বাইকের ইন্জিনটা বন্ধ করে দিলাম । এমনিতে গলি তারপর উপর গভীর রাত । ইন্জিনের আওয়াজটা বড় বেশি শোনাচ্ছে । কারো না করো ঘুম ভেঙ্গে যাবে । সব থেকে বেশি অস্বস্তি লাগছে কেউ আবার চোর চোর বলে চিত্কার করে ওঠে । অবশ্য ওঠাটা অস্বাভাবিক না । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় দেড়টা বাজে । এতো রাতে কারো বাড়ির সামনে গিয়ে যদি দাড়িয়ে থাকি চোর ভাবাটা খুব বেশি দোষের কিছু না । হোক না যতই শ্বশুর বাড়ি । আর এটা কি সময় হল শ্বশুর বাড়িতে আসার ।
কিন্তু কি করবো ঘুম যে আসছিল না কিছুতেই । শ্রাবণকে ছাড়া কিছুতেই ঘুম আসছিল না । বিকেল বেলা শ্রাবণের সাথে খুব ঝগড়া হয়েছে । মনে হয় ঝগড়ার মাত্রা টা একটা বেশিই হয়ে গিয়েছিল । ঝগড়ার একটু পরেই দেখলাম ও বাসা থেকে বেরিয়ে গেল । বেরুবার আগে পাশের ঘরে মাকে বলল মা আমি বাবার বাড়ি যাচ্ছি । আপনার ছেলেকে বলবেন যেন আমারকে ফোন না দেয় । তার মনে যখন এতো সন্দেহ তখন আমার সাথে আর থাকতে হবে না । আমি আব্বার বাড়িতে যাচ্ছি । আর আসবো না ।
মা আটকাতে চেষ্টা করল । কিন্তু পারলো না । ওর যা জেদ । রিক্সা করে চলে গেল ।শ্বশুর বাড়ি কাছে হওয়ার এই এক অসুবিধা । কিছু হলেই বাপের বাড়ি । যাক যেখানে ইচ্ছা । আমার দিকটা সে দেখবে না আমি কেন তার কথা ভাববো ? আর আমি ঠিক যে কাজটা পছন্দ করি না সে কাজটা সে কেন করে । কেন সে ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলল ? হোক না মামাতো ভাই ! তার আবার হেসে ।
আমি বলি নি আমি সন্দেহ করি । কিন্তু ঐ ছেলেটা তোমাকে এক সময় পছন্দ করতো । বিয়ে করতে চেয়েছিল । এটা আমি কিছু মেনে নিতে পারি না । তোমার পাশে কোন ছেলেকে আমি সহ্যই করতে পারি না । কেন এটা বোঝ না তুমি ? মনে মনে রাগ হয় খুব । কার উপর কে জানে ? আমি শ্রাবনের উপর রাগ করতে চাইলাম । কেন জানি কাজ হল না খুব ।
এই একটা ব্যপার শ্রাবনের রাগ করা যায় না কিছুতেই । কিন্তু ওর যাবার পর মনের ভিতর কেমন জানি একটা অনুভুতি শুরু হল । রাতে ঐ অনুভুতিটা আরো প্রবল হল । শান্তি দিলো না কিছুতেই । খাবার সময় কেন জানি ভাত মুখে উঠল খুব । অন্য দিন শ্রাবণ খাওয়ার সময় ও সামনে বসে থাকতো । খেতে না চাইলে অথবা ভাত নষ্ট করতে দেখলে ধমক দিতো । জোড় করে খাওয়াতো । আজ কিছু আর ভাল লাগল না ।
সব থেকে ঝামেলা বাধল ঘুমানোর সময় । প্রতি দিন ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই । ওর গায়ে গন্ধ না পেলে ঘুম আসে না । প্রথম ও খুব আপত্তি করতো । বলত কেউ স্পর্শ করলে ঘুম আসে না । কিন্তু সে আপত্তি টেকে নি । বলতাম ঘুম না আসলে জেগে থাকো । বিয়ে করেছি কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমুবার জন্য নাকি ? ও হাসতো ।
খানিকটা এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লাম । খামোখা চেষ্টা করে লাভ নাই । ওকে ছাড়া ঘুম আসবে না কিছুতেই । শ্বশুর বাড়ি খুব দুরে না । মোটরসাইকেলে বড় জোর দশ মিনিটের পথ । ঐ রাত একটার সময় বাইক বের করলাম । মা জেগে গেছিল । আমাকে বের হতে দেখে বলল “এতো রাতে আর এসে কাজ নাই । ও বাড়িতেই থেকে যাস” ।
তারপর এইখানে শ্বশুর বাড়ির সামনে । শ্রাবণের নাম্বারে ফোন দিলাম । যদিও ওদের ঘরের বাতি নেভানো । তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে ও জেগে আছে । দুবার রিংয়ের পরই দেখলাম ও ফোন রিসিম করল ।
“কি ব্যাপার ? ফোন দিয়েছো কেন” ?
কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । খানিকটা ইতস্তঃ করে বললাম “ঘুম আসছে না” ।
“তো আমি কি করবো ? ঘুম পাড়ানি গান শোনাবো” ? এতো কঠিন জবাব ! মনটা একটু খারাপ হল ।
বললাম “তোমার ও তো ঘুম আসছে না” ।
“আমার ঘুম আসুক বা না আসুক সেটা নিয়ে তো তোমার ভাবতে হবে না । শোন এসব ফালতু কথা বলতে ভাল লাগছে না । আমি রাখি” ।
“না প্লিজ শোন………”
কোন সাড়া শব্দ নাই । ফোন রেখে দিল নাকি । মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি না এখনও লাইনে আছে ।
“টিয়াপাখি আছো ? আছো” ?
অনেকক্ষন পরে বলল “বল” । এবার অনেকটা নরম স্বরে । “ বল । কথা বলছো না কেন” ?
আমি একটু চুপ থাকলাম । তারপর বললাম “একটা কথা বলি” ?
“বল”
“আই লাভ ইউ” ।
“এটা জানি । অন্য কিছু বল” ।
“আমি তোমাকে কখনও সন্দেহ করি না । কখনই না” ।
“এটাও আমার জানা” ।
“তাহলে তুমি আসার সময় ঐ কথা কেন বললে” ?
“বলেছি রাগের মাথায়” ।
“কিন্তু তোমার পাশে কোন ছেলেকে দেখলে দেখলে আমার সহ্যই হয় না । বল এটা কি আমার দোষ” ?
ও বলল জি “এটা আপনারই দোষ । এটাও আমি জানি । অন্য কিছু বল” ।
“আচ্ছা একটা কথা বলি যেটা তোমার অজানা” ।
“বল” ।
“আমি এখন তোমাদের বাড়ির সামনে” ।
ও হেসে ফেলল । “হাসসো কেন” ?
“হাসছি কারন এটাও আমি জানি” ।
“মানে” ?
শ্রাবণ বলল “একটু উপরে তাকাও ব্যালকুনিল দিকে” ।
প্রথম কিছু বুঝলাম না অন্ধকারের জন্য । একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম একটা শেইপ । শ্রাবণ দাড়িয়ে ।
“তুমি কিভাবে বুঝলে ? এতো রাতে”?
ও আবার হাসল । বলল “তোমার ভটভটির যা আওয়াজ , তুমি যখন গলির মধ্যে ঢুকলে তখনই বুঝছি আমি । আর সন্ধ্যা থেকেই মনে হচ্ছিল যে তুমি হয়তো আসবে” ।
আমার মনটা ভাল হয়ে যায় চট করে । বললাম “নিচে আসো । আজ সারা রাত তোমাকে ঘুরবো” ।
“ইস ! আমার বুঝি সকাল বেলা উঠতে হবে না ? আর তোমার ভটভটির যা আওয়াজ ! শোন গেট খুলছি । চুপচাপ এসে ঘুমাও” ।
“একটু আসো না । বেশি না । অল্প একটু” ।
“না । দেখো এরকম করলে কিন্তু আমি গেট খুলবো না । ঘুম আসছে না ঘুম পারিয়ে দিচ্ছি ।এতো শখ কেন” ?
“আচ্ছা” । খানিকটা মন খারাপ করে বললাম ।
কিছুক্ষন পর গেট খুলে বাইরে এল । গেটটা বাইরের দিক দিয়ে তালা মারতে দেখে অবাক হলাম ।
“ বেশি না” ও বলল “মাত্র আধা ঘন্টা” । তারপর ও মোটরসাইকেলে উঠে বসল । “কই তোমার ভটভটি স্টার্ট দাও” ।
আমি ভটভটি স্টার্ট দিলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৩০