কেউ যদি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে আমি সেটা বুঝতে পারি । তাকে দেখি বা না দেখি অদ্ভুদ একটা অনুভূতি হয় । আমার মনে হয় এটা কেবল আমার না সবারই হয় । ঠিক এমন একটা অনুভূতিই আমার এখন হচ্ছে । আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি এদিক ওদিক তাকালাম । দেখার চেষ্টা করছি কে আমার দেখছে । কিন্তু পরিচিত কাউকে দেখতে পেলাম না ।
আর আমি এমন কোন দেখতে রাজকুমার না যে কোন অপরিচিত মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে ।
-আবির ভাই , আপনি এমন করছেন কেন ? আমাদের সঙ্গ আপনার ভাল লাগছে না ?
-না এমন কোন ব্যাপার না ।
দুপুর বেলা ঘুমাচ্ছিলাম । রুমমেট সজিব এসে ঘুম ভাঙ্গাল ।
-কি হল ?
-আরে এখনও ঘুমাচ্ছিস এখনও ?
-কি করবো ?
-আরে কালকে বললাম না ? রিয়ার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা না ?
-দেখ তোর গার্লফ্রেন্ড তুই যা । আমাকে কেন টানছিস এর মধ্যে ? আমাকে ঘুমাতে দে ।
-আরে চল না ভাই ! আমার একা একা যেতে কেমন জানি লাগছে । তুই গেলে বুকে বল পাবো । চল প্লিজ । রাতে তোকে কাচ্চি খাওয়াবো ।
উঠতেই হল । কারন কাচ্চির নাম শুনলো আমি যে কোন অসাধ্য সাধন করতে পারি । রিয়া একা আসে নি । সাথে ওর ছোট বোন কে নিয়ে এসেছে । দুজন এতো পরিমান মেক আপ দিয়েছে আমার মনে হচ্ছে যখন এরা মেকআপ তুলবে মোটামুটি এদের দুকেজি ওজন কমে যাবে ।
এতো মেকআপ দেওয়া সত্তেও দুবোনকে দেখতে পেত্নীর মত লাগছে । সজিবটা গাধা ছিল আগে থেকেই জানতাম । তাই বলে অন্ধও হয়ে গেছে জানতাম না । রিয়া আবার বলল
-কি ব্যাপার আবির ভাই কথা বলছেন না যে !
আমি হাসলাম । বললাম
-আমি আর কি কথা বলবো ? তাছাড়া তুমিতো সজিবের সাথে কথা বলতে এসেছ ।
-আরে ওর সাথে কথা বলার জন্য তো সারা জীবন পরে রয়েছে । আপনার সাথে একটু কথা বলি ! আর আমার বোনটাও একা একা বসে আছে । আপনি দিয়ার সাথে তো কথা বলতে পারেন ।
এমন সময় দিয়া বলল
-আপু উনি বোধহয় আমার সাথে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে । লাজুক ছেলে !
বলেই দুবোন হেসে উঠল ।
তোর মত পেত্নীর সাথে কথা বলতে আবার লজ্জা লাগবে ! কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারলাম না ।
সজিব খুব ভাল করে জানে মেয়েদের এমন ন্যাকা ন্যাকা কথা আমার একদম পছন্দ না । আমি সজিবের দিকে তাকালাম । বেচারা করুন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমি কিছু বললাম না । আমার ঐ অস্বস্তিটা আবার ফিরে এসেছে । কে তাকিয়ে আছে আমার দিকে !
-আবির ভাই ! আপনি নাকি একবার বাধরুমে পরে গিয়েছিলেন ? একদম কমডের উপর ।
বলে আবার পেত্নী দুটো হাসতে লাগল । আমি সজিবের দিকে তাকালাম । ওর মুখ তখন আরো করুন হয়ে গেছে ।
এবারও কিছু বললাম না । কেবল চোখের ইশারায় বললাম বাসায় চল তোমার খবর আছে ।
রিয়াকে কিছু বলতে যাবো ঠিক এমন সময় আমার অস্বস্তি লাগার কারনটা টের পেলাম । রিয়া যেখানে বসে আসে ঠিক ওর সোজাসুজি একটু বা দিকে মেয়েটা বসে আসে । এবং সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
এতোক্ষন ঐ পেত্নীটার দিকে তাকাচ্ছিলাম না বলে দেখতে পাইনি । আমি সত্যি খুব অবাক হলাম । ভাবতেই পারি নি আবার কথনও মেয়েটা আমি দেখতে পাবো ।
গত কালকের কথা । বিকেল বেলা টিউশনিতে যাচ্ছিলাম । বাসে খুব ভিড় ছিল । আমি একেবারে মেইন স্টপেজ থেকে উঠেছিলাম তাই সিটে বসে ছিলাম । ঝিকাতলায় আসতে আসতে বাস একেবারে ভরে গেল । ঝিকাতলায় বাস থামলে একটা মেয়ে বাসে উঠল । মহিলা সিট গুলোও ততক্ষনে ভর্তি হয়ে গেছে ।
মেয়েটি বাস থেকে নেমেই যাবে এমন সময় বাসের হেল্পার ড্রাইভারের পিছনের একটা টুলের সিটে বসতে বলল ।
আমি মেয়েটিকে হয়তো খ্যাল করতাম না । কিন্তু হেলপারের কথার মেয়েটা এমন একটা মুখোভঙ্গি করল মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে পারলাম না ।
বাস ততক্ষনে চলতে আরাম্ভ করেছে । আর কোন পথ না পেয়ে মেয়েটা ঐ ড্রাভারের পেছনের সিট টাতেই বসে পড়ল । আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম । মেয়েটার চেহারার মধ্যে কেমন জানি একটা মায়া মায়া আর আদুরে ভাব ছিল । আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমি মেয়েটার উপর থেকে চোখ সরাতে পারছি না ।
আর ড্রাভারের পেছনে বসাতে মেয়েটার মুখ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম । বাস চলছে আর আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি ।
আগেই বলেছি কেউ যদি কারো দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে বোঝা যায় । কিছুক্ষনের মধ্যে মেয়েটাও বুঝে ফেলল যে আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি । ওকে দেখছি ।
এবার শুরু হল আমাদের চোখাচোখির খেলা । একবার আমি মেয়েটার দিকে তাকাই । চোখে চোখ পড়লে চোখ সরিয়ে নেই । একবার ও তাকায় । বাসের মধ্যে এতো ভিড় ছিল বিরক্তিকর অবস্থা । কিন্তু আমার সময়টা কেটে যাচ্ছিল বেশ ভালই । মেয়েটাও নিশ্চই মজা পাচ্ছিল । কারন মেয়েটার ঠোটে সুক্ষ হাসির রেখা দেখতে পাচ্ছিলাম ।
কাটাবনে বাস থেখে নেমে পড়তে হল । কিন্তু মেয়েটির ঠোটের ঐ সুক্ষ হাসির আভা আমাকে অনেক্ষন বিমোহিত করে রাখল ।
-আবির ভাই ! আবির ভাই !
কল্পনা থেকে বাস্তবে ফেরত্ এলাম । চট করে দেখে নিলাম মেয়েটা আছে কিনা । হুম আছে ।
-আবির ভাই !
নাহ । এই পেত্নী দুটো বড় জ্বালাচ্ছে ।
-বল ।
-আপনি কি এতো ভাবছেন ? আপনার আচরন দেখে মনেই হচ্ছে না যে আমরা যে আপনার সামনে বসে আছি ।
একদম ঠিক বলেছিস ! কখন যে তোদের হাত থেকে মুক্তি পাবো । সজিবটাকে ধরে পেটাতে ইচ্ছা করছে । আমি বললাম
-কই নাতো ! আমিতো এখানেই আছি ।
-তাহলে কথা বলছেন না কেন ?
-আসলে মেয়েদের সামনে আমি একটু নার্ভাস ফিল করি ।
এই কথা শুনে মেয়ে দুটো আবার হেসে উঠল ।
একটু আগে সজিবকে পেটাতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওর সাথে এই লেকপাড়ে না এলে তো মেয়েটাকে দেখতে পেতাম না । থাক ওকে মাফ করে দিলাম ।
আরো বেশ কিছুক্ষন থাকতে হল । আমি সারাটা ক্ষন মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম । স্পষ্টই বুঝতে পারছিলাম মেয়েটাও আমার দিকে লক্ষ্য রাখছে ।
রিয়াদের রিক্সায় তুলে দেওয়ার জন্য রাস্তায় গেছিলাম একটু । যাওয়ার আগেও আমি তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা ঐ খানেই বসে আছে । ফুচকা খাচ্ছিল । রিক্সায় তুলে দিয়েই আবার আগের জায়গায় ফেরত্ এলাম । কিন্তু যা আশা করেছিলাম তা হল না ।
মেয়েটা ওখানে ছিল না । কেবল খালি ফুচকার প্লেট পরে ছিল । তাহলে এতোক্ষন যা ভাবলাম তার সবই কি ভুল ছিল ? মেয়েটা হয়তো আমাকে লক্ষ্যই করেনি ।
সজিব কে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম । আরো কিছুক্ষন এদিক ওদিক খোজা খুজি করলাম । কিন্তু কোথাও পেলাম না মেয়েটিকে ।
মনটা একটু খারাপ হল বইকি ! আর কিছু না হোক অন্তত একটা বার কথাই না হত মেয়েটার সাথে ।
যখন সন্ধ্যার আজান দিয়ে দিল আর লাভ নেই মনে হল । মনটা সত্যিই খারাপ হল । আমি সত্যিই ভেবে বসেছিলাম মেয়েটার সাথে আমার কিছু একটা হবে । তা না হলে ওর সাথে আমার দ্বিতীয়বার দেখা হত না । মন খারাপ নিয়েই রিক্সা ঠিক করতে লাগলাম । কিন্তু হায় একটা রিক্সা যদি ঐ দিকে যেতে চায় ।
কি করবো বুঝতে পারছিলাম না ঠিক এমন সময় পাশ থেকে একটা কন্ঠ বলে উঠল
-এই সময় রিক্সা ঐ দিকে যেতে চায় না । আপনি বেটার রাস্তা ক্রস করে ওপারে চলে যান । ওখান থেকে বাস পাবেন ।
আমি ঘুরে তাকিয়েই দেখি মেয়েটা দাড়িয়ে । আজকের দিনে আমি দ্বিতীয়বারের মত অবাক হলাম । মেয়েটাকে কি বলব বা কি বলা উচিত্ বুঝতেই পারলাম না । কেবল তাকিয়েই রইলাম ।
মেয়েটার চোখ দুটো আসলেই সুন্দর আর গভীর । কাল দুর থেকে যেমনটা দেখছিলাম আজ কাছ থেকে যেন আরো সুন্দর লাগছে । আমি কেবল তাকিয়েই রইলাম । মেয়েটা একসময় বলল
-কোন অপরিচিত মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয় থাকা কিন্তু অভদ্রতা ।
-কি নাম আপনার ?
-মানে ?
-মানে হল আমার নাম ইফতেখার আহমেদ । ডাক নাম আবির । আপনার নাম কি ?
-মীম ।
-ওকে এই তো আমরা পরিচিত হয়ে গেলাম । এখন নিশ্চই তাকিয়ে থাকাটা অভদ্রতা হবে না ?
মীম কিছু বলল না । হাসল কেবল ।
-আপনি তো বেশ কথা বলতে পারেন ! আপনার চোখে দৃষ্টিও খুব তীক্ষ । কাল বাসের মধ্যে আমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন !
-কি করবো বলেন । কিছু পছন্দ হয়ে গেলে তো কিছু করার নাই । যা কিছু ভাল লাগে মানুষতো তার দিকেই তাকিয়ে থাকে ।
-একবার দেখেই পছন্দ হয়ে গেল ?
-পছন্দ হতে তো আর লক্ষ বছর লাগে না । একটা মুহুর্তই যথেষ্ট ।
মীম বলল
-বুঝলাম । আপনি আসলেই সুন্দর করে কথা বলেন । কত গুলো কে পটিয়েছেন কথা দিয়ে ।
-উউমমমম !
এমন একটা ভাব করলাম যেন হিসাব করছি । বললাম
-আপনাকে নিয়ে হিসাব করবো নাকি বাদ দিয়ে ?
মীম কিছু বলল না । মিচকি হাসল । আমি বললাম
-আপনাকে নিয়ে একটা হবে ।
-আচ্ছা ! তাহলে ঐ যে মেয়ে দুটোর সাথে বসে ছিলেন ! ওয়া কারা ?
-ঐ পেত্নী দুটো ?
মুখ দিয়ে বের হয়েই গেল ।
-কি বললেন ?
-না কিছু না ।
-ওদের মধ্যে একজন হল আমার পাশে যে ছেলেটা বসে ছিল তার গার্লফ্রেন্ড ।
-অন্যটা ?
-ওটা হল মেয়েটার বোন ।
মীম আর কোন কথা বলল না । আমিও যেন আর কোন কথা খুজে পাচ্ছিলাম না । কি বলব কি বলব করে বললাম
-আচ্ছা আপনার কি কিছুটা অদ্ভূদ মনে হচ্ছে না ?
-কোন ব্যাপার টা বলুন তো ?
-এই যে কালকে আপনার সাথে দেখা হল আজ আবার হল ।
-খুব কিন্তু অদ্ভুদ না । আমি এই কাছেই থাকি । প্রায় বিকেলে এসে ফুচকা খাই । আর কালকের ঘটনা .... এমনটা ঘটতেই পারে । কিছুটা কোয়েনসিডেন্সতো আছেই ।
-আমার কি মনে হয় জানেন ?
-কি মনে হয় ?
-মনে হয় যে .... !
-যে ..??
তিনটি ঘটনাটা তো শুনলেন ! আর কত !!
আপনারাও আমার "যে" এর আশায় বসে আছেন ? প্রেমিক প্রেমিকার প্রাইভেট কথা শুনতে নাই । আবীর আর মীমের বাকী আলাপন টুকু নিজেরা কল্পনা করে নিন । টাটা !
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!
অপেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=
বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি
আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।
সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন