-নূপুর একটু বোঝার চেষ্টা কর । আমি আজ সারাদিন দিন বাইরে । একটু আগে বাসায় এসেছি । খুব ক্লান্ত । এখন কিভাবে আসবো বল ?
-কিছু করতে হবে না তোমাকে । আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি । বেশি সময় তো লাগবে না ।
-নূপুর !
-প্লিজ অপু । তুমি কথা দিয়েছিলে ।
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে । কিন্তু বেশিক্ষন কিন্তু থাকবো না ।
-ওকে । কেবল রাতের খাবার খেয়ে চলে যাবে । আর কিছু লাগবে না । আমি এখনই গাড়ি পাঠাচ্ছি ।
আমি ফোন রেখে দিলাম । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় সাড়ে দশটা বাজে ।
এতো রাতে কি নূপুরে বাড়িতে যাওয়া ঠিক হবে ? কিন্তু না গিয়ে উপায়ও বা কি ?
সকালবেলা কথা দিয়েছিলাম যে বিকেলে দেখা করবো কিন্তু নিশির জন্য আর হয়ে ওঠে নি ।
নিশি আজ কেমন যেন অদ্ভুদ আচরন করছিল । একটু যেন বেশিই কেয়ারিং !
নিশি এমনিতে কেয়ারিং কিন্তু আজ যেন একটু বেশি বেশি করছিল ।
এটা একটু অস্বাভাবিক ! যাক আমি অত কিছু ভাবলাম না ।
নূপুরে বাসায় যাওয়ার জন্য প্রত্তুতি নিলাম ।
আচ্ছা নূপুরের প্রতি কি আমি খানিকটা দুর্বল হয়ে পরছি ? কিছু সময় ধরে কারো সাথে মিশলে তার উপর একটু দুর্বলতা তো আছে ! আমার নূপুর আমার উপর যেমন ভাবে দুর্বল সেটাকে উপেক্ষা করাটা খানিকটা দুষ্কর ।
আমি মাঝে দুজনের মধ্যে কমপেয়ার করে ফেলি ।
যদিও কমপেয়ার করাটা একদমই ঠিক না ।
নিশির সাথে আমার রিলেশনটা স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে । নিশি আমাকে ভালবাসে কেবল আমার জন্যই ।
কিন্তু নূপুরের ব্যপারটা এরকম নয় । নূপুর আমার উপর দুর্বল তার কারন আমি না । তার কারন কেবল আমার চেহারাটা ওর হাসবেন্ডের মত ।
যদি অন্য কারোর চেহারা ঐ ভদ্রলোকের মত হত তাহলে তো নূপুর তার দিকে ঝুকে পরতো ।
সেখান দিয়ে নিশি একমাত্র !!
আমার জীবনে আর কারো অবস্থান থাকাটা ঠিক না ।
কিন্তু নূপুরকে উপেক্ষা করাটা খানিকটা কষ্টকর হয়ে উঠছে ।
জানি নি সামনে কি আছে ! আমার সব থেকে ভয় লাগে নিশি যদি ব্যাপারটা জানতে পারে তাহলে ব্যাপারটা কিভাবে নিবে কে জানে ?
তবে আমার বিশ্বাস নিশি বুঝবে ।
গাড়ি থেকে নূপুরের ফ্লাটের সামনে নামলাম তখন রাত প্রায় সাড়ে এগারো টা । ওর ফ্লাটের সামনে দাড়িয়ে খানিকটা চমকালাম । ও দরজা ধরে দাড়িয়ে আছে ।
দাড়ানোর ধরনটা একটু ভিন্ন ! তার সাথে ওর চোখের দৃষ্টিটাও কেমন যেন একটু অন্য রকম ।
আর সব থেকে অস্বাভাবিক যে ব্যাপারটা সেটা হল ওর পোষাক !
আমি নূপুরকে সাধারনত শাড়ি অথবা থ্রী পিচে দেখেছি কিন্তু আজ ?
ও মাই গড !
নূপুর কেবল একটা টপস আর সাদা রংয়ের ল্যাগিংস পরে আছে ।
এমন কি ওরনাও পরে নি । কেমন একটা উগ্র উগ্র ভাব রয়েছে ।
আমার মনটা আবার একটু কু ডেকে উঠল । ওর ঘরে ঢুকতে আমার কেমন একটা অস্বস্থি লাগছে । নূপুর বলল
-এসো !
আমার অস্বস্তি আরো খানিকটা বেড়ে গেল । নূপুর বলল
-আমাকে কেমন লাগছে ?
কি রে ভাই এটা আবার কেমন প্রশ্ন হল ?
আর আজকে মেয়ে গুলার হইলো কি ? নিশিও কেমন আদুরে আদুরে আচরন করছিল । এ ও ওরকম শুরু করেছে । আমি বললাম
-ভাল লাগছে ।
-জানো ও আমার টপস পরা অনেক পছন্দ করতো । আজ অনেক দিন পর এমন পোষাক পরলাম ।
ও মানে নূপুরের হাজবেন্ড ! কিন্তু ঐ বেটা পছন্দ করলে আমার কি ? আমার সামনে এমন পোষাক পরেছে ? আমি বললাম
-কেন ?
-তোমার জন্য !
আমার জন্য ! বলে কি এই মেয়ে ? এই মেয়ের ভাব চক্কর আমার মোটেও ভাল ঠেকছে না ।
আর এতো রাতে এর বাসায় আসা আমার একদম ঠিক হয় নি ! বললাম
-দেখো নূপুর ....
নূপুর আমাকে কথা শেষ করতে না ধিয়ে বলল
-প্লিজ অপু আজকে আমার একটা আবদার রাখো । আমি আর কোন দিন তোমার কাছে কিছু চাই বো না । প্লিজ ।
একথা বলতে বলতেই দেখলাম নূপুর আমাকে জড়িয়ে ধরতে আসলো ।
-নূপুর থামো । থামো বলছি ।
-কি হবে অপু ?
ওর চোখে কেমন এক আকুতি । একবার মনে হল ওর এই আকুতিকে প্রশ্রয় দেই । পরক্ষনেই নিজেকে খানিকটা ধিক্কার দিলাম ।
সিঃ এসব কি ভাবছি আমি । খুব কঠিন গলায় বললাম
-থামো বলছি । কি হবে তুমি বুঝতে পারছো না ? এরকম করলে কিন্তু আমি তোমার সাথে আর যোগাযোগ রাখবো না ।
এবার দেখলাম নূপুরের চেহারাটা কেমন যেন এগ্রিসিভ হয়ে উঠল । নূপুর বলল
-তুমি কিন্তু এটা ঠিক করছো না । আমার চাওয়ার কি কোন মূল্য নাই তোমার কাছে ? তুমি যদি আমার কথা না শোন তাহলে কিন্তু আমি নিশিকে সব কিছু বলে দিবো ।
-কি বললে তুমি ?
আমার রাগ হয়ে গেল হঠাত্ ।
এই মেয়ের এতো বড় সাহস ! আমাকে ব্লাকমেইল করতে চায় । বললাম
-কি বললে তুমি আবার বল ? বলে দেবে ? কি বলে দেবে ? তোমার সাথে আমি কি করেছি যে বলে দেবে ।
রাগটা আসতে আসতে বাড়তে থাকলো । আবার বললাম
-শোন নূপুর ! তোমাকে আমার চেনা হয়ে গেছে ! নিশিকে সব কিছু বলে দাও । আমার কোন আপত্তি নাই । নিশিকে আমি মেনেজ করে নেবো । কিন্তু আজকের পর থেকে তোমার সাথে আমার কোন যোগাযোগ থাকবে না এটা মনে রেখ ।
আমার রাগ বাড়তেই থাকল । সত্যি সত্যি আমার রাগ হতে লাগল খুব ।
এই জন্য মানুষকে লাই দিতে নাই । বসতে দিলে এরা শুতে চায় !!
নূপুর মনেহয় বুঝতে পারল আমি রেগে গেছি । গলা নরম করে বলল
-আই এম সরি অপু । আমি ... আমি ...
-নূপুর আমি এখন বাসায় যাবো ।
-প্লিজ অপু যেও না । আমি বুঝতে পারি নি । আমি একদম বুঝতে পারি নি !
বলে নূপুর কাঁদতে লাগল ।
ঐ যে আবার সেই একই হাতিয়ার । মেয়েদের চোখের জল দেখলে ছেলেরা একটু দুর্বল হয়ে ওঠা ।
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই ভেতরের ঘর থেকে নিশি বের হয়ে এল ।
নিশি !
নিশি !
নিশি এখানে কি করে ?
নিশি এখানে কিভাবে এল ?
নিশি সরাসরি আমার কাছে এসে বলল
-চল এখান থেকে । আই হেভ লিসেন্ড এনাফ ।
তারপর নূপুরের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি জিততে পারবে না ! তুমি জিততে পারো নি ।
নিশি আমাকে নিয়ে বের হয়ে চলে এল ।
রাত বেশ হয়ে গেছিল । রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা । আমি রিক্সায় নিশির পাশে বসে আছি । খানিকটা ভয় ভয় করছে । জানি না ও কি বলবে । প্রথমে কিছুক্ষন চুপ করেই ছিল । নিশির মুখটাও গম্ভীর ছিল । হঠাত্ বলল
-ওর কত দিন ধরে লুকাচ্ছ আমার কাছ থেকে ? সব বল ।
আসতে আসতে সব বললাম ওকে । সব শেষে বললাম
-তুমি রাগ করছো ? আসলে আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু....
-প্রথমে একটু করেছিল । কিন্তু এখন আর রাগ নাই । তবে আমার মনে একটা বিশ্বাস ছিল যে তুমি আনফেয়ার কিছু করতে পারবে না । কিন্তু নূপুর যখন ফোন করে বলল যে তুমি ওর প্রতি ইনভল্ভ হয়ে গেছো আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল ।
-ফোন করে কি বলেছে ?
-আমাকে ফোন করে বলল যে তুমি আর আমাকে ভালবাসো না । তুমি ওকে ভালবাসো । এবং সে এটার প্রমান দিবে । তারপর আমাকে বাসায় ডেকে নিয়ে গেল ।
আমি কিছুক্ষন কিছু কথা বলতে পারলাম না । নূপুর নিশির সাথে আমার ব্রেক আপ করিয়ে নিজের পথ ক্লিয়ার করতে চেয়েছিল । কি প্লানিং করেছিল । আমি যদি ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেতাম ....
আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না । নিশি বলল
-জানো আমার মনে এই বিশ্বাসটা ছিল যে তুমি আমাকেই ভালবাসো । এজন্য আমি নূপুরকে সরাসরি বলেছিলাম যে তুমি এমন কিছুই করবে না । আমি জিতেছি । কিন্তু আমি আর রিস্ক নেবো না ।
-মানে কি ?
-মানে হল পুরুষ মানুষের বিশ্বাস নেই । আজ আমাকে না জানিয়ে ওর সাথে সম্পর্ক করেছ ! কাল না জানি কি করবা ?
-নিশি কি বলছ এসব ? আমি এরকম কিছুই করি নি ।
-কর নি ! করতে কতক্ষন ! পুরুষ মানুষের বিশ্বাস নাই ।
-নিশি !
-শোন বলেছি না আর আমি রিস্ক নেবো না । কালকেই আমরা আমরা বিয়ে করবো । এখনই বিয়ে করতাম । কিন্তু এখন কাজী পাওয়া যাবে না । আগে বিয়ে করে নেই তারপয় মজা বুঝাবো ।
আমি চুপ করে থাকি । নির্জন রাস্তা দিয়ে রিক্সাটা এগিয়ে চলে টুংটাং করে শব্দ করতে করতে ..
আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:২৫