সময় দেখবে ।
বালিশের পাশেই ছিল মোবাইল । বাটন টিপ দিতেই ও একটু ধাক্কার মত খেল অবিশ্বাসের চোখে মোবাইল স্ক্রীনটার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন ।
Voice active call
আবীরের নাম লেখা ।
নিচে সময় উঠছে ।
3 . 19 . 58 ....59 .....00 .....01 .
ততক্ষনে ওর ঘুম পুরো পুরি কেটে গেছে ।
আবীর এখনও লাইনে আছে !!!
কাঁপা হাতে ফোনটা গালে কাছে এনে বলল
-হ্যালো ।
সঙ্গে সঙ্গেই ওপাশ থেকে আবীর বলল
-হ্যালো সোনাপাখি তোমার ঘুম ভেঙ্গেছে ?
নীলু কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারল না । ওর এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আবীর এই সাড়ে তিন ঘন্টা ওর কথা মত জেগে বসে থাকবে !! ওর কথা মত জেগে থাকবে!!!
নীলুর নিজেকে বড় অপরাধী মনে হল । এতোক্ষন বেচাড়া কে কেন জাগিয়ে রাখল ?
আবীর তো কেবল ওকে পনের মিনিটের মত অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিল । তার বদলে এতোক্ষন !
ওপাশ থেকে আবীর হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে । ওর কণ্ঠে রাগের ছিটে ফোটাও নেই । এতোক্ষন অপেক্ষা করার পরও আবীর একটুও রাগ করেনি ।
আর মাত্র পনের মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল বলে কি রাগটাই ও দেখাল আবীর সাথে ।
বেচারা একটা কথাও বলেনি । অপরাধীর মত মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল ।
নীলু লক্ষ্য করল ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে । এতো খারাপ লাগছে নিজের কাছে ।
বারবার মনে হচ্ছে কেন করতে গেল ও কাজটা ?
কেন ওকে ঘুমাতে দিল না ? বেচারা ঘুমাতে এতো পছন্দ করে ।
আর বিনা কারনে ও এতোক্ষন জাগিয়ে রাখল !
ঘটনা এমন কিছুই না । বিকেল বেলা আবীরে দেখা করার কথা ছিল । পাঁচটায় সময় দেওয়া ছিল ।
নীলু ঠিক পাচটার সময়ই পৌছে যায় কিন্তু আবিরের পৌছাতে একটু দেরি হয়ে যায় ।
তাতেই নীলুর সে কি রাগ । আবির যখন আসল নীলুর মুখ তখন অন্ধকার ।
আবির এসেই কান ধরল । বলল
-সরি । আসলে টিউশনি থেকে বের হতে হতে একটু দেরি হয়ে গেছিল । প্লিজ রাগ কর না ।
নীলু একটা কথাও বলল না ।
আবীর ওর আশে পাশে কত বার ঘোরাঘুরি করল ।
কতবার সরি বলল । তবুও একটা কথাও ও বলল না । আবীরের সাথে কোন কথা না বলেই বিকাল বেলা বাসায় চলে আসে ।
তারপর থেকে আবীর অন্তত এক হাজার বার ফোন করেছে । ও একটা বারও ফোন রিসিভ করে নি ।
অবশেষে ১২ টার দিকে ও ফোন রিসিভ করল । নীলু
-প্লিজ কথা বল । তুমি বিকাল থেকে একটা বারও কথা বলো নি । একটু কথা বল প্লিজ । সোনাপাখি আমার ।
-তুমি আমাকে কেন ওয়েট করালা ?
-আমার খুব ভুল হয়ে গেছে । আর কখনও হবে না এমন টা ।
-বুঝলাম হবে না । কিন্তু এখন কি করবো । তুমি আামকে কেন বসিয়ে রাখলে ? কেন ? আগে এই প্রশ্নের জবাব দাও ?
-আসলে আমি বুঝতে পারি নি যে টিউশনি থেকে বের হতে হতে এতো লেট হয়ে যাবে ?
-টিউশনি মাই ফুট! তোমার কাছে টিউশনি বেশি ইম্পর্টেন্ট নাকি আমি ?
-অবশ্যই তুমি!!
-তাহলে আমাকে ওয়েট করতে হল কেন?
আবীর কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না ।
-শোন, তোমার উপর আমার রাগ যাচ্ছে না কিছুতেই । তুমি আমাকে কেন অপেক্ষা করালা ?
- তুমি যা বলবে আমি তাই করবো । প্লিজ আমার উপর রাগ করে থেকো না । তুমি জানো না তোমার সাথে কথা না বললে আমার ভাল লাগে না । আমার সাথে একটু কথা বল ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । তুমি আমাকে অপেক্ষা করিয়েছিলে এখন তুমি অপেক্ষা করবে ।
-কিভাবে করবো ?
-আমি এখন ঘুমাবো । তুমি ফোনের লাইন কাটবে না । আমি যতক্ষন ঘুম থেকে উঠবো না তুমি ততক্ষন কানে ফোন লাগিয়ে বসে থাকবে । মনে থাকবে ?
- আচ্ছা । যদি আমি দেখি তুমি নেই তাহলে কিন্তু খবর আছে তোমার ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । আমি ঘুমাবো না ।
নীলু ভেবেছিল কিছুক্ষন অপেক্ষা করেই আবীর ফোন রেখে দিবে ।
এতোক্ষন যে সত্যি সত্যিই ওর জন্য ওয়েট করবে নীলু এটা ভাবতেই পারে না ।
-হ্যালো ।
আবীর খুব নমনীয় কন্ঠে বলল
-তোমার ঘুম মেঙ্গেছে ?
কোন কান্না চাপতে চাপতে নীলু বলল
-হুম ।
-আমি কিন্তু ঘুমাই নি । জেগে আছি । তুমি আর আমার উপর রাগ করে নেই তো ?
নীলু আর কান্না চেপে রাখতে পারল না । হু হু করে কেঁদে ফেলল ।
-আরে কি হল ? কাঁদছো কেন ? কি হল ? প্লিজ কেঁদো না । সোনাপাখি প্লিজ কেঁদো না ।
অনেক ক্ষত কাঁদার পর নীলু মুখ খুলল । বলল
-আবীর ?
-বল ।
-তুমি এতো ভাল কেন ?
-মানে?
-আমি তোমাকে এতো জ্বালাতন করি তবুও তুমি কেন সহ্য কর? কেন আমাকে এতো ভালবাসো?
-তোমি আমার সোনাপাখি না?? তোমারটা সহ্য করবো নাতো কারটা করবো ?
-আমি খুব সরি আবীর । আমি আর কখনও তোমার উপর রাগ করবো না । আই প্রমিজ !!
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে । সরি বলতে হবে না । তুমি এখন ঘুমাও কেমন ?? সকালে কথা হবে
নীলু ফোন রেখে শুয়ে পড়ল । মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আর কখনও আবীর কে জ্বালাতন করবে না । আর কখনও এমন বেহুদা রাগ করবে না ওর উপর । কেবল বেশি বেশি ভালবাসবে !
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:২৮