যদিও ও আমার বন্ধু তবুও তো একটা মেয়ের কপালে চট করে হাত দেওয়া যায় না ।
হাত দেওয়া ঠিকও না ।
তবুও ওর কপালে হাত রাখলাম । বেশ উত্তাপ । জ্বর বোধহয় ভাল করেই এসেছে । আমি বললাম
-তোমার গায়ে তো জ্বর ।
-হুম ।
-তাহলে আসলে কেন ?
-পরীক্ষা ছিল ।
-ও ।
-অপু আমার খুব খারাপ লাগছে । আমি তোমাকে ধরে হাটবো একটু ?
-আচ্ছা সমস্যা নেই । ধর । আমার হাত ধর ।
নিশি আমার হাত ধরল । ঠিক তখনই কেমন জানি একটা শিরশিরে অনুভূতি পুরো শরীর জুরে বয়ে গেল ।
কেন গেল ঠিক জানি না । নিশি আমাকে ধরেই হাটতে লাগল । আমি নিশিকে বললাম
-বাসে কি উঠতে পারবে এ শরীর নিয়ে ? বাসে যে পরিমান ভিড় !
নিশিকে খানিকটা অসহায় মনে হল । বলল
-কি আর করা ? বাসায় তো যেতে হবে !
কিন্তু বাসগুলোর যা অবস্থা আর যে পরিমান ভীড় , নিশি কিছুতেই উঠতে পারবে না ।
আর উঠলেও ভিতরে যে পরিমান গরম ওর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে ।
আমি রিক্সা ঠিক করলাম । একেবারে বাসা পর্যন্ত রিক্সা ঠিক করতে দেখে নিশি বলল
-এতো দুর রিক্সায় যাবে ?
আমি কিছু না বলে কেবল হাসলাম ।
-আমি বাসে যেতে পারবো ।
-পারবে ভাল কথা । এখন চুপ করে থাকো ।
খানিকটা কর্তিত্বের সুরে বললাম । নিশি আর কোন কথা বলল না ।
তবে ওর চোখে কেমন যেন একটা দৃষ্টি ছিল । কেমন একটা চোখে ও আমার দিকে তাকাল । শরীর খারাপ বোধহয় এই জন্য এমন মনে হচ্ছে । রিক্সায় উঠে ও হুড তুলে দিতে বলল ।
সত্যি কথা কি বলব আমার একটু অস্বস্তি লাগছিল বটে ।
নিশির এর আগে কয়েকবার রিক্সায় উঠেছি বটে কিন্তু এমন ভাবে কখনও উঠিনি ।
আর নিশি এখনও আমার হাত ছাড়ে নি । খানিক রিক্সা চলার পর নিশি বলল
-আমার শরীরটা আরো খারাপ লাগছে আমি তোমার কাধে মাথা রেখে একটু শোব ?
বলে কি এই মেয়ে !
আমি অস্বস্তির চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছালাম । আমার জবাবের অপেক্ষা না করে নিশি আমার কাধে মাথা রাখল ।
আমার অস্বস্তিটা আর একটু বেড়ে গেল । এর আগে আমি কখনও কোন মেয়ের এতো কাছে আসি নি । বুকের স্পন্দন যেন প্রত্যেক মুহুর্তে আরো দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে ।
আমার সব থেকে ভয় লাগছে এই ভেবে যে যদি এখন আমার ইউনিভার্সিটির কেউ দেখে ফেলে । কি ভেবে বসবে কে জানে ?
আমি বললাম
-তোমার কি খুব খারাপ লাগছে ?
-হুমম !
-আচ্ছা তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো ।
অস্বস্তি লাগলেও একটা ভাল লাগার অনুভূতিও ছিল সাথে সাথে ।
এই যে নিশি আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে কয়দিন আগেও এটা আমি ভাবতেই পারতাম না । ভাববো কিভাবে ওকে তো আমি ঠিক মত চিনতামই না ।
বেশিদিন আগের কথাও না আমি প্রতিদিন ভার্সিটিতে যেতাম বাসে করে । বাসা থেকে বাস স্টান্ডটা একটু দুরে হওয়া একটু পথ হাটতে হত । একটু বেলা হলেই ভীড় হত বলে আমি একটু সকাল সকালই রওনা হতাম ।
কিছু দিন যাবার পর লক্ষ্য করলাম আমাদের এলাকা থেকে আর একটা মেয়ে ঠিক আমার মতই যাওয়া আসা করে ।
এবং মেয়েটা আমার ইউনিভার্সিটিতেই পড়ে ।
লম্বায় প্রায় আমার সমান । গায়ের রং উজ্জল শ্যামল । অবশ্য ফর্সাও হতে পারে । কারন মেয়েটা বোরখা পরে । ইরানী বোরখা । মুখটা স্কার্প দিয়ে ঢাকা । তাই খুব ভাল ভাবে বোঝার উপায় নেই ।
যা হোক আস্তে আস্তে মেয়েটার উপর আগ্রহ তৈরি হতে লাগল । আর আমার কেন জানি মনে লাগল যে আমি যেমন মেয়েটার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছি মেয়েটাও ঠিক তেমনি আগ্রহী হয়ে উঠছে । আমি যদি একটু আগে পৌছাতাম মেয়েটার জন্য ওয়েট করতাম । মেয়েটা যে বাসে উঠতো আমিও সেটাতে উঠতাম ।
আমার কেন জানি মনে হল মেয়েটাও আমার জন্য ওয়েট করতো । কিন্তু বিশ্বাস হত না । মেয়েটা কেন আমার জন্য খামোখা ওয়েক করবে !
কিন্তু একদিন আমি বিশ্বাস করলাম ।
ঐ দিন আমরা দুইজনই বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম । বাস আসতে দেখে টিকিট কাটার জন্য আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানি ব্যাগ আনতে ভূলে গেছি ।
দুর !
এখন আবার যেতে হবে বাসায় !
মেয়েটা আমার পকেটে হাত দেওয়া দেখে কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিল । বাস চলে গেল ।
কিন্তু মেয়েটা বাসে উঠল না ।
আমি আবার বাসায় যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক এমন সময় মেয়েটা খানিকটা ইতস্তত করে বলল
-মানি ব্যাগ আনতে ভূলে গেছ ?
-হুম ।
আমি বোকার মত হাসলাম ।
-এখন কি করবা ?
-যাই বাসায় গিয়ে মানি ব্যাগ নিয়ে আসি !
মেয়েটা বলল
-কিছু মনে না করলে আমি তোমার টিকিট টা কেটে দেই ?
এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল ।
সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল ।
আমি না করতে পারলাম না । ঐ দিন এক সাথে বাসে করে ইউনিভার্সিটিতে গেলাম । এমন কি সকাল বেলার নাস্তাটাও ও ই করাল ।
তারপরই আস্তে আস্তে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে । কিন্তু দুঃখের একটা বিষয় হল ওর চেহারাটাই আমি ভাল করে দেখতে পারি নি এখনও । সব সময় ও বোরখা পরে থাকে আর আর স্কার্প দিয়ে ওর মুখ ঢাকা থাকে ।
বাসায় পৌছে দেবার পর নিশি খুব কৃতজ্ঞতার চোখে তাকাল আমার দিকে । কিন্তু আমি যেন আর কিছু দেখতে পেলাম ওখানে । হয়তো আমার মনের ভুল ।
বাসায় এসে গোছল করে খাওয়াদাওয়া করে নিলাম । শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম এমন সময় নিশির ফোন ।
-কি কর ?
গলা বেশ স্বাভাবিক মনে হল । আমি বললাম
-টিভি দেখছি । তোমার শরীরের অবস্থা কেমন ?
-এখন ভাল । গোছল করার পর ভাল লাগছে ।
-ঔষধ খেয়েছ ?
- খাওয়া লাগবে না । এমনি ঠিক হয়ে যাবে ।
-বলেছে তোমাকে !
-উহহ শোন না !
-বল ।
-বিকেলে ফ্রী আছো ?
-এইতো আছি । কেন ?
-আমাকে একটু লেক পাড়ে নিয়ে যাবা ?
-লেক পাড়ে ? তোমার না শরীর খারাপ ?
-না । আমার শরীর ভাল হয়ে গেছে । আর তুমি থাকলে আমার কিছু হবে না ।
নিশির এই কথাটার মানে আমি ঠিক বুঝলাম না । নিশি এমনটা কেন বলল !
-কি হল নিয়ে যাবা না ?
-হুম । যাবো ।
বিকেল বেলা ওর বাড়ির সামনে গিয়ে ফোন দিতেই ও নেমে এল । আমি ভেবেছিলাম হয়তো বোরখা পরেই আসবে কিন্তু ও যখন নিচে নামল আমার বিষম খাওয়ার মত অবস্থা ।
ও আজ বোরখা পরে নি । সাদা রংয়ের একটা চুড়িদার পরেছে । আমি কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলাম না । কেবল তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে ।
বোরখা পরা অবস্থায় ওর চোখ দেখে বোঝা যেত যে ও বেশ সুন্দর । তাই বলে এতো সুন্দর হবে আমি ভাবতেই পারি নি । সত্যি সত্যিই হা করে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । নিশি কাছে এসে বলল
-কি দেখছো অমন করে ?
আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না । স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগল । কেবল এই কথাটাই বলতে পারলাম যে
-তুমি এতো সুন্দর কেন ?
নিশি হাসল । বলল
-এটা কেমন প্রশ্ন হল ? কেন এতো সুন্দর ? এটা কি আমার হাতে নাকি ? চল রিক্সা নিই ।
-চল ।
রিক্সায় উঠে আমার মনটা খানিকটা খারাপ হল । সকালবেলা কি সুন্দর নিশি আমার হাত ধরে ছিল । আমার কত কাছে বসে ছিল । আর এখন !
-কি হল ?
-কিছু না ।
-তোমার চেহারাটা এমন কেন লাগছে ?
-না কিছু না ।
-বল আমাকে ।
-না কিছু না ।
-বল আমাকে । প্লিজ বল ।
আমি অন্য দিকে তাকাই । চারপাশের মানুষ জন দেখতে চেষ্টা করি । হঠাৎ নিশি আমার হাতটা ধরল ।
-এবার ?
আমি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালাম ।
কি অদ্ভুদ সেই চোখের দৃষ্টি ! আর কি অদ্ভুদ ভাবেই না আমার দিকে তাকিয়ে আছে !!
আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না । কেবল তাকিয়েই রইলাম ওর দিকে । নিশিও ঠি একই ভাবে তাকিয়ে রইল আমার দিকে ।
এই তাকিয়ে থাকার যেন কোন শেষ নাই
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১২ রাত ১০:২৭