-প্লিজ একটা বার । আর কোনদিন বলবো না ।
তারপর নিশি এমন ভাবে রিকোয়েস্ট করতে লাগলো যে রাজি না হয়ে পারলাম না ।
জানি না এই ফাইজা নিশি আবার কি জটিলতা সৃষ্টি করবে ! এখন দেখতেছি আমার গল্পে নিশি নামটা ব্যবহার করাই ভুল হয়েছে । ঐ নাম না নিলে তো আর এতো ঝামেলা হত না ।
-অপু ?
একটা মেয়ের ডাকে ফিরে চাইলাম । দাড়িয়ে ছিলাম ধানমন্ডির জাহাজ বাড়ির সামনে । নিশি এখানেই আসতে বলেছিল ।
-জি । আপনি ....?
মেয়েটা হাসল । বেশ সুন্দর হাসি !
-আমিই আপনার সেই অভাগা ফ্যান ।
-অভাগা কেন বলছেন ?
-অভাগা বলব না ? যে মানুষটা তার পছন্দের মানুষটার সাথে দেখা করতে পারে না মন চাইলেই কথা বলতে পারে না তার থেকে বড় অভাগা কি আর আছে এই জগতে ?
কথা বার্তার লাইন অন্য দিকে চলে যাচ্ছে । আমি বললাম
-আমার লেখা এতো কেন পছন্দ করেন ? আমি কিন্তু সিরিয়াসলি কিছু লিখি না । কেবল টাইম পাস করার জন্য লিখি । এটা কে এতো গুরুত্ব দেবার কিছু নাই ।
নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনি জানেন না আপনার ঐ গল্প গুলো আমার জীবনে কি পরিমান ইফেক্ট ফেলেছে । প্রথম যেদিন আপনার গল্প পড়লাম কিছু বুঝতে পারি নি । কিন্তু আমার ভিতর কিছু একটা হয়ে গেছিল বুঝতে পারছিলাম ।
-কি রকম ?
-মানে আমি বোঝাতে পারবো না । কিন্তু আমি ঐ গল্পের কথা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না । নিজেকে কেবল ঐ গল্পের নিশিই মনে হচ্ছিল । তারপর থেকে ...
নিশি কথা শেষ করলো না । আর আমিও কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । আমার গল্প পড়ে কেউ এমন প্রভাবিত হয়ে যাবে আমি বুঝতে পারিনি । নিশি আবার বলল
-জানেন আপনি যখন অন্য কারো নাম ব্যবহার করে গল্প লিখতেন খুব রাগ হত আমার ! মনে হত কেন আপনি অন্য কাউকে নিয়ে গল্প লিখবেন ? আপনি কেবল আমাকে নিয়ে গল্প লিখবেন !
আমি একটু চমকালাম নিশির কথা শুনে । কি বলে রে এই মেয়ে ! নাহ এই মেয়ের কথা বার্তা খুব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না ।
-দেখুন আপনি খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন । ও গুলো কেবল গল্প ।
নিশি আমার দিকে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকাল । বলল
-আপনার জন্য গল্প হতে পারে কিন্তু ...
নিশির কাছে আমি আর বেশিক্ষন থাকলাম না । এই মেয়ের কাছ থেকে যত দুরে থাকা যায় তত আমার জন্য ভাল ।
বাসায় প্রথম যে কাজটা করলাভ তা হল মোবাইলেই সিমটা বদলে ফেললাম । তারপর ফেবু একাউন্ট থেকে নিশিকে ব্লক করলাম । সামু নিক থেকেও ফাইজা নিশিকে ব্লক করে দিলাম ।
এমন ফ্যান আমার দরকার নাই । এরা কেবল বিপদেই ফেলতে পারে । আর পারে জটিলতা সৃষ্টি করতে ।
বিঃদ্রঃ অনেকে ইতি মধ্যে সার্চ বক্সে ফাইজা নিশি নাম লিখে সার্চ করা শুরু করে দিয়েছেন । কিন্তু কি পেলেন সেই ব্লগার কে??
আমাকে জানাবেন প্লিজ ।
যারা আমার লেখা নিয়মিত পড়েন তারা মনে করেছেন আমি হয়তো এইটা বানিয়ে বানিয়ে লিখেছি । সচরাচর আমি যা করি আরকি । যদি এমন টা ভেবে থাকেন তাহলে আপনাদের বলতে চাই আপনারা ঠিকই ভেবেছেন ।
এটা একটা গল্পই । ব্লগার ফাইজা নিশির কোন অস্তিত্ব নাই । এটা একটা গল্প ।
গল্পে নিপুনের নামটা ব্যবহার করেছি আশা করি সে রাগ করবে না । সবাই ভাল থাকবেন ।