একটু আগেই নিপা ফোন করেছিল ।
বলল "কোথায় তুমি ? চলে এসেছ ?"
" হ্যা চলে এসেছি । তুমি ?"
" এই তো আর পাঁচ মিনিট । এখানকার কাজ শেষ । আর ইছিবাইক পেয়েছ ?"
" হুম । পেয়েছি । তুমি আসো । ওকে !"
" আচ্ছা সোনাপাখি আমি আসছি ।"
ও আসছে আর আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছি । প্রতিটা মুহুর্ত যেন আমি অনুভব করতে পারছি । চারি দিকে কি হচ্ছে আমার সেদিকে কোন খেয়াল নাই । ও আসছে আর কেবল ওর জন্যই অপেক্ষা করে আছি । আমার কাছে কেবল এইটাই ইম্পর্টেন্ট ।
একটু পরেই আমি ওকে দেখতে পেলাম । ঐ তো হেটে হেটে আসছে । আমার হার্টবীট যেন আরো বহু গুনে বৃদ্ধি পেল ।
ভাগ্য ভালো বুকের খাচাটা অনেক মজবুত করে তৈরি । তা না হলে, ওকে দেখলে যে পরিমান লাফায়, কবে যে এই হার্টটা খাচা ভেঙ্গে বের হয়ে পড়ত !
বোরকা পরেছে তার উপর মুখ আটকানো । কেবল ওর ঐ মায়াময় চোখদুটো দেখা যাচ্ছে তবুও ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ও হাসছে ।
হাসলে ওর চোখ দুটো একটু ছোট হয়ে যায় আর কাঁপতে থাকে । এটা আমি খুব পছন্দ করি ।
একসাথে ইজিবাইকে উঠে বসলাম । আমাদের স্বপ্নের যাত্রা শুরু হল । প্রথমে আমি ওর মুখোমুখি বসলাম । নিপা বলল "আমার কিন্তু একটু ভয় ভয় করছে । আমি কোন দিন ভাবতেও পারি নি এমন দিনে তোমার সাথে দেখা করতে পারবো । এভাবে একসাথে যেতে পারবো ! যদি কেউ দেখে ফেলে , একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে "।
আমি কেবল হাসি । ভয় আমার ও একটু একটু করছে । কিন্তু ভাল লাগাটা তার থেকে হাজার গুন বেশি ।
"দেখো আমি পাঞ্চাবী পড়েছি" ।
"জি আমি দেখেছি । আর আপনাকে অনেক সুন্দরও লাগছে ।"
" কচু লাগছে ।" মুখে যাই বলি ওর মুখে প্রসংশা শুনে আমার মনটা অনেক ভাল লাগল । অনেক বেশি ।
তারপর ব্যাগ থেকে গোলাপ ফুল বের করে ওকে দিলাম । বললাম "হ্যাপি ভ্যালেনটাইস ডে ।" ওর চোখ দুটো আবার ছোট হয়ে কেঁপে উঠল । তারমানে ও খুশি হয়েছে ।
"জানো এই প্রথম আমি কাউকে ফুল দিলাম । মানে নিজ হাতে দিলাম । এর আগেও তোমাকে দিয়েছি কিন্তু অন্যের মাধ্যমে ।" ও আবার হাসল । আজ কি কেবল ওর চোখের হাসিই দেখতে হবে , ঠোটের হাসি কি আর দেখতে পাবো না আজ ?
নিপা বলল "সকালবেলা পড়তে যাওয়ার সময় আমিও তোমার জন্য কিনেছি ।" বলে ও ব্যাগ থেকে দুটো গোলাপ ফুল বের করল । আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল "হ্যাপি ভ্যালেনটাইনস ডে ।"
আমার যে কি পরিমান আনন্দ লাগল । এই প্রথম কেউ আমাকে ফুল দিল ।
তারপর রজনিগন্ধার তোড়াটা ওকে দিলাম । এতে ও আরো বেশি খুশি হল । বলল "এইতো আমার প্রিয় ফুল । থ্যাঙ্ক ইউ ।"
ওর জন্য কিনে আনা সাফারিটা বের করে দিলাম ।
বললাম "এটা আমার সব থেকে প্রিয চকলেট ।"
আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো বাসায় নিয়ে খাবে । কিন্তু ও এখনই প্যাকেটটা খুলল ।
আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল "তুমি খাও ।"
" তুমি খাবে না ?"
"খাবো । আগে তুমি নাও । আমি একটা বাইট নিলাম ।"
তারপর ও স্কাপ একটু নামিয়ে সাফারিতে কামড় মাড়ল । এই দৃশ্যটা আমার অনেক ভাল লাগল । নিপা কথনও কারো এটো কিছু খায় না । কথাটা বলাটা তে ও হাসল ।
বলল "আমাদের মধ্যে কি ওসব কিছু এখন আর আছে ?"
সত্যি তাই । সাফারি খেতে খেতে এবার ওর পাশে গিয়ে বসলাম । ও হাত দেখিয়ে বলল "এই দেখো হাতে মেহেদি দিয়েছি ।"
আমি ওর হাত ধরলাম । ইস কি সুন্দরই না লাগছে ! আমি কালকে ওকে বলেছিলাম হাতে মেহেদি দেবার জন্য ।
হঠাত্ আমার মনে পড়ল । আমার অনেক দিনের ইচ্ছা নিজের হাতে ওর পায়ে পায়েল পড়াব । অনেক দিন পর সুযোগটা এল । পকেট থেকে পায়েল বের করে ওর পায়ে পড়িয়ে দিলাম । আবার ওর পাশে বসলাম ।
বললাম "শুধু কি চকলেটই খাবো আর কিছু খাবো না ?"
" মানে ?" ও বুঝতে পেরে বলল "মাথা খারাপ তোমার ? এই রাস্তার মধ্যে পারবো না । আর সেদিন হয়েছে না !"
" তো কি হয়েছে ? দিবা না ?"
"দেখো সামনে আমার মামাদের বাড়ি । যদি দেখে ফেলে ।"
জার্নি প্রায় শেষ হয়ে আসছিল ঠিক এমন সময় ও আমার গালে চুম খেলো । চট করে । আমি ভাবতেই পারি নি ও কাজটা করবে !
বললাম "মাত্র একটা ?"
" এই হল তোমার দোষ । একটা পেলে আরো চাও । আর হবে না । এই রাস্তার মধ্যে কিভাবে হবে বল ?"
দেখতে দেখতে জার্নি শেষ হয়ে এল । এবার বিদায় নেওয়ার পালা । ইজি বাইক থেকে নেমে পড়লাম । ওকে আরো কিছুটা পথ যেতে হবে । ওর সাথে যেতে খুব ইচ্ছা করছিল । কিন্তু শহরে মধ্যে ওর সাথে যাওয়া রিস্ক । যতক্ষন ওকে দেখা যায় ততক্ষন তাকিয়ে রইলাম ।
খুব সাধারন এই ইজিবাইক জার্নিটা । কিন্তু আমার সাথে ও ছিল । এর থেকে বড় কিছু আমার কাছে হতে পারে না । এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না । এখনও পর্যন্ত এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন শ্রেষ্ঠ জার্নি । হোপ সামনে আরো অপেক্ষা করছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ সকাল ১১:২৭