মোবাইলটা দ্বিতীয় বারের মত বেজে চলেছে । রিসিভ করতে ইচ্ছা করছে না । আর পরিচিত কেউ না । ঘরির দিকে আবার তাকালাম । রাত প্রায় একটা । এতো রাতে কার আবার দরকার পড়ল আমাকে । মনটা আজ এমনিতেও ভাল নেই ।
কিন্তু ফোনটা বেজেই চলেছে । বিরক্তির যখন চরম সীমায় পৌছালাম তখন ফোন টা রিসিভ করলাম ।
“হ্যালো আবির” ? কন্ঠে খানিকটা সংকা ।
“আবির বলছো ? আমি বর্ণা” । আমি খানিকটা না বেশ খানিকটা অবাক হলাম ।
এতো রাতে বর্ণা আমাকে কেন ফোন করবে ?
সরি বলার জন্য ?
অন্তত আজ যা হল তার জন্য তো ওর সরি বলা উচিত্ ই ।
“আবির বলছ” ? ও আবার বলল ।
“ হু বলছি । কেন ফোন করেছ” ?
“বাব্বাহ এতো রাগ” ! ও হেসে উঠল ।
মনে হল যে ফোনটা রেখে দেই । কিন্তু রেখে দিতে পারলাম না । কিছু কিছু মানুষের ফোন ইচ্ছা করলেই রেখে দেওয়া যায় না ।
বর্ণা বলল “আচ্ছা আজ তুমি এমন একটা কাজ কেন করলা ? সবার সামনে এমন করে প্রপোজ করার দরকার ছিল কি ? ফোন করে বলা যেত , ফেইসবুক চ্যাটিং এ বলা যেত আর যদি সরাসরি বলতেই হত তাহলে আমাকে আড়ালে ডাকতে ! আমরা অন্য কোথাও দেখা করতাম । এরকম গাধার মত সবার সামনে প্রপোজ করার দরকার ছিল কি” ?
আমার কাছে কোন উত্তর নেই ।সত্যিই এরকম গাধামি করার দরকার ছিল কি ?
“আমি ...........”
আচ্ছা এক মিনিট ।
বর্ণা এসব কথা কেন বলছে ?
ও তো আমাকে রিফিউজ করেই দিয়েছে ।
তাহলে ওর এতো মাথা ব্যাথা কেন ?
আমি বললাম “আচ্ছা তোমার এতো মাথা ব্যাথা কেন ? আমার যা বলার আমি বলেছি তোমার যা বলার তুমি বলেছ । তাহলে আবার এসব কথা কেন আসছে” ?
“ আহা বলব না ! উনি বড় বীরত্বের কাজ করেছে ! গাধা কোথাকার” !
আরে এই মেয়েটা আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছে । মনে হচ্ছে যেন আমি তার বয়ফ্রেন্ড । যা বলবে তাই আমাকে মেনে নিতে হবে ।
আমি বললাম “আচ্ছা তুমি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছো কেন” ?
“বলছি । কেন বলছি সেটা কাল বুঝতে পারবা” ।
“মানে ? মানে কাল সকাল ১০ টার সময় আমার সাথে দেখা করবা । বেইলী রোডের আলবেইকের সামনে” ।
“ না । কাল সকালে আমার কাজ আছে । আমি থাকতে পারব না” ।
আসলে আমার কোন কাজ নেই । কেন এতো সহজে রাজি হব ?
“ শোন কাজফাজ জাহান্নামে যাক । তোমাকে বলেছি থাকতে থাকবা । আর কিছু শুনতে চাই না” ।
আমি এবার সত্যি সত্যিই অবাক হলাম । এই মেয়েটা আমার উপর এতো অধিকার ফলাচ্ছে কিভাবে ? আর আমিই বা এটা মেনে নিচ্ছি কেন ? আশ্চর্য !
“আর শোন ! ফর গডসেক ! প্লিজ আমাদের মাঝে যা কথা বার্তা হল তোমার কোন ফ্রেন্ডকে বলবা না । মনে থাকবে” ?
“থাকবে” ।
“প্রমিজ কর” ।
“আচ্ছা বাবা থাকবে । কারলাম প্রমিজ” ।
“কাউকে বলবো না । আচ্ছা এবার তাহলে ঘুমাও । বেশি রাত জাগতে নেই । গুড নাইট” ।
আচ্ছা । বর্ণা ফোন রেখে দিলো । ও এমন কেন করল ঠিক বুঝলাম না । কাল কেন দেখা করতে বলল ।
কি বলবে ?
আর এভাবে আমার উপর জোরই বা খাটালো কেন ? এই মেয়ে গুলো এতো জটিল হয় । এদেরকে বোঝা আসলেই দায় !
বর্ণাকে সেই ফাস্ট ইয়ার থেকেই চিনি । অন্য সব মেয়ে গুলো থেকে আলাদা । চুপচাপ থাকে কথা বলে কম । প্রথম থেকেই ওকে ভাল লাগতো । সেই ভাললাগা কখন যে ভালবাসায় পরিণত হয়েছে টের ও পাই নি ।
একা একা আর কত দিন থাকবো তাই ঠিক করলাম বলেই দেবো । টুকটাক কথা বার্তা বলতাম ।
কালকে একদম সবার সামনে ওকে প্রপোজ করে বসলাম ।
কিন্তু হায় ও মুখের উপর না বলে দিল । এই মেয়ে গুলো এতো নির্দয় হতে পারে । তারপর রাতে এই ফোন । কিছুই বুঝলাম না । মেয়ে গুলো এমন জটিল কেন হয় !
ওর কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম । সকালে উঠতে হবে ।
মুখে যাই বলি না কেন , ওকে তো পছন্দ করি খুব । ওর কথা কি ফেলা যায় ? কিছুতেই না । দেখা যাক কি বলে ও পরদিন ও আমার আগেই পৌছে গেল ।
আমার যেতে একটু দেরি হয়ে গেল । আমি গিয়ে দেখি ও দাড়িয়ে আছে আমার জন্য । আমি সামনে গিয়ে দাড়ালাম ।
ও কিছু বলতে গিয়েও বলল না । আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে নিয়ে গেল । আমি খানিকটা অস্বস্তিতে ছিলাম । সাথে সাথে ভালও লাগছে । ভাল লাগছে এই ভেবে যে এর আগে কথনও বর্ণার সাথে এমন ভাবে দেখা করি নি । বর্ণা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমার চোখে চোখ রেখে বলল “কাল যেটা বললা সেটা কি তুমি সত্যি ফিল কর নাকি এমনি টাইম পাস” ।
“টাইমপাস কেন হবে” ?
বর্ণা খানিকক্ষন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো । মনে হল বোঝার চেষ্টা করছে ।
“তাহলে তোমাকে আমার কিছু কথা শুনতে হবে । শুনবে” ?
“শুনবো” ।
“ বল” ।
“তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ তোমাকে রিফিউজ করছি বলে” ?
“রাগ করিনি । তবে কষ্ট পেয়েছি” ।
বর্ণা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল । হাত ধরতে বলল । আমি টিপটিপ নিঃশ্বাসে ওর হাতে হাত রাখলাম । ওর নরম হাতটা শুধু যেন আমার হাত না আমার বুকের মধ্যে স্পর্শ করল ।
বর্ণা বলল “আই এম সরি টু হার্ট ইউ । কিন্তু কাজটা আমি ইচ্ছে করে করেছি” ।
“ কেন” ?
“কারন নিশ্চই আছে । জানো আবির আমাদের ফ্যামিলি টা খুব বেশি কন্জারভেটিভ । আমার বাবা এই সব প্রেম ভালবাসা এক দম পছন্দ করেন না । আমাকে সেই ভাবেই বড় করা হয়েছে । কিন্তু ...” ।
“কিন্তু কি” ?
“ আবির মন কি এসব মানে বল ? তুমি যেমন আমাকে পছন্দ কর আমিও ঠিক একই ভাবে পছন্দ করি । অনেক আগে থেকেই “।
আমি অবাক হলাম খুব । সত্যি কি তাই ।
“তুমি যখন সবার সামনে আমাকে প্রপোজ করলে আমি যে কি পরিমান খুশি হয়েছিলাম ! কিন্তু আমি যদি হ্যা বলতাম তাহলে কোন না কোন ভাবে কথাটা আমার বাসায় পৌছে যেত । আর বোঝই তো । আমার সব কিছু বন্ধ হয়ে যেত । তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো” ?
“হু”।
কিছুক্ষন আমরা কেউ কথা বলতে পারলাম না । কেবল একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছুক্ষন পর ওর লজ্জা পেল । “কি দেখছো ওমন করে” ?
“ইস আমি আমার গার্লফ্রেন্ড কে দেখছি । যত ইচ্ছা দেখবো” ।
ও আরো লজ্জা পেল ।