এই এলাকায় ও আগে কখনও আসে নি । আজকেই প্রথম এসেছে । ওর একটু ভয় ভয় করছে ।
কিন্তু ভালও লাগছে খুব । তন্নী খুব ভাল করেই জানে কিছুক্ষনের মধ্যেই অপু এখানে চলে আসবে । ও যতবারই পথ হারায় ততবারই অপু ওকে খুজে বের করে হোস্টেলে পৌছে যায় ।
একটু আগেই ও বাসায় ফোন করেছে । বলেছে যে ও আবার পথ হারিয়ে ফেলেছে । তন্নীর মা খানিকক্ষন বকাবকী করল । তারপর বলল
-যেখানে দাড়িয়ে আছিস যেখানেই দাড়িয়ে থাক । আমি অপুকে ফোন করছি ।
তন্নী এই কথাটা শোনার জন্যই ওয়েট করছিল ।
অপু ওকে নিতে আসবে । অপুর সাথে রিক্সা কিংবা সিএনজিতে চড়তে পারবে এটা ভাবতেই তন্নীর মনটা একেবারে ভাল হয়ে গেল ।
এমন সময় তন্নীর মোবাইলটা বেজে উঠল । অপু ফোন করেছে ।
-হ্যালো ।
-কোথায় আছো তুমি ? লোকেশনটা বলতে পারবে ?
-আমিতো ঠিক বলতে পারবো না ভাইয়া তবে মনে হয এটা মৌচাক মার্কেট । একটা ওভার ব্রীজ আছে । ওটার নিচে দাড়িয়ে আছি ।
-তুমি থাকো ফার্ম গেট । মৌচাকে গেলে কিভাবে ?
তন্নী কোন জবাব দিলো না । অপু আবার বলল
-আচ্ছা তুমি দাড়িয়ে থাকো আমি আসতেছি ।
-আচ্ছা ।
ফোনের লাইন কেটে গেল ।
ইস !
তন্নী ভাবল ।
ছেলেটা এমন কেন ? প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলে না । ফোনে আর দুচারতে কথা বললে কি এমন ক্ষতি হয় ! তন্নীর সব সময় একটু ছটফটে টাইপের ।
একাই এদিগ ও দিক চলে যায় । ওর সাথে কোচিং করতে আসা অন্য মেয়েরা যখন বিকেল বেলা বারান্দায় কিংবা হোস্টেলের ছাদে ঘুরে বেড়াতো তন্নী তখন আসেপাশের সব এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছে ।
এমনই ঘুরতে ঘুরতে গ্রীন রোডের এক গলিতে ও প্রথম পথ হারিয়ে ফেলে ।
সেদিন কি ভয় ই না পেয়েছিল । বাসায় ফোন করে কান্না জুরে দিল । এমন একটা ভাব যেন ও মরে যাচ্ছে ।
তন্নীর মা তখনই অপুকে ফোন দেয় । অপু সম্পরকে তন্নীর মামানীর ভাগনে হয় ।
ঢাকাতেই পড়াশুনা করে । অপু সেই গলির মধ্যে থেকেই তন্নীকে খুজে বের করে ।
তারপর আরো কয়েকবার তন্নী এরকম পথ হারিয়েছে । প্রত্যেকবার অপু ওকে হোস্টেলে পৌছে দিয়েছে ।
প্রথম দুবার তন্নী আসলেই রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল । কিন্তু তার পরের গুলো সে ইচ্ছা করেই এমন টা করে ।
কেবল মাত্র অপুকে একটা বার দেখার জন্য । চাইলেই তো আর অপুর সাথে দেখা করা যায় না । অপু কি ভেবে বসতে পারে !
ভাবতে পারে কি নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা ! তাই দেখা করা এই অভিনব পদ্ধতি সে বের করেছে ।
আর যদিও অপুর নাম্বার ওর কাছে আছে তন্নী সরাসরী অপুর কাছে কখনও ফোন করে না ।
প্রথমে ওর আম্মুর কাছে করে তারপর উনি করে অপুর কাছে ।
তন্নীদের আর কোন আত্মীয় নেই ঢাকায় । সুতরাং অপু ছাড়া আর কোন গতি নাই ।
আধা ঘন্টার মধ্যে অপু চলে আসল মৌচাক মার্কেটের কাছে । তন্নীকে দেখে এগিয়ে এল । বলল
-এতো দিন ঢাকায় থাকো এখনও পথ ঘাট চিনলে না ?
-বাসে উঠে ঘুমিয়ে পরেছিলাম । তাই বুঝতে পারি নি ।
-আচ্ছা ঠিক আছে ! এবার থেকে সাবধান থেকো । খেয়েছ কিছু ?
তন্নী মাথা নাড়াল ।
-চল আগে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক ! এখানে মৌচাকের বিখ্যাত জিলাপী পাওয়া যায় ।
খাওয়া শেষে অপু যখন যাওয়ার কথা বলল তন্নীর মনটা খারাপ হয়ে গেল ।
অপুর সাথে সময় গুলো কেমন দ্রুত কেটে যায় ! আর একটু থাকা যেত ওর সাথে !
-ভাইয়া এই ভিড়ের মধ্যে বাসে উঠতে ভাল লাগছে না । রিক্সায় যাওয়া যাবে না ?
অপু কি যেন ভাবল ।
-হুম এখনতো বাসে ভিড়ই থাকবে । আচ্ছা চল রিক্সায়ই যাই ।
মৌচাক থেকে ফার্মগেট রিক্সায় আসতে বেশ সময় লেগে গেল ।
তন্নী তো তাই চাচ্ছিল । যত সময় লাগে লাগুক । ওর তো খুব ভাল লাগছিল । অপুর পাশা পাশি বসে এতো দুর আসা ! অপুর সাথে টুকটাক কথা বলছিল । হাসছিল ।
মাঝেসাঝে ওর হাতের সাথে হাত লেগে যাচ্ছিল । সব কিছুই যেন তন্নীর ভাল লাগছিল ।
ইস! প্রত্যেক দিনই যদি এমন হত ! তাহলে কতই না ভাল হত !
যখন অপু ওকে হোস্টেলের গেটে নামিয়ে দিল তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে । অপু বলল
-এবার থেকে একটু সাবধানে থেকো , কেমন ?
তন্নী হাসল ।
প্রত্যেকবার অপু এই কথাটাই বলে যাবার সময় ।
-আচ্ছা ভাইয়া ।
-আর এবার থেকে আমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা হল এতো কিছু করার দরকার নেই । সরাসরি আমাকে ফোন দিও কেমন ?
এই কথাটা বলে অপু হাসল একটু ।
তারপর পেছন ঘুরে হাটা দিল ।
হায় হায়!! অপু তারমানে ওর চালাকী ধরে ফেলেছে!! কি লজ্জা !!
অপু এখন কি ভাববে!! লজ্জার ওর গাল দুটো লাল হয়ে এল !!
কিন্তু মনটাতে অসম্ভব এক ভাল লাগার অনুভুতি বয়ে গেল । অপু ওর মনের কথা বুঝতে পেরেছে!! এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে !!
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৩৪