-কি মামা পছন্দ হইল না বুদ্ধিটা ?
পল্টু জানতে চাইল । আমি বললাম
-তুই যেমন তোর বুদ্ধিও তেমন ।
-আরে মামা শোন না ! এখন মেয়েরা একটা ছেলেকে কি দেখে বেশি পছন্দ করে বলতে পারিস ?
-কি দেখে ?
-দেখে ছেলেটা ভার্জিন কিনা ?
-তোকে বলেছে ?
-একটা ছেলেকে দেখে কিভাবে বুঝবে যে ছেলেটা ভার্জিন কিনা ?
-আছে মামা আছে ? মেয়েরা এটা বুঝতে পারে ! আর সব থেকে কমন যে জিনিস মেরেরা দেখে সেটা হল ছেলেটার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল কিংবা এখনও আছে কি না !
-শোন পল্টু তোর এই ফালতু প্যাচাল শুনতে ভাল লাগছে না । সোজাসুজি বল নিমকির হাত থেকে কিভাবে রেহাই পাবো ?
-আরে সেইটাই তো বলছি মামা ! নিমকি তোকে কেন পছন্দ করেছে বল ?
-কেন ?
-কারন তোর কোন গার্ল ফ্রেন্ড নাই কিংবা তুই কাউকে ভালবাসিস না এই জন্য । কোন ভাবে যদি তুই নিমকির মনে এইটা ঢুকাতে পারিস যে তুই অন্য কাউকে ভালবাসিস তাহলে নিমকি তোর পিছু ছেড়ে দিবে !
আমার তবুও কথাটা বিশ্বাস হয় না । আসলে এই মেয়ে গুলা বড় জটিল কিসিমের হয় । তাই এদের থেকে সব সময় দশ হাত দুরে থাকি আমি ।
কিন্তু আর বুঝি থাকা গেল না ।
এই নিমকি মেয়েটা মোটামুটি গায়ে পরেই আমার দিকে এগিয়ে আসছে । আর মেয়েটায় ভাব চক্করও খুব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না । একবার ভাবলাম সরাসরিই মেয়েটাকে বলি যে এসব আমার পছন্দ না একদম ।
কিন্তু সেই দিকেও আবার প্রবলেম আছে । নিমকির বড় ভাই ছাত্র লীগের বড় নেতা ।
যদি সরাসরি কিছু বলি আর নিমকি যদি সরাসরি কথা ওর ভাইয়ের কাছে সরাসরি বলে দেয় তাহলে ওর ভাই আমাকে সরাসরি কি করবে আমি নিজেই জানি না ।
তাই বুদ্ধি নিতে আসলাম পল্টুর কাছে । কিন্তু শালা এমন সব অদ্ভুদ বুদ্ধি দিতেছে যে ভরসা করতে পারছি না । আমি বললাম
-আচ্ছা তুই তাহলে বলতে চাস যে আমি এখন একটা মেয়েকে প্রপোজ করবো এবং এই কথা যখন নিমকির কানে যাবে তখন ও আমার পথ থেকে সরা যাবে ।
-হুম ।
-যদি না যায় ?
-যাবে মামা যাবেই । থিওরি তাই বলে ।
-আচ্ছা ।
-কিন্তু আরো একটা সমস্যা আছে ।
-কি সমস্যা ?
-সে মেয়েটাকে আমি প্রপোজ করবো সে যদি রাজি হয়ে যায় ! তখন ?
-ভয় নেই হবে না । তোর মত ভ্যাগাবন্ড টাইপের ছেলের প্রপোজ মেয়েরা এক্সেপ্ট করবে না ।
নাহ পল্টুর কাছে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে । ওর ঘিলু দিয়ে কোন সহজ বুদ্ধি বের হবে এটা আমার ভাবাই ভুল হয়েছে । বললাম
-পল্টু তুই কিন্তু আমার কাছে মার খানি একটু আগে বললি নিমকির মত মেয়ে আমার ছেলেই পছন্দ করে আবার এখন বলছিস আমার মত ছেলেদের প্রপোজ মেয়েরা গ্রহন করবে না । তুই কি আমাকে ভূগোল বুঝাচ্ছিস নাকি ?
পল্টু একটুও বিচলিত না হয়ে বলল
-আরে মামা এখানেও ব্যাপার আছে । সব মেয়েকে তো আর এক ক্যাটাকরিতে ফেললে হবে না । নিমকির মত মেয়ে আছে যারা মনে কর এ ক্যাটাকরির মেয়ে । ঐ মেয়ে গুলার কাছে তোর মত ছেলেদের খুব চাহিদা । আর মনে কর বি ক্যাটাকরির মেয়ে , একটু সিরিয়াস টাইপের মেয়ে , ঐ মেয়েগুলার কাছে তোর ভ্যালু জিরো ।
-তা আমি কিভাবে বুঝবো কোনটা এ আর কোনটা বি ক্যাটাকরির মেয়ে ।
-একটু চোখ কান খোলা রাখ । তুই নিজেই বুঝতে পারবি ।
যদিও বুদ্ধিটা আমার ঠিকমত পছন্দ হয় নি কিন্তু এর থেকে আর কোন ভাল বুদ্ধি আমি বের করতে পারলাম না ।
তাই বি ক্যাটাকরির মেয়ের খোজ শুরু করে দিলাম ।
আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে আমি তাড়াতাড়ি খুজে বের করতে পারবো তো ? যদি খুজে পাবার আগেই নিমকি আমাকে প্রপোজ করে ফেলে তাহলে তো আমার খবর আছে !
কিন্তু আমি বি ক্যাটাকরির মেয়ে পেয়ে গেলাম । আমাদের ক্লাসেরই ।
নিশি খুব সিরিয়াস টাইপের মেয়ে । খুব ভাল ছাত্রী । সারাটা দিন পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু বোঝে না । আমি নিশ্চিত এই মেয়ের জীবনে পড়ালেখা ছাড়া আর কোন কিছুর স্থান নেই । প্রেম ভালবাসার তো নাই ই !
আর আমার মত ছেলের জন্য নিশির সময় থাকবে এই কথা তো কল্পনাই করা যায় না ।
আমি নিশিকেই প্রপোজ করবো বলে মনস্থির করলাম । পল্টু বলেছিল এমন জায়গায় প্রপোজ করতে হবে যেন আর দুচার জন শুনতে পারে । তাহলে ব্যাপারটা নিমকির কানে পৌছাবে ।
আর তাহলেই আর কাজ তামাম !
পরদিনই প্রপোজ করার সুযোগ চলে এল । নিশি কমন রুমে বসে কি একটা নোট করছিল । ক্লাসের আরো কিছু ছেলে মেয়েও ছিল । তবে নিশি যে বেঞ্চে বসে সেই বেঞ্চটা ফাকাই ছিল । আমি নিশির সামনে গিয়ে বসলাম ।
ও খানিকটা যেন অবাক হল । কিন্তু কিছু বলল না ।
-হাই !
নিশি এইবার আমার দিকে মুখতুলে তাকাল । আরো একটু যেন অবাক হল ।
-কেমন আছো ?
-ভাল ।
-তোমার সাথে কয়েকটা কথা বলার ছিল ।
-বল ।
নিশি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । বোঝার চেষ্টা করছে আমি ফান করছি কি না । আমি গুছিয়ে নিলাম কি কি বলব ।
-দেখো আমরাতো অনেক দিন থেকেই একসাথে পড়ছি । তোমার সাথে ঠিক কথা বলা হয়ে ওঠে না । কিন্তু ....
নিশি খুব শান্ত গলায় বলল
-কিন্তু কি ?
-আমি ....
যতই মিথ্যা মিথ্যা বলি , একটা মেয়েকে প্রপোজ করা কিন্তু এতো সহজ না । আমি আবার বললাম
-আমি আসলে তোমাকে অনেক পছন্দ করি ।
-আই ... আই লাভ ইউ ।
বলেই আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম । রুমে আরো অনেকেই ছিল এবং সবাই কথাটা শুনেছে । হঠাৎ আমার কাছে মনে হল রুমের একটা মানুষও কোন কথা বলছে না ।
সবাই অপেক্ষা করছে কিছু একটা ঘটার ! কিন্তু কিছুই ঘটল না । নিশি খাতা পত্র নিয়ে উঠে চলে গেল ।
আমার কথা মনে হয় ওর ঠিক পছন্দ হয় নি । না হবারই কথা । আমার ভয় ছিল বুদ্ধিটা কাজ করবে কি না ।
কিন্তু কাজ করলো পরদিন সকালে যখন নিমকির সাথে দেখা হল দেখলাম নিমকি কেমন আমাকে এড়িয়ে গেল । কিন্তু ওর চোখমুখের ভাব দেখে মনে হল কাজ হয়েছে !
কাজ হয়েছে !
নিমকির কাছ থেকে আমি বেঁচে গেছি ।
কিন্তু ....
ঐ দিন সন্ধ্যা দিকে জারুলগাছ টার নিচে বসে আছি আর চা খাচ্ছি । এদিকটাতে সাধারনত কেউ আসেটাসে না । আমি আর পল্টুই আসি । জায়গাটা নির্জন । আমার সময় ভাল কাটে । আমি চোখ বন্ধ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছি ঠিক এমন সময় মনে হল কেউ এসে আমার পাশে বসল ।
পল্টুই হবে হয়তো ।
কিন্তু চোখ মেলেই আমি বিষম খাওয়ার মত অবস্থা হল ।
নিশি !!
নিশি এখানে কি করছে ?
আর সব থেকে বড় অবাক লাগার বিষয় হল ওর গেট আপ ।
দিনের আলো এখনও মিলিয়ে যায় নি । ঐ আবছা আলোতেই দেখলাম নিশি খুব সুন্দর করে সেজেছে ।
স্বীকার করতেই হবে যে ওকে আসলেই অনেক সুন্দর লাগছে ।
ও যে এতো সুন্দর আমি আগে লক্ষ্যই করি নি । লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে নিশি বলল
-হাই ।
আমি কোন মতে একটু হাসলাম । নিশি অনেকক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি কাল যে কথাটা বললে সেটা সিরিয়াসলি বলেছ নাকি .....
নিশি কথাটা শেষ করলো না । কেবল আমার চোখের দিকে তাকাল । নিশি চোখে আজ সুন্দর করে কাজল দিয়েছে ।
আমার দিকে কি গভীর ভাবেই না তাকিয়ে আছে ঐ চোখ জোড়া !
আমি কেন জানি চোখ সরাতে পারলাম না । নিশির চোখের দিকেই তাকিয়ে রইলাম । ও আবার বলল
-আমি যে তোমাকে কি পরিমান পছন্দ করি অপু, তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না । তুমি কাল যখন ...
নিশি আবারও কথাটা অসমাপ্তই রেখা দিল ।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে করেছে ।
কি আশ্চার্য এই দৃশ্য ! আমার পুরো শরীরের মধ্যে কেমন একটা শিহরোন বয়ে গেল ।
আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কখনই চোখের জল গড়িয়ে পরবে । কিন্তু সেটা আর দেখা হল না । চোখের পানি গড়িয়ে পরার আগেই নিশি আমাকে জড়িয়ে ধরল ।
খানিক বাদে কেমন একটা ফোঁপানোর আওয়াজ পেলাম ।
কি আশ্চার্য এই মেয়েটা কাঁদছে কেন ?
-কাঁদছো কেন ?
নিশি আমার কথার জবাব দিল না ।
আর একটু যেন জড়িয়ে ধরল জোরে । ফোঁপাতে ফোঁপাতেই বলল
-আমাকে কোন দিন ছেড়ে যাবে না তো ? প্লিজ কোন দিন ছেড়ে যেও না ।
আমি জানি না নিশির ঐ চোখের জলে কি ছিল আমি জানি না ওর কান্নাজড়িত কণ্ঠে কি ছিল আমার কেবল মনে হল আমাকে জড়িয়ে যে মেয়েটা কাঁদছে এই মেয়েটাকে ছাড়া এক মুহুর্তও বাঁচবো না ।
কি অদ্ভুদ এই অনুভূতি ! কি আশ্চার্য ভাবেই না আমি নিশির প্রেমের পড়ে গেলাম ।
কি আশ্চার্য !
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:১০