-কি কর ?
-আমি ? এইতো যমুনা সেতুর উপর দাড়িয়ে আছি । এখনই লাফ দিবো ।
নূপুর কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো । বোঝার চেষ্টা করছে আমি ঠাট্টা করছি কিনা ?
-অপু কি বলছ এসব ?
-আশ্চর্য তুমি যেমন প্রশ্ন করবে তেমন করে উত্তর দিবো না ? এই সাত সকালে মানুষ কি করে ? নিশ্চই ঘুমাবে ! তাই না ?
নুপুর খানিকটা অভিমানের সুরে বলল
-তুমি সবসময় আমার সাথে এমন কেন কর ?
-কেমন করি ? যেমন প্রশ্ন করবে তেমন উত্তর দিবো না ?
-হ্যা । আমিতো এমন কথাই বলি ? এই প্রশ্নটা যদি নিশি করতো তাহলে কি এমন করে উত্তর দিতে ?
কথাটা অবশ্য সত্য । আমি নুপুর কে বললাম
-দেখো নুপুর আমি তোমাকে আগেই বলেছি যে নিশির সাথে তুমি নিজেকে কমপেয়ার করবা না । ওর অবস্থান আর তোমার অবস্থান এক না ।
কথাটা বেশ রূঢ় ভাবেই বললাম । কিন্তু পরক্ষনেই মনটা খারাপ হয়ে গেল । মনে হল সকালবেলা করে মেয়েটার মনটা খারাপ না করালেও পারতাম ।
ফোনের ওপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না । নূপুর নিশ্চই এখন কাঁদছে ।
আমার একটু কঠিন কথাতেই মেয়েটার চোখে জল চলে আছে । আমি কণ্ঠ খানিকটা নরম করে বললাম
-নূপুর !
কোন সাড়া শব্দ নাই । আবারও ডাক দিলাম ।
-কথা না বললে কিন্তু ফোন রেখে দিবো ? শুনতে পাচ্ছ তুমি ?
নূপুর ধরা গলায় বলল
-শুনতে পাচ্ছি ।
-কাঁদছো কেন ?
-কাঁদছি না ।
-অবশ্যই কাঁদছ ?
এবার খানিকটা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম ।
-আমি কাঁদলে তোমার কি ? আমি কি তোমার কিছু ?
একটু খারাপই লাগল নিজের কাছে । বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছ , সরি !
-সরি বলার দরকার নাই । আমি কষ্ট পাই কি পাই না এসব নিয়েতো তোমার কোন মাথা ব্যাথা নাই । আমিতো তোমার জীবনে ইম্পর্টেন্ট কেউ নই ।
আমি বুঝলাম নূপুর বেশি অভিমান করেছে । আর খানিকটা অবাকও হচ্ছি । আগে মেয়েটা এমনতো করতো না । আর এমনটা করার কথাও তো ছিল না ।
যতই দিন যাচ্ছে নূপুরের আচরন কেমন বদলে যাচ্ছে । আর আমি দিন দিন চিন্তিত হয়ে উঠছি !
-আচ্ছা বল কি করলে তোমার মন ভাল হবে ?
এবার আরো একটু ফোঁপানোর আওয়াজ পেলাম । এই মেয়ে গুলো সবসময় এরকম করে ছেলেদের কাছ থেকে জিতে যায় । বললাম
-বল কি করলে তোমার মন ভাল হবে ??
-কিছু করতে হবে না ।
-দেখো নূপুর এমন সুযোগ কিন্তু আর আসবে না । নিশি কয়েক দিন ধরে আমার সাথে রাগ করে কথা বলছে না । সুতরাং ও দেখা করতে চাইবে না । পরে কিন্তু দেখা করতে চাইলেও পারবে না ।
নূপুর কিছুক্ষন ভাবলো । আমি খুব ভাল করে জানি ও দেখা করবেই । আমার সাথে দেখা করার সুযোগ কি ও মিস করে !
-আচ্ছা বিকাল বেলা দেখা করি ?
আচ্ছা ।
-অনেক ক্ষন থাকবো কিন্তু ।
-আচ্ছা বাবা থাকবো ।
নূপুর বাচ্ছা মেয়েদের মত হেষে উঠল ।
ফোন রাখার পর বাথরুমে ঢুকলাম । আর জগতের সব জটিল ভাবনা বাধরুমে ঢুকলেই আমার মনে পড়ে । আচ্ছা নূপুরের সাথে এভাবে মেশাটা কি ঠিক হচ্ছে?? অনেক বার এই প্রশ্নটা আমি নিজের কাছে করেছি । কিন্তু ভাল করে উত্তর পাইনি । একবার মনে হচ্ছে আমি যা করছি ঠিক করছি ।
নুপুরের সাথে মেলামেশাটা অন্যায় না । আরেকবার মনে হচ্ছে কাজটা মনেহয় ঠিক হচ্ছে না । নিশি যে দিন জানতে পারবে সেদিন যে কি করবে কে জানে ? কিভাবে নিবে এইটাই হল ব্যপার !!
নুপুরের ব্যাপরে আমি সব সময় কনফিউজড । মেয়েটা আসলে যে কি চা্য আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । প্রথমে কেবলে বলেছিল যে ওর সাথে কেবল যোগাযোগ রাখলেই ও খুশি । আর কিছু ও আমার কাছ থেকে চায় না । মেয়েটার ঐদিন কার আকুতি আমিম কিছুতেই ফেলতে পারি নি ।
কিন্তু দিনদিন ওর আচরন বদলাচ্ছে ! দিনদিন ও এমন একটা ভাব শুরু করেছে যেন আমি ওর বয়ফ্রেন্ড ! অবশ্য নূপুর আমাকে নিজের বয়ফ্রেন্ডই মনে করে ।
কি অদ্ভুদ ভাবেই না নূপুরের সাথে পরিচয় হয়ে গেল । আমি অন্তত ভাবি নি কোনদিন এমনটা হতে পারে !! তারপরই ওর সাথে যোগাযোগ শুরু । বলতে গেলে কেবল ওর আগ্রহেই ওর সাথে মেলামেশা শুরু । নুপুরের সাথে পরিচয় পর্বটা এখান থেকে জানতে পারবেন
ঐ দিনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিন অফিসের পর নূপুর আমার সাথে দেখা করতে আসতো । প্রথম প্রথম এড়িয়ে যেতে চাইতাম , কিন্তু কেন জানি নিজের কাছেই খারাপ লাগতো ।
প্রতিদিন অফিস থেকে বের হয়ে দেখতাম মেয়েটা দাড়িয়ে আছে ! সামনে দিয়ে চলে গেলেও ডাক দিত না । কেবল দাড়িয়েই থাকতো ! আর যখন ওর চোখের দিকে চোখ পড়তো কেমন টা অপরাধবোধ কাজ করতো নিজের মধ্য !! কেন কে জানে?? তাই নিজেই ওর সাথে কথা বলা শুরু করলাম । দেখতাম আমার সাথে কথা বলার সময় ওর চোখে মুখে কেমন একটা আনন্দের একটা আভা থাকতো । এটা আামর কাছে ভাল লাগতো । আমার একটু কথা বলাতে যদি কেউ আনন্দ পায় তাহলে ক্ষতি কি??
একদিন ওকে কিজ্ঞেস করলাম
-আচ্ছা তুমি প্রতি দিন যে এসে দাড়িয়ে থাকো এটা কিভাবে পারো?? ব্যাংকের চাকরি করে এতো জলদি কিভাবে বের হও অফিস থেকে
নূপুর হাসলো । বলল
-আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি ।
-সেকি !! কেন ?
-আামর চাকরি করার দরকার হয় না । চাকরি করতাম কেবল সময় কাটানোর জন্য । আর এখন সময় কাটে .....
নূপুর কথাটা শেষ না করে হাসলো । আমি বললাম
-দেখো, তুমি নিশির কথা নিশ্চই জানো !!! আমি ....
আামকে শেষ করতে না দিয়ে নুপুর বলল
-আমমি সব জানি । আমাকে কিছু বলার দরকার নাই । আমি তোমার কাছে কিছু চাইবো না । কখনই কোন আবদার করবো না । কেবল আমার সাথে একটু যোগাযোগ রাখো । তোমার সাথে কথা বললেই আমি খুশি ।
-খুশি হলেই ভাল ।
কিন্তু আমি নূপুরে এমনটা করার পেছনে কোন কারন তখনও জানতাম না । মানে থিক মত ধরতেই পারছিলাম না । দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে আমার সাথে কথা বলার ব্যাপারে ওর কেন এতো আগ্রহ??
কারনটা জানতে পারলাম যেদিন ওর বাসায় গেলাম । ঢাকার বেশ অভিজাত এলাকাতেই ।
বাধরুম থেকেই শুনতে পেলাম মোবাইলে ফোন এসেছে । রিংটোন শুনেই বোঝা যাচ্ছে নিশি ফোন করেছে ।
কিন্তু ওর তো ফোন করার কথা না । গত পরশুদিন নিশির সাথে বেশ ভাল রকমই ঝগড়া হয়েছে । আর ঝগড়া হলেই নিশি আমাকে ফোন দেওয়া বন্ধ করে দেয় ।
যতক্ষন না আমি অনুনয় বিনয় করে ক্ষমা চাইবো ততক্ষন তার ফোন দেওয়া বন্ধ থাকবে । সেই তুলনায় আজ ওর ফোন আসা টা একটু অন্য রকম ।
তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বের হয়ে রিসিভ করলাম । ফোন রিসিভ করেও ওপার থেকে কোন সাড়া শব্দ পেলাম না ।
দুতিন বার হ্যালো বলার পরও কোন উত্তর এল না । আরে কথা যদি নাই বলবি তাহলে ফোন দেওয়ার মানে কি ?
আমি খানিকটা অধৈর্য হয়ে বললাম
-নিশি কথা না বললে কিন্তু ফোন রেখে দিবো ।
এ কথায় মনে হল কাজ হল ।
-তুমি অনেক কঠিক হয়ে গেছ !
কি রে ভাই আজ সবাই আমাকে এমন পাষান বলতেছে !
একটু আগে নূপুরও একই কথা বলল এখন নিশিও তাই বলছে ?
-আমি এমন কি বললাম ?
-আগে ঝগড়া হলে তুমি কত ফোন দিতে আর আজ দুদিন ধরে তুমি আমাকে ফোন দাও না । তুমি আর আমাকে ভালবাসো না ।
-এসব কেন বলছো ?
-তাহলে তুমি কেন ফোন দাও নি ? কেন দাও নি ?
-কাল আমি খুব বিজি ছিলাম । সত্যি বলছি । খুব বেশি বিজি ছিলাম ।
কথাটা সত্যি । আমি সত্যি কাল অনেক বিজি ছিলাম ।
-তা তুমি মিথ্যা বলছো । তুমি আর আমাকে ভালবাসো না ।
-না সোনাপাখি । প্লিজ এমন কথা বল না ।
আরো অনেক সোনাপাখি মধুসোনা বলতে হল তারপরই ও নিশি একটু শান্ত হল । তারপর বলল
-ঠিক আছে তুমি এখন বের হও । আজ সারাদিন তুমি আমার সাথে থাকবে ।
-সারাদিন ?
-কেন ? সারাদিন থাকলে কি সমস্যা ?
-না না কোন সমস্যা নাই । না মানে বিকেল বেলা আমার একটা এপোয়েন্টমেন্ট ছিল ।
-ক্যানসেল কর ।
-কিন্তু .........
-কোন কিন্তু না । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা ।
নিশিকে না বলার উপায় নেই । কিন্তু নূপুর কে যে কথা দিয়েছিলাম । কি আর করা ?
নূপুরকে ম্যানেজ করতে হবে ।
ও শুনবে ! আর না শুনলে আমার কিছু অবশ্য করার নেই । আমার কাছে নিশি খুব বেশি ইম্পর্টেন্ট ।
আর নূপুর !!
প্রথম প্রথম আমি খুব একটা অবাক হতাম । নূপুর আমার প্রতি এমন টান কেন অনুভব করত আমি ঠিক বুঝতাম না । একদিন অফিস থেকে বের হতে হতে বেশ দেরি হয়ে গেছিল ।
একবার মনে হয়েছিল যে নূপুর হয়তো বাইরে ওয়েট করছে ! বের হয়ে দেখলাম সত্যিই তাই ।
-এতোক্ষন ওয়েট কেন করছো ? একবার ফোন দিলে হত না ?
নূপুর হাসল ।
-তুমি ব্যস্ত ছিলে । তোমাকে বিরক্ত করতে চাই নি ।
ঐ দিন বেশ রাত পর্যন্তই ছিলাম ওর সাথে । যখন বাসায় যাবার সময় হল নিজ থেকেই ওকে বাসায় পৌছেদিলাম ।
বেশ অভিজাত এলাকায় ওর ফ্লাট । ও আমাকে প্রায় জোর করেই ওর ফ্লাটে নিয়ে গেল ।
প্রথমে না না করলেও যেতেই হল । আসলে এতো ওর বাসায় যাওয়াটা কেমন শোভন মনে হচ্ছিল না । কিন্তু তবুও গেলাম ।
পুরো ফ্লাট টা ঘুরে ঘরে দেখছিলাম , ওর বেডরুমে ঢুকেই খানিক টা ধাক্কার মত খেলাম ।
বাম পাশের প্রায় পুরো দেওয়াল জুরে নূপুরের বড় একটা ছবি । নূপুরকে জড়িয়ে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে । দুজনকেই খুব বেশি খুশি মনে হচ্ছে ।
একে বারে পারফেক্ট কাপল ।
আমার ধাক্কা লাগার কারন হল নূপুরের পাশের ছেলেটা দেখতে মোটামুটি আমার মত ! আমার থেকে একটু ফর্সা আর একটু স্বাস্থ্য ভাল । তাছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই ।
প্রথম চান্সে যে কেউ বলবে যে আমি যেন ছবিতে পোজ দিয়ে দাড়িয়েছি ।
আমি মোটামুতি বুঝতে পারলাম নূপুর কেন আমার প্রতি আমার প্রতি এমন অচরন করছে ।
নূপুর পাশে এসে কখন এসে দাড়িয়েছে টের পাই নি । হঠাৎ ওর উপস্থিতি টের পেলাম । ও নিজ থেকেই কথা বলা শুরু করল ।
-ও আমার হাজবেন্ড ! দুবছর আগে আমাদের বিয়ে হয়ে ছিল । যদিও পারিবারিক ভাবেই হয়েছিল কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সুমন আমার জীবনে এমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল ......
-তারপর ? কোথায় উনি ?
-নেই । মরে গেছে ?
নূপুর কেমন ভাবে কথাটা বলল যেন । আমি আর কিছু বললাম না । আমার মনে হচ্ছিল কথা গুলো ওকে কষ্ট দিচ্ছে ।
-জানো অপু ও যে নেই আমি এইটা মানতেই পারি না । তোমাকে যখন দেখি তখন মনে হয় যে আমার বিশ্বাসটা মিথ্যা না ।
বলতে বলতেই নূপুর আমাকে জড়িয়ে ধরল । কেমন ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল
-আমি তোমার কাছে কোন দিন কিছু চাইবো না । কেবল এই অনুভূতি টুকু কেড়ে নিও না । আমার বাঁচার অবলম্বন টুকু নিও না প্লিজ ।
ঐ দিন আমার মনটা খারাপ হয়েছিল খুব । খুব খারাপ লেগেছিল নূপুরের জন্য ।
আমার কেবল মনে হচ্ছিল আমার জন্য কেউ যদি একটু ভাল থাকে তাহলে দোষ কোথায় ?
নিশি ফোন রাখতে আরো সময় নিল ।
এখন কি করবো ?
একটু আগে নূপুর কে কথা দিয়েছি যে বিকালে ওর সাথে দেখা করবো । আর নিশি একটু পরই আমার সাথে দেখা করতে । কি করবো ??
নিশিকে না বলার উপায় নেই ।
আর নূপুর ! নূপুর নিশ্চই বুঝবে !! একটু মনখারাপ করবে হ্য়তো । কিন্তু কি করা?? নূপুরকে ফোন দিলাম ।
-বল !
-একটা কথা ছিল !
নূপুর খানিকটা সময় নিল । তারপর বলল
-নিশি ফোন দিছিল ?
-হুম ।
-বিকেলে দেখা করতে চেয়েছে ?
-হুম ।
-আচ্ছা ! নূপুর চুপ করে থাকল । আমার কেন জানি মনে হল ও এখ কাঁদবে !! হয়তো এরই মধ্যে ওর চোখে পানি চলে এসেছে ।
-আই এম সরি নূপুর ।
-না না ঠিক আছে ।
আমি আর বেশি কথা বাড়ালাম না । নূপুরের জন্য খারাপ লাগছিল । কিন্তু নিশির খারাপ লাগাটা আমার কাছে বেশি জরুরী ।
যদি উপরের লিংকে কাজ না হয় তাহলে এখানে আছে আগের পর্বটা !
বুঝতাছিনা লিংকটা কাজ করছে না কেন?? আগের গল্পটা আমার প্রোফাইলে গিয়ে পড়ে আসতে হবে । আগেরটা নাম : মেয়েটা আমার পিছে লাগছে ক্যান ?? আমি তো কিছু বুঝতাছি না !!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১২ রাত ১২:৩২