সেল ফোনটার আলোটা অবিরাম জ্বলছে আর নিভছে । সাইলেন্ট করা । তাই আওয়াজ হচ্ছে না । কাল রাত থেকে চলছে ।
আমি জানি কে করেছে । তাই ফোনটা রিসিভ করছি না ।
প্রতিবার ফোনটা এরকম জ্বলছে আর নিভছে আর আমার অভিমান আরো ঘনিভুত হচ্ছে । মিতুর উপর অভিমান আরো প্রবল হচ্ছে ।
ও এমন একটা কাজ কেন করল ?
কেমন করে করতে পারল ?
তাহলে এতো দিন ধরে আমার সাথে কি অভিনয় করেছে ?
আমাকে একটুও বিশ্বাস করেনি ?
আমার ভালবাসাকে একটুও বিশ্বাস করেনি ।
যেখানে ওর ভালবাসার ভিতই নড়বড়ে সেখানে কিভাবে ওকে আপন করে নি ?
ও যতবারই ক্ষমা চাক আমি ওকে কোন দিনই ক্ষমা করবো না । কষ্ট হবে আমার ।
হোক । তবুও ওর সাথে আর না ।
যে আমাকে বিশ্বাস করে না , তার কাছে নয় ।
ফোনটা আবার জ্বলছে নিভছে । এবার ফোনটা রিসিভ করলাম ।
ওপাশ থেকে কান্না জড়িত গলায় মিতু বলল “শুভ প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও । প্লিজ । আমার ভুল হয়ে গেছে । প্লিজ” ।
নিজেকে সামলাই ।
“কি করে মাফ করে দেবো বল ? তুমি আমার ভালবাসাকে ছোট করেছ । সন্দেহ করেছ । অবিশ্বাস করেছ । আর যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালবাসার প্রশ্নই আসে না” ।
“ না । প্লিজ বিশ্বাস কর । আমি এটাকে জাস্ট ফান হিসাবে নিয়ে ছিলাম । বিশ্বাস কর আমি তোমাকে অবিশ্বাস করিনি । তোমার ভালবাসাকে ছোট করি নি” ।
খুব ইচ্ছা করছিল ওর কথা গুলো মেনে নেই । কিন্তু ও যা করেছে আমার সাথে তা কিভাবে ভুলে যাই ।
কিছুতেই না । কোন ভাবেই না ।
আমি বললাম “মিতু আমি রাখি । তুমি আর আমাকে আর ফোন দিবা না” ।
“শুভ শোন .... প্লিজ শোন ....”
আমি ফোন রেখে দিলাম ।
মিতুর সাথে আমার পরিচয় প্রায় এগারো মাসের । ফোনে পরিচয় । প্রথমে টুকটাক কথা । তারপর একে অপরের অনেক কাছে চলে আসা । ও এতো কথা বলতে পারত । ওর এই জিনিসটাই আমার সব থেকে ভাল লাগতো ।
মেয়েরা এতো ছটফটে কেমন করে হয় ? এক সময় ওকে এমন আপন হতে লাগল ওর সাথে একটু কথা না বললে ভাল লাগত না । আমরা প্রায় সারা দিন কথা বলতাম । কত কথা । কথা যেন আর শেষ ই হয় না ।
তারপর একদিন আমাদের দেখা হল । ও বারেবার বলত “যদি আমাকে দেখে তোমার পছন্দ না হয়” ?
আমি বলতাম “যারা কেবল চেহারা দেখে ভালবাসে তাদের ভালবাসা কখনও সত্যি হয় না । আর তোমার উপর আমার টান আছে । ভালবাসা তৈরি হয়েছে । বিশ্বাস তৈরি হয়েছে । চেহারা খুব বেশি ইফেক্ট করবে না” ।
“ তারমানে একটু হলেও ইফেক্ট করবে” !
“মিতু এমন কথা কেন বলছ ? আমার উপর তোমার বিশ্বাস নেই” ?
“আছে তো । কিন্তু আমি তো দেখতে সুন্দর না” ।
“আর একবার এই কথা বলবে না । আমার সুন্দর বউ লাগবে না । ঠিক আছে ! এখন এসব কথা বাদ দাও আর আমাদের সামনের দিন গুলোর কথা ভাবো । ঠিক আছে” ?
“আচ্ছা” ।
ওর সাথে কথা বলে আমার খানিকটা মন খারাপ হয় । তারমানে মিতু দেখতে খুব বেশি সুন্দর না । তো কি হয়েছে ? নিজের মন কে বললাম । এতো দিনে ওর সাথে কথা বলে ওর প্রতি এক অদ্ভুদ টান তৈরি হয়েছে । আর তাছাড়া ওর মনটা অসম্ভব ভাল অসম্ভব নরম । আমি জানি ও আমাকে বিশ্বাস করে । আমি কথনই ওকে কষ্ট দিতে পারবো না ।
পরদিন বিকালে ওর সাথে দেখা করতে গেলাম । যেমনটা ভেবেছিলাম ও দেখতে খুব বেশি সুন্দর না । কিন্তু সত্যি এতে আমার মন একটুও খারাপ হল না । ঐ দিন অনেক কথা বললাম ওর সাথে । এতো কথা বলেছি আমরা কিন্তু আজ আমার আনন্দ লাগছিল বেশি ।
কিন্তু মিতু যেন একটু চুপচাপ ছিল । যা ওর সাথে যায় না । বললাম “চুপ করে আছো কেন ? ফোনে এতো কথা বল আর দেখা হয়ে এই অবস্থা । নাকি আমাকে তোমার পছন্দ হয় নি” ।
মিতু হাসল । “না তা না । আসলে আজ শরীরটা ভাল লাগছে না । আর ঠান্ডা লেগেছে” ।
তাই বলি ফোনে ওর কণ্ঠ টা একটু অন্য রকম লাগতো । যাগ্গে !
“তাহলে কি চলে যাবা এখন” ?
“ হু । আজ যাই ? আবার দেখা করবো” ।
আচ্ছা এবার থেকেতো দেখা হবেই । “মিতু একটা কথা বলবো”?
“বল” ?
“তোমার সাথে রিক্সায় চড়ার খুব শখ আমার । তোমার হল পর্যন্ত তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি” ?
“এতো কষ্ট করবে ? তোমার বাসা একেবারে উল্টো দিকে । এবার যখন দেখা হবে সেদিন ঘুরবো । ঠিক আছে” ?
মনটা খারাপ করেই বললাম “ঠিক আছে” ।
মিতু চলে গেল । ওর রিক্সাটা যতক্ষন দেখা যায় তাকিয়ে ছিলাম । মনে হচ্ছিল ও পিছন ফিরে তাকাবে । কিন্তু তাকালো না । মনটা খারাপই হল খানিকটা ।
রাতে ফোন দিলাম । “সোনাপাখির শরীর কেমন এখন” ?
ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ এল না । খানিক বাবে মনে হল যেন কান্নার আওয়াজ পেলাম ।
“মিতু তুমি কি কাঁদছো” ?
“মিতু” ! অনেক্ষন ধরে ডাকলাম কিন্তু ও কোন জবাব দিল না । কাঁদতেই লাগল ।
“কি হল ? আমি কিছু করেছি ? আমার কোন ভুল হয়েছে ? কথা কেন বলছ না ? কেন কাঁদছো ? শরীর খুব বেশি খারাপ ? মিতু কথা বল প্লিজ” । এই রকম হাজার টা প্রশ্ন ।
অনেকক্ষন পর মিতু কান্না জড়িত গলায় বলল “আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও । আমি তোমার উপয় বিশ্বাস রাখতে পারি নি” ।
“এসব কি বলছো” ?
“আমি ভেবেছিলাম চেহারা ভাল না হলে হয়তো তুমি আমাকে পছন্দ করবে না । আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখবে না । তাই তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য বিকালে আমি না গিয়ে আমার রুম মেট কে পাঠিয়েছিলাম” ।
“কি ? কি বললে তুমি” ? কেন জানি বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল । “এমন একটা কাজ তুমি কিভাবে করলে” ?
“আই এম সরি শুভ । আমার ভুল হয়ে গেছে” ।
“তারমানে তুমি এতোদিন আমার কথা বিশ্বাস কর নি । আমার ভালবাসা কে বিশ্বাস কর নি” ?
“না শুভ প্লিজ বিশ্বাস কর এমন কিছু না” ।
“না মিতু তুমি আমাকে কষ্ট দিলে । আমার ভালবাসাকে বিশ্বাস না করে তুমি আমার ভালবাসাকে ছোট করছ । আমাকে ছোট করেছ । আমি কোন দিন তোমাকে ক্ষমা করবো না । কোন দিন না” ।
আমি ফোন রেখে দিলাম । তারপর থেকে মিতু কত বার যে ফোন দিয়েছে কিন্তু মন যে কষ্ট ও দিয়েছে তার জন্য ওকে ক্ষমা করবো না কোন দিন ।