পুরোটা বিকেল নিশি আমার সাথেই ছিল । ও যতক্ষন আমার সাথে থাকে ওর চোখে মুখে কেমন আনন্দের আভা থাকে । আমি খুব ভাল করে জানি ও যখন আমার সাথে থাকে আমার যেমন ভাল লাগে তেমনি ওর ও খুব ভাল লাগে ।
তাহলে ও কেন রাজি হচ্ছে না ! আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না ।
বিকেল বেলা ও বলেছিল যে ও চায় না ওর কারনে আমার কোন ক্ষতি হোক !
এই কথাটার মানে কি ? আমি যাই করি না কেন ও কখনও আমার কোন ক্ষতি করবে না ।
বলতে গেলে ওর দ্বারা আমার কোন ক্ষতি হওয়া সম্ভব না ।
তাহলে ? ওর কি কিছু হয়েছে ? কোন রোগ ? বা অন্য কিছু ?
ঘড়ির দিকে তাকালাম । প্রায় দুইটা বাজে । নিশিকে ফোন দিল ।
-হাই !
-ঘুমাও নি এখনও ?
নিশি একটু হাসল । বলল
-আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল তুমি ফোন দিবা !
-আচ্ছা !
-এতো দুর থেকে বুঝে গেলে আমি তোমাকে ফোন করতে যাবো ?
ওর হাসির আওয়াজ পেলাম আবারও ।
-বারান্দায় বসে আকাশ দেখছিলাম । কোটি কোটি তারার মেলা । দেখতে খুব ভাল লাগছি । মনে হচ্ছিল তুমি এখানে থাকলে দুজন মিলে দেখতে পারতাম ! ঠিক তখনই মনে হল তুমি যেন ফোন দিবা !
-নিশি তুমি চাইলেই কিন্তু কালকের পর থেকে জীবনের বাকি দিন গুলো আমরা একসাথে আকাশ দেখতে পারি ! আর শুধু কি আকাশ আরো কত কিছু করতে পারি এক সাথে ! জীবনটা এক সাথে আরো কত সুন্দর হবে ভেবে দেখেছ ?
নিশি কোন কথা বলল না ।
আমি আবার বললাম
-একটা কথার জবাব দেবে নিশি ?
-বল
-তুমি ঠিক আছো তো ?
-মানে ?
-মানে তোমার শরীর ঠিক আছে তো ? কিছু হয় নি তো তোমার ?
প্রশ্নের জবাবটা নিশি চট করে দিলো না । খানিক ক্ষন চুপ করে থাকল । তারপর বলল
-আমি ঠিক আছি ।
একবার মনে আবার কথাটা জিজ্ঞেস করি । কিন্তু করলাম না ।
-আচ্ছা ঘুমাও কাল অফিস আছে ।
-আচ্ছা গুড নাইট ।
ফোন রাখার পরও ঘুম আসল না । নিশিকে খুব বেশি করে মিস করছি । মনে হচ্ছে ও পাশে থাকলে কত ভালই না হত ! আর একটা ব্যাপার, ও যে দিন আমার বিয়ের প্রস্তাব রিফিউজ করল সেদিন থেকে ওর উপর আকর্ষনটা যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে গেছে । বারবার মনে হচ্ছে নিশিকে ছাড়া জীবন চলবে না । চলবে না কিছুতেই । অনেক হয়েছে আর না ! আর এক দিনও না !
ঘুমানোর আগে সিদ্ধান্ত নিলাম যে কালকেই ওকে বিয়ে করবো । যেমন করেই হোক । দরকার হলে জোর করে ।
সকাল বেলা উঠে দুজন ফ্রেন্ডকে ফোন করলাম । কি করতে হবে, কি কি দরকার সব কিছু বুঝিয়ে দিলাম । আর স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম । যদিও মনে মনে বেশ উত্তেজিত ছিলাম ।
অফিসে গিয়েও সবার সাথে স্বাভাবিক আচরন করার চেষ্টা করলাম । কিন্তু কেন জানি হচ্ছিল না । ভেবেছিলাম লাঞ্চ আওয়ারে নিজেই যাবো কিন্তু দেখি লাঞ্চ আওয়ার শুরুর একটু আগে ও নিজেই এল । বলল
-আজকে আর অফিস করতে ভাল লাগছে না । চল না কোথাও ঘুড়ে আসি ।
এতো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি । আমি বললাম
-আমিও এই কথাই ভাবছিলাম । কোথায় যাবা বল ?
-তুমি বল ?
-প্রথমে মগবাজারে যাই !
-ওখানে কি ?
ওখানেই তো মজা । মগ বাজার কাজী অফিসেই তো তোমাকে আজ বিয়ে করবো । এই কথাটা বলা হল না, বললাম
-ওখানে আজ তোমাকে ফকরুদ্দীনের বিরানী খাওয়াবো । তারপর ওখান থেকে মাওয়া ।
নিশির চোখ দুটো আনন্দে চকচক করে উঠল ।
-নদীর পাড়ে নিয়ে যাবে ? ওয়াও !!
ও খুশি হল । আমিও খুশি হলাম । ওর মন খুশি থাকবে । কোথায় যাচ্ছি কেন যাচ্ছি এতো প্রশ্ন করবে না ।
রিক্সায় ওঠার পর ওকে বললাম
-সুমি মগ বাজারের দিকে থাকা না ?
সুমি হচ্ছে নিশির খুব ভাল একটা বন্ধু ।
-হুম । মগবাজার কাজী অফিসটার একটু পাশে ।
-ওকে একটু ফোন করে কাজী অফিসটার সামনে থাকতে বল তো ।
-কেন ?
-আরে আজ ওকেও একটা ট্রিট দেই । আর আজ আমার মন ভালতো অনেক । আমার দুজন বন্ধুও আসছে ।
ওর মুখটা একটু মলিন হল ।
-আমি ভেবেছিলাম আমরা কেবল দুজন হব ।
-আরে ওরা কেবল বিরানী খাবে । বাকি সময়টাতো আমরা কেবল । কই তোমার বান্ধবীর নাম্বরটা দাওতো ।
খুব সংক্ষেপে আমার প্লানটা আমি সুমিকে এসএমএস করে পাঠালাম ।
নিশি বলল
-আজ কিন্তু আমরা অনেক্ষন থাকবো । একেবারে শেষ গাড়িতে ঢাকা আসবো । ঠিক আছে ?
- ইয়েস মাই প্রিন্সেস । অনেক ক্ষন থাকবো । দরকার হলে আসবোই না ।
বলে হাসলাম আমি ।
কাজী অফিসের সামনে নামতেই বন্ধু তুহিন আর সজিব কে দেখতে পেলাম । আমাদের দেখেই ওরা এগিয়ে এল । একটু পর সুমিও এসে হাজির হল । ও যখন সুমির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত আমির ওদের কথা বলে নিলাম ।
সজিব বলল
- যে সব ঠিক আছে । এখন কেবল ভিতরে গেলেই হল ।
নিশি আমাদের দিকে এগিয়ে এল । বলল
-কই চল । ক্ষুদা লেগেছে ? ফকরুদ্দীনের বিরানী কোথায় ?
আমি বললাম
-সজিব যাচ্ছে বিরানী আনতে । ওখানে এখন খুব ভিড় । আমরা ভিতরে বসি ।
-কোথায় ?
কাজী অফিসটা দেখিয়ে বললাম
-এই তো এইটার ভিতরে ।
-কাজী অফিসের ভিতরে ? ও ইতস্তত করে বলল ।
আমি একটু হাসলাম । ওর কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরলাম ।
ও এতোক্ষন ইতস্তত করছিল কিন্তু আমার হাত ধরা দেখে যা বোঝার বুঝে গেল । ওর পুরো চেহারা জুড়ে এক অবাক বিশ্ময় দেখা দিল । বলল
-অপু ..... তুমি ..... ? না প্লিজ অপু .... । সাহায্যের আশায় ও সুমির দিকে তাকাল কিন্তু সুমির মুখ দেখে ও ঠিকই বুঝে গেল যে সুমিও আমাদের সাথে ।
-সুমি তুই ও ..!!
সুমি হাসল ।
নিশি আবার দিকে তাকিয়ে বলল
-প্লিজ অপু বুঝতে পারছো না ! আমি বিয়ে করতে পারবো না । বিয়ে করতে পারবে না ।
আমি খুব জোড়ে একটা ধমক দিলাম
-ফাজিল মেয়ে ! বিয়ে করতে পারবে না মানে ?
খুব শক্ত করে ওর হাত ধরলাম । কিছুতেই এই হাত ছেড়ে দিবো না ।
-আমি কোন কথা শুনতে চাই না । আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে এবং এখনই করতে হবে । তোমার কি প্রবলেম, কেন বিয়ে করতে চাও না, এসব আমি কিছু শুনতে চাই না । এখন আমাকে বিয়ে করবে, মানে এখনই ।
আমি জানি না জোড় আমি কোথায় পেলাম ! কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমি জোড় খাটালে ও নিষেধ করতে পারবে না কিছুতেই । আর যদি একান্তই রাজি না হয় তাহলে রাজি না হওয়ার পেছনে কারনটা বলতে নিশ্চই । যেকোন একটা ওকে করতেই হবে ।
এই বলে ওকে এক প্রকার জোড় করেই কাজী অফিসের ভিতরে নিয়ে গেলাম । কাজীর সামনে ও আর কিছু বলল না । নিজেই মাথায় কাপড় দিল । চুপচাপ সাইন করল ।
যখন কাজী অফিস থেকে বাইরে বের হলাম যেন আরো বেশি উত্তেজিত বোধ করছিলাম । এতো দিনের স্বপ্ন সত্যি হল ।
সেই তুলনায় নিশিকে বেশ স্বাভাবিক মনে হল । সবাইকে বিদায় দিয়ে আমরা বাসে উঠলাম । পিছনের দিকে বসলাম । বাস চলতে আরাম্ভ করলেও দেখলাম ও চুপচাপই আছে । বোধহয় বিশ্ময় কাটাতে সময় লাগছে ।
আমার মনে অবশ্য প্রশ্ন একটা ঘুর পাক খেতে লাগল । খুব ইচ্ছা করছির কারনটা জানতে । ও কেন আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিল না ? একবার মনে হল ওকে জিজ্ঞেস করি কারন টা । তারপর মনে হল থাক । জিজ্ঞেস করার জন্য সারা জীবন পড়ে রয়েছে । পরে কোন এক সময় জেনে নিবো নে । এখনতো এই সময়টা উপভোগ করি ।বললাম
-চুপ করে আছো কেন ?
-কি বলব ?
-কিছু বলার নাই ? কি প্লানিং করে তোমাকে বিয়ে করলাম দেখলে না ?
-আহ ! কি আমার প্লানার রে । বিয়ে করা বউকে পাবলিক বাসে করে নিয়ে যাচ্ছ । আমার মনে হয় পুরো পৃথিবীতে একমাত্র তুমিই একমাত্র মানুষ যে বিয়ের পর বৌকে এরকম ভাঙ্গা চোড়া পাবলিক বাসে উঠিয়েছ । মাইক্রো না হোক এটলিষ্ট একটা সিএনজি ভাড়া করতে পারতে !
আমি অবাক হলাম খানিকটা । এই মেয়ে বলে কি ? একটু আগে ও বিয়ে করতে চাইছিল না । আর এখন বিয়ের খুদ ধরছে । যেন এটা তার মন মত হয় নি । আশ্চর্য ! এই মেয়ে গুলার মন এতো বিচিত্র হয় ক্যান ?
(সমাপ্ত)
বিঃদঃ শেষটা হয়তো অনেকের কাছে ভাল লাগবে না । কিন্তু আমার কিছু করার নাই । আমি নিজেই কনফিউজড । শেষটা আরো দুবার লিখছিলাম ।তার মধ্যে আমার কাছে এইটাই ভাল লেগেছে । যদি আপনাদের ভাল না লাগে তাহলে ......