কিছুদিন পর । আমি আমার কলেজে যাবো । নবীন বরন অনুষ্ঠান হবে । সেজেগুজে বের হব তখন আবীরের ফোন ।০ “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ।“
“ তুমি আমাকে কিভাবে দেখো বল তো ?”
“ দুরবীন দিয়ে দেখি বুঝেছ ?”
“ বুঝলাম ।“ মনে মনে রাগ লাগে । আবীর বলল “শোন এখন কলেজে যেতে হবে না ।“
“ কেন ? কলেজে যাবো না কেন ?”
“ আজ কলেজে মারামারি হবে । যেতে হবে না ।‘
“ বলেছে তোমাকে ? কে বলেছে তোমাকে ?”
“ শোন বেশি কথা বলবে না ।“ গলায় অনেকটা কর্তৃতের সুর । “যা বলছি কর । এখন গেলে বিপদ হবে ।“
“ হলে হবে । আমি যাবো ।“
আবীর খুব জোড়ে একটা ধমক লাগাল । বলল “তুমি যদি যাও তবে আমি কিন্তু আর কোন দিন তোমাকে ফোন করবো না ।“
কি করবো । কলেজে যেতে পারি না । ঘন্টা খানেক পর মা ঘরে আসে । বলে তোর বাবা ফোন করেছিল । তোদের কলেজে নাকি খুব গোলমাল হচ্ছে । তুই যাসনি শুনে স্বস্তি পেয়েছ । আমি আবার অবাক হই ।
মা ঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ফোন বেজে ওঠে ।
“কি বলেছিলাম ম্যাডাম । আমার কথা বিশ্বাস হলতো !”
এভাবে আবীর আমাকে নিয়মিত ফোন করতে থাকে । আমি কখন কি করবো না করবো ওই আমাকে বলে দেয় । আমিও সব কিছু ওর উপর ছেড়ে দিই । মাঝে মাঝে ও আমার কথা ছলে আদর করে । মাঝে মাঝে ধমক দেয় । আমার খুব ভাল লাগে ।
সেদিন আবীর সারাদিন ফোন করে নি । কি যে অস্বস্থির লাগছিল । অবশ্য আগের দিন রাতেই ও বলেছিল কি এক কাজ আছে সারাদিন ব্যস্ত থাকবে । রাতে ফোন দিবে । তবুও আমি খুব অস্বস্থির হই । যতবার ফোন দিতে যাই বন্ধ আসে ওর ফোন । ভাল লাগে না । বিকেল বেলা আব্বু আম্মু দুজনেই ডাক্তারের কাছে যায় । পুরো বাসায় আমি একা । তখন ওর কথা আরো বেশি করে মনে পড়ে ।
কি এমন কাজে বিজি সে ?
একটা বার ফোনও করা যায় না । খুব রাগ হয় । চোখ ফেটে কান্না আসতে চায় । কিন্তু কিছুতেই কিছু ভাল লাগে না ।
এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে । এতো জলদি আব্বুরা চলে আসলো । কিন্তু দরজা খুলেই দেখি রফিক আংকেল । এই লোকটা কে দেখে আরো রাগ হয় । বললাম “আব্বু তো বাসায় নাই ।“
“ আমি ফোন দিছিলাম । একটু পরেই চলে আসবে । আমাকে ওয়েট করতে বলেছে ।“
কি আর করা ঘরে ঢুকতে দিতে হয় । কিন্তু আমার মনের কাছে কেন জানি ভাল লাগছিল না । আমি আংকেল কে বসতে বলি ।
আংকেল বলেন “বাসায় আর কেউ নাই ?”
“ জ্বি না আর তো কেউ নাই ।“
কেমন জানি ওনার চোখ চকচক করে ওঠে । আমার একদম ভাল লাগে না । কি বিশ্রি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এমন সময় আমার ফোন বেজে ওঠে ।
আবীরের ফোন । আংকেল কে বললাম “আমার এক বন্ধু ফোন করেছে । আমি একটু কথা বলে আসি ।“
বলেই আমি নিজের ঘরে চলে আসি ।
“ এতোক্ষন লাগে ফোন ধরতে ।“ ওর কণ্ঠে কেমন যেন একটা এক বেপরয়া ভাব ।
“কি হয়েছে ? এমন ভাবে কথা বলছো কেন ?”
“ তুমি এখনই তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করো । এখনই কর । এই রফিক ব্যাটার মতলব খারাপ । জলদি করো ।‘
আমি কেমন যেন একটা দিশেহারা অনুভব করলাম । ফোন রেখে দরজা বন্ধ করতে যাবো এমন সময় দেখি রফিক আংকেল ঘরে ঢুকছে । মুখে এক কি বিশ্রি হাসি । ঘরে ঢাকেই উনি দরজা বন্ধ করে দিলেন ।
“কি ব্যপার আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন ।“
উনি আরার সেই শয়তানের মত হাসি দেন । বলেন “বুঝতেছো না কি জন্য করতেছি । অনেক দিন ধরে টকে ছিলাম আজ তোমারে পাইছি ।“
“আমি কিন্তু চিত্কার করবো “
“ কর । তোমার মান সম্মান যাবে । তারপর দেখি তুমি সমাজে কি ভাবে থাকো । আর লোকজন আসতে আসতে যা হবারহয়ে যাবে । এর থেকে চুপচাপ থাকো । কেউ জানবে না । কোন সমস্যা হবে না ।“
আমি এখন কি করবো । ঐ শয়তান টা লোল ফেলতে ফেলতে আমার দিকে এগিয়ে আসে । আর আমি আতংকে নীল হয়ে যাই । কি করবো মাথায় কিছুই কাজ করে না ।
এখন আমাকে কেবল আবীর বাঁচাতে পারে । জোড়ে জোড়েই বলি “আবীর কোথায় তুমি ? আমাকে বাঁচাও । আমাকে বাঁচাও ।“
শয়তান টা হেসে উঠল । “কোন আবীর ফাবীর তোরে বাঁচাতে পারবে না ।“
আমার কাছে চলে আসে । আমাকে ধরতে যাবে ঠিক এমন সময় একটা কাজ হয় ।
আমার ঘরে আলো গুলো নিভে যায় । খুব মিষ্টি একটা গন্ধে সারা ঘর সুরভিত হয়ে যায় । হঠাত্ করেই মনের সব ভয় কোথায় যেন গায়েব হয়ে যায় । মনে হয় আবীর এসেছে । আমাকে বাঁচাতে এসেছে ।
(চলবে)