এই পুকুর পাড়টা আমার খুব প্রিয় । জাদু ঘরের পিছনের এই পাড়ে আমি প্রায়ই আসি । বিশেষ করে যখন আমার মন খুব খারাপ থাকে আর যখন আমার মন খুব ভাল থাকে ।
আগে একা একা আসতাম মাঝখানে লিয়ানাকে নিয়ে আসতাম । ওর ও খুব পছন্দের জায়গা ছিল এটা ।
আজ আমি আবার একা এসেছি । লিয়ানা আসে নি আজ । আর হয়তো আসবেও না ও ।
আজ .... ।
আজ ওর গায়ে হলুদ ।
কথনও ভাবিনি ও কে এভাবে হারাতে হবে ।
আসলে ওকে হারানোর কথা কথনও মনেই আসে নি । তাই ভালবাসি বলাই হয় নি । কিন্তু সব কথা কি বলতে হয় ?
লিয়ানা নি একটুও বুঝতে পারি নি ? কোন দিন বুঝতেও পারি নি ?
সে দিন যখন ও বলল যে ওর মা ওর জন্য ছেলে ঠিক করেছে । খুব শীঘ্রিই ওর বিয়ে । ও এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা গুলো বলল যে আমি কোন কথা বলতেই পারলাম না । এতো দিতের পরিচিত মানুষটাকে সেদিন বড় অপরিচিত মনে হয় ।
আমি কোন মতে বললাম “তোমার ছেলে পছন্দ হয়েছে ?”
ও বলল “ভালই তো । খারাপ কি । ভাল জব করে । দেখতে শুনতেও খারাপ না । আর সে হচ্ছে মার এক বান্ধবীর ছেলে । ঐ আন্টি আমাকে খুব পছন্দ করেছে । তার ছেলের বউ করে নিতে চায় । আর আম্মুও অমত করে নি । আমি আর কিছু বলি না ।“
মনে মনে বলি তুমি কি বোঝ না ? আমার মনের কথা কি তোমার মনে একটুও হয় নি ?
তারপর থেকে লিয়ানার কাছ থেকে আমি নিজেকে দুরে সরিয়ে নেই । কি হবে আর কাছে গিয়ে । ও যখন আমার কথা মনেই আনে নি তখন আর কি হবে ??
দেখতে দেখতে কত দিন হয়ে গেল ওর সাথে পরিচয়ের । কি অদ্ভুদ ভাবেই না লিয়ানার সাথে পরিচয় হয়েছিল ।
তখনও আমি পড়েলেখা করি । একদিন দুপুরের দিকে সিগারেট শেষ হয়ে গেছে । হলের বাইরে বের হয়েছি দেখি গেটের কিছুদুরে একটা মেয়ে দারিয়ে । মেয়েটার দিকে তাকাতেই হল কারন মেয়েটার চেহারার অন্য রকম একটা কিছু ছিল । কিন্তু মেয়েটার মুখ টাতে যেন কেমন একটা দিশেহারা ভাব । মনে হল চোখে যেন পানিও টলমল করছে । আমি খুব বেশি আমলে না নিয়ে আমার কাজে চলে যাই । যখন সিগারেট নিয়ে ফিরে আসি তখনও দেখি মেয়েটা দাড়িয়ে । খানিকটা কৌতূহল হলই । আমি মেয়েটার দিকে এগিয়ে যাই ।
“এক্সকিউজ মি ।“
মেয়েটা খানিকটা ভীত চোখে আমার দিকে তাকাল । আমার কেন জানি মেয়েটাকে দেখে খুব মায়া লাগল । মেয়েটা দেখে মনে হল সে কোন বিপদে পড়েছে ।
“কোন কি সমস্যা হয়েছে ?”
আমার কথা শুনে মনে হল মেয়েটা আমার কথায় মনে হল খুব ভরসা পেল না । অন্য কেউ হলে হয়তো আমি চলে আসতাম । কিন্তু মেয়েটাকে রেখে কেন জানি আসতে ইচ্ছা হল না ।
আমি আমার ভার্সিটির আইডি কার্ডটা মেয়েটার হাতে দিলাম ।
বললাম “আমি এখানে পড়ি । আমার ভার্সিটি দেখালাম । আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন । কথা দিচ্ছি উপকার না করতে পারলেও অপকার করবো না ।“
আমার আইডি কার্ড টা দেখে মনেহল ও একটু ভরসা পেল । আইডি কার্ড ফেরত্ দিতে দিতে বলল
“ আমি আমার ব্যাগ হারিয়ে ফেলেছি ।“
কথাটা বলতেই ওর চোখ থেকে চুপ করে এক ফোটা পানি পড়ল ।
“ওকে !! কি কি ছিল ব্যাগে ! সব কিছু । টাকা পয়সা মোবাইল সব ।“
আমি বললাম “কথন হারিয়েছে ?”
“ সকাল বেলা ।“
“ তারপর ?”
“ প্রথমে খুজলাম কিন্তু পেলাম না । তারপর রাস্তাও হারিয়ে ফেলছি । কাকে বলব ঠিক ভরসাও পাচ্ছি না ।“
“ আপনি সকাল থেকে এদিক ওদিক ঘুরছেন ?”
“ জ্বি ।“
“ কিছু খাওয়াও হয়নি সকাল থেকে ?” মেয়েটা মাথা নাড়ল । সত্যি কথা বলছি অন্য কেউ হলে আমি এতোটা আগ্রহ জাগাতাম না । কিন্তু মেয়েটার চেহারার মধ্যে কেমন একটা মায়া ছিল । আর সুন্দর মেয়েরা তো একটু অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে ।
(চলবে)