আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটি আজকেও আসবে । কাল যখন মেয়েটি আমার সাথে দেখা করতে এল ওর আচরনে আমি কাল বেশ অবাকই হয়েছিল । কোন কারন খুজে পাই নি এমন আচরন করার!!
কি দরকার ছিল কাল আমার কাছে আসা আবার কি দরকার ছিল কিছু না বলে চলে যাওয়া !
গতকাল অফিস আওয়ারেই পিয়ন আলিম এসে বলল
-স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে ।
আমি খানিকটা অবাকই হলাম । কারন অফিসের বাইরে সাধারনত আমার কাছে কেউ আসে-টাসে না । আর আমি খুব অসামাজিক টাইপের মানুষ । নিয়মিত যোগাযোগ বলতে ফ্যামিলি আর নিশি । ফ্যামিলি থাকে গ্রামে আর নিশি আসলে পিয়নকে দিয়ে বলাবে না । সরাসরি রুমেই চলে আসবে । তাহলে কে এল?? বললাম
-নিয়ে এসো ।
একটু পরই মেয়েটি রুমে ঢুকল । মেয়েটিকে দেখে আমি বেশ অবাকই হলাম । সেই ব্রাক ব্যাংকের মেয়েটি ।
কিন্তু মেয়েটি এখানে কি করছে ? এর তো এখানে আসার কথা না । অবশ্য ঐদিনের আচরন আমার কাছে বেশ অবাক লেগেছিল । তাই বলে অফিস পর্যন্ত চলে আসবে ভাবি নি । বললাম
-বসুন ।
মেয়েটি খুব জড়সড় হয়ে বসল আমার সামনে । মেয়েটিকে কেমন যেন নার্ভাস লাগছিল । আর চোখ দুটো ছিল খুব অস্বস্থির ।
কিছু যেন বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না । বললাম
-বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি ?
মেয়ে চুপ করে কেবল আমার দিকে তাকিয়েই ছিল । কি যেন খুজছে আমার মধ্যে !! কিছু যেন বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না ।
তারপর হঠাত্ উঠে পড়ল । কোন মতে বলল
-আমি আজকে যাই ?
-সেকি আপনি কি কারনে এলেন বললেন না ?
মেয়েটি আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না । উঠে চলে গেল । আমি কোন কিছুই বুঝলাম না । এম অদ্ভুদ আচরন করার মানে কি ?
মেয়েটিকে আমি প্রথম দেখি ব্রাক ব্যাংকেই । ওখানেই ক্লাইন্ট সার্ভিসে মেয়েটা চাকরি করে বোধহয় । ঐ দিনতো ওখানেই দেখেছিলাম ।
আসলে আমার অফিসের পাশে যে ব্রাক ব্যাংকটা আছে আমি ওখানে গেছিলাম টাকা তুলতে ।
লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম হঠাত্ কেমন জানি অস্বস্থি শুরু হল । মনে হল কেউ যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এদিক ওদিক তাকিয়ে বের করে ফেললাম ।
আমার সাথে চোখাচোখি হতেই মেয়ে চোখ সরিয়ে নিল ।
কিন্তু আবার তাকাল । আমি তাকিয়েই ছিলাম । আবারও চোখাচোখি হল ।
দেখলাম সামনে টাকা তোলার জন্য যে লোকটা দাড়িয়ে ছিল মেয়েটা তাকে বেশ খানিকক্ষনই আটকে রাখল । লোকটা বার বার বলছিল একটু তাড়াতাড়ি করার জন্য কিন্তু মেয়েটি কিছু শুনছিল না । আর ক্ষনে ক্ষনে আমার দিকে তাকাচ্ছিল ।
আমার নাম্বর যথন এল তার এক মুহুর্ত আগে লোকটাকে ছাড়ল । সুতরাং আমাকে ঐ মেয়েটার কাউন্টারেই যেতে হল ।
আমার কেন জানি মনে হল মেয়েটি ইচ্ছা করেই মেয়েটিকে আটকে রেখেছিল কেবল মাত্র আমার জন্য । আমি যেন মেয়েটির কাউন্টারে যেতে পারি এই জন্য ।
আমি খানিকটা লক্ষ্য করে দেখলাম মুখটা কেমন জানি অস্থির একটা ভাব ফুটে উঠেছে ।
মেয়েটা যখন আমাকে টাকা গুলো দিল যখনও দেখলাম মেয়েটার হাত কাঁপছে ।
আশ্চার্য মেয়েটার আচরন কেন ?
ক্লাইন্ট সার্ভিসে কাজ করলে কি এমন আচরন করলে চলে নাকি ? চাকরী তো বেশিদিন থাকবে না ।
ব্যাংক থেকে বের হয়ে যখন রিক্সা নিলাম পেছনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা ব্যাংকের গেটে এসে দাড়িয়েছে । তাকিয়ে আছে আমার দিকেই ।
আবারও মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হল । মেয়েটা এবার চোখ সরিয়ে নিল না । আমার দিকে তাকিয়েই থাকল ।
মেয়েটাকে কি আমি চিনি নাকি ও আমাকে চেনে ? কিন্তু আমার তো চেহারাটা পরিচিত মনে হল না কিছুতেই ।
তাহলে ?
আমার রিক্সা ততক্ষনে ছেড়ে দিয়েছে । মেয়েটার চেহারায় কেমন একটা অস্বির ভাব ফুটে উঠল । বিষাদ ময় অস্বিরতা । আমি মোটামুটি সিওর যে আমাকে দেখেই মেয়েটার এমন অস্থিরতা ।
কিন্তু এর পিছনের কারন কিছু মাত্র বুঝতে পারলাম না ।
মেয়েটা এমন কেন করল সেদিন ? বেশ ভাবিয়েছিল সেদিন । এখনও খানিকটা ভাবালো ।
মেয়ে একদম অফিস পর্যন্ত চলে এসেছে । তার মানে কিছু একটা লিংক অবশ্যই আছে ।
কিন্তু কি সেই লিংক ?
ঐদিন ব্যাংকে দেখা হবার আগে আর কখনও আমি তাকে দেখেছি বলে মনে পরে না ।
নিশিকে কি ব্যাপারটা বলা ঠিক হবে ? মনে হয় না । ও এমনিতেই অন্য মেয়েদের সাথে আমার কথা বলা পছন্দ করে না । আর যদি শোনে কোন মেয়ে আমার পেছনে ঘোরাঘুরি করছে তাহলেতো আমার খবরই আছে ।
কিন্তু মনের মধ্যে কৌতুহলটা থেকেই যাচ্ছে । মেয়েটার অদ্ভুদ আচরনের কারনটা জানতে ইচ্ছা করছে ।
লাঞ্চ আওয়ারে পিয়ন এসে আবার বলল
-সেদিন কার সেই মেয়েটি আবার দেখা করতে এসেছে ।
আমি মনে মনে খানিকটা প্রস্তুতি নিলাম । আজ কিছুতেই মেয়েটাকে যেতে দেবো না । কারনটা আজকে পেট থেকে বের করবো । তাছাড়া প্রতিদিন এরকম অফিসে এসে হাজির হওয়াটাও খানিকটা অস্বস্থিকর ।
মেয়েটা ওয়েটিং রুমে চুপচাপ বসে ছিল । খানিকটা জড়সড় হয়ে । আজ ইচ্ছে করেও মেয়েটিকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলেছি ।
যখন মেয়েটার সামনে গেলাম মেয়েটার মধ্যে চঞ্চল্য একটু যেন বেড়ে গেল । আমি বসতে বসতে বললাম
-আজ কি বলবেন নাকি সেদিনের মত আজও কিছু না বলেই চলে যাবেন ।
আমি একটু হাসলাম । মেয়েটাকে একটু সহজ করার চেষ্টা করলাম ।
তবুও মেয়েটির অস্থিরতা কমলো না । আমি ঠিক ধরতে পারছি না মেয়েটার সমস্যা টা কোথায় ?
আর আমায় সামনে এমন অদ্ভুদ আচরন কেন করছে । খানিক চুপ করে থেকে আমি বললাম
-অবশ্য আপনি চাইলে আজও কিছু না বলে চলে যেতে পারেন । আমি আপনার আবার সামনের দিন আসার জন্য ওয়েট করবো । কারন আমি জানি আপনি যতক্ষন আমাকে কারনটা বলছেন ততক্ষন আপনি শান্তি পাবেন না ।
মেয়েটা আমার দিকে একবার তাকিয়েই আবার মাথা নিচু করে ফেলল । মাথা নিচু করেই বলল
-আমি আপনাকে অনেক ঝামেলায় ফেলেদিয়েছি তাই না ?
-না ঠিক ঝামেলা না । তবে মনে কৌতুহল তো ঠিকই জন্ম দিয়েছেন ।
-না আমি জানি । ঝামেলা খানিকটা তৈরি করেছি । আপনি এখনও নিশিকে বলেন নি আমার কথা তাই না ?
আমি খানিকটা চমকালাম । নিশির কথা এই মেয়েটির জানার কথা না ।
আমাকে খুজে বের করা মানলাম সহজ । আমার ব্যাংক একাউন্ট থেকে সব তথ্যই পাওয়া যাবে । কিন্তু ওখানে নিশ্চই নিশির কথা লেখা নেই । তাহলে এই মেযেটি নিশির কথা কিভাবে জানল ?
আমায় সম্পর্কে খোজ খবর নিয়েছে ?
কিন্তু কেন ?
মেয়েটি আবার বলল
-আমার কথা নিশিকে বলার দরকার নাই কেমন ! ও রাগ করতে পারে ! আর আমিও এখানে আর আসবো না , যদি ...
-যদি ?
-যদি আপনি আমার সাথে অন্য কোথাও দেখা করেন ?
-কিন্তু কেন ? আর আমার সাথে আপনি কেনই বা দেখা করতে চাচ্ছেন ? আপনি কিন্তু কারনটা এখনও ব্যাখ্যা করেন নি ?
এবার মেয়েটি আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকাল । বলল
-কারনটা আমি আপনাকে বলবো । আর আপনাকে বলবনা তো কাকে বলবো ? কিন্তু আমি আজকে বলছি না । তবে একটা কথা কেবল আপনাকে বলে রাখি আপনাকে ছাড়া আমার কিছুতেই চলবে না । কিছুতেই না ।
মেয়েটি আর দাড়াল না । যাই বলে উঠে চলে গেল ।
শেষ কথাটার মানে আমি কিছুতেই বুঝলাম না । কিন্তু মেয়েটার কণ্ঠে যে রকম দৃঢ়তা দেখলাম তাতে খানিকটা ভয়ই পেলাম ।
মেয়েটা কি বলতে চাইছে ? আর কেনই বা এরকম একটা কথা বলল ?
আমাকে ছাড়া তার চলবে না মানে কি??
মেয়েটা আমার পিছে লাগছে ক্যান ?? আমি তো কিছু বুঝতাছি না !!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!
অপেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=
বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি
আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।
সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন