জুম্মার নামাজ পড়ে আসছিলাম । গলির মোড়ে আসতেই এলাকার কিছু ছেলেপিলে আমাকে কেন জানি ঘিরে ধরল । আমি কারন কিছুই বুঝলাম না ।
আমি সাধারনত নিরিহ টাইপের ছেলে । কারো সাথেও নাই পাছেও নাও । এই ছেলে গুলোর সাথে আমার আবার কি কাজ !
আমি বললাম
-আমি ?
-জি আপনি ।
কালো পাঞ্জাবী পরা ছেলেটা বলল । হাতে একটা সিগারেট জ্বলছে ।
-বলেন ।
-এই দিকে আসেন । আপনার সাথে কথা আছে ।
এই বলে ছেলেটা আমাকে মোরের এক পাশে যেতে ইশারা করল । আমি খানিকটা ভয় পেলাম । ঢাকা শহরে নাকি এরকম ভাবে নাকি ছিনতাই হয় ।
কিন্তু এরা তো সবাই পাড়ার ছেলে । সারা দিন কাম নাই খালি মোড়ের মাথায় বসে বসে আড্ডা মারা । কিন্তু ছিনতাই করবে না এটুকু ভরসা আছে ।
ঠিক তখনই আমার মনে অন্য আর একটা সম্ভাবনা দেখা দিল । পেদানী দিবে না তো ? কিন্তু আমি এমন কোন কাজ তো কখনও করিই নি ।
তাহলে ?
মোড়টার একপাশে আরো কয়েকটা ছেলে ছিল । ঐ ছেলে গুলো মধ্যে রুমেল ছিল । পাড়ার মধ্যে এই ছেলেটার নাম কেবল আমি জানি । আমি যে বাড়িটাতে ভাড়া থাকি তার দুতিন বাড়ি পরেই এদের বাড়ি ।
নাম চেনার কারন হচ্ছে নিশি বলেছিল । নিশি আমাদের বাড়িয়ালার মেয়ে । সেদিন বিকাল বেলা ছাদে হাটছিল এমন সময় দেখলাম নিশিও ছাদে আসল ।
এমনিতে নিশির সাথে আমার খুব বেশি চেনা জানা নাই । ওর ছোট ভাইটাকে আমি ইংরেজি পড়াই সেই সুবাদে হাই হ্যালো বলি । এই পর্যন্তই ।
ছাদের থেকেই দেখলাম ঠিক দুই তিন বাড়ি পরে দুতিনটা ছেলে চিত্কার করে উঠল । ওদের চিৎকার করার কারন মনে হয় বুঝতে পারলাম । নিশিকে দেখে ওরা ওমন করছে । দেখলাম নিশি মুখটা কেমন বিরক্তিতে ভরে গেল ।
আমি বললাম
-আপনার পরিচিত ?
-পরিচিত ? ডিজগাসটিং ! আর সব থেকে বড় বিরক্তিকর ঐ রুমেল ছেলেটা ।
-কোনটা ?
-ঐ যে লম্বা ফর্সা করে ।
আমি রুমেল কে দেখলাম ।
-ভালই তো দেখতে !
আমি হাসলাম । নিশি কিছু বলল না । আমি বললাম
-সুন্দর মেয়েদের এই রকম টুকটাক সমস্যায় পড়তেই হয় ।
নিশি এই বারও কিছু বলল না । তবে ওর মুখে কেমন জানি একটা সুক্ষ হাসির রেখা দেখতে পেলাম । আসলে সুন্দরী কথাটা শুনতে সব মেয়েদেরই ভাল লাগে ।
-আপনি কতদিন এই এলাকায় আছেন ?
রুমেলই বলল কথাটা
আমি বাস্তবে ফিরে এলাম ।
-জি ?
-আপনি কত দিন এই এলাকায় আছেন ?
-এই বছর খানেক ।
রুমেল বলল
-আগামী মাসে এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন ।
-জি ? কেন ?
ঠিক তখনই পিছন থেকে একজন আমার মাথায় বেশ জোরেই একটা থাপ্পর মারল ।
-যা বলেছি কর । তা না হলে হাত পা ভেঙ্গে দেবো ।
রুমেল বলল
-ভাল ভাবে বললাম । এরপর কিন্তু এতো ভাল ভাবে বলবো না । যান বাসায় যান ।
এই সময় পেছন থেকে ঐ কালো পাঞ্জাবী পরা ছেলেটা আবার আমাকে ধাক্কা মারল ।
-যান ভাগেন ।
আমি চলে এলাম । আসলে আমার কিছু করারই ছিল না । কিছু বলতে গেলেই মার খেতে হত । আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে আমার সাথে এমনটা করার মানে কি ?
আমিতো এমন কিছু করি নি যে একেবারে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে । ভাবতে খুব খারাপ লাগছে । খুবই আরামে ছিলাম এখানে । কিন্তু কিছু করার নাই ।
ওরা সব স্থানীয় ছেলে । আর আমি ভাড়াটিয়া । কিছু বলার উপায়ও নাই । কিন্তু এটলিস্ট কারনটা তো জানার অধিকার আছে আমার ।
একবার ভাবলাম গিয়ে জিজ্ঞেস করি যে আমি এমন কি করলাম ? তারপর ভাবলাম থাক ! দরকার কি ? জিজ্ঞেস করতে গিয়ে আবার মারধোর খেতে হবে ।
কি দরকার !
সন্ধ্যার সময় টিভি দেখছিলাম । এমন সময় নিলয় এসে বলল
-নিশি আপু আপনাকে একটু ছাদে যেতে বলেছে ।
-এখন ?
-হুম এখনই ।
আমি খানিকটা অবাক হলাম । নিশি আমাকে ছাদে যেতে বলবে কেন ?
আশ্চার্য ।
আজ কি হচ্ছে কে জানে ? আচ্ছা রুমেল আমাকে থেট দিল এর সাথে নিশি কোন ভাবে জড়িত নয় তো ?
কিন্তু তা কিভাবে হবে ? আবার হতেও পারে ! আমার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না । যা হোক আমি ছাদের দিকে পা বাড়ালাম ।
ছাদে গিয়ে দেখি নিশি এক কোনায় চুপচাপ বসে আসে । এখনও অন্ধকার হয় নি পুরোপুরি । আমাকে আসতে দেখে উঠে দাড়াল । ওর মুখে কেমন জানি একটা অপরাধী অপরাধী ভাব । বললাম
-কি ব্যাপার ? এরকম জরুরী তলব ?
-আই এম সরি । নিশি খুব অপরাধীর মত লাইনটা বলল ।
-কেন ? আপনি সরি কেন হচ্ছেন ? আমিতো কিছু বুঝতে পারছি না ।
নিশি বলল
-রুমেল আজ আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে না ?
-আপনি জানলেন কিভাবে ?
-আমি জানি । এলাকার মেয়ে না আমি ? খবর আমার কাছে চলে আসেই । আর ব্যাপারটা যখন আমাকে নিয়ে আমি তো জানবোই ।
-আপনাকে নিয়ে ?
আমি ঠিক ব্যাপার বুঝলাম না । নিশিকে নিয়ে কিভাবে হয় ?
-রুমেল আমার পিছনে অনেক দিন থেকেই ঘুরছে ।
-তা তো বুঝলাম । রুমেল আপনার পেছনে ঘুরছে । কিন্তু ও আমাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলবে কেন ?
-আসলে আপনি ওর মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছেন তো !
-মানে ? কি বলছেন এসব ? আমি ওর মুখের গ্রাস কেড়ে নিলাম কখন ? আর ....
নিশি আমাকে কথা শেষ করতে দিলো না । বলল
-একটু শান্ত হোন । আমি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি । আসলে গত পরশু দিন ও আমাকে রাস্তার ধরেছিল । জানতে চাইছিল আমি কেন ওর সাথে রিলেশন করছি না । আমি বললাম যে আমার অন্য একজনের সাথে রিলেশন আছে ।
এই বলে নিশি খানিকটা চুপ করে গেল । আমি বললাম
-কিন্তু রুমেল আমার সাথে এমন করলো কেন ? আমি কি করলাম ?
এবার নিশির চেহারায় কেমন একটা অধর্য্যের ছাপ দেখলাম । নিশি বলল
-আপনি এতো গাধা কেন ?
-গাধা ? আরে বলে কি এই মেয়ে ?
-গাধা হবো কেন ?
-সিম্পল এই বিষয় টুকু বুঝতে পারছেন না । রুমেল মনে করেছে যে আপনার সাথে আমার রিলেশন আছে ।
আমি খানিকটা বিষম খেলাম ।
-এমনটা মনে হবার কারন কি ?
এবার নিশিকে খানিকটা সংকুচিত মনে হল ।
-আসলে আমি বলেছি । আমি বলেছি যে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড ।
-কেন বলেছেন ?
এই মেয়েটার এই টুকু বলার জন্য এখন আমাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে । কোন মানে হয় ? আমি আবার বললাম
-কেন বলেছেন ?
-আমি মিথ্যা কথা বলতে পারিনি ।
-আরে মিথ্যা কথা বলতে পারি নি মানে কি ? এই কথা কেউ বলে ? এমন .....
ওযেট এ মিনিট !!! আমি ঠিক শুনলাম তো ? নাকি ভুল শুনলাম ? আমি আবার বললাম
-কি বললেন আপনি ?
নিশি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকল । কোন কথা বলল না । তবুও সব কিছু বুঝতে আমার বেশ খানিকটা সময় লাগল । আমি কাপা হাতে ওর মুখটা তুলে ধরলাম । ওর চোখের সাথে চোখ পড়তেই বুকের মাঝে কেমন যেন এক শিহরন বয়ে গেল ।
এতো দিন আমি ভাল করে দেখি নি । কিন্তু আজ একি দেখলাম । আমি ওয় সামনে থেকে সরে এসে ছাদের এক পাশে বসলাম ।
কি বলব অথবা কি বলা উচিত্ আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । একটু পর নিশি নিজেই এসে আমার পাশে বসল । বলল
-আপনি চিন্তা করেন না । বাবাকে বলেছি । উনি রুমেলের ব্যাপারটা দেখবেন ।
-আসলে আমি চিন্তা করছি না । একটু আগেও হয়তো চিন্তা করছিলাম কিন্তু এখন আর চিন্তা করছি না । তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি যা দেখেছি তার অন্য সব কিছু বড় তুচ্ছ !
নিশি হাসল ।
-কি দেখেছেন ?
-সেটাতো বলবো না । আমি যেমন বুঝে নিয়েছি তুমি বুঝে নাও ।
-আহ্ ! কি আমার বোঝন দার রে ! তুমি যদি এতোই বুঝতে তাহলে অনেক আগেই বুঝে যেতে ! আমাকে মুখ ফুটে বলতে হত না ।
নিশি আমার দিকে আর একটু সরে এল ।
গল্পটা এখানে আছে
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:২০