গরমের ছুটিতে বাড়িতে এসে এই এক বিপদে পরেছি । যখন তখন কারেন্ট চলে যায় ।
ঢাকায় তো একটা নিয়ম মাফিক কারেন্ট যায় আর আসে কিন্তু এখানে গেলে আর আসার নাম থাকে না । তার উপর আমাদের এই এলাকাটায় ছন্নছাড়া গরম পরছে ।
কাল দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি উঠেছিল । আজও কম কিছু না । জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি মাঝে মাঝে বিদুৎ চমকাচ্ছে । তারমানে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে ।
কিন্তু পরিবেশ কেমন একটা ভ্যাবশা গরম । এই অবস্থায় ঘরে বসে থাকার উপায় নেই ।
আমি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম । আমাদের বাড়ির ঠিক ডান পাশে বিশাল বাশের ঝার । ঠিক আমার বাধরুমটার পাশে ।
রাতের বেলা বাথরুমে গেলে মনে হয় কেউ যেন বাধরুমের ছাদের উপর হাটছে । আসলে যখন বাতাস হয় বাশের কোঞ্চি গুলো ছাদের সাথে আঘাত করে তাই মনে হয় কেউ যেন ছাদের উপর হাটছে ।
প্রথম বার শুনলে যে কারো ভয় লেগে যেতে পারে ।
কিন্তু আমার কিছু মনে হয় না ।
বাড়ির সীমানা পেরিয়ে বড় একটা কানা পুকুর আছে । বর্ষা কালে খুব পানি জমে কিন্তু এখন একদম শুকনো ।
প্রতিদিন বিকালে এখন ঐ পুকুরে ক্রিকেট খেলা হয় । দুর থেকে দেখতে ভালই লাগে । কেমন একটা স্টেডিয়াম স্টেডিয়াম ভাব ।
কানা পুকুরটার পাশে মকছেদ হাজির আম বাগান ।
অবশ্য আম বাগান না বলে আম বাগানের ছেলে বললেই ভাল । আগে অনেক বড় বড় গাছ ছিল ।
কিছুদিন আগে সবগুলো কাছ কেটে ফেলা হয়েছে ।
ওখানে আবার লাগানো হয়েছে আমের চারা । সেই হিসাবে শিশু আমের বাগান ।
আমি কানা পুকুরের পাড়ে একবার আম বাগানটার দিকে তাকালাম । যাবো কি ঠিক বুঝতে পারছি না ।
আমি খুব যে সাহসী তা বলবো না তবে একেবারে ভীতু না । তার উপর এতো রাতে একা একা ঐ আম বাগানের মধ্যে যাওয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না ।
ভুতপেত্নী না হোক সাপটাপের ভয় তো আছে ।
আর চারিদিকে ঘুরঘুটে অন্ধকার । ঢাকার মত না । রাত ১২ মানে এখানে নিশুতি রাত ।
তাছাড়া মা আমার এরকম রাত জাগার অভ্যাসটা খুব ভাল করে জানেন । খুব ভাল করে বলে দিয়েছেন আম বাগানের দিকে যেন না যাই ।
ভয়টয় পেতে পারি । তার অবশ্য কারনও আছে । মাস ছয়েক আগের কথা ।
তখন আম বাগানে সব গাছ গুলোই ছিল । একদিন সকাল বেলা শোনা যায় একটা আম গাছের ডালে ওড়না পেচিয়ে একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে । আমি নিজে দেখতে গেছিলাম সেই লাশ ।
কি এক বিভত্ৎশ দৃশ্য !
আমি এখনও ..!
থাক এখন মনে করতে চাই না !
আমি আর একটু কাছে গেলাম আম বাগান ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চমকালো ।
আমিও চমকালাম !
একবার মনে হল আমি ভুল দেখলাম । কিন্তু আমি ঐদিকটাতেই তাকিয়ে ছিলাম । ভুল হবার কথা নয় । যে কয়েক মুহুর্তের জন্য বিদ্যুৎ চমকালো ঐ সময় দেখলাম পুরো আম বাগান টা যেন পুরোনো সেই রুপে ফেরৎ এসেছে ।
মানে পুরো বাগান জুরে কেবল বড় বড় আম গাছ !
কিন্তু তা কি করে হয় ? আমি তো বিকেল বেলাতেও এখানে ছিলাম । তখনও তো এমন কিছুই ছিল না । গাছ গুলো ছিল সব ছোট ছোট । আমার সমান হবে ।
এখনই আমার ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত্ । কিন্তু এক অদম্য কৌতুহল আমাকে আম বাগানটার দিকে নিয়ে গেল ।
আমার যেন মনে হচ্ছে আমাকে ঐ খানে যেতেই হবে । যখন আম বাগানে প্রবেশ করতে যাবো ঠিক তখনই আবারও বিদ্যুৎ চমকালো । এবং আমি আবারও একই দৃশ্য দেখলাম ।
পুরো বাগানটা বড় বড় গাছে ভর্তি । আমি মন্ত্রমগ্ধের মত বাগানে প্রবেশ করলাম ।
আর একটা অদ্ভুদ ব্যাপার আমি লক্ষ্য করলাম যে চারিপাশে কেমন জানি একটা আবছা আলোয় আলোকিত হয়ে গেল । আগে যেমন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না , এখন সব কিছু দেখা যাচ্ছে ।
আমি অবাক হয়ে সব গাছগুলোকে দেখছি । আমি জানতাম যে মানুষ কেবল মরা মানুষ দেখে অথবা বলা চলে কেবল মানুষের ভুতই মানুষ দেখতে পায় । আমি তো মরা গাছের ভুতও দেখতে পাচ্ছি ।
জগদিস চন্দ্র বসু যে আবিষ্কার করেছিলেন গাছের প্রান আছে আর আজ আমি আবিষ্কার করলাম সেই প্রান মরে ভুতও তৈরি হতে পারে !
কিন্তু তাই বলে কেবল গাছের ভুতই দেখবো মানুষের ভুত দেখবো না এটা কেমন হয় ?
কেন জানি শুধু গাছের ভুত দেখে ভয় পেতে ইচ্ছে করছে না । যদি দু একটা ...
আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল । একটা গাছের সামনে আসতেই আমি দ্বিতীয়বারের মত সেই বিভৎশ দৃশ্যটা দেখতে পেলাম ।
দেখলাম আমগাছের নিচু একটা ডাল থেকে গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় সেই মেয়েটা ঝুলে আছে । মেয়েটার হাত দুটো সামনে নিশ্চল হয়ে আছে । গলাটা অস্বাভাবিক ভাবে একদিকে কাত হয়ে আছে । সব থেকে ভয়ংকর লাগছে মেয়েটার জ্বিব্বাহ টা । অর্ধেকটার বেশি বের হয়ে আছে ।
কেমন একটা গা ঘিনঘিন করা অবস্থা । আর চোখ গুলো যেন এখন জ্বীবন্ত । জ্বলজ্বল করছে !
আমার সাহস হল না ঐ খানটাতে দাড়িয়ে থাকার । ঘুরে এক দৌড় মারলাম ।
বাগান থেকে বাড়ির পায়ে হাটা দুমিনিটের পথ । দৌড়ে গেলে তিরিশ সেকেন্ডও লাগার কথা না ।
কিন্তু আমার কাছে মনে হল যেন তিরিশ বছর ধরে আমি দৌড়াচ্ছি । চারিপাশে কোন কোন আওয়াজ নেই কেবল আমার দৌড়ানো আর বুকের স্পন্দনের আওয়াজ ছাড়া । আমার আসলে মনে হচ্ছে যে আমি দৌড়াচ্ছি কিন্তু আসলেই কি আমি দৌড়াচ্ছি ?
তাহলে এতো সময় লাগবে কেন ?
হঠাৎ আমার পিছনে কিছের যেন আওয়াজ পেলাম ।
কেউ কি আসছে ?
ধুপধুপ আওয়াজ পাচ্ছি পিছনে । আমার আর পিছনে তাকানোর সাহস হল না । আমি আমার দৌড়ানোর গতি আরো একটু বাড়িয়ে দিলাম । যে করেই হোক আমাকে বাড়ির গেট টা পর্যন্ত পৌছাতেই হবে ।
ঐ তো দেখা যাচ্ছে গেট ।
কারেন্ট চলে এসেছে বোধহয় ! চল্লিশ পাওয়ারের বাল্বটাও জ্বলছে । ঐ আলো যেন আমার দৌড়ানোর গতি আরো একটু বাড়িতে দিল । পেছনের ধুপধাপ করে এগিয়ে আশাটাও যেন একটু বেড়ে গেল ...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ রাত ২:৩৭