somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফারিয়ার গল্প: একদিন ঠিকই বলবে ভালবাসি

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফারিয়ার কথা

কয়দিন থেকেই ফারিয়া ব্যপারটার লক্ষ্য করছে । সকালের ঠিক নির্দিষ্ট একটা সময়ে ওর ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে । তাও আবার সকাল ছয়টার আশেপাশে । আগে যেখানে সাড়ে নয়টা দশটার আগে ঘুমই ভাঙ্গত না । সেখানে কোন এলার্ম ছাড়া এতো সকালে ঘুম ভাঙ্গা একটু আশ্চর্যের বিষয় ।
আজ থেকে ঠিক ১৯ দিন আগে ফারিয়ার প্রথম এমনটা হয় । প্রথমে চোখ খুলে ওর মনে হল যে হয়তো এখন অনেক বেলা । কিন্তু মোবাইলে দেখে মাত্র ছয়টা বাজে । খানিকটা বিরক্ত হয়েছিল । এতো সকালে কেন ঘুম ভাঙ্গল ! ও পাশ ফিরে শুল আর ঠিক কখনই ওর কাছে মনে হল জীবনের সব থেকে সুন্দর দৃশ্যটা ও দেখল ।
আকাশ কাত হয়ে শুয়ে আছে । মুখটা ওর দিকে ফেরানো । কেমন বাচ্চাদের মত জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে । সকালের শুভ্র আলো আকাশের মুখের উপর পড়ছে । ফারিয়া কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়েই থাকল ।
কি নিঃপাপ লাগছে ওকে ! দৃশ্যটা কি সুন্দরই না লাগছে ! ওর মনে এমন একটা দৃশ্য দেখেই ও ওর সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে । সেদিন যতক্ষন আকাশ ঘুমিয়ে ছিল ততক্ষনই ফারিয়া ওর দিকে এক ভাবেই তাকিয়ে ছিল । কি অদ্ভুদ একটা ভাল লাগার অনুভুতি যে ওকে ঘিরে রেখেছিল তা ও বলতে পারে না ।
তারপর থেকে প্রতিদিন ঘুমুবার সময় আল্লাহর কাছে কেবল এই একটা দোয়া করে যেন সকালে আকাশের আগে ওর ঘুম ভাঙ্গে । আজকেও ওর ঘুম সকাল সকালই ভেঙ্গেছে । প্রতিদিন ঘুম ভেঙ্গে প্রিয় মুখটা দেখতে পাওয়া বড় ভাগ্যের একটা ব্যাপার ।
হঠাত্ ও দেখল আকাশের ডান গালটাতে কেমন জানি একটু লাল লাল । ও খুব সাবধানে আলতো করে ঐ জাগাটা স্পর্শ করল । হুম জায়গাটা কেমন ফোলা ফোলা । মশা কামড় দিয়েছে ।
ফারিয়ার খুব রাগ হল । “বেটা ফালিজ মশা” ! ও মনে মনে বলল । “তুই কেন আমার আকাশের গালে কামড় দিলি ? ঐখানে কেবল আমি কামড় দিবো” । মনে মনে কথা বলেই ও লজ্জায় পড়ে গেল । নিজের কাছেই লজ্জা । মনে মনে বলল “এ কি বললাম” ! লজ্জায় একটা লাল আভা ওর পুরো মুখে ছেয়ে গেল ।
কিছুক্ষন পর ও নিজেকেই বলল “আমি ভুল কিছু বলি নি । আমার স্বামীর সব কিছুর উপর কেবল আমার অধিকার । অন্য কেউ কেন তাতে ভাগ বসাবে” !
“ আচ্ছা এখন যদি ওর গালে একটা চুম খাই ও কি রাগ করবে” ?
“কেন রাগ করবে” ?
“আমি ওর বিয়ে করা বউ না” ? তবুও ফারিয়া খানিকটা ইতস্তত করল ।
“কি হয়েছে ? রাগ করবে কেন ? আর করলে করুক । তাছাড়া ওর ঘুম বেশ গাঢ় । ও টের পাবে না” ।
তারপর খুব আল্তো ঠোটে ফারিয়া আকাশের গালে একটা চুম খেল । এতো যে ভাল লাগল ওর । ঠিক করল এবার থেকে প্রতিটি দিন ও এভাবে আকাশ কে চুম খাবে । ও যদি রাগ করে করুক ।
ফারিয়া মনে মনে বলল “আকাশ সাহেব শুনতে পাচ্ছেন ? আমি কিন্তু আপনাকে অনেক ভালবাসি” ।
কথাটা বলার পর ফারিয়ার মনটা খারাপ হল । ফারিয়া খুব ভাল করে জানে আকাশ ওকে ভাল বাসে না । আকাশ ঐ মেয়েটাকে ভালবাসে । এই জন্য আকাশ ওকে প্রথমে বিয়ে করতে চায় নি । বলা যায় ফারিয়ার আগ্রহেই বিয়েটা হয়েছ । ফারিয়ার মনে বিশ্বাস ছিল যে একদিন না একদিন আকাশ ওকে ভালবাসতে শুরু করবেই । ফারিয়া কেবল ঐ দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছে ।
আকাশের সাথে ফারিয়ার পরিচয় ওর বড় চাচার অফিসে । ফারিয়া তখন সবে পড়ালেখা শেষ করে চাচার অফিসে যোগ দিয়েছে । একে ফারিয়া দেখতে সুন্দর , শুধু সুন্দর বলতে খানিকটা কম বলা হয় , তার উপর বসের ভাতিজি অফিসের মোটামুটি সব ব্যচেলর ফারিয়ার জন্য পাগল প্রায় । বিয়ে করার জন্য সদা প্রস্তুত । এসব নিয়ে ফারিয়া কিছু মনে করতো না । কারন স্কুল জীবন থেকে মানুষের কাছ থেকে ও এই রকম ব্যবহার পেয়ে আসছে । ও মনে করতো এমনই হবে । এটাই ওর কাছে স্বাভাবিক ছিল ।
আকাশও ওর সাথে কথা বলত । কিন্তূ অহেতুক কোন কথা না । তারপর একদিন ওর চাচাই ফারিযাদের বাসায় হাজির হল । ফারিয়া বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে । বড় চাচা যখন ওর বাবা মার সাথে কথা বলছিল ফারিয়া তখন আড়াল থেকে শুনছিল । বড় চাচা আকাশের কথা বললেন । বললেন যে ছেলেটা খুব ভাল । তোমরা বললে আমি ছেলেটার সাথে কথা বলতে পারি । ফারিয়ার বাবা মাও রাজি হল । আজ কাল ভাল ছেলে আর পাওয়া যায় কোথায় ? ফারিয়া অমত করেনি । খারাপ কি !
কিন্তু যেদিন বড় চাচা বললেন যে ছেলেটা বিয়ে করতে চাচ্ছে না ফারিয়ার বাবা মা বেশ অবাক হয়েছিল । এমন প্রস্তাব মানুষ ফিরিয়ে দেয় কিভাবে । কিন্তু সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিল ফারিয়া নিজে । কোন ছেলে যে ওকে রিজেক্ট করতে পারে এটা ও বিশ্বাস করতে পারল না !
প্রথমে খুব মেজাজ খারাপ হল । কিন্তু মেজাজ খারাপটা ক্রমেই মন খারাপের দিকে । বার বার মনে হল ছেলেটা কেন ওকে রিজেক্ট করল ?
কেন করল ? ও দেখতে খারাপ হয়ে গেছে ? ও কি আর দেখতে সুন্দর না ? সারাটা দিন কেবল এই কথাটা ওর মনে হতে লাগল । ফারিয়া কিছুতেই এটা থেকে মুক্তি পেল না । অবেশেষে ও ঠিক করল যে আকাশের সাথে কথা বলবে ? কারনটা জিঞ্জেস করবে । তা না হলে ও শান্তি পাবে না ।
অফিস গিয়ে সরাসরি কথাটা জিঞ্জেস করল । আকাশের চেহারা দেখে কেন জানি মনে হল ও যেন জানতো ফারিয়া এমন কিছু একটা কথা একদিন না একদিন বলবে ।
ঐ দিন আকাশ অনেক কথা বলেছিল । একটা মেয়েকে ও ভালবাসে । যদিও মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে তবুও তার প্রতি বিন্দু মাত্র ফিলিং পরিবর্তন হয় নি । এখন একজন কে মনের মধ্যে রেখে অন্য জন কে বিয়ে করা কি ঠিক ? যদি বিয়েটা হয় তাহলে তো ফারিয়ার প্রতি অবিচার করা হবে ।
আকাশ যুক্তি দেখা বিয়ে হলে সে না পারবে ঐ মেয়েটা ভুলতে না পারবে ফারিয়াকে ভালবাসতে । নতুন করে তখন জটিলতা তৈরি হবে । কি দরকার বলুন ? ফারিয়া কোন জবাব দিতে পারে নি ।
বাসায় এসে ওর মন টা আরো খারাপ হয়ে গেল । কি একটা না পাবার আফসোস রয়ে গেল । ফারিয়ার মনে এর আগে কখনও কোন জিনিসের জন্য আফসোস হয় নি । তবে আজ ওর মনে হল ইস এমন একটা ভালবাসার মানুষ ওর থাকতো ! জীবনে আর কিছু চাইবার থাকতো না !
ঐ দিন রাতে ফারিয়া তার মা বলে দিল যে সে আকাশকেই বিয়ে করবে ? ও ছাড়া আর কাউকে না । এরপর আকাশ আর অমত করে নি ।
বিয়ের আগে কেবল ফারিয়া বলেছিল যে সব কিছু জানার পরেও যখন তুমি বিয়ে করতে চাইছ তখন আমি আপত্তি করবো না । স্বামী হিসাবে আমার যা দায়িত্ব তা আমি পালন করবো কিন্তু এর বেশি কিছু তুমি আশা করবে না । আর অবজেকশন দিতে পারবে না ।
তারপরই ওদের বিয়ে হয়ে যায় । তাও প্রায় মাস খানেক ।
ফারিয়া উঠে পড়ল । একটু পরই আকাশে ঘুম ভেঙ্গে যাবে । ওর জন্য চা বানাতে হবে । আগে কাজটা বুয়া করত । ওর নিজের কাজটা করতে খুব ভাল লাগে । শুধু চা না আকাশের জন্য প্রত্যেকটা কাজ করতে ওর খুব ভাল লাগে । এখন মনে হয় কেন যে ভাল করে রান্নাটা শেখেনি !
চা নিয়ে এসে দেখে আকাশের ঘুম ভেঙ্গে গেছে । চা টা বাড়িয়ে দিয়ে ফারিয়া একটু হাসল ।
বলল “ঘুম ভাল হয়েছে” ? আকাশও হাসল । আস্তে করে পেয়ালাতে চুমুক দিল ।
আকাশের চায়ে চুমুক দেওয়ার স্টাইলটা বেশ সুন্দর । বাচ্চাদের মত । বাচ্চাদের মত একটু একটু করে খায় ।
ফারিয়া তাকিয়েই থাকে । চোখ ফেরাতে পারে না । চা খাওয়া শেষ হলে আকাশ বাধরুমে গেল ফ্রেস হবার জন্য ।
ফারিয়া কাপ নেওয়ার পর দেখল আজও একটু চা রয়ে গেছে । এই ছেলেটা না ! কোন কিছুই সম্পুর্ন খায় না ।
প্রথম যেদিন এমনটা দেখলো ফারিয়া বলল “চা ভাল হয় নি” ? উত্তরে আকাশ বলল “না না ভাল হবে না কেন ? ভাল হয়েছে” ।
“তাহলে খাও নি যে” ?
“ও ! খেয়েছি । আসলে আমার এটা একটা বদ অভ্যাস । কোন কিছুই আমি পুরোপুরি খেতে পারি না” ।
সত্যি তাই । এ কয়দিনে ফারিয়া লক্ষ্য করল আকাশ সবকিছুই নষ্ট করে ।
আকাশের রাখা চা টুকু খেয়ে ফেলে এক চুমুকে । এর স্বাধ টাই আলাদা । আগে ফারিয়া কখনও কারো এতো করা কিছু খায় নি এমন কি ছুয়ে পর্যন্ত দেখতো না আর এখন আকাশের এটো করা জিনিস ও কি আনন্দের সাথেই না খায় । মানুষ প্রেমে পড়লে কত কিছুই না পরিবর্তন হয় !
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:১৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×