তয়া বেঞ্চ থেকে মাথা তুলে তাকাল । মীম ঠিক ওর পাশে এসে বসল ।
-কেন ?
-বল আগে কি খাওয়াবি ?
-দেখ এখন ইয়ার্কি ভাল লাগছে না ।
-আর বল না ?
-কেন খাওয়াবো ?
-তোর রাজকুমারের খোজ পেয়েছি ।
-সত্যি ???
তয়া এতো জোরে চিৎকার করে উঠল যে চারিপাশের লোকজন ঘুরে তাকাল ।
-সত্যি বলছিস ??
তয়ার মনে খানিকটা সন্দেহ দেখা দেয় । তয়া আবার বলল
-তুই মিথ্যা কথা বলছিস । আমার মন খারাপ বলে তুই মন ভাল করার জন্য এমনটা বলতেছিস ।
সত্যি সত্যিই তয়ার মনটা খারাপ । মনটা খারাপ ঐ অজানা ছেলেটার জন্য । যে ছেলেটাকে চেনে না জানে না এমন একটা ছেলের জন্য তয়ার মনটা আসলেই খারাপ ।
ও কখনও ভাবতে পারে নি এমন অদ্ভুদ ঘটনা ঘটবে ওর সাথে । সপ্তাহ খানেক আগে ছেলেটার সাথে তয়ার দেখা হয় ।
দেখা হয় বলতে তয়া ছেলেটাকে দেখে । সেদিন কফি সপে বসে কফি খাচ্ছিল আর মীমের সাথে বসে গল্প করছিল । এমন সময় ছেলেটাকে দেখতে পায় ও ।
কেমন অন্য রকম একটা আভা ছিল ছেলেটার চেহারার মধ্যে । তয়া কিছুক্ষনের জন্য একেবারে স্থির হয়ে গেল । একটু বড় বড় চোখ ছেলেটার । কালো ফ্রেমের চশমা পরেছে । মাথায় চুল একটু বড় । কি গভীর সেই চোখের দৃষ্টি ।
কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর কি যেন একটা বই পড়ছে । তয়া কফি খাওয়া ভুলে গেল ।
মীম ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিল । কিন্তু এতো বেশি গুরুত্ব দেয় নি । তয়া নিজেও ব্যাপারটা প্রথমে অতো বেশি গুরুত্ব দেয় নি ।
প্রথমে ভেবেছিল সাময়িক মোহ ! চোখের আড়াল হলেই মোহ কেটে যাবে !
কিন্তু সেই থিওড়ি কাজে এল না । চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল হল না ।
সিন্দাবাদের ভুতের মতই ছেলেটি তয়ার মাথায় চেপে থাকল । এই সাতটা দিনে তয়া একটা মুহুর্তের জন্যও ছেলেটিকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারল না ।
তয়া আবার বলল
-সত্যি খোজ পেয়েছিস ছেলেটার ?
-কেন তোর বিশ্বাস হচ্ছে না ?
-কিন্তু কিভাবে খোজ পেলি ?
-তুইতো কিছু আমাকে বলবি না ! ঐ দিনই বলতি সোজাসুজি গিয়ে নাম ধাম জিজ্ঞেস করতাম । এতো ঝামেলা করতে হত না । মাঝ খান দিয়ে সুমনকে কষ্ট তো করতে হল ।
সুমন মীমেয় বয়ফ্রেন্ড । ওদের সাথেই পড়ে । তয়া কৌতুহলী চোখে তাকাল মীমের দিকে ।
-আচ্ছা বাবা বলছি শোন ।
-ঐ দিনতো তুই ছেলেটাকে দেখেই কাইত ! একদম তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিলি ছেলেটার দিকে ।
বলেই মীম হেসে ফেলল ।
-হাসলি কেন ?
-তন্ময় শব্দটা ব্যবহার করলাম তো ! ছেলেটার নাম তন্ময় ।
-তন্ময় !
তয়া নামটা একবার উচ্চারন করলো । যদিও নাম বেশ কমন তবুও তয়ার মনে হল একদম পারফেক্ট একটা নাম ।
আর সত্যি ঐ দিন তয়া তন্ময়ের দিকে তন্ময় হয়েই তাকিয়ে ছিল ।
-তারপর বল ।
-তুই তো কেবল তাকিয়েই ছিলি । আমি তোর তাকানোর ধরন দেখেই বুঝেছিলাম যে ছেলেটাকে তোর মনে ধরেছে । আমি ছেলেটার সব কিছু লক্ষ্য করছিলাম । যেন পরে চেনা যায় বা খোজ বের করা যায় !
তয়া ওর দিকে তাকিয়েই আছে একভাবে । এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ।
-তুই হয়তো লক্ষ্য করিস নি ছেলেটার হাতে একটা বই ছিল ।
-হুম ! লক্ষ্য করেছি । ও একটা বই পড়ছিল ।
-ও !! এখনই ও হয়ে গেল ।
তয়া খানিকটা লজ্জা পেল ।
-আচ্ছা লজ্জা পেতে হবে না । বলতো বইটার নাম কি ছিল ?
-অতো তো লক্ষ্য করি নি ?
-তা করবা কেন ? তুমিতো আর বইয়ের প্রেমে পড় নি ! কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছিলাম । ছেলেটা অপু তানভীরের লেখা একটা বই পড়ছিল । বইটার নাম "টিয়াপাখির গল্প" ।
-তো কি হয়েছে ? অপু তানভীয়ের বই পড়ছিল তো কি হয়েছে ? এর সাথে ওর খোজ পাওয়ার কি সম্পর্ক ?
-আরে আগে শেষ করতে দে ! বইটাতে পাবলিক লাইব্রেরীর স্টিকার মারা ছিল । মানে বইটা পাবলিক লাইব্রেরী থেকে নেওয়া । এর অর্থ কি দাড়ায় ?
তয়া মুখটা উজ্জল হয়ে গেল
-এর মানে ছেলেটা পাকলিক লাইব্রেরীর রেজিস্টার্ড মেমবার । কিন্তু ....
তয়ার মুখটা খানিকটা মলিন হল
-কিন্তু লাইব্রেরীতে তো কয়েক হাজার সদস্য । কি করে বের করলি ?
-এইতো মামা এখানেই আসল খেল ! শোন তাহলে ! যেহেতু ছেলেটার হাতে ঐ দিন বইটা দেখলাম তার মানে ছেলেটা ঐ দিনই বইটা লাইব্রেরী থেকে নিয়েছে । কিংবা দু একদিন আগে । আর তুইতো জানিস প্রতিদিন কোন কোন লাইব্রেরী থেকে কোন কোন বই বাইরে গেল কে কে নিল তার একটা হিসাব থাকে ।
তয়া মাথা ঝাকাল । কিছুটা বুঝতে পারছে ।
-তারমানে ঐ দিনের লিষ্টটা হাতে পেলেই হল । ওখান থেকে দেখা যাবে অপু তানভীরের "টিয়াপাখির গল্প" বইটা কে নিয়েছিল ।
মীম হেসে ফেলল । বলল
-এই তো বুঝে গেছিস । কিন্তু লাইব্রেরিয়ান তো এসব তথ্য সহজে দিবে না ।
-তাহলে কি করলি ?
মীম আবার হাসল ।
-এখানেই তো সুমনের কাজ । তুই তো জানিস সুমন কম্পিউটার এক্সপার্ট । নিমিশেই যে কোন কম্পিউটার হ্যাক করে ফেলে !
তয়া চোখ বড় বড় করে বলল তোরা কি পাকলিক লাইব্রেরীর কম্পিউটার হ্যাক করেছিস নাকি ?
-না করলে কি চলত বল ?
-কি বলিস ?
তয়া অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছে ।
-সুমনই সব তথ্য বের করেছে । ছেলেটার নাম ঠিকানা কোথায় পড়ে !
তয়া মীম কে জড়িয়ে ধরল আনন্দে । বলল
-তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো ! তোরা কি খাবি বল ? যা চাবি তাই দিবো !
-আচ্ছা ঠিক আছে এখন চল ।
-কোথায় ?
-আরে আশ্চার্য তন্ময়ের সাথে দেখা করবি না ? তোর যা অবস্থা হয়েছে । ওর সাথে কথা না বললে তুই আর বাঁচবিই না মনে হচ্ছে !
-কিন্তু ওকে কোথায় পাবি এখন ?
-আরে ছেলেটা আমাদের ইউনিভার্সিটিতেই পড়ে । সুমন কে দিয়ে খোজ খবর নিয়েছি ।
প্রতিদিন বিকালবেলা ছেলেটা ঐ মাঠটার কোনায় বসে খেলা দেখে । চল চল জলদি চল । ছেলেটা হয়তো এতক্ষনে চলে এসেছে ।
ওয়া যখন মাঠে পৌছাল তখন সত্যিই দেখলো তন্ময় মাঠটার এককোনায় বসে আছে । চোখটা মাঠের খেলার দিকে ।
তয়া আবার একভাবে তাকিয়েই থাকল তন্ময়ের দিকে ।
-কি হল তাকিয়েই থাকবি নাকি ?
-কি করবো ?
-আরে কি করবো মানে ? কাছে যা । কথা বল ।
-যাবো ?
তয়া খানিকটা ইতস্তত করতে থাকে ।
-যা ।
মীম এক প্রকার জোর করেই পাঠিয়ে দেয় ।
তয়া দুরুদুরু বুক নিয়ে একদম তন্ময়ের সামনে গিয়ে দাড়াল । কি বলবে ভেবে পেল না ও ।
তারপর আস্তে করে তন্ময়ের পাশে বসল ।
তন্ময় একটু চমকালো । এভাবে অচেন একটা মেয়ে পাশে বসলে যে কোন ছেলেই চমকাবে !
তয়া একটু ইতস্তত করল । তারপর খানিকটা লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল
-হাই
আমার কথাঃ
অনেকদিন পর পোষ্ট দিলাম ! সবাই কেমন আছেন ! আমিতো খুব ভাল আছি । আজই এলাম বাসা থেকে !
গল্পের মধ্যে আমি একটু চালাকী করেছি । নিশ্চই বুঝে ফেলেছেন এতোক্ষনে ! আসলে গল্পের বইয়ের নামটা আমমি কোন বিখ্যাত লেখকের দিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তারপর মনে হল কি দরকার ! আমি লিখছি আমার গল্প । নিজের নামটাই না হয় লিখি । তবে আমার মনে আশা আছে টিয়াপাখির গল্প নামে সত্যি সত্যিই একটা বই আমি বের করবো । ১০ বছর ২০ বছর যা লাগে লাগুক !! সবাই ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৪:৩৩