তবুও ভালোবাসি তাকে ( পর্ব ০১)
ইরার কথা শুনে খানিকটা ধাধায় পড়লাম । ও আসলে কি বলতে চাইসে ।
মানে কি ? ও কি চাইছে আমি ওকে প্রতি দিন রিক্সা ঠিক করে দেই । এই মেয়ে গুলো এতো হেয়ালী জানে !
ইরা চলে যাবার সময় ফিরে তাকাল আমার দিকে । তারপর হেসে হাত নাড়ল । আমি এটা আশা করি নি ।
তারপর থেকে এলাকার সব রিক্সা ওয়ালা বলা হল যে ইরাকে যেন রিক্সার জন্য ওয়েট করে থাকতে না হয় ।
কিন্তু আমি নিজে আর আগের মত থাকতে পারলাম না আমার পরীক্ষার জন্য । পড়াশুনা নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম এমন সময় একদিন ইরার কাছ থেকে একটা খবর এল আমার কাছে । সে আমার সাথে দেখা করতে চায় । যত চাপই থাক পড়াশুনার এই আহবান কি উপেক্ষা করায় ক্ষমতা আছে ?
সেদিন সকাল বেলা আমি ওর জন্য ওয়েট করছিলাম । ঠিক সময়ই ও বের হল । এজ ইউজাল একটা রিক্সাওয়ালা ওর সামনে যায় আর রিক্সা করে চলে গেল । আমি কেমন যেন বেয়াক্কল হয়ে গেলাম । কিরে ভাই বলল যে দেখা করবে আর ও আমাকে চেনেই না এমন ভাব করে চলে গেল । আমার মেজাজটা খারাপ হল । আমি পড়াশুনা বাদ দিয়ে তোমার জন্য এখানে ওয়েট করছি আর তুমি এমন করলে ।
আমি ঘুরে চলে যাবো এমন সময় দেখলাম যে রিক্সাওয়ালা ইরাকে নিয়ে গিয়েছিল সে দ্রুত ফিরে আসছে ।
আমার কাছে এসে ব্রেক কষে বলল “ভাইজান আপামনি আপনারে যাইতে কইছে আমার সাথে ।“
“ও কোথায় ?”
“ হেই দাড়াইয়া আছে সামনে !”
আমি রিক্সায় উঠলাম । মোড় পেরিয়েই দেখলাম একটা গাছের আড়ালে রাজকুমরী দাড়িয়ে আছে । রিক্সা থাকতেই ইরা রিক্সায় উঠে বসল ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল “হুড তুলে দেন ।“
আমি তুলে দিলাম । কতক্ষন রিক্সা চলল ।
এক সময় ও বলল “আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন ?”
আমি অবাক হলাম । ‘কেন ? রাগ করবো কেন ?”
“ না আমার মনে হয়েছে যে আপনি বোধহয় আমার উপর রাগ করেছেন ।“
“ না । আমি রাগ করি নি ।“
“ তাহলে আপনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন কেন ?”
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ।
“এড়িয়ে চললাম কোথায় ?”
“ তা না হলে গত এক সপ্তাহে আপনি আমার সাথে দেখা করেন নি কেন ? আমার মনে হয়েছে ঐ দিন আপনাকে টাকা দিয়েছি বলে আপনি হয়তো রাগ করেছেন ।“
“ না প্লিজ এমনটা ভেবো না ।“ আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম । “আসলে আমার পরীক্ষা চলছে তো তাই একটু পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত ।“
ও আমার দিকে তাকাল । দেখলাম ওখানে পানি টলমল করছে ।
“সত্যি করে বলেন । আমার হাত ছুয়ে বলেন ।“
বলতে বলতেই ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল ।
আমি ওর হাত ধরেই বললাম “বিশ্বাস কর আমি তোমাকে এড়িয়ে চলছি না । পরীক্ষাটা শেষ হলেই আবার আগের মত হয়ে যাবো ।“
ওর চোখের পানি মুছে দিলাম । কেমন যেন এক অদ্ভুদ ভালা লাগা আমার পুরো মন জুড়ে বয়ে গেল । একটা মেয়ে আমার সব থেকে পছন্দের মেয়েটা কাঁদছে এই ভেবে যে আমি হয়তো তাকে এড়িয়ে চলছি ।
ওয়াও ! আমি যা চাইতাম তা পেয়ে গেছি আর কি চাই ।
আমি হাসি মুখ দেখে ইরা বলল “হাসছেন কেন ?”
আমি বললাম “আমি কেন হাসছি সেটা পরে বলছি । আগে তুমি বল যে আমি যদি তোমাকে এড়িয়েও চলি তাহলে তুমি কাঁদবে কেন ?”
“ বোঝেন না কেন ?”
“ না বুঝি না । বল আমাকে ।“
ও একটু সময় নিল । তারপর বলল “যে দিন জান লাম আপনি আমাকে পছন্দ করেন তখন খুব বিরক্ত হয়ে ছিলাম । একটা জায়গায় আসতে পারলাম না আর পছন্দ করে শুরু হয়ে গেল । সব এলাকার ছেলে গুলোর কি আর কোন কাজ নাই । কিন্তু আসতে আসতে আপনার সম্মন্ধে জানতে শুরু করলাম । এরকম একটা পজিশনে থেকেও আপনার মধ্যে কোন খারাপ গুন নেই । আপনার কোন বাজে অভ্যাস নাই । কোন বাজে ফ্রেন্ডও নাই । আপনি কথনও আপনার বাবার পাওয়ার দেখান না আর আপনি আমাকে যে ভাবে অদৃশ্য প্রোটেকসন দিয়ে গেছে । আমি চাইলেই নিজেকে দুরে রাখতে পারি নি । ঐ দিন আমি কেবল আপনার সাথে কথা বলার জন্যই গেছিলাম । টাকা দেওয়াটা ছিল কেবল উছিলা ।“
আমি হাসলাম ।
“বুঝলাম । এখন বল” ।
“কি বলব?”
“তোমার ফিলিংসগুলো এক কথায় বল।“
“ইস । বলব না । আপনি বলেন” । ও এবার হাসল ।
তারপর থেকে আমাদের রোমান্টিক অধ্যায়ের শুরু । আমরা প্রায় প্রতি দিন দেখা করতাম । একসাথে দেখা করতাম । ঘুরতাম । দিন গুলো কত যে আনন্দে কাটতে লাগল । কিন্তু ভাল সময় এক সময় শেষ হয় । আমার ও হল ।
ঐ দিন আকাশে মেঘ ছিল । সারাদিন টিপ টিপ করে বৃষ্টি হওয়ার কারনে আমাদের দেখা হয়নি । মনটা ছটফট করছিল ওকে দেখার জন্য । তাই গলির আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম । সন্ধ্যার কিছু পড়ে ও বের হয়ে এল ।
“এতো ক্ষনে আসলে?” আমি জানতে চাইলাম ।
“আজ আর উপায় নাই । একটু পর আব্বু আসবে । এখন যাও । কাল দেখা হবে।“
আমি বললাম “না । আজ সারাদিনে দেখা হয়নি । আর একটু থাকো” ।
“ওরে বাবা । আব্বু দেখলে মেরে ফেলবে । প্লিজ যাও । কাল দেখা হবে” ।
বলে ও গলির মধ্যে ঢুকে গেল । কিন্তু আমার মন মানতে চাইলো না । আমি পিছন পিছন গলির মধ্যে ঢুকলাম ।
পিছন থেকে ওকে চেপে ধরলাম ।
“কি করছো ? প্লিজ ছাড়ো । ছাড়ো । কেউ চলে আসবে “।
আমি ওকে এবার ওর দুই হাত ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলাম ।
“ওকে ঠিক আছে । চলে যাচ্ছি । কিন্তু একটা কিস করো” ।
… ... ঠিক এমন সময় ইরা একটু চিত্কার দিয়ে উঠল ।
তারপরই বলল “ছাড় ছাড়” । বলে ও নিজেকে ছাড়ানোর ট্রাই করল ।
আমি বুঝলাম না ও এমন করছে কেন?
ঠিক এমন সময়ে আমার জামার পিছনে একটা শক্ত হাত অনুভব করলাম । কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে ধরে টান মাড়ল । কোন কিছু বোঝার আগেই সে আমাকে কষে একটা চড় মারলো । চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে ।
তারপ্র লোকটাকে আমি চিনতে পারলাম । লোকটা ইরার বাবা । ইরার বাবা আমার কলার চেপে ধরে আবার চড় মাড়ল ।
ভেবেছিলাম ঘটনা এখানেই শেষ হবে । কিন্তু এখানে শেষ হল না । ইরার বাবা আমাকে লোকাল থানায় নিয়ে গেল । রিপোর্ট লেখা হল এটেমপ্ট টু রেপ । দারোগা সাহেব আমার বাবাকে চিনতেন । উনি বাবাকে খবর দিলেন । আমি তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমার সাথে কি এসব কি হচ্ছে । তবুও একটু ভরসা ছিল ইরা নিশ্চই সত্যি কথাটা বলবে ।
বাবা সম্মানি লোক ছিলেন তাই কেইস ফাইল হল না । কিন্তু পরদিন সকালে আমার বিচার বসল । গোপনেই বসল আমাদের বাসায় । সবারই মান সম্মানের ভর ছিল । ওর বাবা ছিল । দারোগা ছিল । আমার বড় ভাই আর বাবা ।
আমার মনে তবুও আশা ছিল যে ইরা নিশ্চই আমার সাথে থাকবে । কিন্তু এমনটা হল না । বিচারে যখন ইরাকে ডাকা হল ।
ও বলল “যে আমি ওকে ডিস্টার্ব করতাম । ওকে ফলো করতাম । সেদিন নাকি সত্যি সত্যি ওকে আমি চেপে ধরেছিলাম” ।
আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না । সত্যি কি ইরা এ কথা বলছে । নাকি ও .. হঠাত্ বাবা এসে আমাকে চড় মাড়ল । এতো জোড়ে যে আমি উলতে পড়লাম । তারপর সে কোমরে বেল্ট খুলে সে আমাকে পেটাতে লাগল ।
কিন্তু আমার সে দিকে কোন খ্যাল ছিল না । আমি কেবল ইরাকে দেখছিলাম । ইরা নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল । কথা বলার সময়ও নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল । আমার আর কিছু মনে নেই । তারপর থেকে আমার বাবা আর আমার কথা বলে নি । এমন কি আমার মুখও দেখে নি ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৩১