আমার ভাতিজাটা চরম বদ হয়েছে । একেবারে নাম্বার ওয়ান দুষ্টু । কারো কথা শোনে না । কাউকে দেখে ভয় পায় না । যা ইচ্ছা তাই করে ।
এবার ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে দেখি বাড়ির চেহারাই বদলে ফেলেছে । বাড়ির উঠান জুড়ে হাজার রকমের জিনিস পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ।
মাকে বললাম "এসব সরাচ্ছ না কেন" ?
মা বলল "সরানোর উপায় আছে ? তোর ভাইয়ের ছেলে চিল্লিয়েপাল্লিয়ে একাকার করে ফেলবে" !
বাড়ির উঠানের মধ্যে হাটাও দুষ্কর হয়ে উঠেছে । সারা উঠান জুড়ে ভিডিও ক্যাসেটের ফিতা বেঁধে রেখেছে । দেখতেই যেন কেমন লাগছে ।
ছিড়তে গিয়েও ছিড়তে পারলাম না । ছোট বেলায় আমিও এরকম কত আকাম করেছি ।
সারা দিন অনেক জার্নি করে বাড়ি গিয়েছি শরীরটা বেশ ক্লান্ত ছিল । ফ্রেস হয়ে পেট ভরে খেয়ে নিলাম । তারপর একটা লম্বা ঘুম দিলাম । সন্ধ্যা হয়ে গেছিল ।
ভেবেছিলাম এই ঘুমেই রাত পার করে দেবো । কিন্তু রাত পার হল না । মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল । মোবাইলে টাইম দেখলাম । আড়াইটা বেজে কিছু বেশি । এতো রাতে ঘুম কেন ভাঙ্গল বোঝার চেষ্টা করলাম । আমার ঘুম এমনিতে খুব বেশি । একবার ঘুমালে পুরো পার হয়ে যায় । তাহলে ঘুম কেন ভাঙ্গল ?
কোন উত্তর পেলাম না ।
নিজে নিজে বললাম হয়তো বাধরুম চেপেছে ।
বাধরুমে যাওয়া দরকার । বিছানা থেকে নামলাম ।
ঘুমানোর আগে মা বলেছিল রাতের বেলা যেন বাইরে না বের হই । ভিতরের বাধরুমে যাই । সাপখোপে ভয় আছে ।
কিন্তু আমার কেন জানি বাইরের বাধরুম টাই বেশি পছন্দ । এটা আমার একেবারে নিজেস্ব । আর কেউ এটা ব্যবহার করে না এটা । আমি যখন বাড়িতে থাকি না তখন এটা তালা মারা থাকে । আর বাইরের বাধরুম বলতে যা বোঝায় এটা অতোটা দুরে না ।
আমার ঘরটার ঠিক জানলার পাশে । আর আমার ঘরটার একটা আলাদা দরজা আছে । বাড়ির মেইন দরজা বাদ দিয়েও আমার ঘর দিয়ে বাইরে বেরনো যায় । আর তাছাড়া ঘরের ভিতর যে দুইটা বাধরুম আছে তা বেশ দুরে । দুরে মানে আমার ঘর থেকে দুরে ।
এটা তো ভাইয়া দের রুমের সাথে এটাস্ট আর একটা বাবামার ঘরের পাশে । তাই আমি সব সময় বাইরের টাই ব্যবহার করি ।
বিছানা ছেড়ে নামি । চশমাটা পরতে গিয়েও পরি না । কোন দরকার আছে কি এখন চশমা পরার ?
দরজা খুলতেই মনটা শান্তিতে ভরে গেল । চারিদিকে গাড় অন্ধকার । পুরো বাড়ি আধারে ডুবে আছে ।
বিল বেশি আসে বলে ঘুমানোর আগে সব লাইট গুলো অফ করে দেওয়া হয় । কেবল সিড়ি বারান্দার লাইটটা জ্বলে । আমাদের বাড়ি আর সবার বাড়ি থেকে একটু দুরে ।
বাড়ির শেষ সীমানার পর অল্প একটু খাস জমি তার পর থেকে একটা বিশাল বড় কাঁনা পুকুর । ডান দিকটাতে একজনের আম বাগান রয়েছে ।
আমবাগানটার পিছনে দুতিনটা বাড়ি আছে । তাও সব অন্ধকারে ডুবে আছে । কেবল একটা বাড়ি থেকে একটু আলো আসছে যা অন্ধকার দুর করা তো দুরের কথা আরো ঘন করছে । আর বাঁ দিকে যে দিকে বাথরুমটা রয়েছে তার পিছন থেকে বাশ ঝাড় উঠে গেছে । বাড়ির এই দিকটা সব ভয়ের ।
মা এই জন্যই আমাকে রাতের বেলা বাইরে বের হতে নিষেধ করে । কিন্তু ছোট বেলা থেকেই তো এমন পরিবেশে বড় আজ পর্যন্ত কোন অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ে নি ।
কিন্তু আজ কেন জানি বুকের মধ্যে কু ডেকে উঠল । অনেক দিন বাড়িতে আসি নি তো বাড়ির এই অন্ধকার পরিবেশটা খানিকটা বেমানান লাগছে ।
একবার মনে হল বাইরে গিয়ে লাভ নাই । ভিতরের টাতেই যাই । কথাটা মনে হতেই নিজের মনেই হেসে উঠল । আমি বলছি না আমি চরম সাহসী কিন্তু আমি ভীতু না । বিনা কারনে আমি আজ পর্যন্ত কিছুতেই ভয় পাই নি । আমার কথা হল যতদিন না অশরীরি কোন কিছু আমি যত দিন না কিছু নিজের চোখে দেখবো ততদিন তাতে ভয় পাবার প্রশ্নই আসে না । যেদিন দেখবো সেদিন না হয় ভয় পাবো । আর কিছু না ভেবে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালাম । বাথরুম থেকে বের হয়ে আমি খানিক হাটাহাটি করলাম ।
হঠাৎ একটু যেন বাতাস প্রবাহিত আরাম্ভ করল । আর ঠিক তখনই একটা অদ্ভুদ আওয়াজ শুনতে পেলাম ।
আওয়াজ কেমন জানি অপরিচিত । স্বাভাবিক কোন আওয়াজ না । ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ না । কারন ঐ আওয়াজ আমি খুব ভাল করে চিনি । আর বাশ ঝাড়ের কোন পাখি অথবা কোন পোকা মাকড়ের আওয়াজও না । আমি খানিকটা ইতস্তত করলাম । এরকম আওয়াজ তো আমার পরিচিত না । আওয়াজটা কেমন জানি । মনে হচ্ছিল কিছু একটা কোন কিছুর সাথে আটকে আছে । বাতাসে উড়ছে আর ঐ জায়গা থেকে ছোটার চেষ্টা করছে । আমার একটু একটু ভয় ভয় করতে লাগল ।
আমার আর হাটাহাটি করতে মন চাইলো না । দরজার দিকে পা বাড়ালাম । যখন দরজার কাছে পৌছে গেছি ঠিক তখন আমার চোখ গেল ডান দিকের আম বাগানটার দিকে ।
চারিদিকে ঘুরঘুটে অন্ধকার । যদিও আমার চোখে চশমা নাই তবুও আমি স্পষ্ট দেখলাম আম বাগানটার একটু সামনে গুচ্ছ গুচ্ছ কিছু আলো নড়া চড়া করছে । আগুনের দলা বলা যাবে না কারন আলো গুলো অতো উজ্জল না । বেশ নমনীয় । আর ঐ শব্দটা আসছে ।
আমি কিছুক্ষন নড়া চড়া করতে ভুলে গেলাম । তাহলে সত্যি সত্যিই কি আমি তাদের দেখা পেলাম ? আমি আরো একবার তাকিয়ে দেখলাম আলোটার দিকে । নাহ !
চোখের ভুল না । এখনও আলোর গুচ্ছগুলো নাচানাচি করছে । আমি লক্ষ্য করলাম আমার আসতে আসতে ভয় লাগা শুরু হয়েছে । বুকের মধ্যে একটা সুক্ষ আতংকের অনুভূতি অনুভব করছি ।
আর এখানে থাকা যাবে না । এক দৌড় দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলাম । টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা আগে খালি করলাম । বুকে হাত দিয়ে দেখি বুকটা তখনও লাফাচ্চে ।
বারবার মনে হচ্ছে কি দেখলাম ?
সত্যি কি দেখলাম ? এই রকম হাজার টা প্রশ্ন মনের মধ্যে উকি দিতে লাগল । কিছুক্ষন পর ভয়টা একটু কমে এল । ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলাম যে কি দেখলাম ?
বারবার মনে হতে লাগল যা দেখলাম ঠিক দেখলাম তো !
নাহ ! এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পেয়ে শান্তি নাই ।
দেখতেই হবে কি দেখলাম । চশমাটা পরে নিলাম । সাথে নিলাম টর্চ লাইট । তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে দরজা খুললাম ।
প্রথমেই চোখ গেল ঐ আম বাগানের দিকে । ঐ তো এখনও আছে । একই জায়গায় আলোর গুচ্ছটা নড়াচড়া করছে ।
বুকের মধ্যে ভয়টা আমার উকি মারল । আল্লাহর নাম নিলাম । সত্যিই কি ঐ টা কিছু ? কোন জিন ? কিন্তু এতো জায়গা থাকতে বেটার আম গাছে এসে নাচানাচি করার দরকার কি ?
এখন চশমা পরা আছে তাই আলোটা আরো পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । সত্যি সত্যি দেখা যাচ্ছে । আর শব্দটাও আসতেছে ।
লাইট মারতে যাবো ঠিক তখনই আমি ব্যাপারটা ধরে ফেললাম । এতোক্ষনের আতংক মুহুর্তের মধ্যে গায়েব হয়ে গেল । আলোটার উপর টর্চের আলো ফেলে নিশ্চিত হলাম ।
সত্যিই কি গাধা আমি !
ঠিকঠাক মত না দেখে কি ভয়টাই পেলাম ।
শব্দের রহস্য: আমার ভাতিজা সারা বাড়ি জুড়ে যে ভিডিও ক্যাসেটের ফিতা বেঁধে রেখেছিল আওয়াজ টা ঐখান থেকে আসছিল । বাতাস হচ্ছিল আর সাথে সাথে ঐ শব্দটা হচ্ছিল । আর চারিদিকে সুনসান নিরবতা শব্দটাকে আরো ভৌতিক করে তুলেছিল ।
আলো রহস্য: এটার পেছনেও ঐ ভিডিও ক্যাসেটের ফিতাই দায়ী । আমাদের সিড়ি ঘরে যে লাইট টা জ্বলছিল সেইটাই ঐ ফিতা প্রতিফলিত হয়ে আসছিল । তাই ঐ গাঢ় আধারের মধ্যে আলো দেখা যাচ্ছিল । বাতাসে ফিতা নড়ছিল সেই সাথে আলোও নড়ছিল । আর আমি ভাবছিলাম কোন জিন বোধহয় ঐ আমগাছে নাচানাচি করতেছে । এসব দেখার পিছনে সব থেকে বড় হাত ছিল যে আমার চোখে চশমা ছিল না । তাই একটু দুরের জিনিস আমি স্পষ্ট দেখতে পাই নি ।
কেবল আলোটাই দেখেছি । আর ভয় পেয়েছি
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!
অপেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=
বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি
আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।
সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন